বন্ধুদের লেখা

সুস্থায়ী কৃষির পথে – কলমে ড: সুশান্ত কুমার মুখার্জী

সুস্থায়ী কৃষির পথে - কলমে ড: সুশান্ত কুমার মুখার্জী

কলমেঃ ড: সুশান্ত কুমার মুখার্জী 

লেখক পরিচিতিঃ

Sushanta Bhattacharjee

শষ্যবিদ (জল ব‍্যবহার), ধান্য গবেষণা কেন্দ্র,

চুঁচুড়া কৃষি আধিকার প: ব: সরকার

 

—————————————————————————————————————–

 

মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ কৃষির হাত ধরে এগিয়েছে। মানুষ যুগ যুগ ধরে কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করে চলেছে কৃষিকে আর বেশী নিয়ন্ত্রিত করার লক্ষে । এই নিয়ন্ত্রণের মুল চালিকা শক্তি নিজ চাহিদা পূরণ ও নিজের স্বাচ্ছন্দ্য। নিজ অর্থে মানবজাতি। সেখানে অধিকারের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, কিন্তু মুল চাহিদার কেন্দ্রবিন্দুতে মানব জাতি। অর্থাৎ মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, তার রুচির পরিবর্তন, তার প্রয়োজনে জৈব জ্বালানী ইত্যাদির জন্য কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে এবং হয়। কিন্তু আজকের পৃথিবীতে এই অগ্রগতি কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষির বৃদ্ধি ও ব্যক্তিত্বে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার অবশ্যম্ভাবী। এই প্রাকৃতিক সম্পদ যুগ যুগ ধরে সৃষ্ট। এখন বিশ্বব্যাপী প্রশ্ন উঠছে এই প্রাকৃতিক সম্পদকে যথাযথভাবে রক্ষা করার প্রয়াসী হতে কি আমরা ততটা যত্নবান ছিলাম? যদি বা নাও থাকি আজ কিন্তু সময় এসে গেছে সেই যত্ন নেবার।কারণ বিজ্ঞান দেখিয়ে দিচ্ছে যে কৃষি মানে শুধু বীজ, মাটি, কিংবা জল অথবা সার নয় এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য উপকারী জীব ও জীবাণু, যারা কেবল সুস্থ পরিবেশেই স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারে। আর সেই উন্নত পরিবেশে কৃষি তথা উৎপন্ন কৃষিপণ্য অত্যন্ত লাভজনক ও স্বাস্থ্যকর হয়।এখান থেকেই সুস্থায়ী কৃষির ডাক। এই সুস্থায়ী কৃষি পদ্ধতি আহ্বান জানায় প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহারের। আহ্বান জানায় পুনর্নবিকরণযোগ‍্য শক্তির উত্তরোত্তর অধিক ব্যবহারের। এই সুস্থায়ী কৃষি পদ্ধতি দূষণ উৎপন্নকারী প্রযুক্তি ও কৃষি উপকরণ বর্জন করার চেষ্টা করার কথা বলে। সুস্থায়ী কৃষির হাত ধরে তাই মেলবন্ধন হতে পারে কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত সকল ক্ষেত্র্র, পরিবেশ এবং উপভোক্তার চাহিদা ও সচেতনতা।কারণ, সুস্থায়ী কৃষির দাবিকে মান্যতা যখন দিতেই হবে তখন উপভোক্তাকেও আরও সচেতনতার সাথে তার চাহিদাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে।

sustainable agriculture 1

আমাদের দেশে প্রায় ৮৬ % কৃষক হলেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ভুক্ত, যেখানে আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সেই সংখ্যা ৯৬% এর বেশি।এমতাবস্থায় সুস্থায়ী কৃষির প্রসারে এই বৃহত্তম কৃষক গোষ্ঠীর যোগদান অবশ্য প্রয়োজনীয়। এই বৃহত্তম কৃষক গোষ্ঠী ঐতিহাসিকভাবেই বেশকিছু দুর্বলতাকে বহন করেন এবং তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আধুনিক রাসায়নিক উপকরণ ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা, তার ঊর্ধ্বমুখী খরচ বহনে অক্ষমতা।এছাড়া, জমির পরিমাণের নিম্নগামীতা তাকে উপযুক্ত লাভ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চিত করে তোলে, ফলে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা তার নেই বললেই চলে। কিন্তু এই কৃষক গোষ্ঠীর অর্জিত জ্ঞান এবং পূর্বপুরুষদের থেকে লব্ধ জ্ঞান তাদের একটি বড় সম্পদ।

কাজেই সুস্থায়ী কৃষির সঠিক সম্প্রসারণে এই বৃহত্তম কৃষক গোষ্ঠীর চাহিদা তথা দক্ষতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে উত্তরণের পথ ও পদ্ধতি বিচার্যবিষয় এর মধ্যে আনা যেতে পারে। এখন বিচার্য যে একজন প্রান্তিক কৃষকের হাতে থাকা সম্পদ গুলি কি কি যেটা নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। উত্তরে বলা চলে যে মূলত জমিটাই তার সম্পদ। এহেন অবস্থায় জমির সুস্থ ও সুস্থায়ী ব্যবহারের মাধ্যমে যদি কৃষিতে তার মুনাফা বৃদ্ধি ঘটে, তাহলে প্রাথমিকভাবে তিনি এই প্রচেষ্টার একজন সক্রিয় অংশীদার হতে পারেন। মোটের ওপর আমাদের দেখতে হবে যে কোন কোন কৃষি প্রযুক্তি জমির , বিশেষত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের হাতে থাকা জমির সঠিক ব্যবহার করতে সক্ষম। এ বিষয়ে আরো একটি বিষয় ও বিচার্য। ধরা যাক, আমাদের রাজ্যে একজন কৃষকের মাথাপিছু জমির পরিমাণ 0.৭৭ হেক্টর অর্থাৎ ৫.৭ বিঘার একটু বেশি। কিন্তু এই পরিমাণ জমি ও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক লপ্তে থাকে না, এবং জমি অবস্থাও ভিন্ন ভিন্ন হয় অর্থাৎ কোন জমি হয়তো তুলনামূলক উঁচু-নিচু বা মাঝারি হয়। কাজেই সুস্থায়ী কৃষি প্রযুক্তিকে এই সমস্ত জমি গুলিতে ব্যবহারের উপযুক্ত হিসেবে প্রমাণিত হতে হবে নচেৎ এই প্রযুক্তি কৃষকের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া আরও একটি বড় বিষয় আছে।ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের আর্থিক সীমাবদ্ধতাই তাদের সবথেকে বড় অন্ত‍রায়। তাই সুস্থায়ী কৃষি প্রযুক্তির কিছুটা অংশ কৃষক নিজে তৈরী করে নিতে পারলে তার যেমন আর্থিক উপকার হয় তেমনি দক্ষতা বৃদ্ধিও ঘটে।

সুস্থায়ী কৃষি প্রযুক্তি ও জৈব চাষ

বিশ্বব্যাপী জৈব পদ্ধতিতে চাষ আজ সুস্থায়ী কৃষির একটি মূল্যবান পথ হিসেবে চিহ্নিত।কিন্তু জৈব চাষের পরিকল্পনা স্তর থেকেই আমাদের মতো দেশে তাকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের চাহিদামুখী করে তোলার প্রচেষ্টা নিতে হবে।জৈব চাষ শুরু করাটা কিন্তু একটা জ্ঞান ভিত্তিক উদ্যোগ। অর্থাৎ যে যে জৈবপ্রযুক্তি কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য চিহ্নিত তার সবগুলোই অন্য আরেকটি অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্র গুলিতে জৈব প্রযুক্তির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এখন যেহেতু ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মূল মূলধন হলো তার জমি, সে ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে জমি তথা মাটির জৈব ব্যবস্থাপনা কৃষককে এই প্রচেষ্টায় আগ্রহী করে তুলতে পারে। আবার আগ্রহী কৃষক তখনই এই কাজে সক্রিয় অংশীদার হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করতে চাইবেন যখন এই কর্মযজ্ঞে তার একটি সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে এবং এটা নিশ্চিতভাবে তার লাভকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করবে। অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক গোষ্ঠী তার মাটিকে জৈব ব্যবস্থাপনার অন্তর্গত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণ উৎপাদনের অংশীদার হতে পারলে এই প্রক্রিয়ার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব। এইবার দরকার প্রয়োজনীয় জৈব উপকরণ চিহ্নিতকরণ, যা এই কৃষকগোষ্ঠী উৎপাদনে সক্ষম এবং তৃণমূলস্তরে যে উপকরণ উৎপাদন কৌশল গত ভাবে সঠিক। অর্থাৎ জৈব চাষের পথে চলতে গিয়ে কৃষক সমাজের বৃহত্তম মানুষের চাহিদা এবং কৌশলগত অবস্থান কে মাথায় রাখা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আরো একটি কথা ভাবা যেতে পারে। জৈব চাষের প্রসঙ্গ আসলে আমরা অনেক সময় সেই সব অঞ্চলকে অগ্ৰাধিকার দিয়ে ফেলি যেখানে এখনও রাসায়নিক সারের ব‍্যবহার কম, মূলত সেচের অভাবে। কিন্তু সুস্থায়ী কৃষির লক্ষ‍্যে জৈব প্রযুক্তিকে সেচসেবিত অধিক রাসায়নিক সার, কৃষিবিষ-নির্ভর অঞ্চলের চাষের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে নচেৎ এই লক্ষ্যে পৌঁছানো অতটা সহজ হবে না। অর্থাৎ সেচ সেবিত ও অঞ্চলের শস্য চাষের দাবিকে জৈব পদ্ধতিতে পূরণ করার একটা আবশ্যিকতা কিন্তু থেকেই যায়। কারণ এই অঞ্চলের কৃষি ও পরিবেশ দূষণ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি এবং সেই খাদ্য উপভোক্তার কাছে অনেক বেশি পরিমাণেই পৌঁছায়।

সুস্থায়ী কৃষির লক্ষ্যে বলাগড় মডেলের প্রাসঙ্গিকতা

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃষি দফতরের উদ্যোগে হুগলী জেলার বলাগড় ব্লকের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের জমিতে দপ্তরের গবেষণা শাখার বিজ্ঞানী দ্বারা কয়েকটি সুস্থায়ী কৃষি মডেলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয় ২০১৫ – ১৬ সালে। যার মধ্যে কয়েকটি সফল মডেল “বলাগড় মডেল” নামে পরিচিত হচ্ছে। এরমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বায়োগ্যাস প্লান্টের বর্জ্য বায়োস্লারী ব্যবহার করে কৃষি বিশেষভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ইতিমধ্যেই। বিভিন্ন ফসল যেমন ধান, তৈলবীজ, কিংবা বিভিন্ন শাক সবজি চাষের ক্ষেত্রে একমাত্র সার হিসেবে বায়োস্লারী ব্যবহারের প্রয়োগ কৌশল আয়ত্ত করে ফেলেছেন যা সহজ এবং দ্রুত জনপ্রিয় হতে পারে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য যেখানে উৎপাদিত প্রায় সকল প্রকার ফসলের জাতগুলি কিন্তু উচ্চ ফলনশীল জাত। এমনকি সবজির ক্ষেত্রে কৃষকেরা হাইব্রিড জাতের চাষ-ও বায়োস্লারী সহযোগে সফলভাবে করতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলত সরকারি সহায়তা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কৃষক এই পদ্ধতিতে তাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন । এক্ষেত্রে আরো একটি তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই অঞ্চলের মাটি গাঙ্গেয় পলিমাটি অঞ্চলের অন্তর্গত যার উর্বরতা শক্তি সম্বন্ধে আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল এবং দীর্ঘদিন ধরে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষ করার ফলে কৃষক ও জমির স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই জৈব প্রযুক্তির পক্ষে আসতে ইচ্ছুক যদি তার ফলন অন্তত ঠিক থাকে। এক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত আছে । কৃষকের গ্রামেই অত্যাধুনিক উপকারী জীবাণু তৈরির একটি ল্যাবরেটরি রয়েছে এই গ্রামে যেখানে স্বল্প শিক্ষিত যুবক কৃষকেরা জীবাণু তৈরি করছেন পোকা রোগ ইত্যাদিকে জৈব উপায়ে সুস্থায়ী রূপে দমন করতে। এতে গ্রামে দক্ষতা তৈরি হচ্ছে, কৃষির বৈচিত্র্য বাড়ছে, লাভ বাড়ছে, পরিবেশের তথা মাটি, গবাদি পশু, মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে। যা মাটি গবাদি পশু মানুষের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি হচ্ছে এবং যুবক কৃষকদের নতুন পথের কৃষিতে আগ্রহ বাড়ছে।

sustainable agriculture 2

বলাগড় মডেলের আরেকটি বিশেষ সাফল্য হল প্রান্তিক কৃষকের গোপালন এর সমস্যাকে সমাধানের পথ দেখান। ছোট জোতের কৃষক গোপালন করতে গিয়ে লাভ দেখতে পাচ্ছেন না। বাজার থেকে গোখাদ্য কিনে তিনি সুস্থায়ী লাভ পান না। অথচ পরিবেশ বান্ধব জৈব চাষে গোপালন ভীষণ প্রয়োজন। বলাগড় মডেলের সাফল্য এখানেই। একজন ছোট কৃষক যদি সারা বছর সবুজ গোখাদ্য চাষ করেন, তাহলে কতটুকু জমিতে কোন মরশুমে কি কি সবুজ গোখাদ্য ফসল চাষ করলে তার বাজার থেকে কেনার খরচ কমে যাবে সেই তথ্য কৃষক জেনে গেছেন। ফলে কৃষকের বাড়ির মহিলা সদস্যরা সর্বপ্রথম এই কারণেই মডেলটিকে গ্ৰহণ করেন। এই সবুজ গোখাদ্যও বায়োস্লারী দিয়েই চাষ হয়।

সুস্থায়ী কৃষি এবং রাষ্ট্রসংঘের ঘোষিত লক্ষ্য

২০৩০ সালে ক্ষুধা মুক্ত পৃথিবী গড়ার লক্ষ্য কে সামনে রেখে রাষ্ট্রসংঘের যে সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষিত হয় তার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল ক্ষুদ্র কৃষক কৃষি উৎপাদনশীলতা সুস্থায়ী প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বিগুণ করা। রাষ্ট্রসংঘ ধারাবাহিকভাবে তার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পৃথিবীব্যাপী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণ করছে। চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলির ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর প্রায় ২৬.৪ % মানুষ মাঝারি ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার এবং প্রায় ৮২০ মিলিয়ন মানুষ এখনো ক্ষুধার জ্বালায় দিন কাটায়। এই সংখ্যাটা কমানো যায়নি। সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সুস্থায়ী কৃষি পদ্ধতিতে যুক্ত করে সুস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। রাষ্ট্রসংঘের আরো একটি উদ্বেগের কারণ হলো পৃথিবীব্যাপী দেশীয় গবাদিপশুর বৈচিত্র্যের অবলুপ্তি। অথচ কৃষি জমি ছোট হওয়ার সাথে সাথে এবং কৃষি যান্ত্রীকিকরনের প্রচলনে গবাদিপশুর সঠিক ব্যবহারের পদ্ধতি ছোট ও প্রান্তিক কৃষকের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়।

sustainable agriculture 3

এই বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে বায়োগ্যাস প্লান্ট এর ব্যবহার প্রায় নিখরচায় যেমন সন্তানের দাবি পূরণ করে সাথে সাথে ছোট কৃষকের জমিতে বায়োস্লারী ব্যবহার করে চাষ তার মাটিকে জৈব ব্যবস্থাপনার মধ্যে সংযুক্ত করে। আবার ছোট কৃষক এই কৃষি উপকরণ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্ত থেকে তার দক্ষতাকে সহজেই উন্নত করতে পারেন এবং তার কৃষি-ও সুস্থায়ী রূপে অধিক লাভজনক ও উন্নত মানের হয়। সাথে সাথে তিনি দেশীয় গবাদি পশুর রক্ষণাবেক্ষণে যত্নবান হবেন এবং সুস্থায়ী রূপে এই প্রাণী পালনকে তার কৃষির সাথে যুক্ত করতে পারবেন। পশুপালন প্রক্রিয়ায় পশুর বর্জ্য থেকে উৎপন্ন মিথেন নির্গমন এই বায়োগ্যাস প্লান্টের ব্যবহারে আটকে দেওয়া সম্ভব ফলতঃ জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা সরাসরি সাহায্য করে। আবার কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বায়োস্লারী সারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবার কারণে ও কৃষি ব্যবস্থা অনেক বেশি পরিবেশ উপযোগী সুস্থায়ী রূপে লাভজনক হয়।

কাজেই ” সুস্থায়ী কৃষি ” এর লক্ষ্যে এবং উন্নত গ্রামীণ স্বাস্থ্য, পরিবেশ, মাটি, জল তথা খাদ্যের অধিক গুণমান বৃদ্ধিতে ” বায়োগ্যাস স্লারী কৃষি ” মডেলটির গুরুত্ব ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের কাছে সুদূরপ্রসারী হতে পারে। সাথে সাথে গ্রামে উপকারী জীবাণু তৈরির ল্যাবরেটরি যদি এই কৃষি ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা যায়, তাহলে নিশ্চিত ভাবে এক উন্নত বিকল্প কৃষির সূচনা হতে পারে যা হবে সুস্থায়ী, উচ্চ ফলনশীল, লাভজনক এবং স্বাস্থ্যকর।

বিবেকানন্দ ইন্সিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি, নিমপীঠ থেকে প্রকাশিত গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস পত্রিকা থেকে নেওয়া। পরিতোষ ভট্টাচার্য বাবুকে, যিনি এই পত্রিকার সম্পাদক, তাকে অনেক ধন্যবাদ।

Leave a Comment