প্রতিবেদন

বায়ুদূষণঃ  অ থেকে চন্দ্রবিন্দুঃ কি করবেন কি করবেন না?

বায়ুদূষণঃ অ থেকে চন্দ্রবিন্দুঃ কি করবেন কি করবেন না?

শীতকাল এসে গেছে। পিঠে-পুলি, মেলা, বাঙ্গালীর কফি-রোগের সিলেবাসটা ঝালিয়ে নেওয়ার পালা! একই সাথে খবরের কাগজ খুললেই “কলকাতা ছাপিয়ে গেল দিল্লীকেঃ অন্য কিছুতে নয় বায়ুদূষণে” এরকম খবরের ছড়াছড়ি। পড়তে পড়তে মনে হয় না, এত পি.এম ২.৫, সালফার ডাই অক্সাইড, এই সবের কচকচানিতে না গিয়ে, সোজাসুজি বলুন না দাদা কি করতে হবে? কি করলে বেঁচে যাবো বায়ু দূষণ থেকে!

কথায় বলে বউ থেকে বাঁচার উপায় নেই, আমি বলছি বউ থেকে বেঁচে গেলেও যেতে পারেন (যদি যান আমায় জানান কি ভাবে!) কিন্তু বায়ুদূষণ থেকে বাঁচা খুব শক্ত। তবে, কয়েকটা সহজ উপায়ে বায়ুদূষণের প্রভাব থেকে অনেকটাই বাঁচতে পারেন।

কখন দূষণ

স্থানকাল ব্যতিরেকে শীতকালে সন্ধের পর থেকে ভোরবেলা অব্দি দূষণ সব থেকে বেশি হয়! কাজেই শরীরকে রেস্ট দিন, মর্নিং ওয়াকটা নাই বা করলেন! হাটতে হলে একটু বেলা করে বেরোন, দুপুরে বউদিকে নিয়ে রোদ পোহাতে পোহাতে হেটে আসুন (বিধিসম্মত সতর্কীকরণ – এ উপদেশ দুপুর ঠাকুরপোদের জন্যে নয় )।

কোথায় দূষণ

বেরোবার আগে একটু ভেবে নিন, কোন দিক নিয়ে যাত্রা করবেন! পাড়ার চায়ের দোকানগুলো যেমন গুল্পোর আখড়া, (গুল+গল্প, এটা অরিজিনাল না,  ঝেঁপেছি!) তেমনই রাস্তার মোড় গুলো হল বায়ুদূষণের আখড়া। কাজেই বাস ধরতে গিয়ে বেশীক্ষণ মোড়ে দাঁড়ানো বিপজ্জনক হতে পারে। রাস্তার মোড় থেকে একটু এগিয়ে দাঁড়ান, প্রাণপণে হাত নাড়ালে সব বাস থামবে!  মজার ব্যাপার, রাস্তার মোড়ে যদি দূষণ ১০০ হয়, মাত্র ৫০০ মিটার দূরে গলিতে দূষণ মাত্র ৩০। কাজেই গলি গলি তে যতই শোর উঠুক, গলি দিয়েই চলার চেষ্টা করুন।

এখন করোনার ভয় বলে তাই রক্ষে, নইলে শীতকালে বাঙালিকে স্লো মোসানে শাহরুখ খান হতে কেউ আটকাতে পারে না! ম্যা হুঁ না এর মত ধোঁয়াভর্তি গুমটি থেকে রোজ রোজ স্লো-মোসানে হাঁটলে সোজা হাসপাতাল। মাস্কটা পরুন, করোনা থাকুক বা না থাকুক, ওটা পরলে হাঁপানি-কাঁপানি-জাপানির সাথে সাথে বয়সকালে হার্ট, লাংসের ভোগানি ও কম হতে পারে!

একটু গন্ধবিচার করে নিন। রাস্তায় উৎকট গন্ধ মানেই যে আপনার শার্টে পায়রা ইয়ে করেছে, তা নাও হতে পারে। ভ্যাট আর ভাঁট দুটো থেকেই সাবধান। শহরের দূষণের অনেকটা ভ্যাট থেকেও আসে। কাজেই গন্ধ পেলেই মাস্ক পরে মুখ লুকিয়ে নিন (আহা! লজ্জায় না!)।

সাথে সাথে আর কয়েকটা জিনিস, বাড়ি-টারী  তৈরি হচ্ছে যেখানে, সেখানেও কিন্তু দূষণ সাংঘাতিক।  রাস্তার কাজ দেখলেই নিজের বউ এর সাথে ঘুরতে গিয়ে প্রেমিকাকে দেখতে পেয়েছেন মনে করে উল্টোদিকে হাঁটুন। ওই কালো ধোঁয়া আপনার ইয়েকে কালো করে দিতে পারে!!! ফুসফুসকে ফুসফুসকে! কালো জিনিষকে আর কত কালো করবে!!

ও হ্যাঁ, ভারতবর্ষ আর বাংলাদেশের বায়ুদূষণের অনেকটাই আসে ঘর থেকে। মানে আমরা তো দাতা কর্ণ, তাই প্রতিবেশীকে খিস্তি, ময়লা আর দেঁতো হাসির সাথে সাথে গুছিয়ে খানিকটা বায়ুদূষণও দিয়ে থাকি! ঘরের মধ্যে দয়া করে উনুনে বেগুন পোড়া আর মুরগিকে আদিম মানুষের মত শ্রাদ্ধ করবেন না, বাইরে খোলা জায়গায় করুন, নিজেকে বাঁচান। কবি তো বলে গিয়েছেন তোমার খোলা হাওয়া! ভালো কথা, কবি এটাও বলেছেন যে আগুন জ্বালো! তাই বলে ঘরের মধ্যে ফস করে সিগারেট ধরাবেন না। খেতে হলে খোলা জায়গায় খান।

কিভাবে দূষণ

এই ধরুন আপনি রাত্রে ঘুমতে যাওয়ার আগে কেবলমাত্র এবং কেবলমাত্র ল্যাদ লাগছে বলে মশারি না টাঙিয়ে মশা তাড়াবার কয়েল ধরালেন বা গুঁজে দিলেন তাতে কিন্তু ক্ষতি সাংঘাতিক। একই রকম ক্ষতি ধুনো এবং অন্যান্য ভালো গন্ধওয়ালা জিনিষে।

বদ্ধ ঘর শুধু জড়িয়ে ধরতেই ভালো, শরীরের জন্যে খুব খারাপ। বায়ু চলাচল করতে দিন। পেটে না! ঘরে। রান্না করার সময় জানলা খুলে রাখুন। আর যদি ধোঁয়াতে খানিকক্ষণ  থাকতেই হয় তাহলে মাস্ক পরুন। নানা, নাকে শাড়ি চাপা দেবেন না, এটা বায়ুদূষণ বৌদি, আপনার শ্বশুর না! মাস্ক না থাকলে, যেকোনো কাপড় ফোল্ড করে নাকে চাপা দিন। যতগুলো বেশি ফোল্ড করবেন, দূষণ তত আপনাকে কম ছোঁবে!

কাদের দূষণ

বয়স্ক আর বাচ্ছা এই দুই প্রজন্মের ক্ষতির সম্ভাবনা সবথেকে বেশি। কাজেই স্কুলে বাচ্ছাকে নিয়ে অটোতে যাওয়ার সময় সাবধান, বাসের ধোঁয়া বেরোবার পাইপ কিন্তু ওই উচ্চতাতেই থাকে। যদি বাড়িতে উনুনে রান্না হয় আর রান্না ঘরে জানলা না থাকে, তাহলে বাচ্ছাকে আর বাচ্ছার দাদুদিদাকে রান্নার সময় বনের মোষ তাড়াতে পাঠিয়ে দিন !

এরম অনেক মানুষ আছেন যারা এমন পেশার সাথে যুক্ত তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না বায়ুদূষণ এড়ানো! তাদের কাছে আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই অবাঞ্ছনীয় মজা গুলির জন্যে! আসলে বাঙালি দিনের শেষে মিরাক্কেল দেখতে ভালোইবাসে। আর সাথে দুটো মানে ওয়ালা জোকও। বায়ুদূষণ থাকবে, কিন্তু আপনাকেও থাকতে হবে স্যার বা ম্যাডাম।

Leave a Comment