বাচ্চাদের জন্য

তুমিও হতে পারো বেয়ার গ্রিলস: পর্ব -১

তুমিও হতে পারো বেয়ার গ্রিলস পর্ব -১

ডিসকভারি চ্যানেলে আমরা সবাই কমবেশি বেয়ার গ্রিলসের কার্যকলাপ দেখেছি। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ নামক প্রোগ্রামে আমরা সবাই বেয়ার গ্রিলস এর মত অ্যাডভেঞ্চার করতে চেয়েছি। কিন্তু বন্ধুরা যদি সত্যিই এরকম সময় আসে, যখন আমাদেরকে বাঁচার জন্য লড়াই করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সাইক্লোন বন্যা ইত্যাদির আশঙ্কা। কাজেই যেকোনো মুহূর্তে আমাদের অত্যন্ত চেনা পাড়া হয়ে উঠতে পারে অ্যাডভেঞ্চার এর ফিল্ড। বিশেষত উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন যারা সমুদ্রতলের বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, বা হয়ত কোনো পক্ষীবিদ বন্ধু যে জঙ্গলে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে অথবা পশ্চিমবঙ্গের এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ যারা অতিবৃষ্টির বা অনাবৃষ্টির কারণে হঠাৎ বিপদে পড়ে তাদের এই লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে সবুজ পৃথিবীর নিবেদন তুমিও হতে পারো বেয়ার গ্রিলস সিরিজ।

এই পর্বে আমরা শিখব নোংরা জল কে কিভাবে খাবার জলের উপযোগী করে তুলবো। বন্যা পরিস্থিতি বা হঠাৎ কোন জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোংরা জল খাওয়া প্রাণহানির কারণ হতে পারে। অপরিশোধিত জলে থাকা বিভিন্ন জীবাণু বর্জ্য পদার্থ এবং জল দূষক বিভিন্ন গ্যাস আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। এই প্রসঙ্গে আরো একটা কথা বলে রাখা দরকার, সবুজ পৃথিবী পরামর্শ অনুযায়ী আপনারা এক্সপেরিমেন্টি করুন, কিন্তু একান্ত বিপদে না পড়লে এই জলটি না খাওয়াই ভালো। বিপদে পড়লে কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি আপনার প্রাণ বাঁচাতে পারে অন্তত আপনার প্রানে বাঁচে পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।

১) সবার আগে একটি প্লাস্টিকের বোতল নিন। একটু বড় বোতল হলে সুবিধা এবারে এই বোতলের ঢাকনা থেকে দুই-তৃতীয়াংশ দূরে ছুরি দিয়ে কেটে ফেলুন। এইবারে কাটা অংশটি বোতলের মুখের নিচে রেখে দিন।

২) খানিকটা নোংরা জল নিয়ে আর একটি বোতলে পুরে ভালো করে ঝাঁকান এবং তার পরে ঢাকনা খুলে দিন। এতে জলে দ্রবীভূত গ্যাস বেরিয়ে যাবে। এইভাবে মিনিট দশেক ঝাকানো এবং ঢাকনা খোলার পরে জলে একমুঠো ফটকিরি দিয়ে দিন। ফটকিরি দিয়ে মিনিট পাঁচেক রাখার পরেই আপনি দেখতে পাবেন খানিকটা নোংরা একত্রিত হয়ে জলের উপরে ভেসে উঠেছে। এইবারে এই নোংরা গুলিকে একটি কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে আপনি জল পরিশোধনের দ্বিতীয় ভাগে যান।

৩) নোংরা জলকে পরিষ্কার জলে পরিণত করতে আপনাকে একটি সাধারন ফিল্টার বানাতে হবে। এই ফিল্টারের জন্য আপনার লাগবে একগোছা তুলো, খানিকটা গুঁড়ো করা চারকোল বা কয়লা, বালি, ছোট নুড়িপাথর এবং অপেক্ষাকৃত বড় নুড়ি পাথর।

৪) তুলো যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে আপনারা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে পারেন অথবা সুতির কাপড় কুচি কুচি করে কেটেও ব্যবহার করতে পারেন।

বাড়িতে বানিয়ে নাও জলের ফিল্টার

বাড়িতে বানিয়ে নাও জলের ফিল্টার

৫) সবার প্রথমে বোতলের ঢাকনার মুখে ভালো করে তুলো গুঁজে দিন। এই তুলোর ওপরে অর্ধেক ইঞ্চি মতো চারকোল বা কয়লার গুঁড়ো দিয়ে দিন। এর উপরে অর্ধেক ইঞ্চি মত বালি এবং তার ওপরে ছোট নুড়ি পাথর এবং বড় নুড়ি পাথরের স্তর গঠন করুন। বোতলের মুক্তিতে একটি সুতির কাপড় ও বেঁধে দিতে পারেন।

৬) এইবারে উপর থেকে আস্তে আস্তে জল ঢালতে শুরু করুন এবং কিছু সময় পরে এই পাঁচটি স্তর ভেদ করে আপনার কাছে যে জলটি পৌছবে তা অপেক্ষাকৃত অনেক পরিষ্কার হবে।

এইভাবে পরিশোধিত করা জল নোংরা জলের থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হলেও এরপরে অন্তত একবার মিনিট দশেকের জন্য যদি জল ফোটানো যায় তাহলে আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে সেই জল পান করতে পারে। কিন্তু যদি ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকে অথবা ফিল্টারের কোন একটি উপকরণ না থাকে সেক্ষেত্রেও নোংরা জলে থেকে এই পদ্ধতিতে ফিল্টার করা জল অনেক বেশি পরিশ্রুত। বালি পাথর এবং কাঠকয়লায় খানিকটা নোংরা লেগে থাকতে পারে সেই কারণে পরিস্রুত জলের প্রথমদিকের খানিকটা ফেলে দিয়ে তার পরের অংশটি পান করা শ্রেয়।

বাচ্চারা এই এক্সপেরিমেন্ট করতেই পারো এবং এক্সপেরিমেন্টের পরে পাশাপাশি দুটো জলের নমুনাকে রাখলেই তোমরা বুঝতে পারবে যে অনেকটা ময়লা পরিস্রুত হয়েছে।

 

আরো পড়ো

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এক্সপেরিমেন্টঃ পাঁচ মিনিটে পর্দাফাঁস 

নিজস্ব আবহাওয়া দপ্তর বানিয়ে ফেল বাড়িতেই: পর্ব ১

Leave a Comment