১৬ বছর! মাত্র ১৬ বছরের একটা কিশোরী কি করতে পারে, তার কি এমন বক্তব্য থাকতে পারে যে বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রনেতারা গুরুত্ব দিতে বাধ্য হন। ২০০৩ সালে জন্ম হওয়া ১৬ বছরের এক কিশোরী যখন সৌরচালিত একটা ছোট্ট ভেলাতে করে সুদূর ইংল্যান্ড থেকে যাত্রা করে বিশাল আটলান্টিক মহা সাগর পেরিয়ে আমেরিকার নিউইয়র্ক এসে পৌঁছায় শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলার জন্য তখন সেই কিশোরীর কথা ফেলে দেওয়া যায় না। ২০১৯ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের ক্লাইমেট একশন সামিটে গ্রেটা থুনবার্গ এর বক্তব্যকে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী ৪ মিনিট বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেটার বক্তব্য বঙ্গানুবাদ করলো সবুজ পৃথিবী।
আমরা কিন্তু আপনাদের কর্মকান্ডের উপর লক্ষ্য রাখছি।
আমার তো এখানে আসার কথা ছিল না। সমুদ্র পেরিয়ে আমার দেশ। আমার তো এখন স্কুলে থাকার কথা। কোথাও একটা বড় ভুল করছেন আপনারা। শুধুমাত্র আপনাদের জন্য আজ আমাকে এখানে আসতে হল।
আপনারা স্বপ্ন চুরি করেছেন আমার। আমার শৈশব কেড়ে নিয়ে ফাঁকা বুলিতে ভরিয়ে দিয়েছেন। তাও তো আমি নিজেকে সৌভাগ্যবতী বলবো। কিন্তু সাধারন মানুষ, তারা কষ্টে আছে, তারা মারা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য গোটা পৃথিবী যখন আজ ধ্বংসের মুখে আপনাদের মুখে শুধু টাকা আর অর্থনীতির কথা! বলিহারি সাহস আপনাদের!
৩০ বছর ধরে বিজ্ঞান পরিষ্কারভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের কথা বলে আসছে। বিজ্ঞানের কথা বিশ্বাস না করে আপনারা নিয়ম করে বলে যাচ্ছেন যে আপনারা নাকি অনেক কাজ করছেন।
আপনারা ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন যে আপনারা বিপদটা কি সেটা নাকি বোঝেন! কি বোঝেন বলুন তো আপনারা! সত্যি যদি বোঝেন তাহলে কি আপনারা ইচ্ছে করে পরিস্থিতি আরো খারাপ করছেন। কাজেই আপনাদের সদিচ্ছার কথা আমি বিশ্বাস করিনা।
আপনাদের একটা ভিষন জনপ্রিয় গল্প হল, ১০ বছরে যদি কার্বন এমিশন অর্ধেক করে দিতে পারি তাহলে নাকি সব ঠিক হয়ে যাবে! কান খুলে শুনে রাখুন, সেটা করলেও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। আর সেটা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে তার ফলাফল যা হবে সেটা কিন্তু মানুষের পক্ষে আটকানো সম্ভব নয়।
কাজেই অর্ধেক কার্বন এমিশন আপনাদের কাছে ভরসাযোগ্য হলেও আমরা কিন্তু এটা মেনে নেব না। আপনাদের জেনারেশন কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে সুখে স্বাচ্ছন্দে
জীবন অতিবাহিত করবে আর আমাদের জেনারেশন গ্লোবাল ওয়ার্মিং/ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল ভোগ করবে সেটা তো হতে দেওয়া যায় না!
কাজেই এই অর্ধেক কমানোর গল্প আপনারা আপনাদের কাছে রাখুন আমরা এতে বিশ্বাস করছি না। আমাদেরই তো এর ফল ভোগ করতে হবে।
আপনারা কি করে ভাবলেন যে যেমন চলছে তেমনি চলবে আর কিছু যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে কার্বন এমিশন কমিয়ে দিলেই পুরো ব্যাপারটা ঠিক হয়ে যাবে! বিজ্ঞান তো সে কথা বলছে না! বৈজ্ঞানিকরা যে সংখ্যাগুলো প্রেডিক্ট করছেন সেটা আমাকে শাস্তি দিচ্ছে না। আপনারা আমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছেন। বেঈমানি করেছেন আমাদের সাথে। আপনারা যদি ভেবে থাকেন যে আপনারা পারবে যাবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। আমরা কিন্তু আপনাদের চালাকি ধরে ফেলেছি। আজ এই মুহূর্ত থেকে আমরা গন্ডি টেনে দিলাম। আমাদের প্রজন্ম কিন্তু বড় হচ্ছে। একটা পরিবর্তনের ঝড় আসছে। সে আপনাদের পছন্দ হোক বা নাই হোক।
আমরা কিন্তু লক্ষ্য রাখছি আপনাদের উপরে। ধন্যবাদ।