খাবারে কীটনাশক নিয়ে বহু গবেষণাধর্মী কাজ হয়েছে এবং ক্যান্সার থেকে শুরু করে পারকিনসন্স বা অ্যালঝেইমার্সের মতো রোগের সাথে কীটনাশকের সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে। উন্নত দেশগুলিতে কার্বোফুরান, ডাইসালফোটন, ডায়াজিনন, প্যারাথিয়ন এর মত কীটনাশক গুলি বন্ধ করা হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে এই কীটনাশক গুলির ব্যবহার রয়েছে। কীটনাশক ব্যবহারের সময় এর একটি অংশ সরাসরি বাতাসে মিশে এবং কীটনাশকের রাসায়নিক ধর্মের উপর নির্ভর করে বাতাসে গ্যাস বা কণা হিসেবে রয়ে যেতে পারে। রাসায়নিক চাষের বাড়বাড়ন্তের কারনে ভারত, বাংলাদেশ, ব্রাজিলসহ উন্নয়নশীল দেশগুলির বেশিরভাগ কৃষক কীটনাশক ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্র এবং হসপিটাল এর রিপোর্ট অনুযায়ী গোটা দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের একের তিন অংশ কৃষক। ভারতবর্ষের পোস্ট গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল এডুকেশন এন্ড রিসার্চ, চন্ডিগড় এর বৈজ্ঞানিকরা পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকদের ওপর এ গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে অঞ্চলের চাষিরা বেশি মাত্রায় পেস্টিসাইড ব্যবহার করে তাদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বিভিন্ন দেশেই বৈজ্ঞানিকরা বাতাসে কীটনাশকের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন। পৃথিবীর বেশকিছু জনমানবহীন অঞ্চলে বাতাসের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে সেখানে যথেষ্ট মাত্রায় কীটনাশক উপস্থিত। ২০০৬ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী মাউন্ট এভারেস্টের মত জায়গাতে অর্গানোক্লোরিন পেস্টিসাইড বাতাসে পাওয়া গেছে। শুধু মাউন্ট এভারেস্টে নয় তিব্বত লাসা এমনকি মেরুপ্রদেসেরে মত অঞ্চলের বাতাসেও পাওয়া যাচ্ছে বিষাক্ত কীটনাশক। জনমানবহীন এই অঞ্চলগুলিতে চাষবাস একেবারেই হয় না, তাহলে কোথা থেকে আসছে কীটনাশক? বিজ্ঞানীরা বলছেন এই কীটনাশকগুলি সহজে নষ্ট হয় না এবং যার ফলে বাতাসে বেশ কয়েক দিন অবধি ভেসে থাকতে পারে। মেরু অঞ্চলে বা অন্যান্য শীতল অঞ্চলে কয়েক বছর অব্দি এই কেমিক্যাল গুলি রয়ে যেতে পারে। বাতাসে ভেসে থাকা এই কেমিক্যাল গুলি খুব সহজেই বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। মাউন্ট এভারেস্টের ক্ষেত্রে বাতাসের তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে গঙ্গা-সিন্ধু উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল যেখানে চাষের কারণে প্রবল মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয় সেই অঞ্চল থেকে কীটনাশক বাতাসে ভেসে মাউন্ট এভারেস্টের মত জনমানব শূন্য অঞ্চলে পৌঁছচ্ছে। কাজেই যে অঞ্চলে চাষবাসের জন্য কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে সেই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য কীটনাশক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই, উপরন্তু যে অঞ্চলগুলি বহুদূরে, সেখানেও বাতাসে ভেসে কীটনাশক এসে মানুষের ক্ষতি করছে।
২০০৬-০৭ সালে পারমিতা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একদল বৈজ্ঞানিক ভারতবর্ষের সাতটি বড় শহরে বাতাসে অর্গানো ক্লোরিন পেস্টিসাইডের মাত্রা পরীক্ষা করেন। এই শহর গুলির মধ্যে নতুন দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, গোয়া এবং আগ্রা ছিল। সেই গবেষণায় প্রকাশ পায় হেক্সাক্লোরো সাইক্লোহেক্সেন কীটনাশকের বাতাসে মাত্রা ভারতবর্ষে পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি।
ঠিক কতটা ক্ষতি করতে পারে বাতাসে থাকা এই কীটনাশক গুলি। বিজ্ঞানীরা কিন্তু বলছেন যথেষ্টই। সরাসরি এই কীটনাশক গুলি যথেষ্ট মাত্রায় প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকলে ক্যান্সার, অ্যালজাইমার, পারকিনসনের মত রোগ হতেই পারে। অল্পমাত্রায় ঢুকলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাচ্চাদের এবং হূদরোগে আক্রান্ত এবং ফুসফুস ঘটিত রোগের আক্রান্ত মানুষের। কাজেই শুধুমাত্র বিষ মুক্ত খাবার নয়, বিষ মুক্ত বাতাস ও অত্যন্ত জরুরী। জৈব ভাবে উৎপন্ন ফসল কেনার অভ্যেস বাড়াতে হবে আমাদের। তবেই আমরা বিষমুক্ত খাবার যেরকম পাব, তেমনি রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে পারবো।
নিবন্ধের ছবি – www.sciencedirect.com
মাটি মরে যাচ্ছে, বাতাস মরে যাচ্ছে, জল মরে যাচ্ছে – মানুষ বাঁচবে কেমন করে?
কবে কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গবে?
ঠিক বলেছেন একদম স্বপন বাবু।