বাচ্চাদের জন্য

মাটি ছাড়া গাছ হাইড্রোপনিকসের খেল! বাড়িতে বসে এক্সপেরিমেন্ট

মাটি ছাড়া গাছ হাইড্রোপনিকসের খেল! বাড়িতে বসে এক্সপেরিমেন্ট

সহজ ভাষায় বললে হাইড্রোপনিক্স হল মাটি ছাড়া শুধুমাত্র জলের সাহায্যে গাছ গজানোর পদ্ধতি। মাটি ছাড়া গাছ ভাবলেই কিরকম একটা অবাস্তব বলে মনে হয়। কিন্তু ছোট বন্ধুরা একটু ভেবে দেখো উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য কি কি দরকার হয়? সূর্যের আলো, জল, বাতাস, নিউট্রিয়েন্টস (খনিজ পদার্থ) এবং শিকড়কে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি উপাদান। উদ্ভিদ তার পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয় জল এবং নিউট্রিয়েন্টস মাটি থেকে শোষণ করে। আবার মাটি গাছের শিকড়কে সাপোর্ট দেয় যাতে কিনা কাজ বড় হয়ে হেলে না পড়ে। এখন বন্ধুরা আমরা যদি জল, নিউট্রিয়েন্টস এবং সাপোর্ট বাইরে থেকে দি, সেক্ষেত্রে মাটি ছাড়াই গাছের বৃদ্ধি সম্ভব।

হাইড্রোপনিক্স পদ্ধতিতে গাছ করার এক্সপেরিমেন্টের জন্য তোমাদের লাগবে একটি দুলিটারের জলের বোতল, নারকেলের ছোবড়া বা কোকোপিট, জল, ছেঁড়া কাপড়, কাঁচি, ছুরি, খানিকটা কম্পোস্ট বা জৈব সার, অল্প গুড় আর বীজ।

প্রথমে আমরা গাছের জন্য নিউট্রিয়েন্টস দ্রবণ বানিয়ে ফেলবো যা গাছের জল এবং খনিজ পদার্থের অভাব পূরণ করবে। প্রথমে একটা বালতিতে 4 লিটার মতো জল নিয়ে তাতে 10 মুঠো কম্পোস্ট/জৈব সার এবং একমুঠো গুড় মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে দাও। মিনিট দশেক নাড়ার পরে, বালতিটিকে নিয়ে বাইরে রোদ্দুরের মধ্যে রেখে দাও। তিনদিন বালতিটিকে বাইরে রেখে দাও এবং মাঝেমধ্যেই খানিকক্ষণের জন্য বালতির মধ্যে মিশ্রনটিকে নাড়িয়ে দিও। এবারে তিন দিন পরে এই মিশ্রণটি নিয়ে একটি পাতলা সুতির কাপড় দিয়ে সেজে নাও এবং তোমার গাছ গজানোর নিউট্রিয়েন্ট সলিউশন তৈরি। এই সলিউশনকে কম্পোস্ট টি বা চা বলা হয়। এর রং সাধারণত কালচে বা গাঢ় খয়েরী হয়ে থাকে। কম্পোস্ট মাটির মধ্যেকার গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ গুলি জলীয় দ্রবণে চলে আসে গুড় দেওয়ায় কম্পোস্ট এর মধ্যেকার বন্ধু অনুজীবগুলি খাবার পায় এবং বংশবিস্তার করে। যার ফলে তিন দিন পরে ওই জলের মধ্যে তুমি অসংখ্য বন্ধু অণুজীব পাবে। এই জলীয় দ্রবণটি তুমি সরাসরি ব্যবহার করতে পারো অথবা যদি তোমার কাছে পিএইচ পেপার থাকে তাহলে মোটামুটি ৬ থেকে ৭ এর মধ্যে দ্রবণের পিএইচ হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে প্রয়োজন অনুসারে অল্প জলও মেশাতে পারো।

এবারে দু লিটারের বোতলটির ওপর থেকে কেটে উল্টো করে বাকি বোতলের ফাঁকা অংশের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দাও। বোতলের তলায় নিউট্রিয়েন্ট এর দ্রবণ দিতে ভুলো না যেন। এইবারে খানিকটা ছেঁড়া কাপড় নিয়ে মাঝ বরাবর জায়গায় একটা বড়সড় গিঁট লাগাও। গিঁটের নিচের অংশের কাপড় বোতলের ছিপি দিয়ে নীচে নিউট্রিয়েন্ট দ্রবণের মধ্যে লেগে থাকবে এবং ওপরের অংশের কাপড় উপরের দিকে থাকবে। গিঁটটা এমন মাপের করো যাতে বোতলের ছিপি দিয়ে তা গলতে না পারে। এবারে নারকেলের ছোবড়া টাকে যতটা সম্ভব গুঁড়ো গুঁড়ো করা যায় করে নিয়ে অল্প পরিমাণে জল দিয়ে মিনিটদশেক অপেক্ষা করলে দেখতে পাবে নারকেলের ছোবড়া টা ফুলে উঠেছে। যারা নারকেলের ছোবড়া বদলে কোকোপিট ব্যবহার করতে চাও, তারা দু’মুঠো পরিমাণ কোকোপিট নিয়ে তাতে অল্প জল মেশালে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করো যতক্ষণ না কোকোপিট ফুলে ওঠে। এবারে ফুলে-ওঠা কোকো পিট বা নারকেলের ছোবড়া তোমরা বোতলের ওপর দিকে দিয়ে ভালো করে ঢেকে দাও। কাপড়ের মাধ্যমে নিউট্রিয়েন্ট দ্রবণ এবং নারিকেলের ছোবড়ার মধ্যে যে সংযুক্তিকরণ টি করা হলো তার ফলে সব সময়ই নারকেলের ছোবড়াটি নিউট্রিয়েন্ট সলিউশন দ্বারা ভেজা থাকবে।

সবশেষে বীজ নাও। অঙ্কুরিত ছোলা অথবা ধনেপাতার বা লঙ্কার বিজ ইত্যাদি নিয়ে সারারাত জলে ভিজিয়ে রাখ। সকালবেলা নারকেলের ছোবড়া টির মধ্যে অল্প জল দিয়ে বীজ গুলিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দাও। একটি দু লিটারের এরকম বোতলে দুই থেকে তিনটি ধনেপাতার গাছ তুমি লাগাতে পারো।

ব্যাস এবার পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে তোমরা দেখতে পাবে গাছের অঙ্কুরোদগম এবং বৃদ্ধি। তোমরা যেটা করতে পারো গাছের বৃদ্ধির হার হাইড্রোপনিক সে বেশি নাকি না মাটিতে বেশি? আরও একটা উদাহরণ দেওয়া হল যেখানে অনেকগুলো বোতল ব্যবহার করে হাইড্রোপনিক্স করতে পারো। এক্ষেত্রে কোকো পিট বা নারকেলের ছোবড়া এর বদলে ব্যবহার করতে পারো ছোট স্পঞ্জ যা গাছের সাপোর্ট দিতে সাহায্য করবে।

Leave a Comment