আগুন বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরী হয়ে যেতে পারে। প্রথম পর্বে আমরা যেরকম আলোচনা করেছি জল পরিশুদ্ধ করবে কি করে? সেখানে নানাবিধ ফিল্টার ব্যবহার করার পরেও আমরা সাবধানতা বজায় রাখার জন্য সেই জলকে ফুটিয়ে খেতে বলি। টিভিতে বেয়ার গ্রিলস আগুন জ্বালাবার জন্য যে জিনিসটি ব্যবহার করেন তাকে বলে ফেরোসিয়াম। এটি একটি সংকর প্রজাতির ধাতু মিশ্রণ যা অত্যন্ত কম তাপমাত্রা তে আগুন জ্বালাতে পারে। স্টিলের ছুরিতে এই ধাতুর মিশ্রণ ঘষলে সাথে সাথে আগুনের ফুলকি বেরিয়ে আসে। বিপদের মুখোমুখি হলে, জল ফোটানোর জন্যই হোক বা শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্যই হোক আগুন অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু কাছে গেলে দেশলাই বা লাইটার না থাকে, অথবা যদি ভিজে গিয়ে থাকে দেশলাই, তখন কি ভাবে আগুন জ্বালাবে?
দেশলাই ছাড়া আগুন জ্বালাবার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। প্রথমে একটা জিনিস আমাদের মাথায় রাখতে হবে আগুন জ্বালাবার জন্য তিনটি জিনিসের দরকার, অক্সিজেন জ্বালানি এবং তাপ। কাঠে কাঠে ঘষে বা পাথরে পাথর ঠুকে আগুন জ্বালানোর আদিম পদ্ধতি অভ্যাস না থাকলে হয় না। কাজেই আমাদের আরো সহজ কিছু পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে। এক্সপেরিমেন্ট শুরু করার আগে আরেকটা জিনিস মাথায় রেখো, আগুন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার সময় বড়দের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরী। অবশ্যই বড়দের উপস্থিতিতেই এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলো তোমরা করো।
প্রথম এক্সপেরিমেন্টের জন্য আমাদের লাগবে একটা ট্রিপল এ ব্যাটারি, অল্প অ্যালমনিয়ামের ফয়েল বা কিটক্যাট এর রাংতা এবং তাপনিরোধক গ্লাভস। প্রথমে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা রাংতা কে লম্বালম্বি কেটে নাও। এবারে লম্বা লম্বা স্ট্রিপ এর মাঝ বরাবর থেকে খানিকটা করে রাংতা ছিঁড়ে নাও (ছবির মত)। এবারে এই ফয়েল বা রাংতা এর স্ট্রিপ টির দুই প্রান্ত ব্যাটারির দুই প্রান্তের সাথে যোগ করলেই ২/৩ সেকেন্ডের মধ্যে মাঝখানের সরু অংশটিতে আগুন লাগতে শুরু করবে। সেখান থেকে একটা কাগজে সহজেই আগুন ধরিয়ে দিতে পারো। অ্যালুমিনিয়ামের স্ট্রিপটির একেবারে সমান হলে উৎপন্ন তাপ সমভাবে চতুর্দিকে ছড়িয়ে যেত এবং আগুন ধরার সম্ভাবনা কমে যেত। কিন্তু যেহেতু স্ট্রিটের দুই প্রান্ত চওড়া এবং মাঝখানটি সরু, কাজেই সেই জায়গায় রেজিস্টেন্স বেশি হওয়ার জন্য আগুন সহজে ধরে যায়।
দ্বিতীয় এক্সপেরিমেন্টের জন্য আমাদের লাগবে একটি প্লাস্টিকের জলের বোতল অথবা একটি জিপ লক এর প্যাকেট, এবং ভিষন শুকনো নারকেলের ছোবড়া গুঁড়ো বা চারকোল। রোদ্দুর পূর্ণ দিনে এই জলের বোতল বা জিপলকের প্যাকেটে জল ভরে সেটিকে ম্যাগনিফাইন গ্লাস বা আতস কাঁচের মতো ব্যবহার করে সহজে আগুন লাগানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে একটা জিনিস মনে রেখো, প্রথম আগুণটি ধরাবার সময় কাগজের বদলে নারকেলের ছোবড়া গুঁড়ো বা চারকোল ব্যবহার করলে অনেক দ্রুত আগুন ধরবে। কাগজ ব্যাবহার করলে প্রথমে একটি কালো কালি দিয়ে কাগজের একটা যায়গায় রঙ করে দিতে হবে যাতে কাগজ তাপ শোষন করতে পারে। এই পদ্ধতিতে কুড়ি থেকে পঁচিশ সেকেন্ডের মধ্যে আগুন জ্বলে যেতে পারে। সূর্যের রোদের উপরে অবশ্য এই পদ্ধতি পুরোপুরি নির্ভরশীল।