সবুজ পৃথিবীর জন্ম হওয়ার পর থেকে গত দুই মাসে আমরা ক্লাইমেট ভালনারেবল বা পশ্চিমবঙ্গের যে জায়গাগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবথেকে বেশি সেই অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করি। সুন্দরবন, ঝাড়গ্রাম বা মুর্শিদাবাদের এই ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস এইট থেকে টেনের মধ্যে পড়ে। এই ওয়ার্কশপের পরে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করি। এই প্রশ্নগুলির মূলত তিনটি ভাগ ছিল। প্রথম ভাগে আমরা ছাত্র বলে ছিলাম তাদের বাড়ির বড়দের সাথে কথা বলে জলবায়ু কেমন ছিল ও বর্তমানে কেমন হয়েছে তার একটা তুলনামূলক বিচার করতে। দ্বিতীয় ভাগে, আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বেশকিছু প্রশ্ন করি। এবং তৃতীয় ভাগে তাদেরকে বলি জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তাদের অভিমত লিখতে। খুবই অবাক করা আমরা কিছু রেজাল্ট পেয়েছি এই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশ্ন-উত্তর থেকে। এবারের প্রতিবেদনের বিষয় ও সেটি। বাংলার জলবায়ু বিপদজনক অঞ্চলগুলিতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতটা তৈরি জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে নিজের পরিবার এবং নিজের জীবিকা কে রক্ষা করতে।
প্রথম বিভাগের প্রশ্ন গুলি থেকে মূলত আমরা বুঝতে চেয়েছিলাম যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব গুলি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীরা এবং তাদের পরিবার কতটা অবহিত। সিংহভাগ ছাত্র-ছাত্রীদের কথা অনুযায়ী সাইক্লোন, ঝড় বা কালবৈশাখীর মত এক্সট্রিম ইভেন্টের সংখ্যা বর্তমানে অনেকটাই বেড়ে গেছে। আগের থেকে ম্যালেরিয়া বা ডেঙ্গুর মত রোগ গুলির প্রভাব বেড়েছে। আগে যে গরমকাল এত দীর্ঘমেয়াদী ছিলনা বা শীতের প্রকোপ আগে থেকে যে কমে গেছে এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ কমে গেছে বলে ছাত্র-ছাত্রীরা এবং তাদের বাবা-মায়েরা মনে করছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জমির ফসল কিন্তু বিঘা প্রতি বাড়ছে বলেই বড়দের অনুমান। এর কারণ বোঝার জন্য অবশ্য আমাদেরকে আরো গভীরে গিয়ে বিষয়টিকে জানতে হবে।
সকল ছাত্র-ছাত্রী মনে করছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে হচ্ছে এবং মানুষই এই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। বেশিরভাগ ছাত্র ছাত্রী জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে স্কুল এবং খবরে তো শুনেছেই তারা ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ থেকেও কিন্তু এই সংক্রান্ত তথ্য পেয়েছে বলে জানাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ গুলি ও ছাত্র-ছাত্রীরা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছে এবং তাদের বেশিরভাগেরই মত যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের বাড়ির এলাকা বা তারা অত্যন্ত বিপদজনক অবস্থায় আছে।
এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক যে সুন্দরবন মুর্শিদাবাদ ঝাড়গ্রামের মত অঞ্চল যে খানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সাংঘাতিক, সেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যথেষ্ট ভাবছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে প্রতিহত করার মত জ্ঞান তারা বা তাদের আগের প্রজন্ম কিভাবে পাবে! এর পরের অংশে আমরা শুনব যে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের বক্তব্য।