কলমে নবনীতা মিশ্র, পশ্চিম মেদিনীপুর সাইক্লারস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। পেশায় শিক্ষিকা হলেও নেশায় ভ্রমণকারী।
লকডাউন, কোভিড ইত্যাদি যখন মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছিল দিনের পর দিন, গৃহবন্দী দশা, অবসাদগ্রস্ত মন ইত্যাদি কেড়ে নিচ্ছিল হাসি, আনন্দ, প্রান ভরে জীবন বাঁচার ইচ্ছে, সেই পরিস্থিতিকেই মাথায় রেখে আমি প্রতিষ্ঠা করে ফেলি ওয়েস্ট মিডনাপুর সাইক্লার্স ক্লাবের। কিছুটা সময় স্বাস্থচর্চার সাথে সাথে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো আর অনেক টা আনন্দ সবকিছুর একটাই প্যাকেজ, সাইকেল। ক্লাব আর আমরা একসাথে বড় হতে থাকি, শুরু হয় আমাদের রোলার কোস্টার রাইড। কখনও লালমাটির রাস্তা ধরে ঘন জংগলের মধ্যে নিজেদের আবিস্কার করি তো কখনো বা হাইওয়ে ধরে লাল সবুজ বাতির চার মাথার মোড়। মেদিনীপুরের মতো মফস্বল আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হতে শুরু করে সাইকেল ক্লাবের সাথে, মেদিনীপুরের ক্রীড়া জগতে পাকাপাকি ভাবে নাম করে নেয় ওয়েস্ট মিডনাপুর সাইক্লার্স ক্লাব।
একগুচ্ছ সবুজ সতেজ আর সম্ভাবনাময় প্রাণ যখন একসাথে হৈহৈ করে সাইকেল চালিয়ে সবার সামনে দিয়ে যায়, তখন আনন্দের সাথে সাথে তৈরি হতে থাকে দায়িত্ববোধও। এতগুলো প্রাণ মানে এতগুলো রিসোর্স! এদের তো ইতিবাচক রাস্তা দেখাতেই হবে… আমাকে অবশ্য বেশি খাটতে হয়নি, ছেলেমেয়েরাই উৎসাহ নিয়ে করে ফেলেছে দু’ দুটো ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প। পশ্চিম্বঙ্গের সবথেকে বড় সবথেকে অভিনব এবং মেদিনীপুরের প্রথম সাইকেল র্যালি “সাইক্লোথন”, সাইকেল নিয়ে বেলপাহাড়ীর খাঁদারানী লেক ধরে ম্যারাথন, তেইশে জানুয়ারির দশ মাইল দৌড়ের লিডিং টীম, উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই সকলেরই।
সাইকেল ক্লাব নিয়ে আর কি অভিনব কাজ করা যায়, এরকম চিন্তা ভাবনা যখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, ঠিক তখনই সবুজ পৃথিবীর একটি লাইভ আড্ডায় অরিন্দম প্রস্তাব রাখে, ” আচ্ছা মেদিনীপুরে একটা সাইকেল ব্যংক করলে কেমন হয়?” ইলেকট্রিকের মতো কথা টা মস্তিষ্কে এসে লেগেছিল, এবং ভেবে গেছি, কি করে এই সাইকেল ব্যাংকেকে বাস্তব রূপ দিতে পারি!! গ্রুপে আলোচনা করলাম,লাফিয়ে উঠলো সবাই, দারুণ ব্যাপার তো!! হোক! যেই বলা সেই কাজ। গত এক বছর বিক্ষিপ্ত লকডাউন ইত্যাদির ফলে অনেক বাইরে থেকে পড়তে আসা ছেলেমেয়েরা তাদের সাইকেল কার্যত ফেলেই দিয়েছিল, সেই সাইকেল গুলো উদ্ধার করে, সার্ভিসিং করিয়ে চালু করে দেওয়া হল সাইকেল ব্যাংক। মূলত ঋক এর সাইকেল ব্যাংকের ম্যানেজার, ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত ঋকের.. আপাতত ৫ টা সাইকেল নিয়ে এই ব্যাংক শুরু করেছি আমরা এবং ক্লাবের পক্ষ থেকে ঠিক করেছি কোনো সাইকেল আমরা বিক্রি করবোনা। যারা রাইড করতে চান, তারা উপযুক্ত পরিচয়পত্র জমা রাখবেন এবং সামান্য কিছু মূল্যের বিনিময়ে আমাদের কাছ থেকে সাইকেল নিয়ে তারা চালাবেন।
সাইকেল ব্যাংকের পাশাপাশি আমরা মেদিনীপুরে যদি একদিনের জন্য হলের একটা “Green Day” বা “Car Free Day” করা যায়, তার জন্য ইতিমধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসকের কাছে আবেদন রেখেছি।
ওয়েস্ট মিডনাপুর সাইক্লার্স ক্লাব থেকে এখন সরকারি ভাবেই আমরা কোভিড হেল্পডেস্কে কাজ করছি.. লকডাউনে খেতে না পাওয়া প্রায় ১০০ পথকুকুরের খাওয়ার দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে রোজ।
ইয়াস বিপর্যস্ত এলাকায় ত্রান-সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।
খুলে ফেলেছি “WMCC Queen Bees” শুধুমাত্র মহিলা পরিচালিত একটা সাইকেল টীম! গৃহবধূরা যেখানে অংশগ্রহণ করছেনও।
ক্লাবের প্রতি এক জন সদস্য অত্যন্ত ভালোবেসে, এবং দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছে ক্লাব।
যে কথা টা না বললেই নয়, সেটা হল মেদিনীপুরের মানুষ জন শুধু না, মেদিনীপুর শহরের Administration ও ভালোবাসছেন আমাদের এবং প্রতি পদে তাঁদের থেকে আমরা সাহায্যের আশ্বাস পাচ্ছি।
আমরা চাই মেদিনীপুর শহর ছাড়িয়ে, সারা পশ্চিমবঙ্গে পথ দেখাক ওয়েস্ট মিডনাপুর সাইক্লার্স ক্লাব।
All members very good .
All cyclers club members vary good .And Good Concepts
❤❤❤💖💖💖💖💖💖💖💕💕💕💕❤❤❤