জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফুয়েল পোড়ানোর ফলে হওয়া বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর একমাত্র উপায় হল আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রজেক্ট গুলি কে আস্তে আস্তে বন্ধ করা। মুশকিল হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ব্যাঙ্কগুলি এখনো জীবাশ্ম জ্বালানির একাধিক প্রজেক্ট কে টাকা দিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাঙ্কগুলির লাভের আশায় জীবাশ্ম জ্বালানির করা ইনভেস্টমেন্ট আসলে ভবিষ্যতে আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ব্যাংকের প্রতিটি লোনের সাথে ঝুঁকি থাকে। সাধারণত ব্যাংক তখনই লোন দেয় যখন সে বিশ্বাস করে যে এই ঝুঁকি সামলে সেই লোন পরিশোধ করা সম্ভব। কিন্তু যদি ব্যাংক বুঝতে না পারে সেই ঝুঁকি কতটা বা বুঝতে ভুল করে সে ক্ষেত্রে কিন্তু পরিনাম অত্যন্ত খারাপ হতে পারে। ২০০৭-২০০৯ সালে তাৎক্ষণিক লাভের আশায় প্রচুর ব্যাংক অনাবশ্যক ঝুঁকি নিয়ে ছিল এবং ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ টি বড় ব্যাংকের মধ্যে ১২ টি ব্যাংক ফেলের মুখে চলে গেছিল।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যত স্পষ্ট হচ্ছে আমাদের মধ্যে ততই বাড়ছে ক্রমশ জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে মতামত। অদূর ভবিষ্যতে আমাদের বিকল্প জ্বালানির ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর না করলে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে আছে। পৃথিবীর তাঁবুর বৈজ্ঞানিকরা যখন বলছেন যে আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে তখনও কিন্তু ব্যাঙ্কগুলি সেই ঝুঁকি বুঝতে পারছে না।
প্রতিটি ফসিল ফুয়েল প্রজেক্ট, সেটা নতুন খনি হতে পারে অথবা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে, এগুলির সাথে সাংঘাতিক ঝুঁকি জড়িয়ে আছে। প্যারিস এগ্রিমেন্ট এ যখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশ একসাথে তাদের কার্বন এমিশন কমাবার শপথ নিচ্ছে, ঠিক তার পাঁচ বছর পরে পৃথিবীর সবথেকে বড় ৬০ খানা ব্যাংক, এই সময়ের মধ্যে ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার ফসিল ফুয়েল জীবাশ্ম জ্বালানির প্রজেক্টে ধার দিয়ে বসে আছে যা ২০১৯ সালে ভারতবর্ষের জিডিপি র প্রায় দেড় গুণ।
যদিও এই ব্যাংক গুলি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং জাপানের, ভারতবর্ষের বেশকিছু ব্যাংক কিন্তু একই ধরনের পলিসি এখনো নিয়ে চলেছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এখনো নতুন নতুন খনিজ উত্তোলন এবং কয়লা প্রজেক্টে টাকা ঢেলে যাচ্ছে। যদিও আস্তে আস্তে সোলার এবং অন্যান্য রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টরে ও অল্প বিস্তর টাকা ইনভেস্ট করা হচ্ছে।
কিন্তু সম্প্রতি আদানি গ্রুপের অস্ট্রেলিয়ার একটি কয়লা খনিতে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ইনভেস্ট করতে পারে বলে খবর। সেই ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ হল ১ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়া ডলার বা সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরে অসংখ্য জলবায়ু যোদ্ধা এবং সংগঠন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং এখন দেখার বিষয় যে এরপরেও এই বিপুল পরিমাণ অর্থ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া জলে দিতে রাজি হয় কিনা।
খুব সহজ করে বলতে গেলে আমাদের এই মুহূর্তে আর জীবাশ্ম জ্বালানির কোন প্রজেক্টে ইনভেস্ট করবার মতো বিলাসিতা করার সময় নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য আমাদের জলবায়ু প্রতিরোধী চাষবাস, খাদ্য সুরক্ষা, ওয়াটারসেড ডেভলপমেন্ট থেকে শুরু করে বিকল্প শক্তি এবং গবেষণায় ইনভেস্ট করার আশু প্রয়োজন রয়েছে। শুরু করুন একেবারে স্থানীয় স্তর থেকে, জেনে নিন আপনার ব্যাংক কি এরকম কোন প্রজেক্ট ইনভেস্ট করছে যা ভবিষ্যতে থাকবে না।