অর্ণব জানার বাড়ি কাঁথিতে । পেশায় ফটোগ্রাফার হলেও নেশায় প্রকৃতিবাদী আর পূর্ব মেদিনীপুর কোস্টাল প্রটেকশন ক্যাম্পেন সেন্টারের সদস্য।
—————————————————————————————————————–
কাঁথির নিকটবর্তী বগুড়ান জলপাই আর হরিপুর অঞ্চলে এখনও বালিয়াড়ি, ন্যাচারাল সী বিচ এবং ঝাউবনের জঙ্গল দেখতে পাওয়া যায়। দীঘা এবং তার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন সী বিচ গুলিকে যেভাবে টুরিস্ট স্পট করার তাগিদে প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে তার থেকে অনেকটাই আলাদা বগুড়ান জলপাই এবং হরিপুর অঞ্চলের সমুদ্র সৈকত এবং বালিয়াড়ি।
লকডাউন এর সময় এই অঞ্চলে প্রকৃতি এবং জৈব বৈচিত্র দুইই তার রূপ উজার করে দিয়েছিল। কিন্তু তার পরবর্তী সময়ে আম্ফান ঝড় আছড়ে পড়ে এই অঞ্চলে যা বালিয়ারির পার্শ্ববর্তী জঙ্গলকে খানিকটা হলেও নষ্ট করেছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি এই পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে লকডাউন পরিবর্তী টুরিস্ট এর উপদ্রব এবং পিকনিকের কারনে। থার্মকল, প্লাস্টিক, সাউন্ডবক্স আর মানুষের দৌরাত্ম্যে সৈকত সন্নিহিত জঙ্গলের জীবজন্তু ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে লাল কাঁকড়া, যাকে এই অঞ্চলের বালিয়াড়ি ইঞ্জিনিয়ার বলা যায়।
বগুড়ান জলপাই এবং হরিপুর অঞ্চল বর্তমানে টুরিস্টদের একটা নতুন কার্যকলাপ হল সী বিচে গাড়ি নিয়ে যাওয়া। এর ফলে স্থানীয় প্রকৃতি দুইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রথমত, গাড়ি পথ চলা ছোট ছোট রাস্তা গুলো দিয়ে সী বিচে প্রবেশ করছে যাতে বালি ক্ষয় হচ্ছে। এবারে গাড়িগুলো যখন বগুড়ান জলপাই থেকে হরিপুর অব্দি বিস্তীর্ণ সী বিচের ওপর দিয়ে যাচ্ছে তখন গাড়ির চাপে বালিয়ারির বালি ক্ষয় তো হচ্ছেই, সাথে সাথে লাল কাঁকড়া গুলির স্বাভাবিক যে প্রাকৃতিক বাসস্থান সেটিও নষ্ট হচ্ছে। এই লাল কাঁকড়া গুলিকে যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখব এরা দিনের বেলা সমুদ্রসৈকতে এদের বাসার গর্ত গুলিকে মেরামত করে। গাড়ির চাপে এই গর্ত গুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং লাল কাঁকড়া মারাও পড়ছে।
লাল কাঁকড়া যে শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ভাবে সমুদ্র সৈকত বালিয়াড়ির বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখে তাই নয়, এটি ভেসে আসা কচ্ছপ, ডলফিন বা মাছ খেয়ে সমুদ্র সৈকতকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। গাড়ির ধোঁয়া এবং তেল সমুদ্র সৈকত এবং বালিয়াড়ি কে দূষিত করার পাশাপাশি লাল কাঁকড়াগুলিকেও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রাকৃতিক কারণে সমুদ্রতীরবর্তী গ্রামগুলিতে বিভিন্ন ঝড় বা সাইক্লোন এর কারণে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতি উৎসাহী টুরিস্ট এবং তাদের দায়িত্বহীন কান্ড কারখানা এই গ্রামগুলিকে আরো বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। লাল কাঁকড়ার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে বালিয়াড়ি, সমুদ্র এবং সৈকতের জৈব বৈচিত্র এবং খাদ্য শৃংখল। কাজেই আমাদের উচিত আরো বেশি সচেতন হওয়া এবং একসাথে বগুড়ান জলপাই এবং হরিপুরের এই বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকতকে বাঁচানো। সমুদ্র সৈকত বাঁচলেই সমুদ্রের পাশের গ্রামটি বাঁচবে আর বাঁচবে পরিবেশ।
উপরের ছবিতে দীঘা সন্নিহিত অঞ্চল কুড়ি বছর আগে এবং বর্তমানে কেমন তা উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে দীঘা সন্নিহিত অঞ্চলে একসময়ের বালিয়াড়ি এবং তার পাশের জঙ্গল আজ হোটেল এবং বাড়িতে পুর্ণ। আর নিচের উপগ্রহ চিত্রে দেখানো হয়েছে বর্তমানে বগুড়ান সমুদ্র সৈকত এবং সন্নিহিত অরণ্য।
ছবিঃ অর্ণব জানা