প্রতিবেদন

জলবায়ু পরিবর্তনের অ আ ক খ: কিছু আবশ্যিক প্রশ্নাবলী

জলবায়ু পরিবর্তনের অ আ ক খ: কিছু আবশ্যিক প্রশ্নাবলী

জলবায়ু পরিবর্তন কি?

সাধারণভাবে বলতে গেলে জলবায়ু পরিবর্তন হলো তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত এর মত বিভিন্ন আবহাওয়ার সূচকের দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন।জলবায়ু পরিবর্তন একটা বহু বছর ধরে চলা প্রক্রিয়া। এর মানে এটা নয় যে কোন এক দিন হঠাৎ করে গরম বেশি পড়ে গেল মানেই জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হয়ে গেল। বহুবছর ধরে কোন অঞ্চলের যদি ধীরে ধীরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন আমরা বলতে পারি জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল আবহাওয়া হল ক্ষণিকের ব্যাপার, আর জলবায়ু হলো একটা দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়ার গড়।

জলবায়ু পরিবর্তন কেন হচ্ছে?

গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলির জন্য। মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলির পরিমাণ বাতাসে সাংঘাতিক রকমের বেড়ে গেছে। সূর্য রশ্মি মাটিতে পড়ে করে গরম করে ফের পৃথিবী থেকে বেরোনোর সময় এই গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলি সূর্য রশ্মির বিকিরণ কে আটকে রেখে পৃথিবীকে গরম করে রাখে। ফলে যত গ্রিনহাউস গ্যাস এর পরিমাণ বাড়বে যত পৃথিবী আরো বেশি বেশি করে উষ্ণ হতে থাকবে। বিভিন্ন ধরনের গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলির মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন এবং জলীয়বাষ্প গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা কি করে জানলাম যে জলবায়ু পরিবর্তন সত্যি হচ্ছে?

প্রথমত বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী, যেরকম ক্রমশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, গ্রীন হাউজ গ্যাস গুলির বাড়তে থাকা, সারা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মেরু প্রদেশ বরফের কমে যাওয়া ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তন যে সত্যিই হচ্ছে তার স্বপক্ষে অকাট্য যুক্তি পরিবেশন করে।

আমরা নিজেরাও জলবায়ু পরিবর্তন যে হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। বিশেষত একটু বয়স্ক দের সাথে কথা বলে কিছু জিনিস অতীতের সাথে তুলনা করলেই বোঝা যাবে। যেমন দীর্ঘস্থায়ী গরমকাল, রাত্রিবেলার তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন, অতিবৃষ্টি এবং অনাবৃষ্টি, নানা ধরনের ঝড় এবং সাইক্লোন এর সংখ্যা বৃদ্ধি।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্য কি?

বিশ্ব উষ্ণায়ন মানে শুধুমাত্র পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি যে তা নয়। এর সাথে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন, নানান এক্সট্রিম ক্লাইমেটিক ইভেন্ট যেমন খরা বন্যা বা সাইক্লোন এর সংখ্যা বৃদ্ধি এরকম নানান ঘটনা জড়িত। এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব উষ্ণায়ন পৃথিবীর সব জায়গায় একই হারে হচ্ছে না, কিছু কিছু জায়গায় তো তাপমাত্রা কমছে ও। কিন্তু গোটা পৃথিবীর যদি গড় দেখা যায় সে ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাবো যে আঠারশ সালের পর থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মানুষ যে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যে দায়ী, সেটা আমরা নিশ্চিত হলাম কিভাবে?

কারণ প্রাকৃতিক ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়ার মত শেষ ২০০ বছরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে মানুষ তার কর্মকাণ্ডের দরুন বিভিন্ন উপায় এত বেশি পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন করেছে, সেই গ্রিন হাউস গ্যাসের বৃদ্ধির সাথে ক্লাইমেট চেঞ্জ ভাষা পরিবর্তন এর বিভিন্ন প্যারামিটারের সরাসরি মিল আছে। এছাড়াও অতীতে জলবায়ু দেখে বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে পৃথিবীতে যে যে সময় গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সেই সময় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন অব্দি কতটা ঠিক পরিবর্তন হয়েছে? এবং ভবিষ্যতে কি হবে?

মেরু প্রদেশের বরফ গলা এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলের আয়তন বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে উপকূলবর্তী বহু শহর ডুবে যাবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। গরমকালে লু বাড়ছে অর্থাৎ আগে গরমকালে যতদিন লু বইতো এখন তার থেকে অনেক বেশি দিন ধরে বইছে। হারিকেন বা সাইক্লোন এর মতো ভয়ঙ্কর ঝড়ের সংখ্যা আগের থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতকালের উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে প্রচুর জীব লুপ্ত হয়ে গেছে। এবং বাকিরা জায়গা পরিবর্তন করেছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা জীবজগতে সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে খুব শিগগিরই মাস এক্সটিংশন ঘটার প্রবল সম্ভাবনা আছে।

Leave a Comment