লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) হলো প্রাকৃতিক গ্যাসের তরল আকার, যা প্রাকৃতিক গ্যাসকে অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় (-১৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা -২৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ঠাণ্ডা করে তরল আকারে রূপান্তরিত করা হয়। তরলীকরণের ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের আয়তন প্রায় ৬০০ গুণ কমে যায়, যা একে সহজে সংরক্ষণ ও পরিবহনের উপযোগী করে তোলে। এলএনজি সাধারণত বড় ট্যাংকার বা বিশেষায়িত জাহাজে পরিবহন করা হয় এবং গ্যাসীকরণের মাধ্যমে পুনরায় প্রাকৃতিক গ্যাসে রূপান্তরিত হয়।
এলএনজির মূল উপাদান এবং তাদের শতকরা হার নিম্নে দেওয়া হলো:
মিথেন (CH₄): ৮৫% থেকে ৯৫%
ইথেন (C₂H₆): ৫% থেকে ১০%
প্রোপেন (C₃H₈): ০.১% থেকে ১.৫%
বুটেন (C₄H₁₀): ০.১% থেকে ১%
নাইট্রোজেন (N₂): ০.৫% থেকে ১%
কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂): খুবই সামান্য (০.১% এর কম)
এছাড়া, অল্প পরিমাণে অন্যান্য হাইড্রোকার্বন এবং অমিশ্রিত গ্যাস থাকতে পারে।
এলএনজি ব্যবহারের ঝুঁকি
এলএনজি, বা লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস, মিথেনকে তরল আকারে সংরক্ষণ ও পরিবহন করতে ব্যবহৃত হয়। এলএনজি ব্যবহারের কয়েকটি প্রধান ঝুঁকি রয়েছে:
1. পরিবহন ও স্টোরেজ লিকেজ: এলএনজি পরিবহন ও সংরক্ষণ করার সময় মিথেন লিকেজ একটি বড় সমস্যা। সামান্য পরিমাণ মিথেনও বায়ুমণ্ডলে প্রচুর উষ্ণায়ন প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
2. এলএনজি উৎপাদন প্রক্রিয়া: এলএনজি উৎপাদনের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে তরলীকরণ এবং পুনরায় গ্যাসীকরণ, প্রচুর পরিমাণে শক্তি ব্যবহার করে, যা অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ করে।
3. উৎস থেকে নিঃসরণ: এলএনজি প্রায়শই হাইড্রোলিক ফ্র্যাকচারিং বা ফ্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলিত হয়, যা মিথেন নিঃসরণের ঝুঁকি বাড়ায় এবং পরিবেশগতভাবে ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য শীত প্রধান দেশে জ্বালানীর ঘাটতি এই বিষয়কে লাইমলাইটে নিয়ে এসেছে । পরিসংখ্যান বলছে বিশ্বে প্রাকৃতিক গ্যাস বা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) প্রয়োজন আরও বাড়বে । এই প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন বাড়নো কিন্তু মোটেও পরিবেশ বান্ধব নয় । তবুও কিছু বাণিজ্যিক সংস্থা ও রাজনীতিবিদ বলছেন এটা জলবায়ু পরিবর্তন বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে । বেশিরভাগ এলএনজি প্রকল্প গুলি তৈরি করা সময় সাপেক্ষ । প্রস্তাবিত কিছু প্রকল্প পশ্চিম উপকূলে নির্মানের কাজ চলছে , পূর্ব উপকূলেও কিছু প্রকল্পের কাজ হবার কথা চলছে ।
এল এন জি কে পরিবেশের খারাপ বলার ৩ টি কারণ আছে
• এলএনজি প্রায় কয়লার মতোই গ্রিনহাউস গ্যাস (GHG) নির্গত করে
• এলএনজি থেকে তৈরি হয় মিথেন তাই এটা কয়লার মতোই দূষণ ছড়ায়। বাণিজ্যিক সংস্থা বলছে এল এন জি নাকি কয়লার থেকে ৫০% কম দূষণ করে থাকে , কিন্তু এখানে দুটি জ্বালানী পোড়ানো থেকে নির্গমনের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে, নিষ্কাশন, পরিশোধন এবং শিপিং সহ পুরো প্রক্রিয়ার দিকে নয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু ক্ষেত্রে এলএনজি কখনও কখনও কয়লার থেকে ও বেশি দূষণ করে থাকে ।
• এলএনজি তৈরি এবং পরিবহনের সময় বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে মিথেন নির্গমন করতে থাকে । মিথেন হল কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী GHG, এবং মিথেন লিক নিয়ে কম রিপোর্ট করা হয়েছে।
এটা বলা যেতেই পারে বায়ু দূষণের দিক থেকে ভাবলে এল এন জি আর কয়লার মধ্যে বিশেষ কোনও পার্থক্য নেই । তাই এল এন জি কখনোই কয়লার বিকল্প হতে পারে না।
তাছাড়া এমন নয় যে এল এন জি ব্যাবহার করলেই কয়লার ব্যাবহার কমে যাবে , উল্টে কয়লার সাথে শাহে এল এন জি ব্যাবহার করলে দূষণের পরমান তো কমবেনা উল্টে বেড়ে যাবে । এল এন জি রিনিউয়াবেল এনার্জি এর ব্যাবহার কমিয়ে দিতে পারে, কিন্তু আমাদের উচিৎ রিনিউয়াবেল এনার্জিকে প্রাধান্য দেওয়া । এখন নতুন করে এল এন জি এর পরিকাঠামো তৈরি করার ময়ানে হল আরে ২০ বছর আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির উপরেই নির্ভরশিল হয়ে যাব ।
স্বীকৃতি – এলএনজিকে না বলুন
প্রচ্ছদের ছবি : Veri Lee