টুলকিট

জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাস – চিনে নিন দোষীদের

১৯৩০-এর দশকে, কিছু বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান দেখায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর আটলান্টিক অঞ্চল শেষ অর্ধ শতাব্দীতে উল্লেখযোগ্যভাবে উষ্ণ হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন যে এটি কিছু হালকা প্রাকৃতিক চক্রের একটি পর্যায়, সম্ভবত আঞ্চলিক। শুধুমাত্র একটি একাকী কণ্ঠস্বর, ইংরেজ বিজ্ঞানী গাই স্টুয়ার্ট ক্যালেন্ডার, যুক্তি প্রকাশ করেছেন যে গ্রীনহাউস উষ্ণায়ন চলছে। যাই হোক তাকে বিশেষ পাত্তা দেওয়া হয় নি।

১৯৫০-এর দশকে, ক্যালেন্ডারের দাবিগুলিকে কিছু বিজ্ঞানী আবার নতুন ভাবে দেখতে চাইলেন। সেই সময় বিজ্ঞানীদের হাতে আরও ভালো পরিমাপক যন্ত্র এসেছে এবং আবহাওয়া এবং জলবায়ু সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া গেছে। সব থেকে বড় কথা অঙ্ক কষে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পূর্বাভাস যে দেওয়া সম্ভব সেটা বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন। এই সময় বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলতে শুরু করেন শিল্প বিপ্লব পরবর্তী কার্বন ডাই অক্সাইডের বাতাসে জড় হওয়া এবং অবশেষে ১৯৬০ এর দশকে চার্লস কিলিং বায়ু মণ্ডলে নির্ভুল ভাবে গ্যাসটির মাপার পদ্ধতি বের করলেন যা আগের থেকে অনেক বেশি সঠিক।

এই সময় বিজ্ঞানীরা পরাগ, গাছের রিং এবং জীবাশ্ম থেকে অতীতের তাপমাত্রা পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যে কম্পিউটারের আগমন এবং জলবায়ুর মডেল গুলি প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করে। ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে করা গণনাগুলি বলে যে পরবর্তী শতাব্দীতে, বায়ুমণ্ডলে CO2 তৈরি হওয়ার কারণে গড় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু ২১ শতক অনেক দুর বলে কেউ আর তখন বিজ্ঞানীদের পাত্তা দেয় নি।

১৯ শতকের একেবারে গোড়ার দিকে কেমন ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈজ্ঞানিকরা ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলেন। এর পর ৭০ এর দশক, গোটা পৃথিবী জুড়ে পরিবেশ নিয়ে আস্তে আস্তে আন্দোলন শুরু হতে শুরু করে। এই সময় বিজ্ঞানীরা একটা জিনিষ আবিস্কার করেন যেটা খানিকটা ধাঁধায় ফেলে দেয় বিজ্ঞানীদের। সেটা হল, মানুষের কর্মকাণ্ডে যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে গেছে তেমনি বেড়েছে কিন্তু ধুলো। এই ধুলো কিন্তু সূর্যালোক প্রতিফলিত করে পৃথিবীকে ঠাণ্ডা করতে পারে। উত্তর গোলার্ধে দেখা গেলো ১৯৪০ থেকে খুব সামান্য হলেও ঠাণ্ডা হচ্ছে। এর আগেও দেখা গেছে, বড় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত হলে কিছু মাস অন্তত পৃথিবীর তাপমাত্রা কম থাকে। বিজ্ঞানীরা ধাঁধাঁতে আর খবরের কাগজ গুলো পাগল হয়ে গেল। তারা কখনো লিখল উষ্ণতার কারণে বরফ গলে দ্বীপপুঞ্জ ডুবে যাওয়ার ব্যাপারে, আবার কখনো লিখল বেশি ধুলোতে পৃথিবীতে হিমযুগ আসতে পারে ভেবে।

যাই হোক, আমাদের বুঝতে হবে, ৭০ এর দশকে, তখনও বিজ্ঞানীদের কাছে আজকের মতো বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, বা কম্পিউটার বা স্যাটেলাইট ডেটা আসে নি। জলবায়ুর সবকিছু সম্পর্কেও খুব বেশি ধারনা হয় নি। কাজেই এই কনফিউসান হতেই পারে। সত্তরের দশক থেকে বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে বৈজ্ঞানিকরা সমগ্র জলবায়ু সিস্টেমকে বুঝতে শুরু করছিলেন। শুরু হল মেরু এবং দুর্গম অঞ্চলে অতীতের জলবায়ু সম্পর্কিত তথ্য সংরহের অভিযান।

সত্তরের দশকের শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন, ধুলো বাতাসে থাকে দিন সাতেক, সেখানে কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে কয়েক শ বছরেরও অনেকটা বেশি। ফলে ধুলো দিয়ে পৃথিবী ঠাণ্ডা করা নিয়ে যে দন্ধ ছিল তা কেটে গেলো। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন একমাত্র গ্রীন হাউস গ্যাস কমলেই জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো সম্ভব। ১৯৭৯ সালে মোটামুটি বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে বললেন যদি কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব, শিল্প বিপ্লবের থেকে দুই গুন বাড়ে তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি অব্দি বেড়ে যেতে পারে।

১৯৩০ থেকে ১৯৬০ এর দশকে যখন আমরা আসতে আসতে নিশ্চিত হতে শুরু করেছি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে, তখন ভবিষ্যতের প্রজন্মকে পাত্তা না দিয়ে চলেছে কয়লা পোড়ানো, জঙ্গল সাফ। তাহলে কোন প্রজন্ম স্রেফ পাত্তা দেয় নি বলে, আজ আমরা এই সঙ্কটে সেটা বোঝার দরকার আছে বই কি !!

প্রচ্ছদের ছবি : NASA

Leave a Comment