দেওচা পাচামি নিয়ে যা চলছে সেখানে আর নতুন করে বলার কিছু নেই। সেই প্রসঙ্গে আমরা আসব। তার আগে আজ আমরা দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলি কত টাকা কয়লার পেছনে ঢালে। নিচে যে ম্যাপটা দেখছেন সেখানে লাল গোল গুলো হল টাকা ঢালছে যে দেশ গুলি, এবং নীল গোল গুলি হল টাকা পাচ্ছে যে দেশ গুলি।যত বড় গোল তত বেশি টাকা ঢালছে। মনে রাখা দরকার এটা শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা অর্থাৎ কিনা পাবলিকের টাকা। টাকা ঢালছে চিন, তার কাছে বাকি সবাই নস্যি। প্রায় ৪২০০০ মেগা ওয়াট খরচা করছে চিন যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপান করছে মাত্র ২২০০। অর্থাৎ চিন বিভিন্ন দেশে মোট ৪২০০০ মেগা ওয়াট কয়লা বিদ্যুতে পাবলিকের টাকা ইনভেস্ট করছে এই মুহূর্তে।
সেই টাকা পাচ্ছে কারা – টাকা পাচ্ছে বাংলাদেশ, ফুল বাড়ি, পটুয়াখালী, মটরবাড়ি এবং বরিশালে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের টাকা যোগাচ্ছে চিন আর খুব অল্প হলেও জাপান। চিন ইনভেস্ট করছে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো এশিয়ান দেশে, আফ্রিকার একাধিক দেশে এবং সার্বিয়া এর মতো দেশে এমন কি লাতিন আমেরিকাতেও। পিছিয়ে নেই জাপান, রাসিয়া, অস্ট্রিয়া এর মত দেশ গুলিও। কয়লা এবং তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে টাকা ঢালছে তারাও।
মোটামুটি এই হল পৃথিবী জুড়ে থাকা বর্তমানে কার্যকর কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র গুলি। সংখ্যাটা ৭০০০ এর কাছাকাছি। একটু খেয়াল করলে গোলের মধ্যে যে সংখ্যাগুলি দেখতে পাবেন সেগুলি হল বিদ্যুত কেন্দ্রের মোট সংখ্যা। একটু লক্ষ্য করে দেখুন কথায় কথায় এই সংখ্যা গুলি বর্তমানে বেশি – দেখবেন ভারত, এবং চীনে। দ্দক্ষিন পূর্ব এশিয়া, খানিক টা ইউরোপ এবং আমেরিকার পূর্ব উপকুলে।
যাই হোক এই বারে পরের ছবিটা দেখুন, এইটি তে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র গুলি দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ অতীতে যে গুলি কাজ করত। দেখুন প্যাটার্নটা কেমন দুম করে পাল্টে গেল। মানে আর ভারত নয়, মূলত আমেরিকা এবং ইউরোপ কয়লা জালাচ্ছে। অর্থাৎ কিনা, এক সময় পশ্চিমের দেশ গুলি যথেচ্ছ কয়লা পুড়িয়ে যে পরিমান গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করেছে তারই ফল ভুগছি আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে।
কোন ব্যাঙ্ক দিচ্ছে লোন
বড় ছোট মাঝারি কোম্পানির কয়লার খনি বা কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র বসাতে ধার তো লাগবেই। সেই ধার দিচ্ছে কোন ব্যাঙ্ক। আসুন দেখে নি।
খনি টনির ব্যপারে আদানি দের বেশ নাম আছে। সুনাম নয় অবশ্য। যাই হোক তাদের যদি টাকা লাগে, তাহলে দেয় গৌরি সেন, মাপ করবেন স্টেট ব্যাংক। ২০১৪-২০১৭ অব্দি স্টেট ব্যাংক প্রায় ২০০০ মিলিয়ন ডলার আদানি গ্রুপকে দিয়েছে। এক মিলিয়ন মানে ১০ লাখ। মানে ২০০০ লাখ কে ৬০ দিয়ে গুন করলে যত টাকা হয় তত টাকা। এর পরই আছে আইডিএফসি ব্যাঙ্ক (৮০০ মিলিয়ন ডলার)। এছাড়া কে দেয় নি, আইডিবিআই, আক্সিস সবাই মোটামুটি দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক আর আক্সিস ব্যাংক মিলিয়ে প্রায় ৫০০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বসে আছে এনটিপিসি কে। অর্থাৎ যাদের কাজ তাপ বিদ্যুত বানানো। তবে এনটিপিসি টাকা পেয়েছে লোণ হিসেবে ইউরোপ আমেরিকার ব্যাংক থেকেও। পাওয়ার ফিনান্স কর্পোরেসান কে আবার ভারতের গোটা দশেক ব্যাংক তাপ বিদ্যুতের জন্যে ১২০০ কোটি মিলিয়ন ডলার টাকা করে ধার দিয়েছে। একেক টা ব্যাংক ১২০০ কোটি করে বুঝলেন তো। স্টেট ব্যাংক সব মিলিয়ে ১০০০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে কয়লা সংক্রান্ত কাজে। অর্থাৎ মোট 762’351’000’000 টাকা, মানে ৭৬ হাজার কোটি টাকা।