টুলকিট

গাছ বাঁচানোর আইন কানুন

গাছ বাঁচানোর আইন কানুন

Upasana Acharyaকলমে : উপাসনা আচার্য্য, সবুজ পৃথিবী

 

না! গাছ নিয়ে রচনা জাতীয় কিছু না । তবে গাছ কাটা যে মানুষ খুন করার মতই অপরাধ সেটা নিয়ে মানুষের এবার একটু সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের চারপাশের পরিবেশে বিভিন্ন রকমের জীব থাকে, তার মধ্যে আমাদের সবথেকে উপকারি বা বন্ধুর মত কাজ করে গাছ। কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক বুদ্ধিমান মানুষ জাতি অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য নিজেদের ইচ্ছে মতন গাছ কেটে গেছে বা এখনও যাচ্ছে। বৃক্ষরোপন বৃক্ষচ্ছেদন নিয়ে “ একটি গাছ একটি প্রাণ” , “গাছ বাঁছাও”, প্রভৃতি স্লোগান পরিবেশ দিবস গুলিতে ব্যাবহার করলেও সত্যিকারের সমাজে তার ব্যাবহার চোখে পরবার মতন মটেও নয়। তবে বলাবাহুল্য আমাদের আইন বিভাগে কিন্তু এই গাছ কাটা নিয়ে বেশ কিছু সতর্কতা, নিয়মের উল্লেখ আছে।

ইউপি ট্রি সংরক্ষণ অ্যাক্ট, ১৯৭৬ এর ২০১৭ সালের সংশোধন অনুযায়ী আম, নিম, সাল, মহুয়া, পিপাল, বট, প্রভৃতি গাছ private বা public সম্পত্তি থেকে কাটার জন্য আইনসম্মত অনুমতির প্রয়োজন।শুধুমাত্র এটাই নয়, এক একটি বড় গাছ কাটার জন্য ১০ টি ছোটো ছোটো গাছ লাগানো বাধ্যতা মূলক। তবে এক্ষেত্রে জমি কম পড়লে, আবেদনকারীদের বন বিভাগকে অর্থ প্রদান করতে হবে।

ভারতীয় বন আইন, ১৯২৭, যার অধীনে প্রতিটি রাজ্যকে গাছ কাটার বিরুদ্ধে বিধি-নিষেধ রাখতে হবে। কেন্দ্র প্রতিটি রাজ্যের নির্দিষ্ট গাছ সংরক্ষণ আইনে সংশোধনী আনার অনুরোধ রেখেছিলেন। বর্তমানে গাছ কাটার জন্য অনুমতি নিতে হবে এবং অনুমতি ছাড়াই গাছ কাটার শাস্তি স্বরুপ আর্থিক জরিমানা ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড-ও হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ গাছ (বন-অঞ্চলে সংরক্ষণ ও সংরক্ষণ) আইন, ২০০৬-এ ধারা ৩(৩) এবং ৩(৫)-এ ‘বৃক্ষচ্ছেদন’ এবং ‘ব্যক্তি’-র সংজ্ঞা অনুযায়ী, গাছ কাটার অর্থ ‘গাছ কেটে ফেলা, গাঁটছড়া করা, পোলার্ডিং করা, উপড়ে ফেলা বা ক্ষতিগ্রস্থ করা ,গাছের একটি অঙ্গ কেটে নেওয়া। এবং “ব্যক্তি” এর মধ্যে কোনও সংস্থা বা সমিতি বা ব্যক্তি বা সংস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এই আইনের ধারা ৪অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি

(ক) অ বন-অঞ্চলে যে কোনও গাছ কাটা যাবেনা।

(খ) মানুষের সহায়তা করে এরকম গাছ ছাড়া অন্য কোনও গাছ কেটে ফেলতে , অপসারণ করতে বা নিষ্পত্তি করতে পারেন। যেমন বাড়ীর পাশের বিভিন্ন আগাছা ঈত্যাদি।

এ ছাড়া এই আইনে ধারা ৬ এ গাছ কাটার আগে অনুমতি নেওয়ার সমস্ত নিয়ম বর্ননা করা আছে। এই আইন অনুযায়ী গাছ কাটার বিনিময়ে গাছ লাগানো বাধ্যতামূলক।

বেআইনি গাছ কাটলে শাস্তি স্বরূপএক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারেএবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাছ না লাগাল প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা জরিমানা দিতে হবে। যে কোনও ব্যক্তি, বা উন্নয়ন সংস্থার বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে দুই বছর কারাদণ্ডে দন্ডিত হবে অথবা দশ হাজার টাকা জরিমানা দেবে বা উভয়ই হতে পারে ।

মহারাষ্ট্র সংরক্ষণ গাছ সংরক্ষণ আইন, ১৯৭১ এর ২১ ধারায় গাছ কাটার শাস্তি এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং এক সপ্তাহ থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

এটা খুব সাম্প্রতিক বিষয় যে বিচার বিভাগ, আইনসভা, বুঝতে পেরেছেন যে প্রাকৃতিক জীবের-ও বাঁচার অধিকার আছে। গাছ রক্ষার জন্য আমাদের আইন আছে তবে সেগুলি আরও ব্যবহারিক এবং বাস্তববাদী করা দরকার। আমাদের বিচার বিভাগ এই প্রাকৃতিক উপহার যথা গাছ সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে । গাছ ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা অসম্ভব। তাই এই সামান্য আইনের সৎ ব্যাবহার করে এখন থেকে এ শক্ত হাতে গাছ কাটা রোধ না করলে ভবিষ্যতে অনেক গম্ভীর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

আপনি যদি লোককে গাছ কাটতে দেখেন, তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করুন, এবং তাদের কাছে বন বিভাগ এবং নাগরিক সংস্থার অনুমতি রয়েছে কিনা তা জিজ্ঞাসা করুন। দলটি যদি আপনাকে দলিল আকারে অনুমোদন না দেখাতে পারে, তাহলে বন বিভাগকে এই ব্যাপারে খবর দিন। এছাড়া সঙ্গে সঙ্গে আপনি সরকারী সম্পত্তি ধ্বংস করার জন্যও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন, কারণ ফুটপাথের গাছগুলি সরকারী সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত হয় এবং কোনও ব্যক্তির সেই গাছগুলি কাটার ক্ষমতা নেই।

গাছ কাটা মানে একটি সম্পূর্ন জীব হত্যা করা। আমাদের আইন বিভাগ অনেক পদক্ষেপ নিলেও গাছ কাটার জন্য যে শাস্তি বা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়।

তবে নির্দিষ্ট আইন থাকলে-ও অনেক ক্ষেত্রে মানুষ গাছ কাটা কে যথেষ্ট অপরাধ বলে মনে করে না। এই কারনে আইনের সঠিক ব্যাবহার হয় না। তাই আমাদের পরিবেশ সচেতন হয়ে চারপাশে চলা এই বেআইনি কাজগুলো বন্ধ করতে হবে। প্রকৃতি আমাদের অনেক দিয়েছে, তাই তাকে রক্ষা করতে এবং নিজেদের জন্যও, শুধুমাত্র একদিন না প্রতিদিন গাছ লাগানো ও গাছ কাটার প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।

1 Comment

  • এই আইন দিয়ে বর্তমানের পরিবেশ সমস্যাপ্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। policy maker দের বর্তমান সমস্যা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই, না হলে এই ধরনের আইন তৈরি করতো না।

Leave a Comment