টুলকিট

উন্নয়ন ও রাতের আলো : পর্ব -২

উন্নয়ন ও রাতের আলো পর্ব -২
আচ্ছা ভারতের শেষ সেন্সাস অর্থাৎ জনগণনা বা আদমশুমারির রিপোর্ট বেরিয়েছে ২০১১ সালে। এবং সেই রিপোর্ট যদি আমরা দেখি তাহলে দেখব, এখানে জন ঘনত্ব দেওয়া আছে মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্ড অনুযায়ী। মানে, প্রতিটি পাড়ায় যদি আমরা যদি জানতে চাই কতজন মানুষ বাস করে তাহলে কিন্তু আমরা পারবোনা।
যেমন ধরা যাক কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটি এক নম্বর ওয়ার্ডে জনসংখ্যা ৫৩০০০, এই এতো চোখের মানুষ সেই ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়ায় কিভাবে বেশি-কম হিসেবে থাকেন তার কিন্তু কোনো হিসেব সেন্সাস এর ডেটা আমাদের দিতে পারেনা।
করোণা পরিস্থিতিতে যখন একটা নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বানাতে হবে বা সাধারণভাবেই যদি একটা জলের কল বসাতে হয় তাহলে সেটা কোন জায়গায় বসালে সব থেকে তাড়াতাড়ি বেশি সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবে সেইটা জানার উপায় নেই বললেই চলে। জনঘনত্ব একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা সরকারি এবং বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন কাজে লাগতে পারে। উপরি হিসেবে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে কলকাতায় এবং ভারতবর্ষের বড় বড় শহরগুলিতে আসে। একই অবস্থা কিন্তু বাংলাদেশেও। এই যে শহরমুখী জনতার ভিড় আছড়ে পড়ে প্রতি বছর, ১০ বছরের পুরনো সেন্সাস আদমশুমারিতে তথ্য দিয়ে বর্তমানে কোথায় কত মানুষ বাস করেন সেই গণনা করা ভীষণ কঠিন।
এই পরিস্থিতিতে রাতের আলো আমাদের অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। শহরকেন্দ্রিক যে কোন প্ল্যানিং কিন্তু জনঘনত্বের উপরে নির্ভর করে। চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাতের আলো কে কাজে লাগিয়ে জনঘনত্বের একটি সূচক বার করার চেষ্টা করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশে ও রাতের আলো কে কাজে লাগিয়ে কোথায় কত জনসংখ্যা সেই বিষয়ে একটা কাজ করার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। সোজা কথা হল যেখানে যত বেশি জনসংখ্যা সেখানে ততবেশি আলো।
যদিও এই ধারণাটা অতটাও সহজ সরল নয়। শহরের মধ্যে যদি ইন্ডাস্ট্রি থাকে বা বন্দর থাকে সে ক্ষেত্রে সেই অঞ্চলে জনসংখ্যা কম থাকলেও রাতের আলোর পরিমাণ বেশি থাকে। একই ভাবে বস্তি অঞ্চলে আবার, রাতের আলোর পরিমাণ কম থাকলেও জনঘনত্ব হয়ত অনেকটাই বেশি থাকবে। তাই শুধুমাত্র রাতের আলো দেখলে হবে না সাথে সাথে একেবারে গ্রাউন্ড লেভেলের ইনফরমেশন খানিকটা লাগবে।
এইখানে, সবুজ পৃথিবী কলকাতা এবং ঢাকার ২০১৯ সালের রাত্রিবেলার আলো ম্যাপ করেছি। কলকাতার ক্ষেত্রে খুব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, খুব বেশি আলোর তীব্রতা যেখানে অর্থাৎ খুব গাঢ় লাল যেই অঞ্চল, সেগুলো হলো, খিদিরপুর ডক এবং সায়েন্স সিটি। বাইপাস জুড়ে মেট্রোরেলের কাজ এবং অন্যান্য কারণে কনস্ট্রাকশন এর ফলে এই অঞ্চলে জনঘনত্ব খুব বেশি না থাকলেও রাত্রিকালীন আলো বেশি হতে পারে।
কিন্তু এই গুলোকে যদি আমরা বাদ দিয়ে বাকি শহরটাকে দেখি তাহলে আমরা দেখব পরিষ্কারভাবে অপেক্ষাকৃত কম জনবহুল অঞ্চল যথা গল্ফ গ্রীন, রবীন্দ্র সরোবর, হাতিয়াড়া বা ময়দান। আবার অপেক্ষাকৃত বেশি জনবহুল অঞ্চল হল বউবাজার, কালীঘাট, বাঁশদ্রোণী, অজয় নগর ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এখানেই থেমে থাকেননি, তারা এর সাথে যুক্ত করেছেন land-use ম্যাপ। কিন্তু আমরাও তো জটিল না করেও বলতে পারি যে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ গুলি বা আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ গুলি যেখানে তথ্যের বড় অভাব সেখানে ডিসিশন মেকিং এর জন্য বা নতুন কোন উপস্থাপনা করার জন্য বহু পুরনো সেন্সাসের তথ্য ব্যবহার না করেও আমরা একদম নতুন ভাবে জনঘনত্ব কমবেশি বুঝতে পারি।
সেন্সাস এর রিপোর্টের সময়ের কাছাকাছি রাত্রিকালীন আলোর তথ্য এবং আদমশুমারির জনঘনত্ব মিলিয়ে দেখে নিয়েছি। কলকাতা এবং ঢাকা দুই অঞ্চল এর জন্যই খুব সুন্দর ভাবে এই দুই তথ্য মিলছে। ফলে ২০১৯ সালের তথ্য নিয়ে আমরা মোটামুটি একটা আন্দাজ করতেই পারি কোথায় কত জনঘনত্ব আছে। কলকাতা এবং বাংলাদেশের ঢাকার ম্যাপ দেওয়া রইল, বাংলাদেশের বন্ধুদের বলবো এই ম্যাপ অনুযায়ী ঢাকা শহরের জনঘনত্ব কি মিলছে?

Leave a Comment