চাষবাস

ফলন বিতর্কঃ দেশী ধান, সবুজ বিপ্লবের ধান ও গ্রীন সুপার রাইস।

কলমেঃ অভ্র চক্রবর্তী

লেখক পরিচিতিঃ

অভ্র চক্রবর্তীঅভ্র চক্রবর্তী একজন ধান্য গবেষক এবং সংরক্ষক। এই মুহূর্তে দেশী ধান নিয়ে বাংলার গুটিকয়েক মানুষ কাজ করে চলেছেন, তাদের অন্যতম পুরোধা হলে অভ্র বাবু।

 —————————————————————————————————————

সাইবার প্রমিথিউস আলেক্সেন্দ্রা আল্বাকিয়ান উৎসর্গ করে

ধান আমাদের রাজ্যের প্রধান ফসল, এছাড়াও সারা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য ধান (Muthayya et al., 2014)। ধানের ফলন তাই মানুষের বুভুক্ষা প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়। সবুজ বিপ্লবের পর পৃথিবীর ধান উৎপাদক দেশগুলিতে ধানের ফলন বেশ কয়েকগুন বাড়ে।সবুজ বিপ্লবের উদ্দেশ্যে যে বিশেষ ধানের জাত গুলি ব্যবহার করা হয়েছিলো তা তৈরি হয়েছিলো ফিলিপাইন্সের আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্রে (International Rice Research Institute বা IRRI)। এই ধান গুলিকে বলা হয়ে ছিলো উচ্চফলনশীল ধান। এদের নামের প্রথমে IR অক্ষর দুটি থাকে, যেমন IR8, IR36, IR64, ইত্যাদি। সবুজ বিপ্লবের কারিগড়রা দাবী করেন এই IR জাতগুলি প্রাক সবুজ বিপ্লব দেশীয় জাতের ধানগুলির চেয়ে উচ্চফলনশীল, রোগ ও পোকার উপদ্রব সহনশীল, এদের চালের গুনমান উন্নততর এবং এগুলি অল্পদিনের পধ্যে পাকে (Khush 1995)। বলা হয়ে থাকে যে সবুজ বিপ্লব এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ক্ষুধা দুর্ভিক্ষ ও সামাজিক অস্থিরতার হাত থেকে রক্ষা করেছে (Khush 2001)।

  আশীর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই সবুজ বিপ্লবের সাফল্য স্তিমিত হয়ে আসে (Herdt and Capule, 1983; Dalrymple, 1986)। এই সময় থেকেই এশিয়ার নিবীর ধান চাষের এলাকাগুলিতে উৎপাদন বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমতে থাকে (Rosegrant and Pingali, 1994)।১৯৬৬ সাল থেকেই IR8 ধানের ফলন প্রতি বছর আমন মরশুমে প্রতি হেক্টরে ০.২ টন করে এবং বোরো মরশুমে ০.২৬ থেকে ০.৪৭ টন করে কমতে থাকে।এর প্রধান কারন ছিলো রোগ ও পোকার উপদ্রব (Flinn et al. 1982)। দীর্ঘ মেয়াদি গবেষনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে যদি জমিতে সার ইত্যাদির প্রয়োগ ক্রমাগত বাড়ানো না হয় তাহলে সবচেয়ে উন্নত জাতটিকে সবচেয়ে ভালো ভাবে চাষ করলেও ফলন ক্রমশ কমতে থাকবে। (Flinn & De Datta 1984, Cassman et al.1994, Pingali 1994 and Cassman & Pingali 1995)।

 সবুজ বিপ্লব প্রযুক্তিতে ধান চাষ করার জন্য জমিতে প্রচুর জলসেচের প্রয়োজন পরে, এবং বেশি মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয়। সবুজ বিপ্লবের পরে রোগ পোকার উপদ্রবও ভয়ানক বাড়ে (Krishnaiah, K. & Varma, N. R. G. 2011) এবং তা নিয়ন্ত্রনের জন্য বিপুল পরিমানে কীট নাশকের ব্যবহার শুরু হয় (Randhawa 1986)।এর সামগ্রিক ফল হিসাবে কৃষি বাস্তুতন্ত্রে বিপর্য্যয় নেমে আসে। ধান চাষে সবুজ বিপ্লবের বিভিন্ন কুফলগুলি, যেমন রোগ ও পোকার উপদ্রব বৃদ্ধি, জমির উর্বরতা তথা ধানের ফলন হ্রাস, রাসায়নিক দুষন, ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত গবেষনা হয়েছে। এই জা্তীয় গবেষনা লব্ধ তথ্য সমুহের একটি চমৎকার উপস্থাপনা পাওয়া যায় Pingali , Hossain  এবং Gerpacio  এর লেখা Asian Rice Bowls: The Returning Crisis? বইটিতে। বইটির প্রকাশ কাল ১৯৯৭ সাল। গবেষনা থেমে থাকেনি, কৃষি বাস্তুতন্ত্রের বিপর্যয় নিয়ে বহু মুল্যবান গবেষনা হয়ে চলেছে।কিন্তু মুল ধারার কৃষি বিজ্ঞানে ও অর্থনীতিতে এ ধারনা আজও বদ্ধমুল যে সবুজ বিপ্লবের বহু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও বহু ভুল থাকা সত্বেও ধানের ফলন বাড়াবার জন্য এটা অপরিহার্য্য ছিলো।

ধানের ফলন ধরে রাখা বর্তমান বিশ্বে একটি সংকট। এদিকে অনুমান করা হচ্ছে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা যা দাঁড়াবে তাতে সব মানুষ কে খাওয়াতে গেলে খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুন করতে হবে (Ray D K et al. 2013)।পৃথিবীতে চাষের জমি ও প্রয়োজনীয় জল সীমিত, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে খাদ্য উৎপাদনের অনিশ্চয়তাও ক্রমশ বাড়ছে (MacDonald 2010; Brown and Funk 2008; Piao et al. 2010)।তাই এই সংকটের মোকাবিলা জরুরী।

সবুজ বিপ্লবের পর থেকেই ধানের ফলন কমে যাবার এই সংকটের মোকাবিলা করার জন্য বহুবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো। IR8 ভ্যারাইটিটি সবুজ বিপ্লবে সাফল্য আনলেও এটি  রোগ পোকার আক্রমনের প্রতি প্রবল সংবেদনশীল ছিলো (Mackill and Khush 2018)।এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য IR36, IR64, প্রভৃতি রোগ পোকার প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন  বহু  ধানের ভ্যারাইটি তৈরি করা হয়েছিলো (Khush and Virk 2005), কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। বর্তমানে নানান ধরনের জীব এবং বহু বন্য ও চাষযোগ্য ধানের প্রজাতির বিভিন্ন ভ্যারাইটি থেকে জীন সংগ্রহ করে একটি ধানের ভ্যারাইটির মধ্যে একত্রিত করে সর্বরোগ প্রতিরোধী, সর্ব প্রকার ক্ষতিকর পতঙ্গ প্রতিরোধী, সমস্ত রকম প্রতিকুল জলবায়ু সহনশীল, সুস্বাদু, উচ্চফলনশীল এক সুপার ধান তৈরী করা হয়েছে (Yu et.al. 2020, Fu and Yang 2012, Zhang 2007), যার নাম দেওয়া হয়েছে Green Super Rice.

সবুজ বিপ্লবের আগে ভারতে যে প্রায় লক্ষাধিক প্রজাতির দেশী ধান ছিলো তাদের ফলন নিয়ে কিন্তু সবুজ বিপ্লবের রুপকাররা বিশেষ মাথা ঘামাননি। তাদের এক কথায় নিম্ন ফলনশীল বলে দেগে দেওয়া হয়েছিলো। এই প্রবন্ধে আমরা দেখবো যে এমন বহু তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো যাতে প্রমান করা যায় দেশী ধান চাষ করে সবুজ বিপ্লবের ধানের সমান বা তারথেকে বেশী ফলন পাওয়া সম্ভব।তাই সবুজ বিপ্লবের পরিবর্তে এমন দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানো যেতো যাতে সবুজ বিপ্লবের সমস্ত কুফলকে পাশ কাটিয়েই ধানের অধিক ফলন সম্ভব ছিলো।কৃষি উৎপাদন বাড়াবার অনিবার্য্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোগ পোকার মহামারী নয়; বরং আমরা দেখবো কিভাবে সবুজ বিপ্লবের ফলন বাড়াবার বিশেষ প্রযুক্তি কৃষি বাস্তুতন্ত্রের বিপর্য্যয় তথা রোগ পোকার মহামারীর সাথে ওতপ্রত। Green Super Rice এর চাষ অচিরেই সারা পৃথিবী জুড়ে শুরু হবে, সে ক্ষেত্রে কি ধরনের বিপর্য্যয়ের সম্ভাবনা আছে তাও আমরা আলোচনা করবো। Green Super Rice এর সমস্ত রোগ ও পোকা প্রতিরোধ করে সুস্থায়ী ভাবে উচ্চ ফলন দেবার দাবীর জীববৈজ্ঞানিক যাথার্থ্য নিয়েও আলোচনা করা হবে। আমরা প্রমান করবো ধানের বহুবিধ দেশীয় ভ্যারাইটির আঞ্চলিক ভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংরক্ষন, কৃষকের বংশপরমপরায় সঞ্চিত জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সমন্বয়ে চাষই ধানের সুস্থায়ী উচ্চফলনের একমাত্র উপায়।

১. IR ভ্যারাইটি্র উচ্চফলন; একটি আনবিক জীব-বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন

সবুজ বিপ্লবের ধান অর্থাৎ IR ভ্যারাইটিগুলির অধিক ফলনের আনবিক-জীববৈজ্ঞানিক কৌশলটি আলোচনা না করলে এই ভ্যারাইটি গুলির চাষের সথে কৃষি বাস্তুতন্ত্রের বিপর্য্যয়ের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা সম্যক ভাবে বোঝা সম্ভব নয়। IR ভ্যারাইটিগুলি উচ্চতায় খর্ব, এবং এর খর্বাকৃতি নিয়ন্ত্রক জীন টির নাম sd1, এই জীনটি ধানের ১নং ক্রোমসোমে অবস্থান করে। ধান গাছের শরীরে জিব্বারেলিন নামক হর্মোন তৈরীর জন্য যে সমস্ত উৎসেচক প্রয়োজন হয় তাদের মধ্যে GA20 Oxydase উৎসেচকটির গঠন sd1 জীনের কারনে ত্রুটি পুর্ন হয়। ফলে জিব্বারেলিন হর্মোন উৎপাদন ব্যাহত হয়। ধান গাছের কান্ডে জিব্বারেলিনের মাত্রা কম হবার দরুন কান্ডের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় তাই ধানগাছগুলি খর্বাকৃতি হয়। ধানে sd1 জীনের পরিবর্তে তার স্বাভাবিক এ্যালিল থাকলে সক্রিয় GA20 Oxydase উৎসেচক তৈরী হয়, সেক্ষেত্রে ধানগাছ খর্বাকৃতি হয়না।  ধানের তিন নং ক্রোমোসমে অবস্থিত আর একটি জীনও সক্রিয় GA20 Oxydase উৎসেচক তৈরী করতে পারে, কিন্তু এই জীনটি প্রধানতঃ ধানের ফুলে সক্রিয় থাকে (Ashikari  et al 2002, Spielmeyer et al 2002)। তাই sd1 জীনের উপস্থিতিতে কান্ডে জিব্বারেলিনের মাত্রা কম হলেও ফুলে কম হয়না। এর ফলে অত্যাধীক রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ধানগাছ লম্বায় বড় হয়না ঠিকই, কীন্তু তার শীষ ও দানার বৃদ্ধি ভালো হয়।খর্বাকৃতি হবার জন্য এই ধান গাছের ঢলে পরে যাবার (Lodging) প্রবনতা যথেষ্ট কম হয়। ধানগাছের উচ্চতা কম হবার কারনে ধানের দানা ও ভূমির উপর অবস্থিত ধানগাছের সমস্ত অংশের ওজনের অনুপাত (Harvest Index)বৃদ্ধি পায়।IR ভ্যারাইটিগুলি sd1 জীন সম্পন্ন। জমিতে যথেষ্ট রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলেও এরা ঢলে পরে যায়না বরং এদের দানা সুপুষ্ট হয়, রাসায়নিক সারের (প্রধানত নাইট্রোজেন ঘটিত) প্রতি এহেন সাড়া দেবার ক্ষমতাই এদের ফলন বৃদ্ধির  প্রধান কারন (Khush 1995, Khush 2001, Okuno  et al.2014)।

২. IR ভ্যারাইটি ও কৃষি-বাস্তুতন্ত্রের বিপর্য্যয়

২.১. ক্ষতিকর পোকার প্রাদুর্ভাব- IR ভ্যারাইটিগুলি থেকে বেশি ফলন পাবার জন্য প্রচুর পরিমানে রাসায়নিক সারের (যাদের মধ্যে নাইট্রোজেন অন্যতম) ব্যবহার শুরু হয়। অধিক নাইট্রোজেন সারের ব্যবহারের ফলে ধানের সিলিকন শোষন করার ক্ষমতা ব্যাহত হয় (Savant et al. 1996), সিলিকার অভাবে ধানের কান্ডের দৃঢ়তা কমেযায়, ঝলসা রোগের (Rice Blast) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে(Kaufman 1985, Currie and Perry 2007) নাইট্রোজেন সার ধানের দেহরসে দ্রবনীয় প্রোটিনের পরিমান বৃদ্ধি করে, সিলিকন শোষন ব্যাহত করে কান্ডকে দুর্বল করে, এই সকল কারনে ধানগাছ সহজেই রোগ, পোকা বা প্রতিকুল আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়,মাজরা জাতীয় কান্ডে ছিদ্রকারি পোকার ও শোষক পোকার উপদ্রব বাড়ে (Yoshida 1975, Yoshida 1981, Bandong  et al. 2005, Rashid  et al. 2016)। এছাড়া নাইট্রোজেন সার বাদামী শোষক পোকার প্রাকৃতিক শত্রুদের দুর্বল করে দেয় (Zhu P et al 2020), এবং শোষক পোকার বাস্তুতান্ত্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে (Lu  et al 2004, Rashid  et al. 2017)। নাইট্রোজেন সার ব্যবহার বৃদ্ধির কারনেই ১৯৭০ আর ৮০র দশকে বাদামী শোষকের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছিলো (Dyck et al, 1979; Heinrichs and Mochida, 1984)। সাধারনভাবে দেখা গেছে নাইট্রোজেন সার ব্যবহার বাড়লে সামগ্রিকভাবে উদ্ভিদভোজি পতঙ্গের খাদ্যের প্রতি আসক্তি, খাদ্য গ্রহনের পরিমান, টিকে থাকার ক্ষমতা, বৃদ্ধি, প্রজনন হার, এবং জন ঘনত্ব (Population Density) বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন ধরে প্রচুর নাইট্রোজেন সারের ব্যবহারের ফলে এশিয়ার বিভিন্ন অংশে শোষক পোকা (Nilaparvata lugens and Sogatella furcifera), পাতামোরা পোকা (Cnaphalocrocis medinalis), মাজরা জাতীয় কান্ডে ছিদ্রকারি পোকার (Scirpophaga incertulas, Chilo suppressalis, S. innotata, C. polychrysus and Sesamia inferens) বিপুল বাড়বাড়ন্ত হয়েছে (Lu  2007)।

তবে শুধু নাইট্রোজেন সারের কারনেই নয়, IR ভ্যারাইটিগুলির জীনগত বৈশিষ্টের কারনেও তারা ক্ষতিকর পতঙ্গের প্রতি সংবেদনশীল। sd1 জীনের কারনে কান্ডে লিগনিন নামক বহুশর্করার পরিমান কমে যায় (Okuno et al 2014)। লিগনিন কান্ডকে দৃঢ়তা দেয়, তাই sd1 জীনের প্রভাবেও কান্ডের দৃঢ়তা কমে। লিগনিন কান্ডে ছিদ্রকারি পোকার বিরুদ্ধে গাছকে প্রতিরোধ ক্ষমতা যোগায় (Bandong  et al. 2005), sd1 জীনের প্রভাবে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।IR ভ্যারাইটিগুলি সবই তাই কান্ডে ছিদ্রকারি পোকার প্রতি হয় সংবেদনশিল অথবা অল্প  প্রতীরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। তাছাড়া দেখাগেছে রাসায়নিক সার কীটনাশক বর্জিত ধান ক্ষেতের ধান গাছের বিশেষ পুষ্টিগত অবস্থা শোষোক পোকাকে (Sogatella furcifera) প্রতিহত করে (Kajimura et al 1995)। সবুজ বিপ্লবের পর জৈব চাষ কমে যাওয়ায় এই পোকার বাড়বারন্ত হয়। এইভাবে নানান বাস্তুতান্ত্রিক ও জেনেটিক কারনে ক্ষতিকর পোকার যে প্রাদুর্ভাব শুরু হলো তাকে নিয়ন্ত্রনের জন্য এলো রাসায়নিক কীটনাশক বিষ। বিষের ব্যবহার পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুললো। ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে ইন্দোনেশিয়ায় মাজরা পোকা দমনের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর কীটনাশক ছড়ানো হয়েছিলো, এর ফলে ১৯৭৪ সাকলের মধ্যে বাদামী শোষক পোকা ভয়ঙ্কর ক্ষপ্তিকারক পোকা হিসাবে দেখাদিলো যার ক্ষতি করার ক্ষমতা মাজরা পোকার থেকে অনেক বেশী (Settle et al. 1996) । বাদামি শোষক পোকার প্রাদুর্ভাবের অন্যতম প্রধান কারন ছিলো রাসায়নিক কীটনাশক বিষের ব্যবহার। একদিকে এই বিষগুলি বাদামী শোষকের প্রাকৃতিক শত্রুদের ধ্বংস করে, তাছাড়া যে মাত্রায় এই বিষ বাদামী শোষককে মেরে ফেলে তারথেকে কম মাত্রায় (Sub leathal dose)এগুলি বাদামি শোষকের প্রজনন ক্ষমতাকে উদ্দিপ্ত করে (Heinrichs & Mochida, 1984; Kenmore et al., 1984; Gallagher et al., 1994;Way & Heong, 1994)। কীটনাশক বিষ ঠিক কিভাবে পেষ্টের উত্থান ঘটায় তার সম্যক ব্যাখ্যার জন্য ধানক্ষেতের খাদ্যজাল কিভাবে পেষ্ট নিয়ন্ত্রন করে এবং কীটনাশক বিষ কিভাবে এই নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থাকে নষ্ট করে তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা প্রয়োজন।

২.১.১. ধানক্ষেতের খাদ্যজাল ও ক্ষতিকর পোকার নিয়ন্ত্রন-  ধানক্ষেতের বাস্তুতন্ত্র ও ক্ষতিকর পোকা বা পেষ্টের (মুলতঃ বাদামী শোষক পোকা, বৈজ্ঞানিক নাম Nilaparvata lugens) উত্থানের সম্পর্ক নিয়ে মুল্যবান গবেষনা করেছেন William Settle ও তার সহকর্মি বৃন্দ (Settle et al 1996)। তারা ধানক্ষেতে যে ৭৬৫ রকম পোকা মাকরের সন্ধান পেয়েছিলেন তাদের চারটি গোষ্টিতে ভাগ করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে ছিলো ১২৭ টি শাকাশি প্রজাতি, ১৪৫ টি প্রজাতির খাদ্য ছিলো প্ল্যাঙ্কটন আর পচনশীল জৈব পদার্থ, ১৮৭ টি ছিলো পরজিবী আর ৩০৮ টি ছিলো মাংসাশী। শাকাশি প্রজাতিগুলির মধ্যেই কোনো কোনো টা ধানের ক্ষতিকর পোকা বা পেষ্ট হয়ে ওঠে কারন তারা ব্যাপকহারে ধানগাছের বিভিন্ন অংশ খেয়ে ফেলে ফলনের ক্ষতি করে দেয়। অন্যদিকে পরজীবি আর মাংসাশিদের বন্ধু পোকা বলা হয়, কারন তারা শাকাশিদের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে বা তাদের খেয়েফেলে নিয়ন্ত্রনে রাখে। দেখাযাচ্ছে যে কিটনাশক বিষ বব্যবহার না করলে এবং জৈব সার বব্যবহার  করলে এই পরজীবি আর মাংসাশিদের সংখ্যা শাকাশিদের প্রায় ৪ গুন থাকে। ধানজমির মাটিতে জৈব সার যথেষ্ট পরিমানে থাকলে জল জমার পর সেখানে প্রচুর পরিমানে zoo plankton বা প্রাণীকনা তৈরি হয়, তাই প্ল্যাঙ্কটন আর পচনশীল জৈব পদার্থ যে সব পোকারা খায় তাদের প্রচুর বাড় বাড়ন্ত ঘটে। এইসব পোকাদের খায় মাংসাশিরা, ফলে তারাও সংখ্যায় বাড়ে। তাই ধান রোয়ার একেবারে শুরুর থেকেই মাংসাশি পোকা মাকড়ের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি থাকে। পেষ্টদের আগমন ঘটে একটু পরে। ধান গাছ একটু বড় হলে পাতাখেকো পোকা আর কান্ডে ফুটো করা পোকারা আসে, তারপর ফুল ফুটলে আরও কিছু পোকা আসে, এদেরে মধ্যে কেউ কেউ ধানের রস চুষে খায়। কিন্তু এরা যখন আসে তার আগে থেকেই ধানক্ষেতে মাংসাশি পোকাদের সংখ্যা এত বেশি থাকে যে তাদের দাপটে এই পেষ্টদের সংখ্যা খুব একটা বাড়তে পারেনা। ধানক্ষেতে যে ব্যাঙ, গিরিগিটি প্রভৃতি প্রাণীরা থাকে তারাও অনেক পোকা খেয়ে তাদের নিয়ন্ত্রন করে। ফিঙে, প্যাঁচা এই সব পাখিরাও পোকা নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা নেয়। সাপ এবং প্যাঁচা ইঁদুর জাতীয় স্তন্যপায়ীদের খেয়ে ফেলে। এইসব মাংসাশি সরিসৃপ ও পাখির উপস্থিতির কারনে ইঁদুররা যথেষ্ট ভয়ে ভয়ে থাকে, ফলে তাদের প্রজনন হার খুব কম হয়। লক্ষীপ্যাঁচা (Tytus alba) এক নিপুন শিকারি। প্রজনন ঋতুতে একজোড়া লক্ষিপ্যাঁচা প্রায় ৫০০০ হাজার ইঁদুর শিকার করে (Keene 2009)। তাই ধানক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব কমাতে লক্ষীপ্যাঁচা বিশেষ ভুমিকা নেয়। ধানক্ষেতের মাছ শধু প্রোটিনের ভালো উৎসই নয় পেষ্ট নিধনেও খুবই উপযোগী। চীনে জল জমা ধানক্ষেতে মাছচাষ সংক্রান্ত একটি গবেষনায় দেখা গেছে যে ধানক্ষেতে মাছের সক্রিয়তা সাধারন পুকুরের মাছের থেকে বেশি। ধানক্ষেতের মাছ মাঝে মাঝেই ধান গাছে ধাক্কামারে। এই ধাক্কার চোটে ধান গাছের অনেক পোকা ছিটকে জলে পরে এবং মাংসাশি মাছেরা তাদের খেয়ে ফেলে। দেখাগেছে যে এই ভাবে ধানক্ষেতের মাছ প্রায় ৬৮% পোকার আক্রমন কমায় (Xie et. al. 2011)।

২.১.২. কীটনাশক বিষ ও পেষ্টের উত্থান-আগে ভারতে লক্ষাধিক দেশী ধানের জাত ছিলো, আজ খুঁজলে দু হাজারটিও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। ভারতে মোট ধান উৎপাদনের ৯০% আসে মুষ্টিমেয় কয়েকটি sd1 জীন সম্পন্ন আধুনিক ভ্যারাইটি থেকে। sd1 ভ্যারাইটি গুলিতে দানা এবং খড়ের ওজনের অনুপাত ১:২ প্রায়। অপরদিকে দেশি ধানে দানা ও খড়ের ওজনের অনুপাত ১:৪ থেকে ১:৫। অর্থাৎ sd1 ভ্যারাইটি চাষে খড়ের পরিমান তুলনামুলক ভাবে অনেক কম হয়, ফলে গবাদিপশুর খাদ্য বা মালচিং (আগাছা নিয়ন্ত্রন ও অন্যান্য সুবিধার জন্য মাটি ঢেকে রাখা) এর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের অভাব ঘটে। সবুজ বিপ্লবের আগে রবি ও প্রাক খারিফে ডাল শষ্যের চাষ হোতো, ডালের ভুষাও গবাদী পশুর গুরুত্বপুর্ন খাদ্য ছিলো, তার যোগানও কমতে থাকলো। একদিকে গবাদী পশুর খাদ্যের যোগান কমে যাওয়া, অন্যদিকে চাষের কাজে হাল বলদ, গোরুর গাড়ি,ইত্যাদির পরিবর্তে ট্রাকটরের ব্যাবহার বাড়া, এর সম্মিলিত প্রভাবে চাষিদের মধ্যে গোরু পোষার রেওয়াজ কমতে থাকে। ফলে জমিতে জৈব সারের ব্যবহারও কমতে থাকে (Shiva 1991)। জলমগ্ন ধান জমিতে জৈব পদার্থ কম থাকলে যথেষ্ট পরিমানে zoo plankton তৈরি হয়না, যে পোকারা প্ল্যাঙ্কটন অথবা পচনশীল জৈব পদার্থ খায় তদের সংখ্যা তেমন বাড়েনা, ফলে তাদের যে মাংসাশীরা খায় তাদের সংখ্যাও বাড়েনা। এই পরিস্থিতিতে যখন ধানক্ষেতে পেষ্টের আক্রমন ঘটে তখন তাদের খেয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট মাংসাশী পোকা উপস্থিত থাকে না। পেষ্টদের খাবার জন্য যখন মাংসাশিরা আসতে শুরু করে তার মধ্যেই পেষ্টরা ধানের ভালো রকম ক্ষতি করে দেয়। নাইট্রোজেন সারের বিপুল ব্যবহার পেষ্টের পক্ষে অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে। এর সম্মিলিত প্রভাবে এমন অনেক পোকা পেষ্ট হয়ে উঠতে থাকে যাদের আগে বিশেষ ক্ষতি করার ক্ষমতা ছিলোনা ।  জৈব সারের ব্যবহার কমা এবং sd1 ভ্যারাইটির পেষ্টের প্রতি সংবেদনশিলতা, নাইট্রোজেন ঘটিত রাসায়নিক সারের ব্যবহার বৃদ্ধি এগুলি সামগ্রিক ভাবে পেষ্টের প্রাদুর্ভাব ঘটায়। অবস্থা সামাল দেবার জন্য কৃষি বিঞ্জানীরা কীটনাশক বিষ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এই বিষ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। বিষের প্রভাবে যেমন পেষ্টরা মারা পরে তেমনি অন্যান্য পোকা যেমন যারা প্ল্যাঙ্কটন বা পচনশীল জৈব পদার্থ খায়, যারা মাংসাশী তারাও মারা পরে। পেষ্টদের অন্যান্য প্রাকৃতিক শত্রু যেমন ব্যাঙ, মাছ, গিরগটি, পাখি, তারাও মারা পরে। পোকা মারা বিষের প্রভাবে সব পোকা মরেনা কেউ কেউ আধমরা হয়েও বেঁচে থাকে তাদের শরীরে ওই বিষ অল্প পরিমানে সঞ্চিত থাকে। আবার পোকারা খুব দ্রুত বিভিন্ন বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে,  র‌্যাচেল কারসনের লেখা বিখ্যাত বই দি সাইলেন্ট স্প্রিং থেকে জানতে পারাযাচ্ছে যে ১৯৮৫ সালের মধ্যেই প্রায় সাড়ে চারশো রকমের পোকা বিভিন্ন বিষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছিল। এই সব পোকাদের শরীরে বিষ ঢুকবে কিন্তু তার মরবে না। কিন্তু কোনো ব্যাঙ বা গিরিগিটি যদি এরকম ১০০ টি পোকা খায়, তাহলে এই ১০০ পোকার দেহে সঞ্চিত বিষ তার দেহে ঢুকবে এবং সেটি মরে যাবে। আবার ধরাযাক ব্যাঙটি ৮০ টি পোকা খেলো, ফলে মরলোনা কিন্তু ঐ ৮০ টি পোকার বিষ তার দেহে সঞ্চিত থাকলো। কোনো সাপ এই ধরনের ১০ টি ব্যাঙ খেলো, তাহলে ১০x৮০ = ৮০০ টি পোকার বিষ সেই সাপের দেহে ঢুকবে এবং সাপটি মরে যাবে। ইকলজির পরিভাষায় যাকে বলে Biological Magnification। এই ভাবে Biological Magnification এর কারনে ব্যাঙ, গিরিগিটি, সাপ, প্যাঁচা ইত্যাদি শিকারি প্রানির সংখ্যা দ্রুত কমতে থাকে। মাছেরা খুব সামান্য পরিমানে কীটনাশক বিষেও মারা পরে (Cagauan 1995), কীট নাশকের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে ধানক্ষেতের মাছ বিলুপ্ত হতে থাকে। এর সামগ্রিক ফল হিসাবে ধানক্ষেতে পেষ্টের আক্রমন হু হু করে বাড়তে থাকে, প্রচুর কীটনাশক ব্যবহার করেও যা আর সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা। সবুজ বিপ্লবের ভ্যারাইটিগুলির ব্যাপক প্রচলনের আগে রাসায়নিক কিটনাশক বিষ কৃষিতে আদৌ গুরুত্বপুর্ন ছিলোনা (Pingali, Hossain and Gerpacio  1997)। ১৯৬৫ সালের পরথেকে (অর্থাৎ সবুজ বিপ্লবের পর থেকে) ধানক্ষেতে রোগ ও পোকার প্রাদুর্ভাব অনেকগুন বাড়ে। শ্যামাপোকা, যা ধানের টুংরো ভাইরাসের বাহ্‌ক, এবং বাদামী শোষক পোকা প্রধান উপদ্রব হিসাবে দেখা দেয় (Teng 1990)। ১৯৬৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ভারতের ধান ক্ষেতে বহু নোতুন প্রজাতির পোকা পেষ্ট হিসাবে আবির্ভুত হয়েছে এবং সামগ্রিক ভাবে পেষ্টের উপদ্রব ৫০০% বেড়েছে (Krishnaiah,  & Varma,  2011)।

২.২ কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস- 

২.২.১ জলমগ্ন ও লবনাক্ত জমি- সাধারন ভাবে দেশীয় ধানের জাতগুলির ফুল ফোটার বিষয়টি দিনের মধ্যে কতক্ষন সুর্যালোক থাকবে তার ওপর নির্ভরশিল। এই ধরনের জাতগুলিকে বলা হয় Photoperiod Sensitive এবং এগুলিকে বছরের একটি নির্দিষ্ট ঋতুতেই কেবল চাষ করা যায়। IR ভ্যারাইটী গুলি ছিলো Photoperiod Insensitive এদের ফুল ফোটার জন্য দিনের মধ্যে কতক্ষন আলো থাকছে বা থাকছেনা সেটা গুরুত্বপূর্ন নয়। তাই এই ভ্যারাইটিগুলিকে বছরের মধ্যে যে কোনো ঋতুতেই চাষ করা যায়।সবুজ বিপ্লবের ধানগুলি একেবারেই জলাভাব সহ্য করতে পারতোনা (Vikram et al 2015) এদের চাষের জন্য প্রচুর জলের প্রয়োজন হতো। জলসেচের সুবিধা বিস্তারের সাথে সাথে তাই এই ধানের জাতগুলিকে ক্রান্তিয় এশিয়ার এক বিস্তির্ন অঞ্চল জুড়ে সারা বছর ধরে চাষ করা শুরু হয় (Khush 1995)।এই কারনে সবুজ বিপ্লবে ধানের উৎপাদন অনেকটা বাড়ে। খারাপ নিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত অসমতল জমিতে ক্রমাগত নিবীর সেচের জন্য জমির ভুগর্ভস্থ জলতল উপরে উঠে আসে। অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অঞ্চলে জমিগুলির উপরিতলথেকে জলের বাষ্পীভবনের হার বৃষ্টিপাতের থেকে বেশি হয়। এই অঞ্চলে জমিতে জল সেচ হলে জমির উপরিতল থেকে জল বাস্পীভুত হয় কিন্তু জলে দ্রবীভূত সামান্য লবন রয়ে যায়। জমি সেচপ্লাবিত হওয়া এবং উপরিতলের জল বাষ্পীভুত হওয়া ক্রমাগত চলতে থাকলে জমিতে লবনাক্ততার সমস্যা দেখাদেয়। অপেক্ষাকৃত আর্দ্র অঞ্চলের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে জমির উপরে সঞ্চিত লবন ধুয়ে চলে যায় তাই এখানে লবনাক্ততার সমস্যা বিশেষ দেখা যায়না কিন্তু এখানে ক্রমাগত জলসেচ ও দুর্বল নিকাশী ব্যবস্থার কারনে জমিগুলি হয়ে পড়ে জলমগ্ন ( Pingali PL, Hossain M and Gerpacio RV 1997)। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের বিস্তির্ন জমি এইভাবে নিবীর সেচের কারনে লবনাক্ত হয়ে পরে। ১৯৮৯ সালে Postel হিসেব করেছিলেন যে পৃথিবীর মোট সেচ সেবিত জমির ২৪% লবনাক্ততার সমস্যায় জর্জরিত। ১৯৮৬ সালে ভরত ডোগরা (Dogra) দেখিয়েছিলেন ভারতের ৪৫ লক্ষ হেক্টর জমি লবনাক্ত এবং আরও ৬০ লক্ষ হেক্টর জমি জলমগ্ন। জমি লবনাক্ত হলে ধানের ফলন কমে কিন্তু দীর্ঘদিন লবনাক্ত থাকলে তা ফসল ফলানোর অনুপযুক্ত হয়ে যায় (Samad et al., 1992; Postel, 1989; Mustafa, 1991)।

২.২.২. খনিজ মৌল ও জৈব পদার্থের ঘাটতি-  জমি জলমগ্ন থাকলে মাটির জৈব পদার্থের বেশকিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং অনুজীবগুলির কর্মক্ষমতা বদলে যায় এর সম্মিলিত প্রভাবে মাটির উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন সরবরাহ করার দক্ষতা হ্রাস পায় (Cassman et al., 1994)। বছরে দু তিন বার জমি জলমগ্ন করে ধান চাষ করলে জমির নাইট্রোজেন সরবরাহ করার ক্ষমতা অত্যন্ত কমে যায় তখন ফলন ধরে রাখতে গেলে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন ঘটিত সার ব্যবহার করতে হয় ( Pingali PL, Hossain M and Gerpacio RV 1997)। দীর্ঘকালিন গবেষনায় দেখাগেছে এই ভাবে জমি জলমগ্ন রেখে ধানচাষ করলে ২০ বছরে ধানের ফলন প্রায় ৩০% হ্রাস পায় (Cassman and Pingali 1995)। সবুজ বিপ্লবের আগে ভারতে রবি ও প্রাক খারিফ মরশুমে (শুষ্ক ঋতুতে)ধান জমিতে বিউলি বা মুগডাল চাষের রেওয়াজ ছিলো এর ফলে জমির নাইট্রোজেন সরবরাহ করার ক্ষমতা শুধু অক্ষুন্নই থাকতো না, প্রতি হেক্টর জমিতে ৩০ কেজি বায়বিয় নাইট্রোজেন আবদ্ধ হতো ( Pingali PL, Hossain M and Gerpacio RV 1997)। সবুজ বিপ্লবের প্রসারের সাথে সাথে এশিয়ার বিস্তির্ন অঞ্চলের ধান জমিতে ফসফরাস ও পটাশিয়ামের অভাব দেখাদেয় যেখানে আদৌ এই মৌলগুলির অভাব ছিলোনা। চীনের দুই তৃতীয়াংশ জমিতে এবং ভারতের প্রায় অর্ধেক জেলার জমিতে পটাশিয়ামের অভাব সৃষ্টি হয়েছে (Stone, 1986; Tandon, 1987; Desai and Gandhi, 1989)। ভারতে সবুজ বিপ্লবের অন্যতম পীঠস্থান হরিয়ানা রাজ্যে ১৯৮০ সালে মাত্র ৩% জমিতে ফসফরাসের অভাব ছিলো ১৯৯৫ সালে ৭৩% জমিতে ফসফরাসের অভাব দেখা দিয়েছে। ১৯৮০ তে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ জমির পরিমান ছিলো ৯১%, ১৯৯৫ তে তা কমে দাঁড়ায় ৬১% এ (Singh 2000)। ধানজমি ক্রমাগত জলমগ্ন থাকলে দস্তার লভ্যতাও কমতে থাকে। ভারতে সবুজ বিপ্লবের অন্যতম পীঠস্থান পাঞ্জাবের মধ্য ও দক্ষিন-পশ্চিম অংশের অধিকাংশ জেলার জমিতে দস্তার অভাব দেখা দিয়েছে। বহু জায়গায় যেখানে ক্রমাগত ধানের পর গম চাষ করা হচ্ছে সেখানে লোহা ও ম্যাঙ্গানিচের অভাবও প্রকট। পাঞ্জাবে জমির উর্বরতাশক্তিও দ্রুত হারে কমেছে।১৯৭০-৭১ সালে প্রতি হেক্টরে ৩৭ কেজি সার প্রয়োগ করে যে ফলন পাওয়া যেত, ২০১০-১১ সালে সেই পরিমান ফলন পেতে হেক্টর প্রতি ২৪৩ কেজি সার প্রয়োগ করতে হয়েছে।রাজ্যের অধিকাংশ জমিতেই নাইট্রজেন ও দ্রবনীয় ফসফরাসের পরিমান নিচু থেকে মাঝারি। সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু জমিতে সালফারের অভাব দেখাগেছে (Singh, Grover, Dhaliwal 2012)।

ভারতের কৃষি জমির দুই তৃতীয়াংশই অসুস্থ (11Th Five year plan, GOI)। ভারতের কৃষি মন্ত্রক থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভারতীয় কৃষি জমির রিক্ততার নিম্ন লিখিত কারনগুলিকে স্পষ্ট ভাষায় চিহ্নিত করা হয়েছে।

১. বার্ষিক এক কোটি টন হারে মাটির পুষ্টি পদার্থের অপসারন।

২. মাটিতে স্বল্প-মৌলিক উপাদনের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি।

৩. ভৌম জলের স্তর নিচে নেমে যাওয়া।

৪. জমির জৈব কার্বনের ক্ষয়।

 সবুজ বিপ্লবের ৬ দশক পরে এই হলো ভারতের কৃষি জমির অবস্থা। সুষম সার প্রয়োগ না করে নাইট্রোজেন সার অতিরিক্ত প্রয়োগ, দীর্ঘ সময় ধরে ধানক্ষেত জলমগ্ন করে রাখা, ক্রমান্বয়ে কেবল ধানের পরে গম ও গমের পরে ধান চাষ করা, অনুখাদ্য সার প্রয়োগ না করা ইত্যাদি এই বিপর্য্যয়ের কারন (Desai and Gandhi 1989; Moormann and van Breemen 1978; Lopes 1980; Singh 2000)। সবুজ বিপ্লবের জন্য খর্বাকৃতি ধান ও গম চাষ শুরু হয়। এগুলির হারভেষ্ট ইনডেক্স (দানার ভর ও দানা সমেত গাছটির মাটির উপরের অংশের মোট ভরের অনুপাত) ০.৩। দেশী ধানগুলির হারভেষ্ট ইনডেক্স ০.১২-০.২। এমতাবস্থায় খর্বাকৃতি ভ্যারাইটির ধান বা গমের দানা যখন শহরে রপ্তানী হচ্ছে তখন মাটি থেকে শোষিত মৌলের যে অংশ কৃষি জমি থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তা দেশি ধান বা গমের তুলনায় অন্ততঃ ১০ থেকে ১৮% বেশি। এই মৌলগুলি আর কখনই প্রাকৃতিক জৈব ভু রাসায়নিক চক্রের মাধ্যমে কৃষি জমিতে ফেরত আসতে পারবে না। দেশি ধান বা গম হলে এই অপসারনের পরিমান তুলনায় ধীরে হতো। কৃষিজমিতে স্বল্পমাত্রিক ও অতিমাত্রিক মৌলের দ্রুত ঘাটতির এটাও একটা উল্লেখযোগ্য কারন।

বলা হয়ে থাকে যে আজ যে পরিমান ফসল উৎপাদন হচ্ছে, সবুজ বিপ্লব নাহলে পৃথিবীতে সেই পরিমান ফসল উৎপাদন করতে আরও অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াই কোটি হেক্টর জমিকে কৃষি কাজের আওতায় আনতে হতো (Pingali 2012)। কিন্তু দেখাযাচ্ছে সবুজ বিপ্লব করতে গিয়ে শুধু ভারতে ১৯৮৬ সালের মধ্যে এক কোটি পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমি হয় জলমগ্ন নয়তো লবনাক্ত হয়ে পরেছিলো (Dogra 1986), ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জমিতে নানান স্বল্প ও অতিমাত্রিক মৌলের অভাব দেখা দিয়েছে। সামগ্রিক ভাবে ভারতের দুই তৃতিয়াংশ কৃষি জমিই অসুস্থ। পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই তীব্র ভাবে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই সবুজ বিপ্লবের ফলে কৃষি জমির সম্প্রসারন যে পরিমানে রোধ করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবী করা হচ্ছে প্রায় সেই পরিমান উর্বর কৃষি জমিই এই প্রযুক্তির প্রভাবে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে গেছে।

৩. ফলন

৩.১. IR ভ্যারাইটির ফলন পেষ্টের প্রাদুর্ভাব, কৃষি জমির উর্বরতা হ্রাস ইত্যাদি যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই থাকনা কেনো IR ভ্যারাইটি গুলির ফলন যে দেশীয় ধানের থেকে অনেক বেশী ছিলো এনিয়ে প্রচলিত ধারার কৃষি বিজ্ঞান ও কৃষি অর্থনীতিতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্রে তৈরি করা ভ্যারাইটী IR8 এর গড় ফলন ছিলো খারিপ মরশুমে প্রতি হেক্টরে ২৭৮৪ কেজি আর বোরোতে ৪৫৬৪ কেজি (Khush  and Virk 2005)। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করে এই ফলন আরও বাড়ানো যেতো। যেমন কৃষি বিজ্ঞানী সুজিত কুমার দে দত্ত সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও জল সেচ করে IR8 এর ফলন পেয়েছিলেন হেক্টরে ৯.৪ টন (Wikipedia)। পরবর্তি কালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্র থেকে আরও অধিক ফলনশীল ভ্যারাইটি তৈরী করা হয়াছিলো যাদের গড় ফলন ছিলো বোরো মরশুমে ৫.৮ থেকে ৫.৯ টন প্রতি হেক্টর এবং খারিপ মরশুমে ৩.৬ থেকে ৪.৩ টন প্রতি হেক্টর (Khush  and Virk 2005)। ১৯৯৬ এবং ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্রে IR64 র ফলন হয়েছিলো যথাক্রমে ৮.৭৬ ও ৮.২৮ টন প্রতি হেক্টর, আর IR72 র ফলন হয়েছিলো ৯.৫ ও ৯.০৬ টন প্রতি হেক্টর। IR72 হলো আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্রের তৈরীকরা সর্বোচ্চ ফলনশীল আর IR64 সর্বাপেক্ষা বহুল প্রচারিত ধান ( Peng et al. 2000)।

৩.২ Green Super Rice বর্তমান বিশ্বে ধান চাষের সমস্যাগুলির মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির জীব, বন্য ধান, দেশীয় ধানের নানান ভ্যারাইটি থেকে নানান জীন সংগ্রহ করে জীন প্রযুক্তি ও সংকরায়ন পদ্ধতিতে একটি ধানের ভ্যারাইটির মধ্যে সেগুলিকে একত্রিত করে সর্বরোগ ও পতঙ্গ প্রতরোধি, সর্বপ্রকার প্রতিকূল আবহাওয়া সহনক্ষম, উচ্চফলনশীল, সুস্বাদু, এককথায় সর্বগুণসমন্বিত ধানের ভ্যারাইটী তৈরী করা হয়েছে। এই ধানের নাম দেওয়া হয়েছে Green Super Rice সংক্ষেপে GSR।বলা বাহুল্য এই GSR ধান অচিরেই একটী মেগা ভ্যারাইটি হয়ে উঠবে।ইতিমধ্যেই এশিয়া ও আফ্রিকার ১৬ টি দেশে এই ধানের চাষ শুরু হয়েছে (Yu 2020)। প্রধানত চীন সরকার, বিল ও মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এই গ্রীন সুপার রাইস সংক্রান্ত গবেষনাগুলি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ধানের প্রায় ৩০০০ বিভিন্ন চরিত্রের নিয়ন্ত্রক জীন সমুহকে চিহ্নিত করা, বিচ্ছিন্ন করা ও ক্লোন করা সম্ভব হয়েছে (Yu 2020)। এদের মধ্যে যেগুলি রোগ পোকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা যোগায়, খরা, বন্যা, লবনাক্ততা, অনুর্বরতা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে সহনশীলতা যোগায়, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ায়, ফলন বাড়ায়, ঢলে পরার প্রবনতা কমায় তাদের সবুজ জীন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কারন এই জীনগুলি ধান চাষে রাসায়নিকের ব্যবহার কমাবে, ফলে পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে। এই সমস্ত ‘সবুজ’ জীনগুলি একটি মাত্র ধানের ভ্যারাইটিতে একত্রিত করাই হল গ্রীন সুপার রাইস তৈরীর প্রধান কৌশল। এখানে এক একটি রোগ ও পেষ্ট প্রতিরোধে সক্ষম একাধিক গুরুত্বপুর্ন জীনকে একত্রিত করে উচ্চ মাত্রার প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে(Yu 2020)। লেপিডপ্টেরা গোত্রের পেষ্ট (যেমন মাজরা পোকা) প্রতিরোধ করার জন্য এখানে বিভিন্ন Bt জীনও ব্যবহার করা হচ্ছে (Zhang 2007)। গ্রীন সুপার রাইসের সর্বোচ্চ ফলন মোটামুটি ভাবে প্রতি হেক্টরে ১০ টন । এ ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে ১০০ কেজি নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রয়োগের প্রয়োজন পরে এবং সুসংহত পেষ্ট নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির(Integrated Pest Management) মাধ্যমে রোগ ও পোকার আক্রমন প্রতিহত করা হয় (Susanto 2020 and Yu 2020)। প্রতিকুল পরিবেশে অবশ্য ফলন এর থেকে অনেক কম হয়। যেমন জলের স্বল্পতা আছে এমন পরিবেশে ১০ টি গ্রীন সুপার রাইস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের ফলন আমন মরশুমে প্রতি হেক্টরে ১৭৪৩ থেকে ৩৮৫৯ কেজি এবং বোরো মরশুমে ৩৩১১ থেকে ৫২২২ কেজি হয়েছে। ধানের বীজ জমিতে সরাসরি ছিটিয়ে বোনা হয়েছিলো, হেক্টরে ৪০ কেজি P2O5 , ৪০ কেজি K2O এবং ১৫০ কেজি নাইট্রোজেন সার ব্যবহার করা হয়েছিলো। সরাসরি ছিটিয়ে বোনা জমিতে আগাছার বাড় বৃদ্ধি হয়, এক্ষেত্রে আগাছা দমনের জন্য দুটি আলাদা ব্যবস্থা হয়েছিলো প্রথম ক্ষেত্রে বীজ বোনার এক দিন পর হেক্টরে ৭৫০ গ্রাম Oxadiazone প্রয়োগ করা হয়, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রতি হেক্টরে ৭৫০ গ্রাম Oxadiazone প্রয়োগের ২২ দিন পরে Fenoxaprop এবং Ethoxysulfuson এর মিশ্রন ৪৫ গ্রাম ও আরও ৯ দিন পর 24D ৫০০ গ্রাম প্রয়োগ করা হয়েছিলো। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সবসময়ই ফলন বেশি পাওয়া গেছে (Chauhan et al 2015)।

৩.৩ দেশী ধানের ফলন ভারতবর্ষ ধানের (Oryza sativa) ইন্ডিকা উপপ্রজাতির উৎপত্তি কেন্দ্র (Gross and Zhao 2014)। তাই সবুজ বিপ্লবের আগে এদেশে প্রায় এক লক্ষ জাতের ধান পাওয়া যেত (Richharia 1990)। এরকম বহু তথ্য রয়েছে যাতে নিঃসংশয়ে প্রমান করা যায় অনেক দেশী ধানের জাতের ফলন IR  বা GSR ভ্যারাইটিগুলির সমান বা তার থেকে বেশী ছিলো। সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারতের ধানের এই বিপূল জীব বৈচিত্রের অধিকাংশটাই নষ্ট হয়ে গেছে। টিকে থাকা জাতগুলির মধ্যেও IR বা GSR ভ্যারাইটির সাথে ফলনে পাল্লাদিতে পারার মত জাত রয়েছে। এমন অনেক জাত রয়েছে যাদের থেকে ভালো ফলন পাবার জন্য রাসায়নিক সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয়না। দেশি ধানের ফলন সংক্রান্ত তথ্য সমুহকে আমরা দুটি ভাগে আলোচনা করবো প্রথমতঃ ঐতিহাসিক তথ্য, যার উৎস বিভিন্ন শিলালিপী ও প্রাচীন পূঁথি সমুহ এবং দ্বিতীয়তঃ আধুনিক কৃষি পরিসংখ্যান ও বৈজ্ঞানিকদের গবেষনা লব্ধ তথ্য।

৩.৩.১. ঐতিহাসিক তথ্য  অত্যন্ত প্রামানিক ঐতিহাসিক গবেষনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে প্রাক স্বাধীনতা যুগে (যখন সম্পূর্ণ কৃষি রাসায়নিক বর্জিত দেশীয় ফসলের চাষ হত) এদেশের কৃষকেরা বর্তমানের তুলনায় অধিক হারে ফসল ফলাতে পারতেন।নীচের তালিকায় এ রকম কয়েকটি তথ্য সমাবেশিত হল।

তালিকা-২.

অষ্টাদশ শতকের শেষে ও উনবিংশ শতকের প্রথমে দক্ষিন ভারতের কয়েকটি জেলায় ধানের গড় উৎপাদন

জেলা বছর ফলন (টন/হেক্টার)
মাদুরা ১৭৯৬ ৩.২
চিঙ্গলেপুট ১৭৮৮ ২.৯
কোয়েম্বাটুর ১৮০৭ ৭.৪৩

উৎসঃ Alaev L.B., The system of agricultural production in South India. In Roychowdhury Tapan and Habib Irfan (eds.) The Cambridge Economic History of India. Vol.I, 1982.

তালিকা-৩

মুঘল যুগে উত্তর ভারতে ধানের ফলন

জমির প্রকৃতি উত্তম পোলাজ* মধ্যম পোলাজ* অধম পোলাজ*
ফলন(টন/হেক্টর) ৫.২ ৩.৪৫ ২.৬৩

*পোলাজ=প্রতিবছর চাষযোগ্য কৃষি জমি।

উৎসঃAin E Akbari, Edited by Ahmed Fajlur Rahaman, Bangla Academy Dhaka.

তিরুচিরাপল্লি থেকে প্রাপ্ত ৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের একটি শীলালিপি থেকে জানা যাচ্ছে যে একটি মন্দির ১২০কালাম(১ কালাম =২২০.৮ পাউন্ড) ধান/ ভেলি (১ ভেলি=৬.৬ একর)হারে খাজনা আদায় করত। ১১শ শতাব্দির একটি শীলালিপি থেকে জানা যাচ্ছে যে খাজনার হার ছিলো ১০০ কালাম/ভেলি। ১০৩৬ খ্রীষ্টাব্দের একটি শীলালিপি থেকে দেখা যাচ্ছে যে খাজনার হার ১১২.৫ কালাম/ভেলি। যে সময়ের কথা আলোচনা হচ্ছে তখন জমির গড় উৎপাদনের একচতুর্থাংশ খাজনা ধার্য্য করা হত।যদি তাই হয় তাহলে তখন জমির গড় উৎপাদনশিলতা ছিলো ৪০০-৪৫০ কালাম/ভেলি, অর্থাৎ১৫.১৭-১৭.০৭টন/হেক্টর।(Alaev L.B 1982).

৩.৩.২. আধুনিক তথ্য  ভারতে সবুজ বিপ্লব যখন শুরু হয়েছিলো তখন ধরেই নেওয়া হয়েছিলো দেশীয় ধানের ফলন কম। এই সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান সম্মত ভাবে নেওয়া হয়নি, কারন প্রথমতঃ দেশী ধান বলতে কোনো একটি দুটি ধান কে বোঝায়না, সেই সময় ভারতবর্ষে অন্ততঃ লাখ খানেক দেশিয় ধানের ভ্যারাইটি ছিলো, তাদের প্রত্যেকটির ফলন পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। দ্বিতীয়তঃ সমসাময়িক এমন বেশ কিছু প্রামান্য তথ্য ছিলো যাতে দেখা যাচ্ছে কিছু দেশী ধানের ফলন IR ভ্যারাইটি গুলির থেকে বেশি। ১৯৪৯-৫০ সালে ভারত সরকারের কৃষি পন্ডিত পুরষ্কার বিজেতা কৃষক শ্রী জে. সি. পানি প্রতি হেক্টরে ৬.৮ টন ধান ফলিয়ে ছিলেন। ১৯৫০-৫১ ও ১৯৫১-৫২ সালে কৃষি পন্ডিত পুরষ্কার বিজেতা কৃষক শ্রী ভাল্লাইয়া গোন্ডার ও শ্রী জে. সি সাংঘাইয়া যথাক্রমে প্রতি হেক্টরে ১১.৪৭ টন ও ১২.৫৯ টন ধান ফলিয়ে ছিলেন (Press Information Bureau G O I 1955)। Richharia উল্লেখ করেছেন ১৯৬৩ সালের আগেই ভারতের কৃষি পন্ডিতেরা হেক্টরে ১৪ টন ধান ফলাতে পারতেন (Richharia 1990)। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ভারতের মধ্যপ্রদেশে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে সেখানকার দেশীয় ধানের অন্তত আট শতাংশকে উচ্চফলনশীল বলে চিহ্নিত করা যায়, এদের গড় ফলন ছিলো প্রতি হেক্টরে ৩.৭ টন বা তার বেশি (Richharia 1977)।  রিচারিয়া মধ্যপ্রদেশের(অধুনা ছত্তিশগড়) কৃষকদের তাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে দেশীয় ধানের চাষ করে ভালো ফলন পেতে দেখেছেন , সেখানকার একটি জাতের ফলন হেক্টরে ৯ টনেরও বেশি ছিলো (Richharia 1977)। ১৯৭৮ সালের মধ্যে রিচারিয়া ৭৮০০ দেশীয় ধানের জাত থেকে নির্বাচন প্রকৃয়ার মাধ্যমে ১৫০০ টি উন্নত জাত তৈরি করেন, যাদের কোনো কোনোটির ফলন প্রতি হেক্টরে ৫ থেকে ৭ টন বা তারও বেশী ছিলো (তালিকা ৪ দ্রষ্টব্য)(Richharia 1983)।

তালিকা-৪

রিচারিয়া কতৃক দেশীয় জাত থেকে নির্বাচিত কয়েকটি উচ্চফলনশীল ধান

ক্রমিক সংখ্যা মুল দেশীয় জাতটির নাম উন্নততর সংষ্করনের নম্বর ফলন (KG/Ha) চালের প্রকৃতি পাকার সময়
লাল্লু Bd12 ৭০২৪ মাঝারী সরু জলদী
ধউর Bd23 ৬১৩৬ মাঝারী সরু জলদী
কয়ানারি Bd811 ৭৩৫০ মোটা জলদী
নুঙ্গি Bd813 ৭৬২৩ মোটা জলদী
শ্রীকমল Bd140 ৩৮০০ ছোটো সরু মাঝারি
কলম Bd368 ৫৫১০ মাঝারী সরু মাঝারি
বেনীকাথ Bd452 ৪০৮০ ছোটো সরু মাঝারি
টেঢি বাঙ্কো Bd207 ৬২৯০ লম্বা সরু দেরীতে পাকে
কালা ইনালি Bd108 ৭৬০০ মোটা দেরীতে পাকে
১০ সাফরি Bd200 ৫৫২০ মাঝারী দেরীতে পাকে
১১ দুবরাজ Bd153 ৪৯৮৫ মাঝারি সরু দেরীতে পাকে
১২ কারিয়া ঘিনি Bd366 ৫৫৫০ মাঝারী সরু দেরীতে পাকে

১৯৭১ থেকে ৭৬ সালের মধ্যে রিচারিয়া কেবল মধ্য প্রদেশ থেকেই ১৯০০০ দেশীয় জাতের ধান সংগ্রহ করেছিলেন এবং তাদের গুনাগুন বৈজ্ঞানিক ভাবে নথীভুক্ত করেছিলেন। ধানের এই অতি সমৃদ্ধ বৈচিত্রকে কাজে লাগিয়ে তিনি যে সকল জাত তৈরি করেন তা শুধু উচ্চ ফলনশীলই ছিলোনা সেগুলির স্থানীয় বাস্তু তন্ত্রের সাথে মানিয়ে নেবার ক্ষমতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিলো সন্তোষজনক। শুধু তাই নয় সেগুলিতে রাসায়নিক সার ইত্যাদিও লাগতো খুবই কম (২০ কেজি/হেক্টর)। তিনি এই কাজ করেছিলেন Madhya Pradesh Rice Research Institute (MPRRI) এর মাধ্যমে। ১৯৮৬ সালে মালয়েশিয়ার একটি সম্মেলনে রিচারিয়া বলেছিলেন বিশ্বব্যাঙ্ক তার এই কার্য্যকলাপ বন্ধ করে দেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে (Krishnakumar 2003)। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে MPRRI এর এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়

সাম্প্রতিক কালের গবেষনায় দেখা যাচ্ছে এমন বেশ কিছু দেশীয় জাত আছে যারা নাইট্রোজেন ঘটিত রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করলেও খারিপ মরশুমে ৩.৪ টন প্রতি হেক্টর ও বোরো মরশুমে ৩.৩ টন প্রতি হেক্টর ফলন দেয় (Rao SI et al. 2018)। পশ্চিমবঙ্গে এমন বেশ কিছু দেশি ধানের ভ্যারাইটি খুঁজে পাওয়া গেছে যারা বিনা রাসায়নিক সার প্রয়োগে হেক্টরে ৫ টনের বেশি ফলন দিতে পারে (Deb 2005), তালিকা ৫ দ্রষ্টব্য।

তালিকা-৫

পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি দেশীয় ধানের ফলন।

জাতের নাম প্রতি গোছায় শীষ যুক্ত পাশকাঠির সংখ্যা প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ১০০ টি দানার ওজন ফলন(টন/হেক্টর)
বাঁশতারা ৮.০ ২৩০ ২.৪৮ ৪.৮৬৫
যুগল ১০.০ ১৮৮.২ ৩.০৬ ৫.২৩২
কবিরাজসাল ১২.৩ ১১৪.০ ২.১৪ ৫.৩২৪
সাবনসাল ১০.৭ ১৪৯.২ ৩.০৭ ৪.৮২৮
শিউলি ১২.০ ২৩১.২ ৩.২৮ ৫.৪৪৩

উৎসঃ Deb D., Seeds of tradition, seeds of future, Folk rice varieties of Eastern India. RFSTE. New Delhi.(2005)

নদীয়া জেলার ফুলিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জৈব বৈচিত্র সংরক্ষন কৃষি খামারে রাসায়নিক সার (NPK@ 60:30:30 /40:20:20) ও জ়ৈব সারের (গোবর সার 10 t/ha এবং ধানের তুষের ছাই 1.6 t/ha) প্রভাবে ধানের ফলন সংক্রান্ত একটি গবেষনা হয়। তিনটি জাতকে এই গবেষনার জন্য নির্বাচন করা হয়, দুটি দেশি জাত, নাম যথাক্রমে কবিরাজ সাল ও রাধাতিলক এবং একটি আধুনিক জাত নাম MTU 7029. গবেষনায় দেখাযায় যে জৈব সার প্রয়োগে কবিরাজ সালের ফলন রাসায়নিক বা জৈবসার প্রয়োগে MTU 7029 এর থেকে বেশী (Paul A, et al 2011). ।

National Consortium of SRI, New Delhi 2013 র একটি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে System of Rice Intencification পদ্ধতিতে (SRI বা শ্রী পদ্ধতি) চাষ করার ফলে ভারতের ৩৮ টি দেশীয় ভ্যারাইটির ধান হেক্টরে ৬ টনের বেশি ফলন দিয়েছে, এর মধ্যে তালমুলি নামক একটি ভ্যারাইটি থেকে প্রতি হেক্টরে ১১ টন ফলন পাওয়া গেছে (Banerjee 2013)। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষে জল তুলনামুলক ভাবে অনেক কম লাগে। ভারত ও বাংলাদেশে এমন অনেক দেশীয় ভ্যারাইটি আছে যাদের গাছ প্রতি ফলন IR72 থেকেও বেশী (Savitha  et al 2016, Biswas  2016, Alam  et al. 2014)।

৪. দেশীয় ধানের বিপূল জীববৈচিত্র ও খাদ্য উৎপাদনে তাদের গুরুত্ব

সবুজ বিপ্লবে ধানের ফলন বাড়ানোর জন্য মূলত Sd1 জীনের ওপর নির্ভর করা হয়েছিলো। Sd1 ভ্যারাইটি গুলির রাসায়নিক সারে ভালো সাড়া দেয় এবং খর্বাকৃতির কারনে সহজে ঢলে পড়েনা। কিন্তু খর্বাকৃতি না হলেও ধানের কোনো জাত উচ্চফলনশীল হতে পারে এবং তারা যে সবসময়ই সহজে ঢলে পড়ে যাবে তাও নয়।ধানের বেশকিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট আছে যাদের সাথে উচ্চ ফলনের সম্পর্ক নিবিড়। যেমন কান্ডের দৈর্ঘ্য বেশি হলে শীষের দৈর্ঘ্য, ও শীষে দানার সংখ্যা সাধারনতঃ বেশি হয় (Wu et al.2014) ।জিভ পাতার (Flag leaf)থেকে যে খাদ্য শংস্লেশিত হয় তার প্রায় সবটাই ধানের দানায় জমা হয়। জিভ পাতার ক্ষেত্রফল বাড়লে শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা তৎসহ ফলনও বাড়ে (Rabara R C et. al. 2014). । পাতা যত খাড়া হবে তত সুর্যালোক শোষনের ক্ষমতা বাড়ে, এবং গাছগুলিকে ঘনসন্নিবিষ্ট ভাবে রোপন করা যায়, এই দুটি কারনের মিলিত প্রভাবে ফলন বাড়ে (Feng Z et. al. 2016)। ইন্ডিকা উপপ্রজাতির ধানে এমন বেশকিছু পরিমানগত বৈশিষ্ট আছে যাদের মান বাড়লে ধানের ফলন বাড়ে। বৈশিষ্টগুলি হল শীষে পুষ্ট দানার সংখ্যা, ১০০০ টি দানার ভর, গাছের উচ্চতা, বীজ বপন থেকে শুরুকরে ধান পাকার মধ্যবর্তী সময়কাল, শীষের দৈর্ঘ্য, প্রতি একক ক্ষেত্রফলে শীষের সংখ্যা, এবং ধানের দানার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত (Li R, 2019)। ভারত ও বাংলাদেশের অনেক দেশীয় ধানের ভ্যারাইটি আছে যেখানে এই পরিমানগত বৈশিষ্টগুলির মান যথেষ্ট বেশি (Biswas 2016, Alam et al 2014, Deb 2005)।

ধান গাছ বেশি লম্বা হলেই তা সহজে ঢলে পরে যাবে এবং ফলন নষ্ট হবে, বিষয়টা এমন নয়। জিব্বারেলিন সমৃদ্ধ লম্বা কান্ড মোটাও হয়, কান্ডের প্রস্থচ্ছেদের ব্যাস বেশি হয় এবং কান্ডে লিগিনিনের পরিমান বেশি থাকে। ফলে কান্ড যথেষ্ট দৃঢ় হয় এবং ধানের উৎপাদনও বেশি হয় (Okuno A 2014) । কাসালাথ নামক ইন্ডিকা ভ্যারাইটির ৫ নং ক্রমোসমে prl5 নামক একটি QTL (Quantitative trait locus; DNA এর যে অংশ জীবের কোনো পরিমানগত বৈশিষ্টের সাথে সম্পর্কিত) আবিস্কৃত হয়েছে যার প্রভাবে ধানগাছের কান্ডের নিম্নাংশের ঢলে পরে যাওয়া প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে (Kashiwagi and Ishimaru 2004)। দেখাগেছে SCM2 নামক একটি QTL একই সাথে কান্ডকে দৃঢ় করে এবং শীষে দানার সংখ্যা বাড়ায় (Ookawa et al. 2010)। সাধারনত শীষে দানার সংখ্যা বাড়লে পাশকাঠির সংখ্যা কমে যায়, কিন্তু অন্য আরএকটি QTL SCM3 এর প্রভাবে কান্ড দৃঢ় হয়, দানার সংখ্যা বাড়ে অথচ পাশকাঠির সংখ্যা কমে না। SCM2 ও SCM3 এই দুটি QTLই ইন্ডিকা উপপ্রজাতির ধানে আবিষ্কৃত হয়েছিলো (Yano et al 2015)। দেশী ধানের বিপূল জীব বৈচিত্রের মধ্যে এই ধরনের QTL খুঁজে পাবার সম্ভাবনা আছে কারন অনেক দেশী ধান আছে যারা দীর্ঘ ঋজু সহজে ঢলে পরেনা এবং ভালো ফলন দেয়, যদীও এই নিয়ে গবেষনা খুবই সীমিত।

সবুজ বিপ্লবের ধান থেকে উচ্চ ফলন পেতে হলে প্রচুর জলসেচ এবং রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। এই ভাবে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে কৃষি বাস্তুতন্ত্রের বিপর্য্যয় ও তজ্জনিত ফলন হ্রাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে।  খাদ্য নিরাপত্তাকে সুস্থায়ী করতে হলে বিরুপ প্রাকৃতিক পরিবেশে কোনো ফসলের উৎপাদনশিলতা কেমন তা একটি গুরুতর বিচার্য্য বিষয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা যদি দেশি ধানের জৈববৈচিত্র নিয়ে আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো  indica উপপ্রজাতির এইসব ধানগুলি তাদের বহুবিধ বৈচিত্র নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। সেইসব ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশে সবুজ বিপ্লব ভ্যারাইটির  ফলন হবে শুন্য। দেশি জাতগুলির ফলনের সময়কাল ৬০ দিন থেকে শুরু করে ২০০ দিন পর্যন্ত হয়। স্বল্প কালীন ধানগুলি খরা প্রবন এলাকায় চাষ করা হয়, যাতে বৃষ্টির জলের অভাব ঘটার আগেই ফলন তুলে নেওয়া যায়। এমন দেশি ধান আছে যা সমুদ্র পৃষ্ঠের থেকে দশ ফুট নিচের উচ্চতাতে চাষ হয়, আবার এমন ধানও আছে যাদের সমুদ্রপৃষ্ঠের ৭০০০ ফুট উচ্চতাতেও চাষ করা যায়। এমন গভীর জলের ধান আছে যেগুলি ২০ থেকে ৫০ ফুট জলের গভীরতাতেও চাষ করা যায় আবার এমন ধানও আছে যাদের চরম খরা প্রবন অঞ্চলে (বার্ষিক গড় বৃষ্টি পাত ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার)চাষ করা যায় (Richharia R. H. 1990).। লবনাক্ত জমি সাধারন ভাবে ধান চাষের পক্ষে অনুপযুক্ত, কিন্তু এমন দেশি ধান আছে যা লবনাক্ত জমিতেও চাষ করা যায়। নোনাবোকরা, হ্যামিলটন, মাতলা, তালমুগুর প্রভৃতি দেশি ধান লবনাক্ত জমিতে (লবনাক্ততা 8mmhos/cm বা তার বেশি) চাষ যোগ্য (Ghosh A. 1990)।

দেশীয় ধানগুলি বহু রোগ ও পেষ্ট প্রতিরোধী জীনের গুরুত্বপুর্ন উৎস। অনেক দেশীয় ধানের মধ্যেই বাদামী শোষক, White backed planthopper, Gall midge ইত্যাদি পেষ্ট প্রতিরোধি জীনের সন্ধান পাওয়া গেছে (Divya et al 2018, Divya et al 2015, Athwal 1971, Richharia 1977, Nemoto et al 1989, Kabir and Khush 1988, Mohanty et al 2017, Sidhu and Khush 1978, Himabindu et al. 2007, Duan et al 2009, Duan et al 2010)  ভারতের ৯ টি বিভিন্ন কৃষি বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চল থেকে সংগৃহিত ১৬১ টি দেশীয় ধানের জাত বিশ্লেষন করে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ২১ টি ঝলসা রোগের (Blast, আক্রমনকারি ছত্রাক Magnaporthe oryzae) বিরুদ্ধে উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ও ৭০ মাঝারি মানের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মধ্যে প্রতিরোধী জীনের সংখ্যা ৫ থেকে ১৯ টি (Yadav 2019)। দেখাগেছে কাটারিভোগ, লাঠিসাল, পঙ্খারি-২০৩ প্রভৃতি কয়েকটি দেশীয় জাত টুংরো ভাইরাসের আক্রমন সহ্য করতে পারে (Shahjahan 1990)। ভারত নেপাল শ্রীলঙ্কার বহু বাসমতি ও সাধারন দেশীয় ধানের জাতে ধ্বসা রোগের (Bacterial blight, আক্রমনকারি ব্যাকটেরিয়া Xanthomonas oryzae) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন অনেক জীনের সন্ধান পাওয়া গেছে (Ullah et al 2012, Sidhu et al 1978)। ভারতের দেশীয় জাতের খুব সামান্য অংশ নিয়েই এখনও পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক  পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। সমস্ত দেশীয় জাত নিয়ে গবেষনা হলে এই ধরনের রোগ ও পেষ্ট প্রতিরোধি আরও অনেক জাতের সন্ধান পাওয়া্র সম্ভাবনা ছিলো।

এই দেশি ধান গুলি কৃষক সম্প্রদায়ের বহু শতাব্দির সংকরায়ন ও নির্বাচনের ফলশ্রুতি, ফলে এগুলি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সাথে ভালোভাবে অভিযোজিত এবং স্থানীয় রোগ ও পোকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।রিচারিয়া দেখেছিলেন স্থানীয় অভিঞ্জ কৃষকেরা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে হাজার হাজার বিভিন্ন ধানের জাত শনাক্ত করতে পারেন। তাদের এই পদ্ধতি সম্পুর্নই তাদের নিজস্ব, তা আধুনিক উদ্ভিদবিঞ্জানের পদ্ধতির থেকে আলাদা। কৃষকেরা শুধু যে এই জাতগুলিকে চিনতেন তাই নয় কোন কৃষি-বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশে কি কৌশলে এগুলিকে সবচেয়ে ভালোভাবে চাষ করা সম্ভব সে সম্পর্কেও তাদের প্রগাঢ় জ্ঞান ছিলো। এই জাত থেকে তৈরি করা উন্নত ভ্যারাইটি গুলি তাই তারা সহজে গ্রহন করতে পারতেন ও সাফল্যের সাথে চাষ করতে পারতেন। স্থানীয় কৃষক সম্প্রদায় থেকে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন কিছু জাত নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে যে উচ্চফলনশীল জাতগুলি সবুজ বিপ্লবের জন্য তৈরি করা হয়েছিলো তাদের বাস্তুতান্ত্রিক বৈশিষ্ট, শরীরবিজ্ঞান, সবই কৃষকের কাছে অঞ্জাত ছিলো। এগুলি চাষ করতে গিয়ে সার প্রয়োগের পরিমান ও সময়, কীটনাশক প্রয়োগের পরিমান ও সময়, জলসেচের পরিমান ও সময়, ইত্যাদি নানান বিষয়ে প্রতি পদে চাষিকে বিশেষঞ্জের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়।এই ভ্যারাইটিগুলি বাস্তু তন্ত্রে যে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিলো তার পরিনামে সার জল কীটনাশকের প্রয়োজনিয়তাও সময়ের সাথে সাথে পালটে যেতে থাকে, তাই কৃষি সম্প্রসারন কর্মিদের পক্ষেও সব সময় এই উপাদনগুলির সঠিক পরিমান সম্পর্কে চাষিদের অবগত করানো মুশকীল ছিলো। এর অবশ্যম্ভবি ফল হয়েছিলো রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার যা কৃষি বাস্তুতন্ত্রের বিপর্য্যয়কে আরও ত্বরান্বিত করে।

১৯৭৯ সালে সবুজ বিপ্লবের কারনে ধান চাষের বিভিন্ন সমস্যা খতিয়ে দেখার জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিলো। বিশেষঞ্জরা কটকের Central Rice Research Institute এ মিলিত হয়ে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। সেই প্রতিবেদনে বলা হয় সবুজ বিপ্লবে যে উচ্চফলনশীল ধানের জাতগুলি ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই TN1 বা IR8 থেকে তৈরি করা, তাই সেগুলিতে ডি-জিও-উ-গেন নামক একটি বিদেশি জাত থেকে সংগ্রহ করা খর্বাকৃতি নিয়ন্ত্রক জীন রয়েছে। তাই জাতগুলির মধ্যে জীনগত পার্থক্য খুব সামান্য, এবং এটা ভয়াবহ। এদের জীনগত ভিত্তি এত সংকীর্ন বলেই এরা রোগ ও পোকার প্রতি এত সংবেদনশীল। এই জাতগুলি ভারতের উঁচু বা নিচু ধান জমি গুলিতে চাষের অনুপযুক্ত, অথচ এই ধরনের জমিই ভারতের মোট ধান জমির প্রায় ৭৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে বিশেষঞ্জরা নতুন অভিমুখে গবেষনার কথা বলে ছিলেন।

১৯৮৬ সালে রিচারিয়া প্রস্তাব করেছিলেন যে ভারতের গ্রামে গ্রামে ধানের বৈচিত্র সংরক্ষন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এই কেন্দ্রগুলিতে স্থানীয় কৃষিবাস্তুতন্ত্রের সাথে অভিযোজিত দেশীয় ভ্যারাইটিগুলির সংরক্ষন করা হবে। এই সংরক্ষন হবে স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতায়, এবং এর অন্যতম দায়ীত্বে থাকবেন কোনো স্থানীয় অভিঞ্জ কৃষক। এই সংরক্ষন কেন্দ্রগুলির সাথে গবেষনা কেন্দ্রগুলির নিবীর যোগাযোগ থাকবে। এই গবেষনা কেন্দ্রগুলি স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ ও চাহিদাকে মান্যতা দিয়ে স্থানীয় ধান্য বৈচিত্রকে ব্যবহার করে স্থানীয় কৃষি বাস্তুতন্ত্রের সাথে অভিযোজিত উচ্চফলনশিল ধান তৈরীর চেষ্টা করবে। রিচারিয়া নিজে এই পদ্ধতিতে মধ্যপ্রদেশে বহু উচ্চফলনশীল ধানের ভ্যারাইটি তৈরী করে ছিলেন। রিচারিয়ার প্রস্তাব এবং তার সৃষ্টি ভ্যারাইটি গুলি চরম সরকারি অবহেলার স্বীকার হয়েছিলো।

৫. রোগ পোকার প্রাদুর্ভাবঃ মেগা ভ্যারাইটি বনাম ধানের জীব বৈচিত্র

১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্র থেকে IR64 নামক একটি ভ্যারাইটি তৈরী হয়। বলা হয়েছিলো এটি উচ্চফলনশীল, রোগ ও পোকার প্রতি উচ্চপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন সুস্বাদু একটি ধান। পরবর্তী দু দশকে পৃথিবীর প্রায় এক কোটি হেক্টর জমিতে এই ধান চাষ হয়েছে। এই ভ্যারাইটিকে তাই মেগা ভ্যারাইটি আখ্যা দেওয়া হয়েছিলো (Mackill and Khush 2018)। কিন্তু এই ধান পরবর্তী কালে ব্যাপক ভাবে রোগ ও পোকার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, এবং ধানের ফলনের ক্রমহ্রাসমান প্রবনতা কে প্রতিরোধ করতে পারেনি। কিন্তু এই মেগা ভ্যারাইটিগুলি দ্রুতহারে ধানের দেশীয় ভ্যারাইটিগুলির অবলুপ্তি ঘটায়। গ্রীন সুপার রাইসও আর একটি জায়মান মেগা ভ্যারাইটি। ধান চাষের সমস্যার স্থায়ী সমাধান এই ধরনের মেগা ভ্যারাইটি তৈরীর মাধ্যমে হবে নাকি দেশীয় ধানের সমৃদ্ধ জীব বৈচিত্রের স্থানীয় ভিত্তিতে সংরক্ষন উন্নয়ন ও সম্প্রসারনের মাধ্যমে হবে তা একটি গুরুত্বপুর্ন বৈজ্ঞানিক বিতর্ক।

৫.১ প্রতীরোধি ভ্যারাইটির সীমাবদ্ধতা- IR8 ধানের পেষ্টের প্রতি সংবেদনশীলতা সবুজ বিপ্লবের একটা বড় সমস্যা ছিলো। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্র বিভিন্ন পেষ্টের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ভ্যারাইটি তৈরি করে। এই রকম একটি উল্লেখযোগ্য ভ্যারাইটি হলো IR36, ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৮০র দশকে এই IR36 এর জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে তৈরি করা ভ্যারাইটিগুলি সাফল্যের সাথে বাদামী শোষক পোকার আক্রমন প্রতিরোধ করে এবং বেশ কয়েক বছর ধানক্ষেতে বাদামী শোষকের প্রাদুর্ভাব সীমিত থাকে।কিন্তু ১৯৮৬ সাল নাগাদ হঠাতই এই ভ্যারাইটি গুলির বাদামী শোষক পোকার আক্রমন প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় (Settle et al. 1996)। ফলত আবার মহামারী।

আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছিলো IR64 ভ্যারাইটিটি বাদামী শোষক পোকার প্রতি  উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এই ভ্যারাইটির চাষ যত প্রসার লাভ করবে তত বাদামী শোষকের আক্রমন তথা কীটনাশকের ব্যবহার কমবে (Khush 2001)। বাস্তব সমীক্ষায় দেখাগেলো IR64 র বাদামী শোষকের প্রতি প্রতিরোধ ক্ষমতা অল্প থেকে মাঝারি মানের। বাদামি শোষক পোকার আক্রমনের সাপেক্ষে ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় জাতগুলির সাথে IR64 র খুব কিছু তফাৎ পাওয়া যায়নি (Wijayanti et al 2018)।  যে অঞ্চলে কীটনাশকের ব্যবহার খুব কম হয় সেখানে বাদামী শোষকের প্রতি উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ভ্যারাইটির দরকার পরেনা, সাধারন ভ্যারাইটির ধানও সেখানে বাদামী শোষক দ্বারা বিশেষ আক্রান্ত হয়না (Cohen 1997) ।কীটনাশক কম ব্যবহার হলে IR64 বাদামি শোষক পোকার আক্রমন প্রতিরোধ করতে পারে, কিন্তু অন্যকোনো পেষ্টের আক্রমন ঠেকাতে যদি যথেষ্ট কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তাহলে বাদামী শোষকের প্রাদুর্ভাবও বাড়ে। জাভার মধ্যাঞ্চলে যে সকল IR64 ক্ষেতে দুবার কার্বোফুরান ও দুবার মোনোক্রটোফস কীটনাষক বিষ ব্যবহার করা হয়েছিলো সেখানে বাদামী শোষকের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় (Settle et al. 1996)। অর্থাৎ কীট নাশক বিষের ব্যবহার হলে IR64 র বাদামী শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা কোনো কাজে আসে না। প্রকৃতপক্ষে IR64 চাষের ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমেনি, বরং কীট নাশকের ব্যবহার কমেছিলো বলে IR64 ধানে বাদামি শোষকের আক্রমন হয়নি।

কোন একটি বিশেষ পতঙ্গ প্রতিরোধি ধানের ভ্যারাইটি যদি বহু বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চাষ করা হয় তাহলে দেখা যায় যে কিছু দিনের মধ্যেই সেই ভ্যারাইটি আর ওই পতঙ্গের আক্রমন প্রতিহত করতে পারে না। প্রথম দিকে যে ভ্যারাইটিগুলি বাদামী শোষক পোকার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিলো তাতে এক বিশেষ প্রতিরোধি জীন Bph1 ছিলো। এই ভ্যারাইটি গুলির ব্যাপক চাষের ফলে বাদামী শোষকের এক নতুন বায়োটাইপের উদ্ভব হলো যার আক্রমনে  Bph1 ভ্যারাইটির প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়লো (Jing et al 2014)। পরবর্তি কালে Bph1, bph2, Bph3bph4 এই চারটি বাদামী শোষক পোকা প্রতিরোধী জীনের সমন্বয়ে তৈরী উন্নত মানের প্রতিরোধী ক্ষমতা সম্পন্ন ধানের ভ্যারাইটি তৈরী করা হয়েছিলো, কিন্তু আচিরেই বাদামী শোষক পোকার নোতুন বায়োটাইপের উদ্ভব ঘটে যার আক্রমনে এই ভ্যারাইটি গুলির প্রতিরোধ ক্ষমতাও ভেঙে পরে। শুধু যে বাদামী শোষক পোকার ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে তা নয়, শ্যামা পোকার (Nephotettix virescens) ক্ষেত্রেও প্রায় একই ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। দুটি বিশেষ প্রতিরোধী জীন (GRH 2 , GRH 4) বিশিষ্ট উচ্চমানের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ধানের জাতকে  ভালোভাবে আক্রমন করতে এবং সেই জাতের ধান গাছ খেয়ে সম্পুর্ন স্বাভাবিক ভাবে জীবন জাপন করার ক্ষমতা অর্জন করতে শ্যামাপোকার মাত্র ১০ থেকে ২০ প্রজন্ম সময় লাগে (Horgan et al 2018, Horgan et al 2019)। কিভাবে পোকারা এতো অল্প সময়ের মধ্যে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে তা সঠিক ভাবে জানা না গেলেও এটা প্রমানিত হয়েছে যে এ বিষয়ে পোকার দেহে বসবাসকারি বিভিন্ন প্রজাতির মিথোজীবি ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক সমুহ গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। কোনো পোকা যখন কোনো বিশেষ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ভিদ কে আক্রমন করার ক্ষমতা অর্জন করে তখন দেখা যায় যে সেই পোকাগুলির শরিরে মিথোজীবি অনুজীব সমুহের ধরন এবং বিন্যাস খানিকটা বদলে গেছে  (Horgan et al 2019)  বহু পেষ্টের  ক্ষেত্রেই দেখাগেছে যে এই ভাবে  তারা কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতকে আক্রমন করার যোগ্যতা অর্জন করে (Horgan et al 2019)। এই মিথোজীবি অনুজীবগুলি প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ভিদ দেহ থেকে নিসৃত বিষাক্ত পদার্থগুলিকে হজম করতে সাহায্য করে (Alyokhin and Chen 2017)। গবেষনায় দেখাগেছে এই ধরনের মিথোজীবি অনুজীবগুলি কিটনাশক বিষকেও নির্বিষ করে দিতে পারে এবং এদের সহায়তায় বাদামী শোষক পোকা কীট নাশক বিষ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে (Malathi et al 2018)।

Remco Stam এবং Bruce A. Mcdonald একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে আলোচনা করে দেখিয়েছেন কিভাবে কোনো রোগ জীবানু একাধিক প্রতিরোধী জিনের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন উদ্ভিদকে আক্রমনের যোগ্যতা অর্জন করে (Stam and Mcdonald 2018)। যে জীনগুলি উদ্ভিদকে কোনো বিশেষ রোগজীবানুর প্রতি গুনগত প্রতিরক্ষা যোগায় তাদের বলে R জীন। প্রতিটি R জীন এক বিশেষ ধরনের প্রোটিন (Nucleotide binding and Lucine Rich Repeats) NLR তৈরির সংকেত বহন করে। এই NLR গুলি রোগজীবানুর দেহ নিসৃত কোনো বিশেষ যৌগকে শনাক্ত করে ফলে ধাপে ধাপে এমন কতকগুলি জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটতে থাকে যাতে রোগ জীবানুর আক্রমন প্রতিহত হয়। রোগজীবানুর দেহনিসৃত যে যৌগকে NLR প্রোটিন শনাক্ত করতে পারে তাকে বলে Avirulence Effector  বা সংক্ষেপে Avr । এখন Avr এর গঠন বদলে ফেলতে পারলে ( যাতে তাকে NLR শনাক্ত করতে না পারে) বা Avr তৈরির জন্য দায়ী কোনো জীন কে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারলে রোগ জীবানু উদ্ভিদের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করতে পারবে। Avr তৈরীর জন্য দায়ী জীন নানান ভাবে নিষ্ক্রিয় হতে পারে যেমন এপিজেনেটিক পরিবর্তনের ফলে তার কার্য্যকারিতা স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে,  জীনটির নিউক্লীয়টাইড সজ্জাক্রমের ভিতর কোনো ট্রান্সপোজেবল পদার্থ ঢুকে পরলে সেটি অকেজো হয়ে যেতে পারে। এমনকি রোগজীবানুর জিনোম থেকে ওই Avr জীনটি বাদ চলে যেতে পারে।জীন মিউটেশনের মাধ্যমেও Avr জীন নিষ্ক্রিয় হতে পারে বা Avr এর গঠন বদলে যেতে পারে। এই পদ্ধতিগুলির মধ্যে একমাত্র মিউটেশন ছাড়া বাকিগুলি কোনটি কি হারে ঘটে তা এখনও বিশেষ জানা যায়নি। মিউটেশনের মাধ্যমে NLR প্রোটিনের কার্যকারিতাকে পাশকাটিয়ে যাবার মত ক্ষমতা অর্জন করতে পারার হার খুবই কম। হিসাব করে দেখাগেছে কোনো রোগ সৃষ্টিকারি ছত্রাকের প্রতি এক লক্ষ্য থেকে এক কোটি রেনুর মধ্যে একটি এইভাবে মিউটেশনের মাধ্যমে কোনো একটি R জীনের প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিক্রম করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। Stam এবং Mcdonald হিসাব করে দেখিয়েছেন যে কোনো জমির ফসলের পাতার ১০% ও যদি powdery mildew ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে প্রতি হেক্টর জমি থেকে প্রতিদিন ১০১৩ রেনু উৎপন্ন হবে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে মিউটেশনের মাধ্যমে R জীনের বিরুদ্ধে আক্রমনের ক্ষমতা অর্জনের হার ১০-৬ তাহলেও প্রতি হেক্টর থেকে প্রতিদিন ১০৭ এমন রেনু উৎপন্ন হবে যারা ঐ R জীন সম্পন্ন উদ্ভিদকে আক্রমন করতে পারবে। স্বভাবতই একটি R জীনের কার্যকারিতা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়না। দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ পাবার জন্য তাই একাধিক R জীনকে একটি ভ্যারাইটিতে একত্র করার চেষ্টা হচ্ছে।GRS তৈরীর এটাই মূল কৌশল। যদি ধরে নেওয়া হয় যে একটি R জীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন রেনু উৎপাদনের হার ১০-৬ তাহলে দুটি R জীন সম্পন্ন উদ্ভিদের বিরুদ্ধে কার্যকর রেনু উৎপাদনের হার হবে ১০-৬ x ১০-৬ = ১০-১২ অর্থাৎ সেক্ষেত্রে প্রতিদিন প্রতি হেক্টর থেকে মাত্র ১০ টি সংক্রমন যোগ্য রেনু উৎপন্ন হবে। একই ভাবে বলা যায় যে তিনটি  R জিন একত্রে থাকলে তার বিরুদ্ধে সংক্রমন যোগ্য একটিমাত্র রেনু প্রতিদিন উৎপাদন করতে ১০,০০০ হেক্টর ছত্রাকে আক্রান্ত শস্যক্ষেত্র দরকার। আর যদি চার টী R জীন একত্রে থাকে তাহলে সংক্রামক রেনু উৎপাদনের কার্যত কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। কিন্তু নিম্নলিখিত কিছু কারনে একাধিক R জীন কে একত্রিত করে তৈরী করা প্রতিরোধী উদ্ভিদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দীর্ঘ্যস্থায়ী নাও হতে পারে। প্রথমতঃ R জীনগুলির কার্যকারিতা সর্বদা ১০০ শতাংশ নাও হতে পারে, বিশেষত কচি, ক্ষতিগ্রস্ত বা বৃদ্ধ পাতায় R জীনের কার্যকারিতা সম্পর্কে সামান্যই তথ্য আছে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে R জীন ৯৯.৯৯% কার্যকর তাহলেও আগে যে powdery mildew আক্রান্ত ক্ষেতের কথা ধরা হয়েছে সেখানে প্রতিদিন ১০ রেনু উৎপন্ন হবে যাদের  অন্তত হাজারটি রেনু কোনো না কোনো R জীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন হবে।

। যেহেতু পরজীবীরা পোষক উদ্ভিদের থেকে অনেক সল্পায়ু হয় তাই পোষক উদ্ভিদের একটি জীবন চক্রে তাদের অনেকগুলো জীবন চক্র পার হয়ে যায় ফলে রেনু তথা সংক্রমক রেনু উৎপাদনের হারও বেশি হয়। দ্বিতীয়তঃ R জীন গুলি সম্পুর্ন নতুনভাবে সৃষ্টি হওয়া কোনো জীন নয়, এগুলি ফসলের বিভিন্ন ভ্যারাইটি থেকে সংগ্রহ করা হয়, সুতরাং এই জীন সম্পন্ন ভ্যারাইটি গুলির সাথে রোগ জীবানুর মিথষ্ক্রিয়া অতিতে ঘটেছে এবং বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে রোগ জীবানুর বিভিন্ন জনগোষ্ঠির (Population)মধ্যে কম হারে হলেও এই R জীনগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। কখনও রোগ জীবানুর মধ্যে এমন পদার্থ সৃষ্টি হয় যাকে NLR শনাক্ত করতে পারেনা কিন্তু সেগুলো R জীনের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে দেয়। বাস্তবে বহু রোগ জীবানুর মধ্যে এরকম বহু এ্যালিলের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা বিভিন্ন R জীনের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অগ্রাহ্য করতে পারে (Allen et al 2008; Schurch et al., 2004; Zhong et al 2017)। তাই যে R জীনগুলিকে একত্র করা হচ্ছে তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই রোগ জীবানুর কোনো না কোনো জাতের সাপেক্ষে প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে বসে আছে। তৃতীয়তঃ যৌন জননের মাধ্যমে সহজেই একধিক R জীন প্রতিরোধী জীন রোগ জীবানুর মধ্যে একত্রিত হতে পারে, যা একাধিক R জীনের সমন্বয়ে গড়েতোলা কোনো প্রতিরোধী ভ্যারাইটিকে আক্রমন করতে সক্ষম। আগের উদাহরনে দেখাগেছে জীন মিউটেশনের মাধ্যমে দুটি R জীন সম্পন্ন উদ্ভিদের বিরুদ্ধে কার্যকর রেনু উৎপাদনের হার  ১০ x ১০ = ১০১২   অর্থাৎ

খুবই কম। কিন্তু ধরা যাক একটি উদ্ভিদে দুটি পৃথক R জীন R1 ও R2 একত্রে আছে। রোগজীবানুর দুটি জনগোষ্ঠি (Population ) A ও B এর মধ্যে যথাক্রমে R1 প্রতিরোধী জীন avrR1 ও R2 প্রতিরোধী জীন avrR2 আছে। যদি avrR1 ও avrR2 জীন দুটি একই ক্রোমসোমে না থাকে (Non Linked) তাহলে এই দুটি জীনবাহী দুটি হেটেরজাইগাস জীবের মধ্যে মিলন ঘটলে অপত্যের ২৫% avrR1 ও avrR2 দুটি জিনই পাবে এবং তাদের আক্রমনে R1 R2 জীন দুটির সমন্বয়ে তৈরী উদ্ভিদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়বে। আর্থাৎ যৌন জননের মাধ্যমে এরুপ আক্রমন ক্ষমতা সম্পন্ন রোগ জীবানু তৈরীর হার অনেক বেশি। অধিকাংশ রোগজীবানুই যৌন ও অযৌন উভয় প্রকার জনন করতে পারে, এছাড়া অযৌন জননের মাধ্যমেও জীন বিন্যাস বদলানোর বহু উপায় আছে (যেমন Occurrence of accessory chromosomes এবং Parasexual recombination in asexual lineages)। তাই এটা খুব কষ্টকল্পনা নয় যে স্বাধীন মিউটেশনের ফলে উৎপন্ন R জীন প্রতিরোধী জীন রোগজীবানুর মধ্যে একত্রিত হয়ে বহু R জীনের সমন্বয়ে প্রস্তুত প্রতিরোধী উদ্ভিদের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে দেবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে বহু R জীন বিশিষ্ট উদ্ভিদেও কিছু রোগ জীবানু টিকে থাকবে তারা বংশ বিস্তার করবে এবং মিউটেশনের মাধ্যমে R জীন প্রতিরোধী জীন বিশিষ্ট অপত্য তৈরি হবে। রোগ জীবানুর বিভিন্ন জনগোষ্ঠিতে বিভিন্ন R জীনের প্রতিরোধী জীন থাকে। মুলত যৌন জননের ফলে জেনেটিক রিকম্বিনেশনের মাধ্যমে তারা রোগজীবানুর দেহে একত্রিত হয়ে বহু R জীনের সমন্বয়ে তৈরীকরা উদ্ভিদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে পারে। তাই বহু R জীনের সমন্বয়ে তৈরীকরা উদ্ভিদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দীর্ঘ্যস্থায়ী হবেনা ।

Bph14 ধানের বাদামী শোষক পোকা প্রতিরোধী একটি জীন। ধানের বাদামি শোষক পোকা প্রতিরীধী জীন গুলির মধ্যে এটিকে সর্বপ্রথম ক্লোন করা হয়। এই জীন NLR জাতীয় প্রোটিন তৈরী করে যা বাদামী শোষক পোকার লালায় অবস্থিত কোনো উপাদানকে চিহ্নিত করে তারপর ধাপে ধাপে বাদামী শোষকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয় (Cheng et al 2013)। ২০২০ সাল পর্যন্ত ধানের পতঙ্গ প্রতিরোধী ১৪ টি জীন ক্লোন করা হয়েছে। এই জীনগুলি প্রত্যেকে এমন কোনো প্রোটীন উৎপাদনের সংকেত বহন করে যারা পতঙ্গ নিসৃত কোনো উপাদান কে শনাক্ত করার মধ্যমে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে (Du et al. 2020)। অর্থাৎ পতঙ্গ প্রতিরোধী জীন ও রোগজীবানু প্রতিরোধী জিনের কার্য্যকারিতায় যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে। সুতরাং বলাযায় বিভিন্ন পতঙ্গ প্রতিরোধী জীন কে একত্র করে যে ধান তৈরী করা হবে তার বিরুদ্ধে একই ভাবে পতঙ্গরা আক্রমন করার ক্ষমতা গড়ে তুলবে। বিশেষত পতঙ্গরাও যৌন জনন করে, বিপুল হারে বংশ বিস্তার করতে পারে এবং তাদের মধ্যেও প্রচুর জীনগত বৈচিত্র বিদ্যমান। দেখাগেছে যে বাদামী শোষক পোকার মধ্যে যে পরিমান জীনগত বৈচিত্র রয়েছে তাতে এই পেষ্টের ধানের যে কোনো প্রতিরধী ভ্যারাইটির বিরুদ্ধে আক্রমনের ক্ষমতা অর্জনের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে (Jing et al. 2012)।

যে জীনগুলি উদ্ভিদ দেহে রোগ জীবানু বা পেষ্টের বিরুদ্ধে অল্প পরিমানে পরিমানগত প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে তাদের QR জীন বলা হয়। এই QR জীনগুলি একত্র করার মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। যদীও এই প্রতিরোধ ব্যবস্থাও পেষ্টের বা রোগ জীবানুর আক্রমনে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে (Mundt 2014)।

জীন প্রযুক্তির মাধ্যমে Bacillus thuringiensis নামক ব্যাকটেরিয়ার কোষ থেকে বিষাক্ত প্রোটিন উৎপাদনকারি Bt জীন সমুহ নিয়ে ধান গাছের কোষে অনুপ্রবিষ্ট করিয়ে মাজরা পোকা এবং পাতামোরা পোকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ধান তৈরী করা হয়েছে। বহু গবেষনায় দেখা গেছে যে Bt ফসলের চাষ বাস্তুতন্ত্রে বিপর্যয় ডেকে আনে (Walliman 2000, Rosi-Marshall 2007)এবং এটি মানুষের স্বাস্থের পক্ষেও বিপজ্জনক (Aris and Leblanc 2011)। তাছারা Bt জীনের বিরুদ্ধে পোকারা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে (Tabashnik et al 2013), একাধীক Bt জীন কে একত্র করলেও এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না (Ives et al 2011)।

৫.২. জীববৈচিত্র, রোগ-পোকা প্রতিরোধ এবং ফলন  কৃষকদের সুদীর্ঘ অভিঞ্জতা এবং বহু বৈজ্ঞানিকের গবেষনা ও পর্য্যবেক্ষন জোরালো প্রমান দাখিল করে যে বিশেষ বিশেষ ফসলের একত্র চাষ বা একই ফসলের বিশেষ কিছু ভ্যারাইটির একত্র চাষ রোগ-পোকার আক্রমন প্রতিরোধে এবং ফলন বাড়াতে যথেষ্ট কার্যকর (Gustaffson 1953, Roy 1960, Wolfe 1985, Trenbath 1993, Garrett and Mundt 1999, Zhu et al. 2000, Mundt 2002, Garrett et al 2009, Mundt 2014)।সাবেক কৃষি পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা, রোগ পোকা ইত্যাদির আক্রমনের বিরুদ্ধে ফলন সুনিশ্চিত করতে কোনো ফসলের একাধিক ভ্যারাইটি একত্রে চাষের রেওয়াজ বহুদিন ধরেই চলে আসছে। এশিয়া ও আফ্রিকায় ধানের দুটি থেকে পাঁচটি বিভিন্ন ভ্যারাইটি (যাদের পাকার সময় ও চালের গুনগত মান কাছাকাছি কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট পার্থক্য আছে) একত্র চাষের রেওয়াজ ছিলো (Wolfe 1985)। ১৯৫৮ সালে ভারতের কয়েকটি দেশী আমন ও আউশ জাতের ধান একত্রে চাষ করে প্রায় ২০% বেশী ফলন পাওয়া গেছিলো (Roy 1960)। চীনে ধানের বিভিন্ন ভ্যারাইটির একত্র চাষে সাফল্যের সাথে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে (Zhu et al. 2000)। ফসলের মধ্যে রোগের বিস্তার মুলত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন রোগজীবানুর কার্যকারিতা, ফসলের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আবহাওয়া। একাধিক ভ্যারাইটির মিশ্রচাষে ভ্যারাইটি গুলির আকার ও আকৃতিগত পার্থক্যের জন্য তাদের সংলগ্ন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অঞ্চলের আবহাওয়ার (Microclimate) পার্থক্য থাকে যা রোগ জীবানুর বিস্তারে বাধা দেয় (Garrett et al 2009)।মিশ্র চাষে অনেক সময় পেষ্টের পাকৃতিক শত্রুদের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করে পেষ্টের বাড়বারন্ত রোধ করে (Trenbath 1993)। একটি ভ্যারাইটি চাষ হয় (Monoculture) এমন ক্ষেত থেকে এবং বহু ভ্যারাইটি একত্রে চাষ হয় এমন ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা রোগ জীবানুর জেনেটিক গঠনের তুলনামুলক পর্যবেক্ষন করে দেখাগেছে যে একক চাষের ক্ষেতে রোগ জীবানুর বৈচিত্র বহু ভ্যারাইটির মিশ্র চাষের ক্ষেতের রোগ জীবানুর তুলনায় অনেক কম। মিশ্র ভ্যারাইটির ক্ষেতে রোগ জীবানুর কোনো বিশেষ স্ট্রেইনের আধিপত্য দেখতে পাওয়া যায়না। রোগ জীবানুর জীনগত বৈচিত্র বেশি হবার কারনে তারা মিশ্র ভ্যারাইটির বিভিন্ন প্রতিরোধী জীনগুলির বিরুদ্ধে খুব ধীরে ধীরে অভিযোজিত হয় (Zhu et al. 2000)। গবেষনায় দেখা গেছে সামগ্রিক ভাবে মিশ্র ভ্যারাইটির প্রতিরোধী জীনগুলির বিরুদ্ধে রোগ জীবানু ও পেষ্টের অভিযোজিত হবার হার বিশুদ্ধ ভ্যারাইটির থেকে অনেক ধীর গতিতে হয় (Mundt 2014)।

বিভিন্ন ভ্যারাইটির সমবায় (Combination) কি ভাবে কোনো রোগ জীবানু বা পেষ্টের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে তা জটিল এবং এখনও অনেকাংশেই দুর্বোদ্ধ (Mundt 2014)। অনেক সময় দেখা যায় কোনো ভ্যারাইটির সমবায় রোগ বা পেষ্টের প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে দিলো অথবা ফলন কমে গেলো। সাবেক কৃষিতে যে উপকারি সমবায় গুলি দেখতে পাওয়া যায় তা কৃষকের বহু প্রজন্মের অভিঞ্জতার ফলশ্রুতি।

প্রকৃতপক্ষে ফসল ও তাকে আক্রমনকারি রোগ ও পতঙ্গের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। পেষ্টের আক্রমন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যেমন প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জীনের ভুমিকা আছে, তেমনি ফসলের জীনগত বৈচিত্রেরও ভুমিকা আছে, তাছাড়া সামগ্রিক বাস্তুতন্ত্র ও তার বিভিন্ন জীবের পারষ্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার ভুমিকাও অপরিসীম। যে বাদামী শোষক পোকাকে বর্তমানে ধানের সবচেয়ে ক্ষতিকারক পোকা বলে গন্য করা হচ্ছে (Cheng et al 2013), সবুজ বিপ্লবের আগে তার পেষ্ট হিসাবে কোনো ভুমিকাই ছিলো না। রাসায়নিক সার ও কীট নাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার ধানক্ষেতের বাস্তুতন্ত্রের যে বিপর্য্যয় ঘটিয়েছিলো তার ফলেই বাদামী শোষক সহ বহু মারাত্মক পেষ্টের উদ্ভব ঘটেছে। দেখাগেছে যে পরিবেশে রোগ-জীবানু বা পেষ্টের অক্রমন স্বল্প বা মাঝারি মাত্রায় হয় সেখানে ফসলে একটি মাত্র প্রতরোধী জীনের উপস্থিতিই যথেষ্ট এবং এই জীনের কার্যকারিতা দীর্ঘদিন অক্ষুন্ন থাকে (Mundt 2014)।  প্রতিরোধী ভ্যারাইটির সাথে সংবেদনশীল ভ্যারাইটির মিশ্র চাষে সংবেদনশীল ভ্যারাইটিটিও রোগ বা পেষ্টের আক্রমন থেকে বহুলাংশে রক্ষা পায়।

জীব বিজ্ঞানে বিবর্তন একটি ধ্রুব সত্য। বিভিন্ন জীন একত্র করে কোনো রোগ জীবানু বা পেষ্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ভ্যারাইটি তৈরী করে তা বহু লক্ষ্য হেক্টর জুড়ে চাষ করলে সংশ্লিষ্ট রোগ জীবানু বা  পেষ্টটির উপর যে নির্বাচন চাপের সৃষ্টি হয় তার ফলশ্রুতিতে হয় রোগ জীবানু বা  পেষ্টটি দ্রুত ঐ ভ্যারাইটিকে আক্রমন করার দক্ষতা অর্জন করবে অথবা অবলুপ্ত হয়ে যাবে। এই ভাবে কোনো রোগ জীবানু বা পেষ্ট অবলুপ্ত হয়ে গেছে এমন নজির বিশেষ নেই, বরং প্রতিরোধী ভ্যারাইটির প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এমন উদাহরনই বেশি। তবে যদি একটি পেষ্ট এই ভাবে অবলুপ্ত হয়ে যায় তার স্থান অন্য কোনো অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকারক পতঙ্গ (Minor pest) পুরন করবে। তাই কেবল প্রতিরোধি মেগা ভ্যারাইটি তৈরির উপর জোড় দিলে রোগ জীবানু বা পেষ্টের সমস্যা থেকে দির্ঘ্যস্থায়ী ভাবে পরিত্রান পাওয়া যাবে না।

৬. উপসংহার

সবুজ বিপ্লবের রুপকাররা অভিঞ্জ কৃষি বিজ্ঞানী হওয়া সত্বেও দেশীয় ধানের বিপুল সম্ভাবনার কথা বুঝতে কেন ব্যর্থ হয়েছিলেন, কেন উচ্চফলনশীল দেশীয় ধান সম্পর্কীত তথ্য তাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিলো তা একটী অস্বস্তিকর প্রশ্ন। সম্ভবতঃ দুটি পুর্বসিদ্ধান্ত তাদের তাদের বৈজ্ঞানিক বিচার বোধ কে প্রভাবিত করেছিলো। প্রথমত তারা ভেবেছিলেন ভারতের সাবেক কৃষি পদ্ধতি অত্যন্ত অনুন্নত তা দিয়ে কিছুতেই উচ্চফলন সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত তারা ভেবেছিলেন যেহেতু দেশীয় indica উপপ্রজাতির ধানগুলি রাসায়নিক সার সহ্য করতে পারেনা, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগে ঢলে পরে যায় তাই এদের সাহায্যে কখনই উচ্চফলন পাওয়া সম্ভব নয়। রাসায়নিক সারের প্রতি সংবেদনশীল খর্বাকৃতি ধানকেই তারা ফলন বাড়াবার প্রধান হাতিয়ার ভেবেছিলেন। ধান উৎপাদন বৃদ্ধি আর রাসায়নিক সার ব্যবহার তারা প্রায় সমার্থক মনে করতেন। সবুজ বিপ্লবের জনক বলে পরিচিত নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজেতা কৃষি বিজ্ঞানী নর্মান ব্যরল্যাগ একবার বলে ছিলেন “যদি আমি তোমাদের (ভারতের) পার্লামেন্টের সদস্য হতাম তাহলে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠতাম আর চিৎকার করে বলতাম সার (রাসায়নিক) দাও…চাষীদের আরও সার দাও” (Shiva 1991)।

অমর্ত্য সেনের দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত গবেষনার(Sen 1981) আগে সাধারন ভাবে অর্থনীতিবিদরা মনে করতেন দুর্ভিক্ষের কারন কম ফলন, তাই ফলন বাড়াবার যে কোনো প্রযুক্তিই স্বাগত। একটা খুব সরলীকৃত ধারনা ছিলো এরকম যে যেহেতু দুর্ভিক্ষের কারন কম ফলন এবং ভারত সহ তৃতীয় বিশ্বের বেশকিছু দেশ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিলো তাই ঐসব দেশে ফলন কম, এবং ফলন কম হবার কারন সংশ্লীষ্ট দেশের অনুন্নত কৃষি প্রযুক্তি। সুতরাং দুর্ভিক্ষ তাড়াতে গেলে চাই উন্নত কৃষি প্রযুক্তি অর্থাৎ সবুজ বিপ্লব। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বিভিন্ন দুর্ভিক্ষ বিশ্লেষন করে দেখিয়েছেন দুর্ভিক্ষের কারন কম ফলন নয় বরং বন্টন ব্যবস্থার ত্রুটি (Sen 1981)। আজ সবুজ বিপ্লবের ছয় দশক পরেও বিশ্ব ক্ষুধা সুচকে ভারতের স্থান লজ্জাজনক ভাবে খারাপ। তাই “সবুজ বিপ্লব তৃতীয় বিশ্বকে দুর্ভিক্ষের কবল থেকে রক্ষা করেছে” (Khush 2001) এই দাবীর যাথার্থতা থাকেনা।

সবুজ বিপ্লবের পর ফলন বেড়েছিলো এই নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু এই ফলন বাড়ানোর জন্য যে মূল্য দিতে হয়েছে, কৃষি বাস্তু তন্ত্রের যে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে তা এড়িয়েও ফলন বাড়ানো যেতো যদি কৃষি বিজ্ঞানীরা দেশীয় কৃষি প্রযুক্তি আর দেশীয় ধানের ভ্যারাইটীর প্রতি কিছু সম্মান দেখাতেন। রিচারিয়া বহু সংখ্যক দেশীয় ভ্যারাইটি নিয়ে গবেষনা করে প্রমান করেছিলেন যে এদের মধ্যে অনেকগুলির উন্নত সংস্করন শুধু উচ্চ ফলনশীলই নয় তাদের রাসায়নিক সারের চাহিদা কম এবং তারা স্থানীয় রোগ পোকা ও প্রাকৃতিক বিরুপতার প্রতি যথেষ্ট সহনশীল। বিশ্বব্যাঙ্কের মদতে তার এই গবেষনা বন্ধ হয়ে যায়, দেশের সরকারের কাছেও তা চরম উপেক্ষিত হয়। বিজ্ঞানের ইতিহাসে দেখাগেছে কোনো তত্ব যখন রাষ্ট্রীয় মদতে ব্যাপক আকারে প্রয়োগে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সেই তত্বের সমালচোনা বা তাকে খারিজ করে দিচ্ছে এমন কোনো গবেষনা হয় উপেক্ষিত হয় নয়তো অবদমিত হয়। রিচারিয়াও তার ব্যতিক্রম ছিলেননা।

সবুজ বিপ্লবের কারনে কৃষি বাস্তুতন্ত্রের ভয়াবহ বিপর্যয়ের কথা আজ কেউই অস্বীকার করেন না। প্রচূর রাসায়নিক সার আর কীট নাশক ব্যবহার করেও রোগ পোকার আক্রমন ঠেকানো বা ফলন ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখন সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য Green Super Rice তৈরী করা হয়েছে। এরকম বহু বৈজ্ঞানিক গবেষনা আছে (যাদের কিছু উল্লেখ এই নিবন্ধে করা হয়েছে) যা প্রমান করে অনেক দেশী ভ্যারাইটি বিনা রাসায়নিক সারে বা সামান্য নাইট্রোজেন সার প্রয়োগে ভালো ফলন দেয় (IR বা GSR ধানের সমান অথবা বেশী)। নাইট্রোজেন সার কম ব্যবহৃত হলে পেষ্টের বাড়বারন্ত হবার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হয়না ফলে রাসায়নিক কীটনাশক লাগে না, কৃষি বাস্তুতন্ত্রের বিপর্যয় ঘটেনা, এমতাবস্থায় কোনো রোগ বা পোকা প্রতিরোধী একটিমাত্র জীন দীর্ঘ্যদিন ধরে কার্যকরি থাকে। স্থানিয় ভাবে প্রাকৃতিক বিরুপতা সহনশীল জাতগুলিকে সংরক্ষন করলে তারা প্রাকৃতিক বিরুপতা সহ্য করেও ভালো ফলন দিতে পারে, এইভাবে বহু প্রান্তিক কৃষিজমিকে ধান চাষের আওতায় আনা সম্ভব। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা সহনশীল জীনগুলিকে বিপুল খরচ করে একটি ভ্যারাইটিতে একত্রিত করার দরকার পরেনা। ধানক্ষেতে বিভিন্ন প্রজাতির মিশ্র চাষ একদিকে ফলন বাড়ায় (ধান ও অন্যান্য প্রজাতি উভয়েরই)অন্যদিকে সাফল্যের সাথে রোগ পোকা প্রতিরোধ করে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষনায় দেখা গেছে ধান, অ্যাজোলা, মাছ, ও হাঁসের একত্র চাষে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাতেও ফলন বাড়ে এবং রোগ পোকা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় (Khumairoh et al 2018)। যদি ফলনের কথা বিচার করা হয় তাহলে বলা যায় ভারতের কৃষি পন্ডিতেরা ধানের যে ফলন দেখিয়ে ছিলেন বা এখনও শ্রী পদ্ধতিতে কিছু ভারতীয় দেশি ভ্যারাইটি যে ফলন দেয় তা Green Super Rice এর সমান বা বেশী। এই সমস্ত তথ্য Green Super Rice গবেষনার যাথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু তাও Green Super Rice তৈরী হচ্ছে এবং দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর সেই পুরোনো যুক্তি দেখিয়ে দক্ষিন পুর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে তার চাষ করা হচ্ছে। Green Super Rice এ রোগ জীবানু ও পেষ্ট প্রতিরোধি সমস্ত জীনকে একত্র করা হচ্ছে, বিবর্তনের স্বাভাবিক নিয়মে যে রোগ জীবানু বা পেষ্ট এই Green Super Rice কে আক্রমনের দক্ষতা অর্জন করবে তাকে ঠেকানোর মত জীন ধানের জীনোমে নেই। ধানের বিভিন্ন রোগ ও পোকা প্রতিরোধী জীন এক অমুল্য প্রাকৃতিক সম্পদ Green Super Rice যাকে দ্রুত ধ্বংস করবে।

জীব বৈচিত্র দেশের অমুল্য সম্পদ। সেই সম্পদকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়ে খাদ্যে সয়ম্ভরতা অর্জন করা যায়। ভারতের মত বিপুল ধান্য বৈচিত্রের দেশে বিভিন্ন দেশী ধানকে যথাযথ ভাবে কাজে লাগালে বেশি ফলন, রোগ ও পোকার আক্রমন প্রতরোধ, প্রান্তিক জমিতে ধান চাষ, ধানের সাথে মাছ চিঙড়ি কাঁকড়া সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রজাতির চাষ, ইত্যাদি বহুবিধ উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হওয়া যায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য প্রাপ্তিকেও সুনিশ্চিত করা যায়। দেশীয় ভ্যারাইটি গুলির স্থানীয় ভাবে সংরক্ষন ও কৃষকের বংশপরম্পরায় সঞ্চিত জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগেই তা সম্ভব।

নির্দেশিকাঃ

Alam S.M., Hassan L., Islam M. M., Begum S. N., and Islam S. N.  (2014). Evaluation of Habitual Rice (Oryza sativa L.) Landraces of Bangladesh through Different Genetic Parameters. International Journal of Innovation and Scientific Research. 11(2). pp 494-502.

Alaev L.B.,(1982) The system of agricultural production in South India. In Roychowdhury Tapan and Habib Irfan (eds.) The Cambridge Economic History of India. Vol.I,.

Alyokhin, A., & Chen, Y. H. (2017). Adaptation to toxic hosts as a factor in the evolution of insecticide resistance. Current opinion in insect science21, 33-38.

Aris, A., & Leblanc, S. (2011). Maternal and fetal exposure to pesticides associated to genetically modified foods in Eastern Townships of Quebec, Canada. Reproductive Toxicology31(4), 528-533.

Ashikari M., Sasaki A., Ueguchi-Tanaka M., Itoh H., Nishimura A., Datta S., Ishiyama K., Satio T., Kobayashi M., Khush G. S., Kitano H. and Matsuoka M. (2002). Loss of Function of a Rice Gibberellin  Biosynthetic Gene, GA 20 oxidase (GA 20ox-2) Led to the Rice ‘Green Revolution’. Breeding Science. 52. Pp 143-150.

Athwal, D. S., Pathak, M. D., Bacalangco, E. H., & Pura, C. D. (1971). Genetics of resistance to brown planthoppers and green leafhoppers in Oryza sativa L. 1. Crop Science11(5), 747-750.

Bandong J.P. and Litsinger J.A. (2005). Rice crop stage susceptibility to the rice yellow stemborer Scirpophaga incertulas (Walker) (Lepidoptera: Pyralidae). International Journal of Pest Management. 51(1). pp37 – 43

Banerjee S.(2013). Study of Performance of Indigenous Paddy Varieties under SRI and Conventional Practices. National Consortium of SRI. New Delhi. India

Bennett J., M. B. Cohen, S. K. Katiyar, B. Ghareyazie & G. S. Khush, (1997). Enhancing insect resistance in rice through biotechnology.In: N. Carozzi & M. Koziel (eds). Advances in Insect Control: The Role of Transgenic Plants. Taylor & Francis,London, pp. 75–93.

Biswas P. (2016). Genetic Evaluation of Rice for Yield and Lodging Resistance under Different Water Regimes. M. Sc. (Ag.) THESIS. Indira Gandhi Krishi Vishwavidyalaya, Raipur, India.

Brown M.E. and Funk C.C. (2008). Climate. Food security under climate change. Science 319. pp 580–581.

Cagauan, A. G. (1995). The impact of pesticides on ricefield vertebrates with emphasis on fish. In Impact of pesticides on farmer health and the rice environment (pp. 203-248). Springer, Dordrecht.

Cassman K.G. and Pingali P.L. (1995) Extrapolating trends from long-term experiments to farmers’ fields: the case of irrigated rice systems in Asia. In: Barnett, V., Payne, R. and Steiner, R. (eds) Agricultural Sustainability:Economic, Environmental and Statistical Considerations. John Wiley and Sons Ltd, New York. 

Cassman, K.G., De Datta, S.K., Olk, D.C., Alcantara, J., Samson, M., Descalsota,J. and Dizon, M. (1994) Yield decline and nitrogen balance in long-term experiments on continuous, irrigated rice systems in the tropics. Advances in Soil Science, Special Issue.

 Cheng X., Zhu L. and He G. (2013). Towards Understanding of Molecular Interactions between Rice and the Brown Planthopper. Molecular Plant  6 (3). pp 621–634

Chauhan, B. S., Opeña, J., & Ali, J. (2015). Response of 10 elite “Green Super Rice” genotypes to weed infestation in aerobic rice systems. Plant Production Science18(2), 228-233.

Cohen, M. B., Alam, S. N., Medina, E. B., & Bernal, C. C. (1997). Brown planthopper, Nilaparvata lugens, resistance in rice cultivar IR64: mechanism and role in successful N. lugens management in Central Luzon, Philippines. Entomologia Experimentalis et Applicata85(3), 221-229.

Currie, H. A., & Perry, C. C. (2007). Silica in plants: biological, biochemical and chemical studies. Annals of botany100(7), 1383-1389.

Dalrymple D.G. (1986) Development and Spread of High Yielding RiceVarieties in Developing Countries. Metrotec, Inc., Washington DC. 

Deb D. (2005) Seeds of tradition seeds of future, Folk rice varieties of Eastern India. RFSTE. New Delhi.

Desai, G.M. and Gandhi, V. (1989) Phosphorus for sustainable agriculture growth in Asia — an assessment of alternative sources and management. In: Proceedings of the Symposium on Phosphorus Requirements for Sustainable Agriculture in Asia and Pacific Region. International Rice Research Institute, Los Baños, Laguna, Philippines, 6-10 March.

Divya, D., Himabindu, K., Nair, S., & Bentur, J. S. (2015). Cloning of a gene encoding LRR protein and its validation as candidate gall midge resistance gene, Gm4, in rice. Euphytica203(1), 185-195.

Divya, D., Sahu, N., Nair, S., & Bentur, J. S. (2018). Map-based cloning and validation of a gall midge resistance gene, Gm8, encoding a proline-rich protein in the rice variety Aganni. Molecular biology reports45(6), 2075-2086.

Dogra, B. (1986) The Indian experience with large dams. In: Goldsmith, E. and Hildyard, N. (eds) The Social and Environmental Effects of Large Dams. Volume 2, Wadebridge Ecological Center, London, UK, pp. 201-208.

Du, B., Chen, R., Guo, J., & He, G. (2020). Current understanding of the genomic, genetic, and molecular control of insect resistance in rice. Molecular Breeding40(2), 1-25.

Duan, C., Cheng, Z., Lei, C., Zhai, H., & Wan, J. (2009). Analysis of QTLs for resistance to small brown planthopper (Laodelphax striatellus Fallén) in rice (Oryza sativa L.) using an F2 population from a cross between Mudgo and Wuyujinh 3. Acta Agronomica Sinica35(3), 388-394.

Duan, C. X., Su, N., Cheng, Z. J., Lei, C. L., Wang, J. L., Zhai, H. Q., & Wan, J. M. (2010). QTL analysis for the resistance to small brown planthopper (Laodelphax striatellus Fallen) in rice using backcross inbred lines. Plant breeding129(1), 63-67.

Dyck V.A., B.C. Misra, S. Alam, C.N. Chen, C.Y. Hsieh and R.S. Rejesus. (1979). Ecology of the brown planthopper in the tropics. In Brown planthopper: threat torice production in Asia. IRRI. Los Banos, Philippines. pp 61-98.

Feng, Z., Wu, C., Wang, C., Roh, J., Zhang, L., Chen, J., … & Wan, J. (2016). SLG controls grain size and leaf angle by modulating brassinosteroid homeostasis in rice. Journal of experimental botany67(14), 4241-4253.

Flinn J.C., De Datta S.K. and Labadan, E. (1982) An analysis of long-term rice yields in a wetland soil. Field Crops Research. 5(3). pp 201-216. 

Flinn J.C. and De Datta S.K. (1984) Trends in irrigated rice yields under intensive cropping at Philippine research stations. Field Crops Research 9. pp 1-15. Elsevier Science Publishers BV, Amsterdam, Netherlands. 

Flintham, J.E., Borner, A., Worland, A.J., and Gale, M.D. (1997). Optimizing wheat grain yield: effects of Rht (gibberellin-insensitive)dwarfing genes. J. Agric. Sci. 128. pp11–25.

Fu J. and Yang J. C. (2012) Research Advances in High-Yielding Cultivation and Physiology of

Super Rice. Rice Science, 19(3): 177−184

G O I (1951). Press Information Bureau.

G O I (1955). Press Information Bureau.

Gallagher, K. D., R E. Kenmore, and K. Sogawa. (1994). Judicial use of insecticides deter planthopper outbreaks and extend the life of resistant varieties in southeast Asian rice. Pp 599-614 in R. E Denno and T. J. Perfects, (eds). Planthoppers, their ecology and management. Chapman & Hall, New York, New York,USA.

Garrett, K. A., & Mundt, C. C. (1999). Epidemiology in mixed host populations. Phytopathology89(11), 984-990.

Garrett, K. A., Zúñiga, L. N., Roncal, E., Forbes, G. A., Mundt, C. C., Su, Z., & Nelson, R. J. (2009). Intraspecific functional diversity in hosts and its effect on disease risk across a climatic gradient. Ecological Applications19(7), 1868-1883.

Gatehouse J. A., K. Powell & H. Edmonds. (1996). Genetic engineering of rice for resistance to homopteran insect pests. In: G. S. Khush (ed.), Rice Genetics III. Proceedings of the Third International Rice Genetics Symposium, 16–20 October 1995. International Rice Research Institute, Manila (Philippines), pp. 189–200.

Ghosh A. ( 1990 ) Rice cum Fish Culture and its Economic Feasibility. In Sugunan  V.V. and Bhaumik U. (Eds) Technologies for Inland Fisheries Development: CICFRI, Barrackpore-743101.

Gross, B. L., & Zhao, Z. (2014). Archaeological and genetic insights into the origins of domesticated rice. Proceedings of the National Academy of Sciences111(17), 6190-6197.

GUSTAFSSON, Å. (1953). The cooperation of genotypes in barley. Hereditas39(1‐2), 1-18.

Herdt R.W. and Capule C. (1983)  Adoption, Spread and Production Impact of Modern Rice Varieties in Asia. International Rice Research Institute, LosBaños, Laguna, Philippines.

Heinrichs E.A. and Mochida O. (1984) From secondary to major pest status: the case of insecticide-induced rice brown planthopper, Nilaparvata lugens, resurgence. Prot. Ecol. 7(2/3). pp 201–218.

Himabindu, K., Sundaram, R. M., Neeraja, C. N., Mishra, B., & Bentur, J. S. (2007). Flanking SSR markers for allelism test for the Asian rice gall midge (Orseolia oryzae) resistance genes. Euphytica157(1), 267-279.

Horgan, F. G., Bernal, C. C., Vu, Q., Almazan, M. L. P., Ramal, A. F., Yasui, H., & Fujita, D. (2018). Virulence adaptation in a rice leafhopper: Exposure to ineffective genes compromises pyramided resistance. Crop Protection113, 40-47.

Horgan, F. G., Srinivasan, T. S., Crisol‐Martínez, E., Almazan, M. L. P., Ramal, A. F., Oliva, R., … & Bernal, C. C. (2019). Microbiome responses during virulence adaptation by a phloem‐feeding insect to resistant near‐isogenic rice lines. Ecology and evolution9(20), 11911-11929.

Ives, A. R., Glaum, P. R., Ziebarth, N. L., & Andow, D. A. (2011). The evolution of resistance to two‐toxin pyramid transgenic crops. Ecological Applications21(2), 503-515.

Jing S., Liu B., Peng L., Peng X., Zhu L., Fu Q. and He G.(2012) Development and use of EST-SSR markers for assessing genetic diversity in the brown planthopper (Nilaparvata lugens Stål). Bulletin of Entomological Research. 102. pp 113–122

Jing, S., Zhang, L., Ma, Y., Liu, B., Zhao, Y., Yu, H., … & He, G. (2014). Genome-wide mapping of virulence in brown planthopper identifies loci that break down host plant resistance. PLoS One9(6), e98911.

Kabir, A., & Khush, G. S. (1988). Genetic analysis of resistance to brown planthopper in rice (Oryza sativa L.). Plant Breeding100(1), 54-58

Kashiwagi, T. and Ishimaru, K. (2004). Identification and Functional Analysis of a Locus for Improvement of Lodging Resistance in Rice. Plant Physiol.34. pp676-684.

Kajimura, T., Widiarta, I. N., Nagai, K., Fujisaki, K., & Nakasuji, F. (1995). Effect of organic rice farming on planthoppers 4. Reproduction of the white backed planthopper, Sogatella furcifera Horváth (Homoptera: Delphacidae). Researches on population ecology37(2), 219-224.

Kaufman P.B., Dayanandan P., Franklin C.I., Takeoka Y. (1985). Structure and function of silica bodies in the epidermal system of grass shoots. Annals of Botany. 55. pp487–505.

Keene, A. (2009). Study of small mammal populations within two barn owl corridors at Folly Farm. Bioscience Horizons2(2), 155-163.

Kenmore, P.E., Cariño, F.O., Perez, C.A., Dyck, V.A. and Gutierrez, A.P. (1984) Population regulation of the rice brown planthopper (Nilaparvata lugens) within ricefields in the Philippines. Journal of Plant Protection in the Tropics 1(1). pp 19-37.

Khumairoh, U., Lantinga, E. A., Schulte, R. P., Suprayogo, D., & Groot, J. C. (2018). Complex rice systems to improve rice yield and yield stability in the face of variable weather conditions. Scientific reports8(1), 1-7.

Khush G. S. (1995) Modern Varieties – Their Real Contribution to Food Supply and Equity. Geo Journal 35.3

Khush G. S. (2001) Green revolution: the way forward. Nature Review, Genetics. . 2

Khush G.S. and Virk P.S (2005). IR Varieties and their impact. International Rice Research Institute Los Baños (Philippines).

Krishnaiah. K. & Varma N. R. G. (2011). Changing Insect Pest Scenario in the Rice Ecosystem-A National Perspective. [ www.rkmp. co.in/site/default/ris/research-theme/: changing insect pest scenario in the rice ecosystem.pdf.]

Krishnakumar A. (2003). Genetic Resources the Raipur Collection. Frontline 20(2)

Long, D. H., Lee, F. N., and TeBeest, D. O. (2000). Effect of nitrogen fertilization on disease progress of rice blast on susceptible and resistant cultivars. Plant Disease. 84. pp403-409.

Li, R., Li, M., Ashraf, U., Liu, S., & Zhang, J. (2019). Exploring the relationships between yield and yield-related traits for rice varieties released in China from 1978 to 2017. Frontiers in plant science10, 543.

Lopes, A.S. (1980) Micronutrients in soils of the tropics as constraints to food production. In: Priorities for Alleviating Soil-Related Constraints to Food Production in the Tropics. Jointly sponsored and published by the International Rice Research Institute, Los Baños, Laguna, Philippines and the New York State College of Agriculture and Life Sciences, Cornell University.

Lu Z.X., Kong-Luen Heong, Yu X.P.,Hu C.(2004). Effects of Plant Nitrogen on Ecological Fitness of the Brown Planthopper, Nilaparvafa lugens Stal. in Rice. J. Asia-Pacific Entomol. 7 (1). pp 97 -104

Lu Z.X., YU Xiao-ping, Kong-luen HEONG, HU Cui. (2007). Effect of Nitrogen Fertilizer on Herbivores and Its Stimulation to Major Insect Pests in Rice. Rice Science. 14(1). pp 56-66

MacDonald GM. (2010) Water, climate change, and sustainability in the southwest. Proceedings of

the National Academy of Sciences, 107(50): pp.21256-21262. 

Mackill J.D. and Khush G.S. (2018). IR64: a high-quality and high-yielding mega variety. Rice . 11:18

Moormann, F.R. and van Breemen, N. (1978) Rice: Soil, Water Land. International Rice Research Institute, Los Baños, Laguna, Philippines

Malathi, V. M., More, R. P., Anandham, R., Gracy, G. R., Mohan, M., Venkatesan, T., … & Sa, T. (2018). Gut bacterial diversity of insecticide-susceptible and-resistant nymphs of the brown planthopper Nilaparvata lugens Stål (Hemiptera: Delphacidae) and elucidation of their putative functional roles. Journal of Microbiology and Biotechnology28(6), 976-986.

Mohanty, S. K., Panda, R. S., Mohapatra, S. L., Nanda, A., Behera, L., Jena, M., … & Mohapatra, T. (2017). Identification of novel quantitative trait loci associated with brown planthopper resistance in the rice landrace Salkathi. Euphytica213(2), 38.

Mundt, C. C. (2002). Use of multiline cultivars and cultivar mixtures for disease management. Annual review of phytopathology40(1), 381-410.

Mundt, C. C. (2014). Durable resistance: a key to sustainable management of pathogens and pests. Infection, Genetics and Evolution27, 446-455.

.

Murai, M., Takamura, I., Sato, S., Tokutome, T., and Sato, Y. (2002). Effects of the dwarfing gene originating from ‘‘Dee-geo-woo-gen’’ on yield and its related traits in rice. Breed. Sci. 52. pp95–100.

Mustafa, U. (1991) Economic impact of land degradation (salt-affected and waterlogged soils) on rice production in Pakistan’s Punjab. Ph.D. dissertation, College of Economics and Management, University of the Philippines at Los Baños (UPLB), College, Laguna, Philippines.

Muthayya, S., J.D. Sugimoto, S. Montgomery, and G.F. Maberly. (2014). An overview of global rice production, supply, trade, and consumption. Annals of the New York Academy of  Sciences 1324:7–14.

Nemoto, H., Ikeda, R., & Kaneda, C. (1989). New genes for resistance to brown planthopper, Nilaparvata lugens Stal, in rice. Japanese Journal of Breeding39(1), 23-28.

Okuno A., Hirano K., Asano K., Takase W., Masuda R., Morinaka Y.,Ueguchi-Tanaka M, Kitano H, Matsuoka M. (2014). New Approach to Increasing Rice Lodging Resistance and Biomass Yield Through the Use of High Gibberellin Producing Varieties. PLOS ONE. 9(2). 86870

 Ookawa T., Tokunori Hobo, Masahiro Yano, Kazumasa Murata, Tsuyu Ando, Hiroko Miura, Kenji Asano, Yusuke Ochiai, Mayuko Ikeda, Ryoichi Nishitani, Takeshi Ebitani, Hidenobu Ozaki, Enrique R. Angeles, Tadashi Hirasawa & Makoto Matsuoka. (2010). New approach for rice improvement using a pleiotropic QTL gene for lodging resistance and yield. Nature Communication. 1:132

Paul A. et al.(2011). Comparative study on chemical and organic nutrient management of rice during kharifseason in Nadia district of West Bengal,. proceedings of International Symposium on System Intensification Towards Food & Environmental Security,BCKV, Kalyani WB.

Postel, S. (1989) Water for agriculture: facing the limits. Worldwatch Paper 93.

Postel, S. (1993) Water and agriculture. In: Gleick, P.H. (ed.) Water in Crisis: a guide to the World’s Freshwater Resources. Oxford University Press, New York.

 Panda T., Mishra N., and Mohanty R.B. (2013) Diversity of Some Threatened Indigenous Rice Varieties Cultivated in Odisha,India. Environment and Natural Resources J. 11(2):41-57 .

Peng S, Laza R.C., Visperas R.M., Sanico A.L., Cassman K.G., Khush G.S. (2000) Grainyield of rice cultivars and lines developed in the Philippines since 1966. Crop Sci 40. pp307–314.

Piao S., Ciais P., Huang Y., Shen Z., Peng S., Li J., Zhou L., Liu H., Ma Y., Ding Y., Friedlingstein P. (2010) The impacts of climate change on water resources and agriculture in China. Nature467(7311). p.43. 

Pingali, P.L. (1994) Technological prospects for reversing the declining trend in Asia’s rice productivity. In: Anderson, J. (ed.) Agriculture Technology Policy Issues for the International Community. Agricultural Policies Division, Agricultural and Rural Development Department, World Bank, Washington DC (Chapter 21) and CAB International, Wallingford, UK. 

Pingali P.L., Hossain M. and Gerpacio R.V. (1997). Asian Rice Bowls: The Returning Crisis? CAB International, in association with IRRI.

Rabara, R. C., Ferrer, M. C., Diaz, C. L., Newingham, M., Cristina, V., & Romero, G. O. (2014). Phenotypic diversity of farmers’ traditional rice varieties in the Philippines. Agronomy4(2), 217-241.

Randhawa M.S. (1986). A History of Agriculture in India Vol. IV. Indian Council of Agricultural Research, New Delhi, India.

Rao, I. S., Neeraja, C. N., Srikanth, B., Subrahmanyam, D., Swamy, K. N., Rajesh, K., … & Voleti, S. R. (2018). Identification of rice landraces with promising yield and the associated genomic regions under low nitrogen. Scientific reports8(1), 1-13.

Ray D. K. et al. (2013) Yield Trends Are Insufficient to Double Global Crop Production by 2050. Plos one 8(6). 

Rashid M. M., Ahmed N., Jahan M., Islam K. S., Nansen C., Willers J. L. & Ali M. P.(2017). Higher Fertilizer Inputs Increase Fitness Traits of Brown Planthopper in Rice. Nature Scientific Reports  7: 4719

Rashid M.M., Jahan M., Islam K.S. (2016). Impact of Nitrogen, Phosphorus and Potassium on Brown

Planthopper and Tolerance of Its Host Rice Plants. Rice Science. 23(3). pp119−131

Reddy A. P. K., Katyal J. C., Rouse D. I., and MacKenzie D. R (1979). Relationship between nitrogen fertilization, bacterial leaf blight severity, and yield of rice. Phytopathology. 69. pp 970-973.

Richharia, R. H. (1977) A Strategy for Rice Production to Ensure Sustained Growth in Madhya Pradesh. Madhya Pradesh Rice Research Institute, Raipur India. ARRC No10. 

Richharia R. H. (1983). An action plan for increasing rice production of India.  Centre for Education and Documentation.  India.

Richharia R. H. and Govindaswami S. (1990). Rices of India. Academy of Development Science: Maharastra-India. 

Rosegrant, M.W. and Pingali, P.L. (1994). Policy and technology for rice productivity growth in Asia. Journal of International Development 6(6),665-688. 

Rosi-Marshall, E. J., Tank, J. L., Royer, T. V., Whiles, M. R., Evans-White, M., Chambers, C., … & Stephen, M. L. (2007). Toxins in transgenic crop byproducts may affect headwater stream ecosystems. Proceedings of the National Academy of Sciences104(41), 16204-16208.

Roy, S. K. (1960). Interaction between rice varieties. Journal of Genetics57(1), 137-152.

Samad, M., Merrey, D., Vermillion, D., Fuchs-Casrsch, M., Mohtadullah, K.and Lenton, R. (1992) Irrigation management strategies for improving the performance of irrigated agriculture. Outlook on Agriculture. 21(4). pp279-286.

Sen, A. (1982). Poverty and famines: an essay on entitlement and deprivation. Oxford university press.

Shahjahan, M., Jalani, B. S., Zakri, A. H., Imbe, T., & Othman, O. (1990). Inheritance of tolerance to rice tungro bacilliform virus (RTBV) in rice (Oryza sativa L.). Theoretical and applied genetics80(4), 513-517.

Savant N., Snyder G.H., Datnoff L.E. (1996). Silicon management and sustainable rice production. Advances in Agronomy.58. pp151–99.

Savitha P. and Usha kumara R. (2016). Indigenous knowledge of traditional landraces in Rice (Oryza sativa) in situ conservation of Tamil Nadu, India. Indian Journal of Tradional Knowledge. 15(2). Pp 321-329.

Settle, W. H., Ariawan, H., Astuti, E. T., Cahyana, W., Hakim, A. L., Hindayana, D., & Lestari, A. S. (1996). Managing tropical rice pests through conservation of generalist natural enemies and alternative prey. Ecology77(7), 1975-1988.

Shiva, V. (1991). The violence of the green revolution: third world agriculture, ecology and politics. Zed Books.

Sidhu, G. S., Khush, G. S., & Mew, T. W. (1978). Genetic analysis of bacterial blight resistance in seventy-four cultivars of rice, Oryza sativa L. Theoretical and Applied Genetics53(3), 105-111.

Sidhu, G. S., & Khush, G. S. (1978). Genetic analysis of brown planthopper resistance in twenty varieties of rice, Oryza saliva L. Theoretical and Applied Genetics53(5), 199-203.

Singh, R. B. (2000). Environmental consequences of agricultural development: a case study from the Green Revolution state of Haryana, India. Agriculture, ecosystems & environment82(1-3), 97-103.

Singh, J., Dhaliwal, T. K., & Grover, D. K. (2012). State agricultural profile-Punjab. AERC study30, 12-27.

Spielmeyer W., Ellis M.H. and Chandler P.M. (2002). Semidwarf (sd-1), ‘‘green revolution’’ rice, contains a defective gibberellin 20-oxidase gene. PNAS  99 (13)  pp 9043–9048

Stam, R., & McDonald, B. A. (2018). When resistance gene pyramids are not durable—the role of pathogen diversity. Molecular Plant Pathology19(3), 521.

Stone, B. (1986) Chinese fertilizer application in the 1980s and 1990s: issues of growth, balances, allocation, efficiency and response. In: China’s Economy Looks Toward the Year 2000. Volume 1. Congress of the United States, Washington DC, pp. 453-493

Susanto, U., Barokah, U., & Ali, J. (2020, April). Yield of green super rice (GSR) lines under legowo and squared planting system. In IOP Conference Series: Earth and Environmental Science (Vol. 484, No. 1, p. 012055). IOP Publishing.

Tabashnik, B. E., Brévault, T., & Carrière, Y. (2013). Insect resistance to Bt crops: lessons from the first billion acres. Nature biotechnology31(6), 510-521.

Tandon, H.L.S. (1987) Phosphorus Research and Agricultural Production in India. Fertilizer Development and Consumption Organization, New Delhi, India

Teng, P.S. (1990) IPM in Rice: An Analysis of the Status Quo with Recommendations for Action. Report to the International IPM Task Force (FAO/ACIAR/IDRC/USAID/NRI), IRRI, Los Baños, Laguna, Philippines.

Trenbath, B. R. (1993). Intercropping for the management of pests and diseases. Field crops research34(3-4), 381-405.

Ullah, I., Jamil, S., Iqbal, M. Z., Shaheen, H. L., Hasni, S. M., Jabeen, S., … & Akhter, M. (2012). Detection of bacterial blight resistance genes in basmati rice landraces. Genet Mol Res11(3), 1960-1966.

Vikram P., Mallikarjuna Swami B.P., Dixit S., Singh R., Singh B.P., Miro B., Kohli A., Henry A., Singh N.K., and Kumar A (2015) Drought susceptibility of modern rice varieties: an effect of linkage of drought tolerance with undesirable traits. www.nature.com/scientific reportsw

 Wijayanti, R., Sholahuddin, Supriyadi, & Poromarto, S. H. (2018, September). Population of brown planthopper in local rice varieties. In AIP Conference Proceedings (Vol. 2014, No. 1, p. 020035). AIP Publishing LLC. 

Wallimann, T. (2000). Bt toxin: assessing GM strategies. Science287(5450), 41-41. w.nature.com/scientificreports/w.nature.com/scientificreports

Way M.J. and Heong K.L. (1994). The role of diversity in the dynamics and management of insect pests of tropical irrigated rice a review. Bulletin of Entomological Research 84. pp 567-587.

Wolfe, M. S. (1985). The current status and prospects of multiline cultivars and variety mixtures for disease resistance. Annual review of phytopathology23(1), 251-273.

Wu, T., Shen, Y., Zheng, M., Yang, C., Chen, Y., Feng, Z., … & Wan, J. (2014). Gene SGL, encoding a kinesin-like protein with transactivation activity, is involved in grain length and plant height in rice. Plant cell reports33(2), 235-244.

Xie, J., Hu, L., Tang, J., Wu, X., Li, N., Yuan, Y., … & Chen, X. (2011). Ecological mechanisms underlying the sustainability of the agricultural heritage rice–fish coculture system. Proceedings of the National Academy of Sciences108(50), E1381-E1387.

Yadav, M. K., Aravindan, S., Ngangkham, U., Raghu, S., Prabhukarthikeyan, S. R., Keerthana, U., … & Rath, P. C. (2019). Blast resistance in Indian rice landraces: Genetic dissection by gene specific markers. Plos one14(1), e0211061.

Yano K., Ookawa T., Aya K., Ochiai Y., Hirasawa T., Ebitani T., Takarada T., Yano M., Yamamoto T., FukuokaS., Wu J., Ando T., Ordonio R.L., Hirano K., and Matsuoka M. (2015). Isolation of a Novel Lodging Resistance QTL Gene Involved in Strigolactone Signaling and Its Pyramiding with a QTL Gene Involved in Another Mechanism. Mol. Plant. 8. pp 303–314.

Yoshida, S. (1975). The physiology of silicon in rice. Technical Bulletin No. 25. Food Fert. Tech.

Centr., Taipei, Taiwan.

Yoshida, S . (1981). “Fundamentals of Rice Crop Science.” International Rice Research Institute, Los

Banos, Laguna, Philippines

 Yu S., Ali J.,   Zhang C., Li Z. and  Zhang Q. (2020) Genomic Breeding of Green Super Rice Varieties and Their Deployment in Asia and Africa. Theoretical and Applied Genetics 133:1427–1442

Zhang Q. (2007) Strategies for developing Green Super Rice. PNAS  104 (42) pp 16402–16409

Zhu, Y., Chen, H., Fan, J., Wang, Y., Li, Y., Chen, J., … & Mundt, C. C. (2000). Genetic diversity and disease control in rice. Nature406(6797), 718-722.

Zhu P., Zheng X., Xu H., Johnson A.C., Heong K.L., Gurr G.M., Lu Z.(2020). Nitrogen fertilizer promotes the rice pest Nilaparvata lugens via impaired natural enemy, Anagrus flaveolus, performance. Journal of Pest Science. Springer. Published online.

4 Comments

  • অত্যন্ত মূল্যবান লেখা। প্রচুর তথ্যের সমাবেশ রয়েছে, সেইসঙ্গে বিশ্লেষণ। বার বার পড়বার মতো লেখা।

  • বাজারি আশকারায় রাষ্ট্র যখন নিজের পরম আশ্রয় যে গাছ, সেটাকেই কেটে ফেলতে উদ্যত হয়, তখন সেই কালিদাসী বিবেচনার ফলাফল কি হয় সে সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি অবগত থাকলেও প্রয়োজনের সময় সে কথা মনে করিয়ে দেওয়াটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
    এই আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment