কলমেঃ অভ্র চক্রবর্তী
লেখক পরিচিতিঃ
অভ্র চক্রবর্তী একজন ধান্য গবেষক এবং সংরক্ষক। এই মুহূর্তে দেশী ধান নিয়ে বাংলার গুটিকয়েক মানুষ কাজ করে চলেছেন, তাদের অন্যতম পুরোধা হলে অভ্র বাবু।
—————————————————————————————————————
সারাংশ–
কৃষি রাসায়নিকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা যতই বাড়ছে , তার বিকল্পখোঁজার চেষ্টাও বাড়ছে। কৃষি জীবানু সংক্রান্ত বহু গবেষনা স্পষ্ট ঈঙ্গিত করছে যে উপকারি কৃষি জীবানু বিভিন্নক্ষতিকর কৃষি রাসায়নিকের এক যোগ্যতর বিকল্প হোয়ে উঠতে পারে (Bhattacharyya and Jha 2012, Sumbul et al 2020)। যে সকল কৃষকরা রাসায়নিক মুক্ত কৃষি ব্যবস্থা গড়েতলার জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেনএবং অন্যান্য পেশার যে সকল মানুষেরা চান যে রাসায়নিক মুক্ত ,পরিবেশ বান্ধব এক টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়েউঠুক তাদের জন্য এই সকল সাম্প্রতিক গবেষনালব্ধ জ্ঞানের একটি সংক্ষিপ্ত সংকলন থাকা জরুরি। এই প্রবন্ধেরপ্রাথমিক উদ্দেশ্য সেটাই। এছাড়াও এই প্রবন্ধ জীবানু বিজ্ঞানের (Microbiology) ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গবেষনার ক্ষেত্র হিসাবে কৃষি জীবানু বিজ্ঞানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে পারে। উপকারি কৃষি জীবানু শুধু যেজমির উর্বরতা বাড়ায় তাই নয় এগুলির আরও বহু গুন আছে। এই জীবানু গুলি গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, গাছের রোগ প্রতীরোধ শক্তি বাড়ায়, গাছের পক্ষে ক্ষতিকর রোগ জীবানুকে দমন করে, ভারী ধাতুর বিষক্রিয়াথেকে গাছকে রক্ষাকরে, জমিকে দুষিত করে এমন বহু পদার্থকে (যেমন খনিজ তেল বা বিষাক্ত কীটনাশক) বিনষ্টকরে(Ahemad and Kibret 2013, Lugtenberg and Kamilova 2009)। আমরা দেখেছি অনেক উপকারিকৃষি জীবানু কে সহজে এবং খুব স্বল্পমুল্যের পরিকাঠামোতেও সাফল্যের সাথে উৎপাদন করা যায় এবং কৃষকদেরমধ্যে বিতরন করা যায়। কৃষি জীবানু বিজ্ঞানের এই গবেষনাগুলি রাসায়নিক মুক্ত কৃষির জন্য এক নোতুন দিগন্তউন্মোচন করতে চলেছে।
ভূমিকা–
মৃত্তিকা বহু আনুবিক্ষনিক জীবের বাসস্থান। এটা শুনতে বিস্ময়কর হলেও সত্য যেমাটির তলায় বসবাসকারি এই সকল অনুজীবের মোট ভর পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২০ গুন বেশি । প্রতি গ্রাম মাটিতে প্রায় ১ কোটি থেকে ১০০ কোটি ব্যাক্টেরিয়ার বসবাস যারা ক্রমাগত বিভিন্ন জৈব পদার্থকে ভেঙে চলেছে। এ ছাড়াও প্রতি গ্রাম মাটিতে পাওয়া যায় ০.১৫ থেকে ০.৫ গ্রাম ছত্রাকের অনুসুত্র (Hyphe) দশ হাজার থেকেএক লক্ষের মত এক কোষি প্রানি, কয়েক হাজারের মত ক্ষুদ্র সন্ধিপদি প্রাণী (Microarthropod), ১৫ থেকে৫০০ র মতো কৃমি এবং কিছু কেঁচো (Kalia and Gosal 2010)। মাটি কিটনাশকের দ্বারা বা অন্য কোনো ভাবেবিষাক্ত হলে, অথবা মাটিতে জৈব পদার্থের অভাব ঘটলে এই সংখ্যা অবশ্য অনেকটাই কমে যায়। এই বিপুলসংখ্যক জীবকে মোটামুটি তিনটে ভাগে ভাগ করা যায়, এদের কেউ নিরপেক্ষ, কেউ উপকারি, কেউবা অপকারি। এই প্রবন্ধে আমরা মুলতঃ উপকারি ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই সকলব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাক কিন্তু মাটির সর্বত্র সমান ভাবে ছরিয়ে থাকেনা। ফসলের মূল ও তার সাথে লেগেথাকা মাটিতেএদের সংখ্যা অনেক বেশি, মাটির একটা সাধারন ঢেলার তুলনায় প্রায় ১০ থেকে ১০০০ গুন (Lugtenberg and Kamilova 2009)। এর কারন গাছের মূল থেকে বেরিয়ে আসা নানান রকমের পদার্থ যেমন শর্করা বিভিন্ন রকমভিটামিন, এমাইনো এসিড , অন্যান্য জৈব এসিড এই সকল ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্য। এছাড়াও গাছের মূল থেকে বেরিয়েআসা কয়েক রকম পদার্থ কিছু ব্যাক্টেরিয়াকে মূলের দিকে আকর্ষণ করে। গাছের মূল ও তার সাথে লেগে থাকামাটির যে অংশে গাছের প্রভাবে ব্যাক্টেরিয়ার এই বিপূল বাড়বারন্ত হয় তাকে জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়রাইজোস্ফিয়ার। এই প্রবন্ধের প্রথমে রাইজোস্ফিয়াএর গঠন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হবে, উপকারি কৃষিজীবানু কৃষি-রাসায়নিকের থেকে কেন যোগ্যতর সেটা উপলব্ধি করার এবং জীবানু সারের সঠিক প্রয়োগবিধীজানার জন্য এটা জরুরী। এরপর উপকারি কৃষি ব্যাক্টেরিয়ার বিভিন্ন ভুমিকা সম্পর্কে পৃথক ভাবে আলোচনা করাহবে। সহজে ও স্বল্পমূল্যে উপকারি কৃষি জীবানুসার প্রত্যন্ত গ্রামে তৈরি করা , চাষীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও তার সাফল্য সংক্রান্ত আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আমরা এখানে আলোচনা করবো। রাসায়নিক মুক্ত কৃষি ব্যবস্থাগড়ে তোলার ক্ষেত্রে জীবানু সারের বিপুল সম্ভাবনা, সাফল্য, আশা ও আশঙ্কার কথাও এখানে আলোচিত হবে।
রাইজোস্ফিয়ার–উদ্ভিদের মুল থেকে বহু রকমের পদার্থ নিসৃত হয়। যেমন বিভিন্ন এমাইনোএসিড, জৈব এসিড, ভিটামিন, নিউক্লীক এসিড, শর্করা , বিভিন্ন ধরনের উৎসেচক, অজৈব আয়ন ও গ্যাসীয় পদার্থসমুহ ( বিশদ বিবরনের জন্য তালিকা ১ দ্রষ্টব্য)। উদ্ভিদের মুল নিসৃত কিছু পদার্থ বহু রকমের ব্যাকটেরিয়াকেযেমন আকর্ষন করে তেমন কিছু অনুজীবকে দুরেও সরিয়ে দেয়। উদ্ভিদের মুলের এই নিঃস্রাব বহু অনুজীবের খাদ্যহিসাবেও ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদের এই মুল নিঃস্রাব কিছু পরিমানে মাটির ভৌত ও রাসায়নিক প্রকৃতি বদলে দেয়। এইভাবে উদ্ভিদের প্রভাবে তার মুলত্বকের কিছু ভেতরে , মুলত্বকে এবং মুলরোম সংলগ্ন কয়েক মিলিমিটার পুরুমাটির স্তরে বহু ধরনের অনুজীব বিপুল পরিমানে এসে বাসা বাঁধে। উদ্ভিদের মুল নিস্রাবের উপাদান সমুহ উদ্ভিদেরশারীরবৃত্তীয় অবস্থা, এবং উদ্ভিদ ও অনুজীবের প্রজাতির উপর নির্ভর করে। মুল নিঃস্রাবের বিভিন্ন উপাদানব্যাক্টেরিয়ারা গ্রহন করে বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে ব্যবহার করে আবার ব্যাকটেরিয়া নিসৃত নানান যৌগ উদ্ভিদ মুলেরমাধ্যমে শোষন করে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করে, উদ্ভিদ ও অনুজীবগুলির মধ্যে জটিল মিথস্ক্রিয়া (Interaction) চলতে থাকে।
তালিকা-১: বিভিন্ন উদ্ভিদ প্রজাতির মুল নিস্রাবে উপস্থিত যৌগ সমুহ
এমিনো এসিড |
αএলানিন, βএলানিন, এস্পারাজিন, এসপারেট, সিস্টেইন, সিস্টিন, গ্লুটামেট, গ্লাইসিন, আইসলিউসিন, লিউসিন, লাইসিন, মিথিওনিন, থ্রিওনিন, সেরিন, প্রোলিন, ভ্যালিন, ট্রিপটোফ্যান, অরনিথিন, হিসটিডিন, আরজিনিন, হোমোসেরিন, ফিনাইলএলানিন, ϒএমাইনোবিউটারিক এসিড, αএমাইনোএডিপিক এসিড |
জৈব এসিড |
সাইট্রিক এসিড, অক্সালিক এসিড, ম্যালিক এসিড, ফিউম্যারিক এসিড, সাকসিনিক এসিড, এসেটিক এসিড, ভ্যালেরিক এসিড, বিউটারিক এসিড, গ্লাইকোলিক এসিড, ফর্মিক এসিড, পিস্কিডিক এসিড, একোনাইটিকএসিড, ল্যাকটিক এসিড, পাইরুভিক এসিড, গ্লুটারিক এসিড, ম্যালোনিক এসিড, টেট্রোনিক এসিড, এলডোনিক এসিড, এরিথ্রোনিক এসিড |
শর্করা |
গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, গ্যালাকটোজ, রাইবোজ, জাইলোজ, র্যামনোজ, আরবিনোজ, ডেসোজাইরিবোজ, অলিগোস্যাকারাইডেজ, র্যাফিনোজ, মলটোজ |
ভিটামিন |
বায়োটিন, থাইমিন, প্যানটোথেনেট, নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন |
পিউরিন/নিউক্লিওসাইড |
এডেনিন, গুয়ানিন, সাইটিডিন, ইউরিডিন |
উৎসেচক |
এসিড ফসফাটেজ, এলকালাইন ফসফাটেজ, প্রোটিয়েজ, ইনভার্টেজ, এমাইলেজ |
অজৈব আয়ন ও গ্যাসীয়অনু |
HCO3–, OH–, H+, CO2 |
সৌজন্যে– Dakora and Phillips (2002).
উদ্ভিদের প্রভাবাধীন মুল ও মুল সংলগ্ন মাটির অনুজীব সমৃদ্ধ এই বিশেষ অঞ্চলকেই বলা হয় রাইজোস্ফিয়ার। বিজ্ঞানীরা এই রাইজোস্ফিয়ারকে তিনটি প্রধান অঞ্চলে ভাগ করেছেন।
১। এন্ডোরাইজোস্ফিয়ার– এই অংশটি মুলত্বকের ভেতরের দিকের অংশ। মুলত্বকের ঠিক নিচে কোষের ফাঁকফোঁকরে (Apoplastic Space) বেশ কয়েক প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক বসবাস করে।
২। রাইজোপ্লেন– এই অংশটি মুলত্বকের বাইরেরদিকে মুলত্বক ঘেঁসে অবস্থিত। মুলের বাইরেরদিকের গা ঘেঁসেএকটি পাতলা শ্লেষ্মার (Mucilage) স্তর থাকে। মুলত্বকের উপরে এবং এই শ্লেষ্মার স্তরেও অনেক প্রজাতিরঅনুজীব বসবাস করে।
৩। এক্টোরাইজস্ফিয়ার– এটি রাইজোস্ফিয়ারের সবচেয়ে বাইরের দিকের অংশ। মুল ও মুলরোম সংলগ্ন কয়েকমিলিমিটার পুরু মাটির স্তর দিয়ে এই অংশ গঠিত। বিভিন্ন রকমের অনুজীবের বাস এই অংশে।
রাইজোস্ফিয়ারকে এইভাবে তিনটি স্তরে ভাগ করা হলেও এরা পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এন্ডোরাইজোস্ফিয়ারথেকে এক্টোরাইজোস্ফিয়ার পর্যন্ত ক্রমশ মুল নিঃস্রাবের বিভিন্ন উপাদানের পরিমান বদলাতে থাকে, সেই মত এইসকল অংশে বসবাস কারি অনুজীব প্রজাতীর ধরন ও সংখ্যাও বদলাতে থাকে। মুলের সব অংশে যে সমান ঘনত্বেব্যাক্টেরিয়া থাকে তাও নয়, যেমন দেখাগেছে যে রেপসিডের ক্ষেত্রে মুলের আগার তুলনায় গোড়ায় ব্যাক্টেরিয়ার ঘনত্ববেশি (Ma et al 2001)। আবার মুলের সাথে শাখামুলের সংযোগস্থলে প্রচুর পরিমানে ব্যাক্টেরিয়া বাসা বেঁধেথাকে। রাইজোস্ফিয়ারে বসবাসকারি ব্যাক্টেরিয়াকে বলাহয় রাইজোব্যাক্টেরিয়া। আনবিক জীববৈজ্ঞানিক গবেষনায়রাইজস্ফিয়ার অঞ্চলের প্রতি গ্রাম মাটিতে চার হাজারেরও বেশি প্রজাতির অনুজীবের সন্ধান পাওয়া গেছে( Montesinos 2003)। গাছ সালোক সংশ্লেষের মাধ্যমে যে পরিমান কার্বন অনু আবদ্ধ করে তার ৫-২১% ই মুলেরমাধ্যমে নিসৃত হয়ে রাইজোব্যাক্টেরিয়ার জন্য এক আকর্ষণীয় খাদ্য ভান্ডার হাজির করে (Lugtenberg and Kamilova 2009)। কিন্তু ব্যাক্টেরিয়াকে অবাধে বাড়াতে গেলে যে পরিমান খাদ্যের দরকার হয় (ল্যাবরেটারিতেব্যাক্টেরিয়া পোষা ও বাড়ানোর জন্য যে পরিমান খাদ্য দেওয়া হয়) এটা তার থেকে কম। তাই ব্যাক্টেরিয়াগুলি সবসময় খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য রাইজোস্ফিয়ারে নিজেদের মধ্যে প্রতিজোগিতায় লিপ্ত থাকে। আগেই উল্লেখ করাহয়েছে যে এই ব্যাক্টেরিয়াগুলির সকলেই গাছের জন্য উপকারি নয়।এরা মুলত তিন জাতের উপকারি, অপকারি ও নিরপেক্ষ (Whipps 2001)। যারা উপকারি তারা গাছের থেকে খাদ্য যেমন নেয় বিনিময়ে গাছকে বহু সহায়তাদেয়। কিন্তু এমন অনেকে আছে যারা গাছের থেকে খাদ্য নেয় বটে কিন্তু গাছের কোনো উপকার করেনা , অবশ্যঅপকারও করেনা। আবার বেশ কিছু প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক গাছের রোগ সৃষ্টি করে রীতিমত ক্ষতি সাধনকরে। ভালো ফলন পেতে গেলে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে রাইজোস্ফিয়ারে উপকারি ব্যাক্টেরিয়ার ও ছত্রাকেরঘনত্ব সবচেয়ে বাশি থাকে।উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া গুলিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় Plant Growth Promoting Rizobacteria বা PGPR এরা মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরে, মাটির বিভিন্ন পুষ্টিকর মৌলিকপদার্থ উদ্ভিদ যাতে সহজে গ্রহন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে, ঊপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া (PGPR) থেকে নিসৃতনানান রাসায়নিক গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, প্রতিকুল পরিবেশে গাছের সহনশিলতা বাড়ায়, গাছেরবৃদ্ধিতে সাহায্য করে, মাটিকে দুষন মুক্ত করে, এবং গাছের রোগ সৃষ্টিকারি বিভিন্ন অনুজীবকে ধ্বংস করে।। এদের মধ্যে কোনো কোনো রাসায়নিক গাছের বিভিন্ন হর্মোনের ক্ষরন নিয়ন্ত্রন করে, আবার কিছু কিছু রাসায়নিকনিজেরাই উদ্ভিদ হরমোনের মত কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিদের বহু হর্মোনের অনুরুপ অনু এই সকলব্যাকটেরিয়ার দেহে সংশ্লেষিত হয়। রাইজোব্যাক্টেরিয়ার দেহে এমনকিছু পদার্থও সংশ্লেষিত হয় যারা উদ্ভিদের পক্ষেক্ষতিকারক রোগ জীবানু ধ্বংস করে বা তাদের বংশ বিস্তার রোধ করে। উদ্ভিদ কোষের সাথে উপকারিরাইজোব্যাক্টেরিয়াগুলির ঘনিষ্ঠতার ভিত্তিতে তাদের দু ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত বহিঃকোষীয়রাইজোব্যাকটেরিয়া (ePGPR) যারা এক্টোরাইজোস্ফিয়ার, রাইজোপ্লেন এবং মুলের ভিতরের বিভিন্ন কোষের ফাঁকেফোঁকরে থাকে। আর দ্বিতীয়ত অন্তঃকোষীয় রাইজোব্যাক্টেরিয়া (iPGPR) যারা উদ্ভিদের মুলের কোষের ভিতরেথাকে (Martinez Viveros 2010)। এই দুই প্রকার ব্যাকটেরিয়ার কয়েকটি উদাহরন তালিকা ২ তে দেওয়াহল।
তালিকা-২: অন্তঃ ও বহিঃকোষীয় রাইজোব্যাকটেরিয়ার কয়েকটি উদাহরন
বহিঃকোষিয়রাইজোব্যাকটেরিয়া বাePGPR |
Agrobacterium, Arthrobacter, Azotobacter, Azospirillum, Bacillus, Burkholderia, Caulobacter, Chromobacterium, Erwinia, Flavobacterium, Micrococcous, Pseudomonas and Serratia
|
অন্তঃকোষিয়রাইজোব্যাকটেরিয়া বাiPGPR |
Allorhizobium, Azorhizobium, Bradyrhizobium, Mesorhizobium এবং Rhizobiaceae গোত্রের ব্যাকটেরিয়া সমুহ |
সৌজন্যে–Bhattacharyya and Jha (2012)
মাইকোরাইজা হল উদ্ভিদের মুলে ছত্রাকের এক মিথজীবী সহাবস্থান। মাইকোরাইজা থাকার ফলে উদ্ভিদ মাটিরঅনেক বিস্তৃত অঞ্চল থেকে পুষ্টি উপাদান (মুলতঃ জল, ফস্ফেট, দস্তা এরকম আরও কয়েকটি) সংগ্রহ করতেপারে। এই মাইকোরাইজা দু রকমের হয় এক্টোমাইকোরাইজা এবং আরবাস্কুলার মাইকোরাইজা। এক্টোমাইকোরাইজা ডাঙার উদ্ভিদের মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫% প্রজাতিতে দেখা যায়, অন্যদিকে আরবাস্কুলারমাইকোরাইজা দেখাযায় ৮৫ থেকে ৯০% উদ্ভিদের মধ্যে, যাদেরমধ্যে রয়েছে দানাশস্য, ডাল, এবং বিভিন্ন গুরুত্বপুর্নসব্জী। এক্টোমাইকোরাইজার ক্ষেত্রে ছত্রাকের অনুসুত্রগুলি মুলের উপর এক পুরু স্তর তৈরি করে যা খালি চোখেওদেখা যায়। এক্ষেত্রে অনুসুত্রগুলি মুলের কোষের ফাঁকে ফোঁকরে বিশেষ ঢোকেনা। আরবাস্কুলার মাইকোরাইজারক্ষেত্রে ছত্রাকের অনুসুত্র মুলের গায়ে অত পুরু আবরন তৈরি করেনা, এগুলোকে খালি চোখে দেখাও যায়না। এরঅনুসুত্রগুলি মাটির মধ্যে ছড়িয়ে পরে ও পুষ্টি পদার্থ শোষনে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে ছত্রাকের অনুসুত্রগুলি শুধু যেমুলের কোষের ফাঁকে ফোঁকরে ঢোকে তাই নয় এরা কোষ প্রাচীরে ফুটোকরে ভেতরে ঢুকে পরে, কিন্তু কখনইকোষপর্দা ফুটো করেনা। কোষ প্রাচীর আর কোষ পর্দার মধ্যে এরা শাখা প্রশাখা বিস্তার করে , এগুলোকেমাইক্রোস্কোপের তলায় অনেকটা ছোটো ছোটো গাছের মত দেখায়। সমস্ত মাইকোরাইজাতেই ছত্রাকগুলি গাছেরতৈরি শর্করা খাদ্য হিসাবে নেয়, বিনিময়ে মাটিথেকে বিভিন্ন বস্তু শোষন করে গাছকে দেয়। আরবাস্কুলারমাইকোরাইজার ক্ষেত্রে ছত্রাকের অনুসুত্র ও উদ্ভিদ কোষের কোষপর্দার মধ্যে এই বিনিময় সবচেয়ে ভালোভাবে হয়(Dangl 2014)।
বিভিন্ন ধরনের উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়ার নাম, যে উদ্ভিদ প্রজাতিগুলিকে তারা সহায়তা দেয় তাদের নাম, সহায়তা দানের পদ্ধতি ইত্যাদির সংক্ষিপ্ত বিবরন তালিকা -৩ এ দেওয়া হোল।
তালিকা-৩ : কয়েকটি ফসল, তাদের উপর প্রযুক্ত উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়া ও প্রয়োগের ফলাফল
ফসলের নাম |
প্রযুক্ত উপকারিরাইজোব্যাকটেরিয়া |
প্রয়োগের ফলাফল |
মুগ কলাই (Vigna radiata) |
Pseudomonas sp. PS1 |
গাছের মোট শুষ্ক ভরের বৃদ্ধি, অধিক পরিমানে অর্বুদ, ক্লোরোফিল-২, লেগহিমগ্লোবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি। ফলন বৃদ্ধি ও দানায় প্রোটিনের পরিমান বৃদ্ধি। |
সরিষা (Brassica juncea) |
Pseudomonas sp. A3R3 |
গাছের ওজনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। |
সয়াবিন (G. max) ও গম(T. aestivum) |
Pseudomonas sp. |
মাটির বিভিন্ন উৎসেচকের সক্রিয়তা বাড়ায়, উদ্ভিদ বেশি পরিমানে পুষ্টি পদার্থশোষন করতে পারে। সামগ্রিক ফলন বাড়ে। |
ভেরেন্ডা (Ricinus communis) ও সুর্য্যমুখি(Helianthus annuus) |
Psychrobacter sp. SRS8,
|
ক্লোরোফিল ও প্রোটিনের পরিমান বাড়ায়, গাছের ভর বৃদ্ধি করে, নিকেল শোষনেউদ্ভিদকে সাহায্য করে, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। |
মটর শুঁটি (Pisum sativum) |
Rhizobium strainMRP1 |
অর্বুদের সংখ্যা ও লেগহিমগ্লোবিনের পরিমান বাড়ায়। গাছের বিভিন্ন অঙ্গেনাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমান বাড়ায়। ফলন বাড়ে ও মটরশুঁটিতেপ্রোটিনের পরিমান বাড়ে। |
মুগ কলাই(Vigna radiata L.) |
Rhizobium phaseoli |
ট্রিপটোফ্যানের উপস্থিতিতে গাছের লবন সহনশিলতা বাড়ায়। উদ্ভিদের বৃদ্ধিঘটায়, বেশি পরিমানে অর্বুদ তৈরি করে। উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ফলন বাড়ায় ও মুগডালে নাইট্রোজেনের পরিমান বাড়ায়। |
ছোলা (Cicer arietinum) |
Bacillus species PSB10
|
অর্বুদ, ক্লোরোফিল, লেগহিমগ্লোবিনের পরিমান বাড়ায়।উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ফলনও বীজে প্রোটিনের পরিমানের বৃদ্ধি ঘটে। উদ্ভিদ দেহে ক্রোমিয়ামের প্রবেশে বাধাদেয়। |
ছোলা (Cicer arietinum) |
Mesorhizobiumstrain MRC4 |
অর্বুদের সংখ্যা ও লেগহিমগ্লোবিনের পরিমান বৃদ্ধি পায়। মুল ও কান্ডেনাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমান বাড়ায়, ফলন বাড়ায় ও দানায় প্রোটিনেরপরিমান বাড়ায়। |
মুসুর কলাই (Lens esculentus) |
Rhizobium strain MRL3
|
অর্বুদের সংখ্যা ও লেগহিমগ্লোবিনের পরিমান বৃদ্ধি পায়। মুল ও কান্ডেনাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমান বাড়ায়, ফলন বাড়ায় ও দানায় প্রোটিনেরপরিমান বাড়ায়। |
ভুট্টা (Zea mays L.) |
Pseudomnas ও Azospirillum এরবিভিন্ন প্রজাতি।
|
গাছের উচ্চতা,পাতার ক্ষেত্রফল, দানার ওজন, দানার পরিমান, কান্ডের শুষ্ক ওজনউল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। |
গম (Triticum aestivum ) |
Klebsiella pneumonia |
মুল ও কান্ডের উল্লেখযোগ্য দৈর্ঘ বৃদ্ধি। |
ধান (Oryza sativa L.) |
Azospirillumamazonense |
দানার শুষ্ক ওজন ৭-১১.৬%, শীষের সংখ্যা ৩-১৮.৬%, ও দানা পরিনত হবারসময় নাইট্রোজেন সংযুক্তির হার ৩.৫-১৮.৫% হারে বৃদ্ধি পায়। |
ধান (Oryza sativa), ও ভুট্টা (Zea mays) |
Pseudomonas প্রজাতি |
মুলের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ঘটিত রোগ প্রতিরোধ করে। |
ছোলা (Cicer arietinum) |
Mesorhizobium sp. RC3 |
শুষ্ক ওজন, অর্বুদের সংখ্যা, ফলন এবং দানায় প্রোটিনের পরিমান যথাক্রমে ৭১%, ৮৬%, ৩৬%, ও ১৬% বৃদ্ধি পায়। |
সরিষা ও কুমড়া |
Pseudomonas aeruginosa |
উদ্ভিদের বৃদ্ধি বাড়ায় ও ক্যাডমিয়াম শোষন কমায় |
সুর্য্যমুখি (Helianthus annuus) |
Bacillus weihenstephanensisstrain SM3 |
গাছের বৃদ্ধি ঘটায়, মুলে ও কান্ডে তামা ও দস্তার সঞ্চয় বাড়ায়, মাটিতে নিকেল, তামা ও দস্তার দ্রাব্য আয়নের ঘনত্ব বাড়ায়। |
টমেটো(Solanum lycopersicum L.) ও ঢ্যঁরস(Abelmoschus esculentus) |
Bacillus subtilis, Pseudomonas aeruginosa
|
টমেটর ক্ষেত্রে ৩১% ও ঢ্যাঁরসের ক্ষেত্রে ৩৬% শুষ্ক ওজনের বৃদ্ধি। |
মটর শুঁটি (Pisum sativum) |
Rhizobium sp. RP5 |
শুষ্ক ওজন, অর্বুদের সংখ্যা, মুলে ও কান্ডে নাইট্রোজেনের পরিমান, লেগহিমগ্লোবিন, ফলন ও দানায় প্রোটিনের পরিমান যথাক্রমে ১৯%, ২৩%, ২৬%, ৪৭%, ১১২%, ও ২৬% বৃদ্ধি পায়। |
সরিষা |
Pseudomonas sp, Bacillus sp |
গাছের বৃদ্ধি ঘটায়, ক্রোমিয়ামের বিষক্রিয়া প্রতিহত করে। |
মুগ কলাই (Vigna radiata L.) |
Ochrobactrum, Bacillus cereus |
ক্রোমিয়ামের বিষক্রিয়া প্রতিহত করে। |
মুগ কলাই (Vigna radiata L.) |
Pseudomonas putida KNP9 |
গাছের শরীরে সীসা ও ক্যাডমিয়াম প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে |
সুর্য্যমুখি |
Ochrobactrumintermedium |
ক্রোমিয়াম শোষনে বাধা সৃষ্টি করে। |
ধান (Oryza sativa L.) |
Azospirillumbrasilense, Bacillus pantothenticus, |
৭৬.৯ শতাংশ পর্যন্ত ফলনের বৃদ্ধি। |
বাদাম (Arachis hypogaea L.) |
Pseudomonas fluorescens PGPR1, PGPR2, PGPR4
|
ফলনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। |
সীম (Vicia faba) |
Pseudomonas fluorescens , Rhizobium leguminosarum |
Bean Yellow Mosaic Potyvirus (BYMV) এর আক্রমন প্রতিরোধ করে। |
সৌজন্যে-Ahemad and Kibret (2013)
উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়ার বিভিন্ন কাজ –উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়ার কাজগুলি নিচেআলাদা আলাদা করে আলোচনা করা হলো।
১. বাতাসের নাইট্রোজেন আবদ্ধ করা ও গাছকে যোগান দেওয়া –
জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি প্রধান যৌগ যেমন প্রোটিন, DNA, RNA, ইত্যাদি তৈরি করতে নাইট্রোজেনদরকার, তাই নাইট্রোজেন সকল জীবের মত উদ্ভিদের জন্যও খুবই প্রয়োজনীয়, আর বাতাসে নাইট্রোজেন আছেওপ্রচুর, কিন্তু তাও উদ্ভিদ সহজে নাইট্রোজেন পায়না। তার কারন নাইট্রোজেন অনুতে দুটি নাইট্রোজেন পরমানুতিনটে বন্ধনের দ্বারা খুব শক্ত করে পরস্পরের সাথে আটকানো থাকে যে বন্ধন খুলতে না পারলে তাদের দিয়েকোনো যৌগ গঠন সম্ভব নয়। এই বন্ধন খুলতে প্রচুর শক্তির দরকার হয়। জীবন্ত কোষ কতটা শক্তি খরচ করলোএকভাবে সেটা হিসাব করা হয় কোষ কতগুলো ATP অনু খরচ করলো তার মাধ্যমে। দেখাগেছে এক অনুনাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে ব্যাক্টেরিয়াকে ১৬ অনু ATP খরচ করতে হয়। একমাত্র ব্যাক্টেরিয়ার দেহেই সেইউৎসেচকগুলি আছে যার সাহায্যে তারা নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে। যারা স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ খাবার বা আশ্রয়ের জন্য স্থায়ীভাবে অন্য কোনো জীবের উপর নির্ভরশীল নয় তারা এই শক্তি পায় মাটির পচনশীলজৈব পদার্থ থেকে বা উদ্ভিদের মুল নিঃস্রাব থেকে। এই রকম একটি স্বাধীনজীবী নাইট্রোজেন আবদ্ধকারিব্যাক্টেরিয়া হলো Azotobacter , গবেষনায় দেখাগেছে এই Azotobacter প্রতি হেক্টর জমিতে প্রতি বছর ২০ কেজি করে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে পারে (Sumbul et al 2020) এবং জমিতে শুধু বিভিন্ন ধরনেরAzotobacter ব্যবহার করেই নাইট্রোজেন ঘটিত রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা ৫০% কমানো সম্ভব(Romero-Pardomo 2017)। Azotobacter নাইট্রোজেন থেকে এমোনিয়া তৈরি করে এই এমোনিয়া,এমোনিয়াম আয়ন (NH4+ ) হিসাবে মুলরোম দিয়ে উদ্ভিদ দেহে ঢোকে। কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যারা এমোনীয়ামআয়ন থেকে নাইট্রেট (NO3–) আয়ন তৈরি করে। উদ্ভিদ এমোনিয়াম আর নাইট্রেট এই দুটো আয়ন হিসাবেইনাইট্রোজেন গ্রহন করতে পারে। Acaulospora এবং Azospirillum এই দুটি ব্যাকটেরিয়া একত্রে ধানের মোটসারের চাহিদার ৫০% পুরন করতে পারে (Ahanthem and Jha 2008)।
মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত বোধহয় রাইজোবিয়াম জাতীয় ব্যাকটেরিয়া, এরা ডাল জাতীয়গাছের মুলে বসবাস করে সেখানেই উদ্ভিদের তৈরিকরা শর্করা সরাসরি খায় এবং বিনিময়ে নাইট্রোজেন ঘটিতযৌগ উদ্ভিদকে সরবরাহ করে। রাইজোবিয়াম ডাল জাতীয় উদ্ভিদের মুলে বাসা বাঁধলে মুলের বিভিন্ন জায়গায় অর্বুদতৈরি হয়। আপনারা অনেকেই জানেন যে ধঞ্চে বা কোনো ডালের গাছ সুস্থ মাটি থেকে উপড়ে তুললে তার মুলেরগায়ে ইউরিয়ার দানার মত গোল গোল যে জিনিসগুলি লেগে থাকতে দেখাযায় সেগুলিই আর্বুদ। একটি বিশেষপ্রজাতির ডাল জাতীয় গাছ এক বিশেষ প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়ার সাথেই কেবল মিথজীবী সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। একটাবিশেষ প্রজাতির ডালের গাছ তার মুল থেকে এমন রাসায়নিক নিস্রিত করে যা একটা বিশেষ প্রজাতিররাইজোবিয়াম ব্যাক্টেরিয়াকেই আকর্ষন করে। সেই ব্যাকটেরিয়া কাছে এলে মুল রোমের কোষ পর্দায় একটা ভাঁজতৈরি হয় আর সেই ভাঁজের ফাঁকদিয়ে বয়াকটেরিয়াগুলি ঢুকে পরে। এর পর ব্যাকটেরিয়া গুলি সংখ্যায় বাড়তেথাকে আর ব্যাক্টেরিয়াকে ঘিরে মুলের কোষগুলিও সংখ্যায় বাড়তে থাকে, ক্রমশ তারা ফুলে উঠে অর্বুদ সৃষ্টি করে। অর্বুদের ভিতর উদ্ভিদের খাদ্য ও জল পরিবহনের প্রয়োজনীয় টিসু জাইলেম ও ফ্লোয়েম তৈরি হয় (Dangl 2014)। রাইজোবিয়াম ভালো মাত্রায় অক্সিন (IAA) ক্ষরন করে। এই অক্সিন হর্মোন কোষ বিভাজন ঘটায়, কোষের বৃদ্ধিতেসাহায্য করে এবং জাইলেম ফ্লোয়েম জাতীয় সংবহন কলা সৃষ্টিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। অনুমান করা হয়যে রাইজোবিয়ামের ক্ষরন করা অক্সিন অর্বুদ সৃষ্টিতে গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখে (Spaepen et. al. 2007)। এইঅর্বুদ ব্যাকটেরিয়ার নাইট্রোজেন আবদ্ধ করার কাজের জন্য এক আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। নাইট্রোজেন আবদ্ধকরার উটসেচকটি অক্সিজেন যুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারে না তাই অর্বুদের চারদিকে এমন এক আবরনতৈরি হয় (লিগনিন নির্মিত) যা সহজে বাতাস ঢুকতে দেয় না। অর্বুদের মধ্যে লেগহিমগ্লোবিন বলে একটা পদার্থথাকে যার গঠন অনেকটা মানুষের রক্তের হিমোগ্লোবিনের মত ( যে কারনে অর্বুদ্গুলিকে অনেক সময় লালচেদেখতে হয়), এই পদার্থ সাময়িক ভাবে অক্সিজেন শোষন করে নেয় (Dangl 2014)। আর উদ্ভিদ ফ্লোয়েম কলারমাধ্যমে ক্রমাগত রাইজোবিয়ামকে শর্করার যোগান দিয়ে চলে, এই আদর্শ পরিবেশে রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়াউদ্ভিদের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন যেভাবে সরবরাহ করে কোনো নাইট্রোজেন ঘটিত রাসায়নিক সার তার বিকল্পহতে পারেনা।অর্বুদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার আবদ্ধকরা নাইট্রোজেন থেকে এমিনো এসিড তৈরি হয় যা জাইলেমকলার মাধ্যমে উদ্ভিদ শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যায়।
২. উদ্ভিদকে গ্রহনযোগ্য ফসফরাস সরবরাহ করা–
ফসফরাসও উদ্ভিদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি পদার্থ এবং মাটিতে সাধারনভাবে জৈব ও অজৈব যৌগ হিসাবেযথেষ্ট পরিমান ফসফরাস থাকে, কিন্তু অধিকাংশ সময়েই উদ্ভিদ এই ফসফরাস গ্রহন করতে পারেনা। এর কারনহলো এই সকল ফসফরাস অধিকাংশ সময়ই জলে অদ্রাব্য অবস্থায় থাকে , যতক্ষন না পর্যন্ত ফসফরাস H2PO4– বাHPO4-2 এই দুটি আয়নের কোনো একটির আকারে জলে দ্রবীভূত না হচ্ছে ততক্ষন উদ্ভিদ তা গ্রহন করতে পারেনা। তাই মাটিতে অনেক সময় যথেষ্ট পরিমানে ফসফরাস থাকা সত্বেও উদ্ভিদে ফসফরাসের অভাব দেখাদেয়। ফসফরাস ঘটিত রাসায়নিক সার জমিতে দ্রবনীয় ফসফরাস সরবরাহ করে, কিন্তু এই সারের মধ্যে যে পরিমানফসফরাস থাকে তার অল্প অংশই উদ্ভিদ গ্রহন করতে পারে কারন সার প্রয়োগের কিছুক্ষনের মধ্যেই ফসফরাসমাটিতে অদ্রবনীয় যৌগ গঠন করে উদ্ভিদের নাগালের বাইরে চলে যায়। ক্রমাগত রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে এইসমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হয় যা খরচ সাপেক্ষ ও পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক। এই সমস্যার সমাধানকরতে পারে বেশ কিছু উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া যারা মাটির বিভিন্ন অদ্রাব্য ফসফরাস ঘটিত যৌগ থেকেউদ্ভিদের গ্রহনযোগ্য ফসফরাস তৈরি করতে পারে।এরকম কিছু ব্যাকটেরিয়া হলো Azotobacter, Rhizobiumইত্যাদি (বিশদ বিবরনের জন্য তালিকা– ৩ দ্রষ্টব্য)। এই সকল ব্যাকটেরিয়াকে সাধারনভাবে Phosphate Solubilizing Bacteria (PSB) বলা হয়। এই PSB গুলি কম আনবিক গুরুত্বের জৈব এসিড (যেমন গ্লুকোনিকএসিড) ক্ষরন করে যা মাটির বিভিন্ন অদ্রবনীয় ফসফরাস ঘটিত অজৈব যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে তাকে দ্রবনীয়তথা উদ্ভিদের গ্রহনযোগ্য করে তোলে। উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়াগুলির মধ্যে phosphatases, phytases, phosphonatases ইত্যসদি বেশকিছু উৎসেচক থাকে যারা ফসফরাস ঘটিত জৈব যৌগের কার্বন ফসফরাস বন্ধনভেঙে দ্রবনীয় ফসফরাস মুক্ত করে (Rodriguez 2006)।
৩. উদ্ভিদ হর্মোন প্রস্তুত করা ও উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করা–
বিভিন্ন রাইজোব্যাক্টেরিয়া Indole Acetic Acid (IAA) বা অক্সিন, জিব্বারেলিক এসিড, সাইটোকাইনিন ইত্যাদিনানান রকম উদ্ভিদ হর্মোন তৈরি করতে পারে। রাইজোস্ফিয়ারে এই হর্মোনগুলি ক্ষরন করার মাধ্যমে এরা উদ্ভিদেরমুলের পৃষ্ঠতল বাড়ানো, শাখামুলের সংখ্যা বাড়ানো, মুলরোমের সংখ্যা ও দৈর্ঘ্য বাড়ানো (Mantelin and Touraine 2004) ইত্যদির মাধ্যমে মাটি থেকে পুষ্টি শোষনে সাহায্য করে। রাইজোব্যাকটেরিয়ার ক্ষরন করাঅক্সিন হর্মোন ডাল জাতীয় গাছের মুলে অর্বুদ গঠনে বিশেষ ভুমিকা নেয় বলে অনুমান করা হয়।Azotobacterউচ্চহারে IAA তৈরি করতে পারে। Azospirillum জিব্বারেলিন জাতীয় পদার্থ তৈরির মাধ্যমে ভুট্টা গাছের কান্ডেরবৃদ্ধি ঘটায় (Boiero et. al. 2007) । যে সকল উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া সাইটোকাইনিন ক্ষরন করে তারাউদ্ভিদ মুলের কোষ বিভাজন ঘটায়, কোষের দৈর্ঘ বৃদ্ধি করে , মুলের শাখা প্রশাখা বৃদ্ধিতে এবং অস্থানিক মুলসৃষ্টিতে উদ্দিপনা যোগায়। ইথিলিন উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপুর্ন হর্মোন, কিন্তু অধিক ঘনত্বে এটি উদ্ভিদের পক্ষেবিষাক্ত (Tak et.al. 2013)। উদ্ভিদ প্রতিকুল পরিস্থিতিতে পরলে এই হর্মোনের ক্ষরন বাড়ে, ফলে অনেক ক্ষেত্রেইউদ্ভিদের স্বাস্থের ক্ষতি হয়। কিছু উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া 1-aminocyclopropen 1-carboxilate (ACC) deaminase নামক একপ্রকার উৎসেচক ক্ষরন করে ইথিলিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রন করে উদ্ভিদকে প্রতিকুলপরিবেশ সহনশিল করে তোলে (Glick et.al. 2007)।
৪. লোহা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ধাতব আয়ন শোষনে সাহায্য করা–
উদ্ভিদের ক্লোরোফিল গঠন করার জন্য, বিভিন্ন উৎসেচকের কাজ ঠিকমত করার জন্য , জল শোষন , বাস্প মোচনইত্যাদি নানান শারীরবৃত্তীয় কাজ করার জন্য লোহা , দস্তা, তামা, ম্যাঙ্গানিচ, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম প্রভৃতি ধাতবমৌলের দরকার পরে। উদ্ভিদকে মাটি থেকে এই সকল ধাতব পদার্থ শোষন করতে বিভিন্ন রাইজোব্যাক্টেরিয়াবিশেষ সাহায্য করে। প্রথমে ধরাযাক লোহার কথা। বায়ু চলচল করে এমন মাটিতে (সবাত পরিবেশ যা উদ্ভিদেরপক্ষে সাধারনভাবে প্রয়োজনীয়) লোহা সাধারনত ফেরিক ( Fe+3 ) আয়ন হিসাবে থাকে যা অদ্রাব্য হাড্রক্সাইড বাঅক্সিহাইড্রক্সাইড যৌগ গঠন করে ফলে উদ্ভিদের কাছে সহজে গ্রহনযোগ্য থাকে না । অনেক রাইজোব্যাকটেরিয়াসিডেরোফোর নামক একপ্রকার পদার্থ ক্ষরন করে যা সহযেই Fe+3 আয়নের সাথে যৌগ গঠন করে। এইসিডেরোফোর কম আনবিক গুরুত্ব সম্পন্ন এবং দ্রাব্য। ব্যাক্টেরিয়ার কোষ পর্দায় এই ফেরিক সিডেরোফোর যৌগেরফেরিক আয়ন বিজারিত হয়ে ফেরাস (Fe+2) আয়নে পরিনত হয় (Rajkumar et. al. 2010)। উদ্ভিদ নানানপদ্ধতিতে এই সিডেরোফোর যৌগ থেকে লোহা শোষন করে নেয় (Schmidt 1999)।
বিভিন্ন ধাতব আয়ন শোষনের ক্ষেত্রে উদ্ভিদের মুলরোমের কোষ পর্দায় অবস্থিত এক প্রকার প্রোটিন বিশেষ ভুমিকাপালন করে। এই প্রোটিন ATP এর সহায়তায় কোষ থেকে হাইড্রোজেন আয়ন বার কোরে দেয়, ফলে কোষেধনাত্মক আয়নের যে ঘাটতি তৈরি হয় তা পুরনের জন্য বিভিন্ন ধনাত্মক ধাতব আয়ন কোষে প্রবেশ করে। অনেকরাইজোব্যাকটেরিয়া ওই বিশেষ প্রটিনের কাজকে ত্বরান্বিত করে (Mantelin and Touraine 2004) এবং লোহাতামা দস্তা ক্যালশিয়াম পটাশিয়াম ম্যাঙ্গানিচ ইত্যাদি ধাতব আয়নের শোষনে সহায়তা করে।
৫. ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া থেকে উদ্ভিদ কে রক্ষা করা–
ক্যাডমিয়াম, ক্রমিয়াম , সীসা, ইত্যাদি কয়েকটি ভারী ধাতু উদ্ভিদের পক্ষে বিষাক্ত। এই ধাতুগুলি জমিতে থাকলেফলন যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি এগুলি উদ্ভিদের শরীরে সঞ্চিত থাকে ফলে এই উদ্ভিদ মানুষ খেলে মানুষের স্বাস্থওএই ভারী ধাতুর বিষক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এইভাবে এই ভারী ধাতুগুলি খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করে মানুষ, পশু ও পরিবেশের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। আবার বেশ কিছু এমন ধাতু আছে যেমন তামা , দস্তা, লোহা, ইত্যাদি উদ্ভিদের পক্ষে একান্ত প্রয়োজনীয় হলেও জমিতে মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে থাকলে উদ্ভিদে বিষক্রিয়া ঘটায়। এইসমস্ত ধরনের ধাতুর বিষক্রিয়া থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করার জন্য বেশ কয়েক প্রজাতির উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়াখুবই কার্যকরি। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে বিনশুঁটি, আলু, মটরশুঁটি, টমাটো, সরষে ইত্যাদি ফসলকে তামা দস্তাক্যাডমিয়াম নিকেল সীসা ইত্যাদি ধাতুর বিষক্রিয়া থেকে রাইজোব্যাক্টেরিয়ারা রক্ষা করতে পারে।
উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে এইসকল ধাতুকে সহনশীল, ব্যবহার উপযোগী বানিষ্ক্রিয় করে দেয়। ১. ক্রোমসোম/প্লাসমিড নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির মাধ্যমে এই ভারী ধাতু গুলিকে কোষ থেকে বার করেদেয় ২. ভারী ধাতুগুলি যে স্থানে আক্রমন করে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে ফেলে ৩. এই ধাতু গুলিকে কোষেরবিভিন্ন উপাদানে বা বিশেষ প্রোটিন যৌগে ( যেমন mettalothionein) আবদ্ধ করে, ৪. অধিক বিষাক্ত ধাতবআয়নকে বিজারনের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত আয়নে পরিনত করে ৫. মিথাইল গ্রুপ যুক্ত বা বিযুক্ত করা(Tak et.al. 2013)
Azotobacter গনের ব্যাক্টেরিয়ার কোষের বাইরে এমন কিছু বৃহদাকার অনু থাকে যা ক্যাডমিয়াম ক্রোমিয়ামইত্যাদি ভারী ধাতুকে আবদ্ধ করে ফলে এগুলি উদ্ভিদে সহজে প্রবেশ করতে পারেনা । ভারী ধাতু দ্বারা দুষিতজমিতে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে দেখা গেছে সেখানে চাষ করা গম অনেকটাই এই সব ধাতুরবিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে (Joshi and Juwarkar 2009)। Azotobacter গনের ব্যাক্টেরিয়া কোবাল্ট, নিকেল, তামা, দস্তা, ইত্যাদি ধাতুর বিষক্রিয়াও প্রতিরোধ করতে পারে। ব্যাক্টেরিয়া নিস্রিত সিডেরফোর যৌগ বহুবিষাক্ত ধাতু যেমন ক্যাডমিয়াম, গ্যালিয়াম, ইন্ডিয়াম, সীসা এমনকি ইউরেনিয়ামের মত তেজস্ক্রিয় ধাতব পরমানুরসাথেও যুক্ত হয় এবং এগুলির উদ্ভিদে প্রবেশ প্রশমিত করে (Rajkumar et. al. 2010)।
৬. উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ–
উপকারি রাইজব্যাটেরিয়া প্রধানত দুভাবে এই কাজটা করে , প্রথমত উদ্ভিদের রোগ সৃষ্টিকারি জীবানু ধ্বংস করা, তাদের প্রজননে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, ফসলের পক্ষে ক্ষতিকর আগাছা, কৃমি ,কীট পতঙ্গ দমন করা বা তাদেরকাজে বাধা বাধা সৃষ্টি করা (Lugtenberg and Kamilova 2009, Mhatre et.al. 2019, Kousar et. al. 2020), এবং দ্বিতীয়ত উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরা। আগেই বলা হয়েছে যে রাইজোস্ফিয়ারে বিভিন্নঅনুজীব খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে এক তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকে। উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়াগুলি যদিআগেই রাইজোস্ফিয়ারে নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে ফেলতে পারে তাহলে রোগজীবানু রাইজোস্ফীয়ারে চটকরে বাসাবাঁধতে পারেনা। উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া এমন অনেক পদার্থ ক্ষরন করে যা অনেক ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া বাছত্রাককে ধ্বংস করে দেয়। এরকম কয়েকটি পদার্থ হলো হাইড্রোজেন সায়ানাইড জাতীয় কিছু উদ্বায়ী পদার্থ, বেশকয়েক প্রকারের এন্টিবায়োটিক (Weller 1988, Hass and Keel 2003), ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীরধ্বংস করতে পারে এমন কিছু উৎসেচক (Maheshwari et. al. 2012) ইত্যাদি (বিশদ বিবরনের জন্য তালিকা-৪ দ্রষ্টব্য)। কিছু উপকারি ব্যাকটেরিয়া সিডেরোফোর ক্ষরন করে চটপট রাইজোস্ফিয়ারের লোহারআয়নগুলিকে আবদ্ধ করে ফেলে, তারপর সেগুলিকে নিজেরা ব্যবহার করে এবং উদ্ভিদকেও ব্যবহার করতে দেয়। এরফলে রাইজোস্ফিয়ারে যদি যথেষ্ট পরিমানে লোহা না থাকে তাহলে অপকারি ছত্রাকদের ভাগে কিছুই থাকে নাএবং লোহার অভাবে তারা ঠিকমত বাড়তে পারেনা (Schippers 1987)। উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়ারা কিভাবেরোগ জীবানু দমন করে তার আনবিক জীববৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সবচেয়ে ভালোভাবে জানা গেছে Pseudomonas গনের ব্যাকটেরিয়াদের উপর কাজ করে। এই ব্যাকটেরিয়ার একটি বিশেষ জাত ব্যবহার করে মুলার ফুসারিয়ামউইল্ট (একটি মারাত্মক ছত্রাক ঘটিত রোগ) নিয়নত্রন করে ফলন ৪০% বাড়ানো গেছিলো। Azotobacter গনেরবিভিন্ন প্রাজাতির বিভিন্ন জাত গাছের মুলে রোগ সৃষ্টিকারি নানান ধরনের ছত্রাক ও কৃমিকে সাফল্যের সাথে দমনকরতে পারে। তিল গম ও ছোলার ক্ষেতে এই ব্যাকটেরিয়াগুলি ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় রোগ নিয়ন্ত্রনসম্ভব হয়েছে (Sumbul et al 2020, Maheshwari et. al. 2012, Akram et. al. 2016) । Bacillus thuringiensis নামক ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের পক্ষে ক্ষতিকর বেশ কয়েক প্রজাতির পোকা দমনে এবংTrycoderma গনের কিছু ছত্রাক বিভিন্ন ক্ষতিকারক ছত্রাক নিয়ন্ত্রনে বিশেষ কার্যকরি। উপকারিরাইজোব্যাকটেরিয়া নিসৃত হাইড্রোজেন সায়ানাইড ও বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক বহু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংসকরে দেয়। উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিকর জীব ধ্বংস করার সবচেয়ে সুবিধাজনক দিকটি হলোএই যে উপকারি ব্যাকটেরিয়া নিস্রিত প্রতিটি পদার্থ জৈব ভঙ্গুর (Biodegredable), তাই কাজ শেষ করার পরেএগুলি সহজেই প্রকৃতিতে বিনষ্ট হয়ে যায়। এরা কাজ করে রাইজোস্ফিয়ারে ফলে এই পদার্থের প্রায় সবটাই যেক্ষতিকর জীব উদ্ভিদকে আক্রমন করতে চলেছে তাদের ধ্বংসের কাজে লাগে । রাসায়নিক ভাবে এইসব ক্ষতিকরজীব নিয়ন্ত্রন করতে যে পদার্থ ব্যবহৃত হয় সেগুলি প্রকৃতিতে সহজে বিনষ্ট হয়না, খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশকরেবাস্তুতন্ত্রের সমুহ ক্ষতি করে, এছাড়া এদের সামান্য অংশই ক্ষতিকারক জীব পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বাকিটা পরিবেশেছড়িয়েপরে অন্যান্য জীব ধ্বংসের কারন হয় (Lugtenberg and Kamilova 2009)।
বেশকিছু উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া আছে যারা উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরবিভিন্ন রোগজীবানুর হাত থেকে রক্ষা করে। এই ঘটনাকে Induced Systemic Resistance (ISR) বলা হয়(Lugtenberg and Kamilova 2009)। উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়ার সাথে উদ্ভিদের মিথষ্ক্রিয়ার ফলে উদ্ভিদেরদেহে জ্যাসমোনিক এসিড, স্যালিসাইলিক এসিড , ইথিলিন ইত্যাদি কয়েকটি পদার্থের ক্ষরন নিয়ন্ত্রিত হয় (Loon 2007)। উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি এই সকল পদার্থের ক্ষরন নিয়ন্ত্রনের উপর অনেকটাই নির্ভর করে।রোগজীবানুর আক্রমন সহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে উদ্ভিদ দেহে ইথিলিনের ক্ষরন বাড়ে, একটা মাত্রার উপরেএই ক্ষরন বৃদ্ধি উদ্ভিদের পাতা ঝরে যাওয়া সহ নানান সমস্যার সৃষ্টি করে। কিছু উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়া 1-amainocyclopropen 1-decarboxylate (ACC) deaminase নামক একপ্রকার উৎসেচক ক্ষরন করে যাইথিলিনের মাত্রাকে কমিয়ে দিয়ে এই বিপর্যয় রোধ করে। উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়া নিস্রিত এই ACC deaminase উৎসেচকটি উদ্ভিদের আরও নানান উপকারে লাগে, পরে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।ব্যাকটেরিয়ার দেহের নানান পদার্থ উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে যেমন ফ্ল্যাজেলা, সিডেরফোর, সালিসাইলিক এসিড, লাইপোপলিস্যাকারাইডেজ ইত্যাদি(Loon 2007) (বিশদ বিবরনের জন্য তালিকা -৪ দ্রষ্টব্য)। উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়া গুলির মধ্যে যেগুলি সহজে রাইজোস্ফিয়ারে বিপুল সংখ্যায় বাসা বাঁধতে (কলনি তৈরিকরতে) পারেনা তারা স্বাভাবিক ভাবেই এন্টিবায়োটিক ইত্যাদি নিস্রিত করে ক্ষতিকর রোগ বীজানু ধ্বংশ করতেখুব পটু নয়, কিন্তু তাদের অনেকে উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে তুলতে পারে(Lugtenberg and Kamilova 2009)। যেমন Bacillus গনের অনেক ব্যাকটেরিয়া রাইজোস্ফিয়ারে কলনিতৈরি করতে খুব পটু না হলেও উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে অনেক রকমের উদ্ভিদকে ( যেমনট্যোমাটো, তরমুজ, ফুটি, শশা, বিট, ক্যাপসিকাম, তামাক) নানান রকমের রোগের হাতথেকে রক্ষা করতে পারে । কিছু রাইজোব্যাকটেরিয়া এমন কিছু পদার্থ ক্ষরন করে যারা উদ্ভিদের বিশেষ বিশেষ জিনের সক্রিয়তা বাড়ায়, এরফলে উদ্ভিদ দেহে এমন কিছু রাসায়নিকের উৎপাদন বাড়ে যা বিভিন্ন রোগ বীজানু প্রতিরোধে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকাপালন করে। রাইজোব্যাকটেরিয়া নিসৃত এই সকল পদার্থকে বলে Biotic elicitors (Bhattacharyya and Jha 2012) (তালিকা -৪ দ্রষ্টব্য) ।
তালিকা-৪ : উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়া ক্ষরিত কয়েকটি রাসায়নিক পদার্থ যারা উদ্ভিদের প্রতিরক্ষায় সাহায্যকরে।
রাসায়নিকের কার্যপদ্ধতি |
রাসায়নিকের নাম |
ছত্রাক নাশক |
HCN, Phenazines, Pyrrolnitrin, 2,4-diacetylphloroglucinol, Pyoluteorin, Viscosinamide , Tensin এবং ছত্রাকের কোষপ্রাচীর গলিয়ে দিতেপারে এরকম কিছু আর্দ্রবিশ্লেষক (Hydrolytic) উৎসেচক |
উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধশক্তি বৃদ্ধি |
Lipopolysaccharides, Siderophore, Cyclic Lipopeptides, 2,4-diacetylphloroglucinol, homoserine lactones, and volatiles like, acetoin এবং 2,3-butanediol |
ব্যাকটেরিয়া নাশক |
বিভিন্ন প্রকারের এন্টিবায়োটিক |
Biotic elicitor |
Ajmalicine, Serpentine, Hyoscyamine ,Scopolamine, Picrocrocin, Crocetin , Tanshinone এবং Safranal যৌগ সমুহ। |
সৌজন্যে-Ahemad and Kibret 2014, Bhattacharyya and Jha 2012
৭. প্রতিকুল পরিবেশে উদ্ভিদের সহনশীলতা বৃদ্ধি–
খরা, লবনাক্ততা, উচ্চ তাপমাত্রা ইত্যাদি নানান প্রতিকুল অবস্থায় উদ্ভিদের সহনশিলতা বাড়াতে উপকারিরাইজোব্যাকটেরিয়াগুলি বিশেষ ভুমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রতিকুল অবস্থায় এরা কিভাবে উদ্ভিদের সহনশিলতাবাড়ায় তা সংক্ষেপে পৃথক ভাবে নিচে আলোচনা করা হলো।
খরা সহনশিলতা– ফসল উৎপাদনে বিপর্য্যয় ঘটানো প্রতিকুলতাগুলির মধ্যে খরা অন্যতম। উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়াগুলি বিভিন্ন ভাবে উদ্ভিদের খরা সহনশিলতা বাড়ায়। জলের অভাব ঘটলে প্রথমেইউদ্ভিদ বাষ্পমোচনের হার কমিয়ে জলের খরচ কমানোর চেষ্টা করে । বাষ্পমোচনের হার কমানোর জন্য উদ্ভিদপত্ররন্ধ্র বন্ধ করে দেয়। এই কাজে এবসাইসিক এসিড (ABA) নামে এক উদ্ভিদ হর্মোন বিশেষভাবে সাহায্য করে। বেশকিছু ব্যাকটেরিয়া এবসাইসিক এসিড ক্ষরন করে এই কাজে উদ্ভিদকে সাহায্য করে (Figueiredo et.al. 2008)। জলের অভাব ঘটলে উদ্ভিদদেহে ইথিলিনের উৎপাদন বেড়ে যায় ফলে পাতা ঝরে যায়। কিছুরাইজোব্যাক্টেরিয়া ACC deaminase উৎসেচক ক্ষরনের মাধ্যমে ইথিলিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রন করে এই বিপর্য্যয় রোধকরে (Zahir et.al. 2007)।সবাত শ্বসনের সময়ে উদ্ভিদ সহ সব জীব কোষেই একধরনের সুপার অক্সাইড আয়নঅথবা পার-অক্সাইড তৈরি হয় যা কোষের পক্ষে অত্যন্ত বিষাক্ত । খরার প্রভাবে সুপার অক্সাইড বা পার-অক্সাইডতৈরির হার বাড়ে। এগুলিকে নির্বিষ পদার্থে পরিনত করার জন্য সুপার অক্সাইড ডিসমিউটেজ , পারঅক্সিডেজইত্যাদি উৎসেচক থাকে। উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়াগুলি এই সকল উৎসেচকের উৎপাদন বাড়াতে উদ্ভিদকেসাহায্য করার মাধ্যমে খরা সহনশিলতা বাড়ায় (Wang et.al. 2012)। Bacillus subtilis ব্যাকটেরিয়ার একটিজাত ব্যবহার করে তীব্র খরাতেও আলুর ভালো ফলন পাওয়া যায়, অনুরুপে Bacillus cereus ব্যাকটেরিয়ারএকটি জাত ট্যোমাটর খরা সহনশিলতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ায় (Wang et.al. 2012) । Azospirillumঅক্সিন হর্মোন ক্ষরন করে গম গাছের মুলের (প্রধানত পার্শ্বিয় মুলের) দ্রুত বৃদ্ধি ঘটিয়ে তার জল শোষন করারক্ষমতা তথা খরা সহনশিলতা বাড়ায় (Arzanesh et.al. 2010) । Pseudomonus putida জিব্বারেলিন হর্মোনক্ষরন করতে পারে, এটি সয়াবিনের ক্ষেতে প্রয়োগ করে দেখাগেছে যে জলাভাবের মধ্যেও এর প্রভাবে সয়াবিনেরকান্ডের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছেনা। খরার কারনে সাধারনত উদ্ভিদের ক্লোরোফিল উৎপাদন ব্যাহত হয় , কিন্তু এইরাইজোব্যাক্টেরিয়ার প্রভাবে সেটাও হয়না (Ahkami et. al. 2017)।
লবনাক্ত মাটি সহনশিলতা– জমির লবনাক্ততা বৃদ্ধি কৃষির একটি বড় সমস্যা। সবুজবিপ্লবের কারনে আমাদের দেশের এক বিরাট পরিমান জমি লবনাক্ত হয়ে পরেছে। এই সব জমিতে ফসল ফলানোদুষ্কর। লবনাক্ত জমিতে গাছ নানান সমস্যার সন্মুখিন হয়। লবনাক্ততা বাড়লে বিভিন্ন আয়নের (যেমন Na+) ঘনত্ববাড়ে যার ফলে উদ্ভিদে বিষক্রিয়া দেখাদেয়। মাটির জলে লবনাক্ততা বাড়লে অভিস্রবন চাপ কমে যায় ফলে উদ্ভিদমুলের মাধ্যমে জল সহজে শোষন করতে পারে না বরং উদ্ভিদ দেহ থেকেই জল বেরিয়ে চলে যায়। জলের অভাবেউদ্ভিদ কোষে অক্সিজেন ঘটিত ক্ষতিকর পদার্থ (Reactive Oxygen Species বা ROS) তৈরি হতে থাকে ফলেকোষ মারা যায়। লবনাক্ততা জনিত চাপের কারনে উদ্ভিদে ইথিলিনের উৎপাদন বাড়ে ফলে পাতা ঝরে যায় ও অন্যান্য ক্ষতি হয়। উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়াগুলি নানান ভাবে এই সমস্ত সমস্যার মোকাবিলা করে লবনাক্তমাটিতেও উদ্ভিদের ফলন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। Bacillus, Enterobactor ইত্যাদি গনের কিছুব্যাকটেরিয়া গমের চারায় প্রয়োগ করে লবনাক্ত মাটিতে সেগুলি রোপন করা হয়। দেখাযায় যে এই গমেরগাছগুলিতে সোডিয়াম আয়নের প্রবেশের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম, এবং লবনাক্ত মাটিতেও এদের বৃদ্ধি বেশভালো (Upadhyay et. al. 2011)। যে সমস্ত উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া ACC deaminase উৎসেচক ক্ষরনকরতে পারে তারা ইথিলিনের ক্ষরন কমিয়ে অনেক উদ্ভিদকে লবন সহনশীল করে তোলে । এগুলি ব্যবহার করেলবনাক্ত জমিতে ট্যোমাটোর ভালো ফলন করা সম্ভব হয়েছে (Mayak et. al. 2004)। ক্যারোটিনয়েড ক্ষরনকারিব্যাকটেরিয়া Dietzia natronolimnaea ব্যবহার করে গমের লবন সহনশিলতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো গেছে(Ahkami et. al. 2017)। ঢ্যাঁরস,বেগুন, লঙ্কা, ক্যাপসিকাম, শশা, মুলো, সরষে, বাদাম, ইত্যাদি বহু ফসলউপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করে লবনাক্ত জমিতে সাফল্যের সাথে চাষ করা গেছে (Kumar et.al. 2021)।
উচ্চ উষ্ণতা সহনশীলতা– ভূ-উষ্ণায়নের কারনে পৃথিবীর অনেক যায়গাতেই তাপমাত্রাস্থানীয় ফসলের সহ্যের সীমা ছারিয়ে যাচ্ছে। উচ্চ উষ্ণতায় উদ্ভিদের অভিজোযনের ক্ষেত্রেও উপকারিরাইজোব্যাক্টেরিয়ার বিশেষ ভূমিকা থাকে। Pseudomonas প্রজাতির ব্যাকটেরিয়ায় একটি বিশেষ জাত (PsJN)উচ্চতাপমাত্রায় আলুর অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ায়(Bensalim et.al.1998)। আরবাস্কুলার মাইকোরাইজা গঠনকারিছত্রাকও উদ্ভিদের উচ্চতাপমাত্রা সহনশিলতা বাড়ায়, গোলমরিচের ক্ষেত্রে গবেষনা করে দেখা গেছে এই ছত্রাকেরউপস্থিতিতে উচ্চতাপমাত্রাতেও গাছের ফসফরাস গ্রহনের মাত্রা এবং ভর বাড়ে (Martin and Stutz 2003)। গবেষনায় দেখা গেছে Bacillus cereus প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া উচ্চ উষ্ণতাতেও ট্যোমাটোকে অভিযোজিত হতেসাহায্য করে। এই ব্যাকটেরিয়া প্রধানত ACC deaminase, exopolysaccharides, ও কিছু বহিঃকোষিয়উৎসেচক ক্ষরনের মাধ্যমে এই কাজটা করে (Mukhtar et. al. 2020)।
শৈত্য সহনশিলতা– উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া উদ্ভিদের শৈত্য সহনশিলতাও বৃদ্ধি করে। ঠান্ডাবাড়লে উদ্ভিদের বেশকিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন হয়। উদ্ভিদ কোষে শর্করা, প্রোলিন, আন্থোসায়ানিন ইত্যাদির মাত্রাবাড়তে থাকে। Bacillus phytofirmans প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া আঙুরলতার কোষে এই উপাদানগুলির পরিমানবৃদ্ধি করে, এই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে ঠান্ডার মধ্যেও সালোকসংশ্লেষের হার কমেনা। এইভাবে আঙুরলতা ঠান্ডা সহ্যকরতে সক্ষম হয় (Ahkami et. al. 2017)।
৮. কীটনাশক দ্বারা বিষাক্ত মাটি নির্বিষ করন–
এটা আজকে প্রমানিত যে কীটনাশক ব্যবহার করে ফসলের পোকার কোনো দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয়। কিন্তুতাও বহু বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যাপকহারে কীট নাশক , আগাছা নাশক ইত্যাদি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সকলরাসায়নিকের অবশেষ মাটিকে ক্রমাগত দুষিত করে চলছে। এদের মধ্যে কিছু কিছুর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। এই সকলদুষিত পদার্থকে নির্বিষ করতে কিছু উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া বিশেষ ভুমিকা পালন করে।লিন্ডেন নামক একটিকীটনাশক যার রাসায়নিক নাম Hexaclorocyclohexane (HCH) ভারতে বহুল ব্যব্যহৃত হয়, এটি জমি দুষনঘটায় এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করে (Walker and Morey, 1999).। গবেষনায় দেখাগেছে Azotobacter গনেরঅনেক ব্যাকটেরিয়া এই লিন্ডেনকে নির্বিষ করতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার শরিরে অনেক জটিল জৈব যৌগ হজমকরার মত উৎসেচক থাকে তাদের সাহায্যেই এরা বিভিন্ন কীটনাশক, আগাছা নাশক (যেগুলি মুলত ক্লোরিন ঘটিতজৈব যৌগ) ইত্যাদিকে নির্বিষ করতে পারে। Azotobacter ও অন্যান্য উপকারি ব্যাকটেরিয়াগুলি 2,4 Diclorophenoxyaceticacid, (2 4 D), 2 Clorophenol, 4 Clorophenol, 2 4 6 Triclorophenol, Pendimethalin, polychlorinatedbiphenyls (PCB) ইত্যাদি বিভিন্ন বিষাক্ত কৃষি রাসায়িনককে নির্বিষকরতে পারে (Sumbul et.al. 2020)।
জীবানু সারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা–
ফলন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিষ ব্যবহারের কুফল সারা পৃথিবী জুড়েই অত্যন্তপ্রকট হয়ে উঠেছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে গ্রীন হাউস গ্যাসের উৎপাদন বাড়ে যা বিশ্ব উষ্ণায়ন কেত্বরান্বিত করে। জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারের অবশেষ বৃষ্টির জলে ধুয়ে বিভিন্ন জলাশয়ে গিয়ে পরে তখনসেখানে শেওলার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে পরিনামে জলাশয় গুলি দুষিত হয়, পরিবেশ বিজ্ঞানের পরিভাষায় একেবলে ইউট্রোফিকেশন। দীর্ঘ সময় ধরে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে জমি আম্লিক হয়ে যায় এবং উর্বরতা হারাতেথাকে (Aloo et. al. 2022)। কীটনাশক বিষ ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন বহু উপকারি জীব মারা যায়তেমনি মানুষের শরীরেও নানান রোগ বাসা বাঁধে। সামগ্রিক ভাবে জমির বাস্তু তন্ত্রের এমন পরিবর্তন ঘটে যে রোগপোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে থাকে। তাই কৃষি গবেষকরা উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়া গুলিকেফসল ফলানোর জন্য সার হিসাবে ব্যবহার করার কথা বলছেন। এই ধরনের সারকে বলা হয় জীবানু সার। এগুলিসাধারন রাসায়নিক বা জৈব সারের থেকে গুনগত ভাবে আলাদা। সাধারন ভাবে যে সার ব্যবহার করা হয় তারসামান্য অংশই উদ্ভিদ অবধি পৌঁছাতে পারে। কীটনাশক বা আগাছানাশক হিসাবে যেগুলি ব্যবহার করা হয়সেগুলিরও খুব সামান্য অংশই উদ্দিষ্ট জীব অবধি পৌঁছাতে পারে, অধিকাংশটাই প্রকৃতিকে দুষিত করে ও অন্যান্যঅক্ষতিকর জীবের মৃত্যুর কারন হয়। জীবানু সারের জীবানুগুলি যেহেতু সরাসরি রাইজোস্ফিয়ার অঞ্চলে কাজ করেতাই এদের কার্য্যকলাপের প্রায় সবটাই ফসলের উপকারে লাগে। এছারা এরা যে যৌগগুলি ক্ষরন করে সেগুলিসবই জৈব ভঙ্গুর হওয়ায় কোনো স্থায়ী দুষন ঘটাতে পারেনা। উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়াগুলি যে কতরকমের কাজকরতে পারে তার কিছু কিছু বিবরন উপরে দেওয়া হয়েছে, তবে দেখাগেছে এই উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়াগুলিরকেউ কেউ পরীক্ষাগারে বা গ্রীন হাউসে যেরকম কাজ করে চাষের জমিতে অনেক সময়ই সেটা করতে পারেনা। এর কারন হিসাবে বলা যায় এদের কাজ ভীষন ভাবেই জমির চরিত্র এবং আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে। এসবনিয়ে আরও নিবীর গবেষনার প্রয়োজন। তবে বেশকিছু উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়াকে সাফল্যের সাথে ও ব্যাপকভাবে কৃষিজমিতে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে The Climate Thinker নামক সংগঠনের বিজ্ঞানিরা পশ্চিমবঙ্গের উত্তরদিনাজপুর জেলাররায়গঞ্জের জৈব কৃষি প্রসার আন্দোলনের বিশিষ্ট সংগঠন FIAM এর সাথে যৌথ উদ্যোগে জীবানু সার নিয়ে বেশকিছু কাজ করেছেন। সেই কাজের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি Azotobacter, PSB, Trichoderma, Bacillus thuringiensis ইত্যাদি কয়েকটি অনুজীবকে ব্যবহার করে সাফল্যের সাথে কুমড়ো, ঝিঙে, ঢ্যাঁরস, পুঁইশাকইত্যাদির ফলন বাড়ানো গেছে। কুমড়োর ক্ষেত্রে এই ফলন বৃদ্ধির হার ছিলো প্রায় ৩৯ শতাংশ। কুমড়ো, ঝিঙে, ঢ্যাঁরস, এগুলিকে ফল মাছি নামক একটি মারাত্মক পেস্টের (Bactrocera cucurbitae) হাত থেকে রক্ষা করাগেছে। ২০২৩ সালে আমরা এই পরীক্ষা করি। তার আগের দু বছর ফল মাছির আক্রমনে ফলন সাংঘাতিকক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো, ফেরোমন ট্রাপ ইত্যাদি ব্যবহার করে তা নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছিলোনা। ক্লাইমেট থিংকারেরবিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে প্রেশার কুকারের মাধ্যমে জীবানু মুক্ত করে নেওয়া সাধারন গুড়জলে Azotobacter, PSB, Trichoderma, Bacillus thuringiensis ইত্যাদি বেশকিছু উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়াকে সাফল্যের সঙ্গে চাষ(Culture) করা সম্ভব। তারা পরীক্ষাগারে ব্যাকটেরিয়া চাষ করার জন্য ভীষন ভাবে প্রয়োজনীয় অথচ দামী একটিযন্ত্র “ল্যামিনার ফ্লো ক্যাবিনেটের” অত্যন্ত সস্তা অথচ কার্যকর বিকল্প তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। কাছাকাছিকোনো দোকানে একটা আইস্ক্রীম রাখার ফ্রীজ থাকলে এবং সেখানে একটা ছোটো বাক্সতে জীবানুগুলির Mother Culture রাখার সুবিধা থাকলে একটা জীবানু সার তৈরির পরিকাঠামো বানাতে বেশি খরচ হচ্ছেনা। এইভাবেনিয়মিত উপকারি রাইজোব্যাকটেরিয়াগুলিকে চাষ করে FIAM এর বিভিন্ন সদস্যের সব্জিচাষের জমিতে ছড়ানহয়েছিলো। Azotobacter গনের অনুজীবগুলি উপরে বর্নিত উপকারি রাইজোব্যাক্টেরিয়ার প্রায় সব কটি ভালোকাজই করতে পারে। এটা সম্পুর্ন আমাদের পরীক্ষালব্ধ অভিজ্ঞতা যে এই জীবানু সার গ্রামে গ্রামে খুব স্বল্পপরিকাঠাময়ে তৈরি করা যায়। ক্লাইমেট থিংকারের বিজ্ঞানী ড. সৃজন হালদার গবেষনা করে দেখেছেন যেপরীক্ষাগারের পরিবেশে মাটিতে জীবানু সার প্রয়োগ করার ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে NPK এর মাত্রা বাড়তে থাকেএবং ৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে স্থিতিশীলতা অর্জন করে, জৈব সারের ক্ষেত্রে NPK এর মাত্রা ২০-৩০দিন পরথেকে বাড়তে শুরু করে এবং ৪৫-৫০ দিন পর সর্বোচ্চ মানে পৌঁছায়। রাসায়নিক সার প্রয়োগের ২ থেকে৪ দিনের মধ্যেই NPK এর মাত্রা বেড়ে যায়। অর্থাৎ জীবানু সার প্রয়োগ করলে যথেষ্ট দ্রুত সাড়া পাওয়া যায়।অন্য আর একটি পরীক্ষায় তিনি জমিতে শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সব্জীর উপর জৈব সার , জীবানু সার ও রাসায়নিক সার পৃথক পৃথক ভাবে প্রয়োগ করেন। তিনি দেখেন শুধু জৈব সারের তুলনায় জীবানু সারে ফলনপ্রায় দ্বীগুন বেশি হচ্ছে, এবং শুধু রাসায়নিক সারের তুলনায় জীবানু সারে ফলন সর্বোচ্চ ১.৫ গুন বেশি হচ্ছে(Haldar 2022)। কিউবায় গোটা দেশজুড়ে যে সম্পুর্ন রাসায়নিক বর্জিত কৃষিকাজ চলছে তার একটা প্রধানভিত্তিই এই জীবানু সার (Koont 2004)। কৃষি ক্ষেত্র থেকে এখন কেমিষ্ট্রি কে বিদায় জানিয়ে বায়োলজিকেআমন্ত্রন জানানোর সময় এসে গেছে।
REFERENCES:
Ahanthem, S., & Jha, D. K. (2008). Interactions between Acaulospora and Azospirillum and their synergistic effect on rice growth at different sources and regimes of soil phosphorus. Mycorrhiza News, 20(2), 6-12.
Ahemad, M., & Kibret, M. (2014). Mechanisms and applications of plant growth promoting rhizobacteria: current perspective. Journal of King saud University-science, 26(1), 1-20.
Ahkami, A. H., White III, R. A., Handakumbura, P. P., & Jansson, C. (2017). Rhizosphere engineering: enhancing sustainable plant ecosystem productivity. Rhizosphere, 3, 233-243.
Akram, M., Rizvi, R., Sumbul, A., Ansari, R. A., & Mahmood, I. (2016). Potential role of bio-inoculants and organic matter for the management of root-knot nematode infesting chickpea. Cogent Food & Agriculture, 2(1), 1183457.
Aloo, B. N., Tripathi, V., Makumba, B. A., & Mbega, E. R. (2022). Plant growth-promoting rhizobacterial biofertilizers for crop production: The past, present, and future. Frontiers in Plant Science, 13, 1002448.
Arzanesh, M. H., Alikhani, H. A., Khavazi, K., Rahimian, H. A., & Miransari, M. (2011). Wheat (Triticum aestivum L.) growth enhancement by Azospirillum sp. under drought stress. World Journal of Microbiology and Biotechnology, 27, 197-205.
Bhattacharyya, P. N., & Jha, D. K. (2012). Plant growth-promoting rhizobacteria (PGPR): emergence in agriculture. World Journal of Microbiology and Biotechnology, 28, 1327-1350.
Boiero, L., Perrig, D., Masciarelli, O., Penna, C., Cassán, F., & Luna, V. (2007). Phytohormone production by three strains of Bradyrhizobium japonicum and possible physiological and technological implications. Applied microbiology and biotechnology, 74, 874-880.
Dakora, F. D., & Phillips, D. A. (2002). Root exudates as mediators of mineral acquisition in low-nutrient environments. Food security in nutrient-stressed environments: exploiting plants’ genetic capabilities, 201-213.
Glick, B. R., Cheng, Z., Czarny, J., & Duan, J. (2007). Promotion of plant growth by ACC deaminase-producing soil bacteria. New perspectives and approaches in plant growth-promoting Rhizobacteria research, 329-339.
Haas, D., & Keel, C. (2003). Regulation of antibiotic production in root-colonizing Pseudomonas spp. and relevance for biological control of plant disease. Annual review of phytopathology, 41(1), 117-153.
Haldar S. (2022) Unpublished Data.
Joshi, P. M., & Juwarkar, A. A. (2009). In vivo studies to elucidate the role of extracellular polymeric substances from Azotobacter in immobilization of heavy metals. Environmental science & technology, 43(15), 5884-5889.
Koont, S. (2009). The urban agriculture of Havana. Monthly Review, 60(8), 44-63.
Lugtenberg, B., & Kamilova, F. (2009). Plant-growth-promoting rhizobacteria. Annual review of microbiology, 63, 541-556.
Maheshwari, D. K., Dubey, R. C., Aeron, A., Kumar, B., Kumar, S., Tewari, S., & Arora, N. K. (2012). Integrated approach for disease management and growth enhancement of Sesamum indicum L. utilizing Azotobacter chroococcum TRA2 and chemical fertilizer. World Journal of Microbiology and Biotechnology, 28, 3015-3024.
Mantelin, S., & Touraine, B. (2004). Plant growth‐promoting bacteria and nitrate availability: impacts on root development and nitrate uptake. Journal of experimental Botany, 55(394), 27-34.
Martin, C. A., & Stutz, J. C. (2004). Interactive effects of temperature and arbuscular mycorrhizal fungi on growth, P uptake and root respiration of Capsicum annuum L. Mycorrhiza, 14, 241-244.
Mukhtar, T., Rehman, S. U., Smith, D., Sultan, T., Seleiman, M. F., Alsadon, A. A., … & Saad, M. A. (2020). Mitigation of heat stress in Solanum lycopersicum L. by ACC-deaminase and exopolysaccharide producing Bacillus cereus: effects on biochemical profiling. Sustainability, 12(6), 2159.
Mayak, S., Tirosh, T., & Glick, B. R. (2004). Plant growth-promoting bacteria that confer resistance to water stress in tomatoes and peppers. Plant Science, 166(2), 525-530..
Mhatre, P. H., Karthik, C., Kadirvelu, K., Divya, K. L., Venkatasalam, E. P., Srinivasan, S., … & Shanmuganathan, R. (2019). Plant growth promoting rhizobacteria (PGPR): A potential alternative tool for nematodes bio-control. Biocatalysis and agricultural biotechnology, 17, 119-128.
Rodríguez, H., Fraga, R., Gonzalez, T., & Bashan, Y. (2006). Genetics of phosphate solubilization and its potential applications for improving plant growth-promoting bacteria. Plant and soil, 287, 15-21.
Rajkumar, M., Ae, N., Prasad, M. N. V., & Freitas, H. (2010). Potential of siderophore-producing bacteria for improving heavy metal phytoextraction. Trends in biotechnology, 28(3), 142-149.
Spaepen, S., Vanderleyden, J., & Remans, R. (2007). Indole-3-acetic acid in microbial and microorganism-plant signaling. FEMS microbiology reviews, 31(4), 425-448.
Schippers, B., Bakker, A. W., & Bakker, P. A. (1987). Interactions of deleterious and beneficial rhizosphere microorganisms and the effect of cropping practices. Annual review of Phytopathology, 25(1), 339-358.
Schmidt, W. (1999). Mechanisms and regulation of reduction-based iron uptake in plants. The New Phytologist, 141(1), 1-26.
Tak, H. I., Ahmad, F., & Babalola, O. O. (2012). Advances in the application of plant growth-promoting rhizobacteria in phytoremediation of heavy metals. Reviews of Environmental Contamination and Toxicology Volume 223, 33-52.
Upadhyay, S. K., Singh, J. S., & Singh, D. P. (2011). Exopolysaccharide-producing plant growth-promoting rhizobacteria under salinity condition. Pedosphere, 21(2), 214-222.
Wang, C., Guo, Y., Wang, C., Liu, H., Niu, D., Wang, Y., & Guo, J. (2012). Enhancement of tomato (Lycopersicon esculentum) tolerance to drought stress by plant-growth-promoting rhizobacterium (PGPR) Bacillus cereus AR156. Journal of Agricultural Biotechnology, 20(10), 1097-1105.
Weller, D. M. (1988). Biological control of soilborne plant pathogens in the rhizosphere with bacteria. Annual review of phytopathology, 26(1), 379-407.
Zahir, Z. A., Munir, A., Asghar, H. N., Shaharoona, B., & Arshad, M. (2008). Effectiveness of rhizobacteria containing ACC deaminase for growth promotion of peas (Pisum sativum) under drought conditions. J Microbiol Biotechnol, 18(5), 958-963.