চাষবাস

সুন্দরম ভার্মার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে শুষ্ক অঞ্চলে মাত্র এক লিটার জলে গাছ লাগান

সুন্দরম ভার্মার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে শুষ্ক অঞ্চলে মাত্র এক লিটার জলে গাছ লাগান

রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলের কৃষক সুন্দরম ভার্মার নাম আজ পদ্মশ্রী পাওয়ার দৌলতে গোটা ভারতবর্ষ জেনে গেছে! সুন্দরম ভার্মা রাজস্থানের মত শুষ্ক এবং কম বৃষ্টিপাতের অঞ্চলে গাছ পিছু মাত্র এক লিটার জল ব্যবহার করে চাষীদের এক নতুন দিশা দেখিয়েছেন। আমরা জেনে নি, কিভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে কম বৃষ্টির অঞ্চলে চাষীভাইরা লাভের মুখ দেখতে পারেন।

বর্ষা আসার আগে গাছ লাগানোর জায়গা দেখে রাখতে হবে এবং জায়গাটি মোটামুটি সমান করে দিতে হবে যাতে বৃষ্টির জল গড়িয়ে না চলে যায়।

প্রথম বৃষ্টির ১৫ দিন পরে, জায়গাটিতে লাঙ্গল দিতে হবে। অন্তত, ২ থেকে ৩ ফুট গভীর করে যেন লাঙ্গল দেওয়া হয়। লাঙ্গল দিতে না পারলে কোদাল দিয়ে দুই থেকে তিন ফুট মাটি ওপর নিচ করতে হবে। সাথে সাথে সমস্ত আগাছা এবং ঘাস তুলে ফেলতে হবে।

বর্ষা যাওয়ার আগে, মোটামুটি সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে একই ভাবে আবার লাঙ্গল দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

বর্ষা শেষ হলে নার্সারি থেকে এক বছর বয়সী চারা গাছ এনে পরিমাণমত জল দিন। মাঠে দূরত্ব বজায় রেখে চারা গাছগুলি পোঁতার জন্যে জায়গা মার্ক করে রাখুন।

এবার মার্ক করা জায়গা গুলিতে দেড় ফুট গভীর এবং একফুট চওড়া বৃত্তাকার বা চৌকো গর্ত খুঁড়ে রাখুন।প্লাস্টিকের থলিটি ফেলে দিয়ে চারাগাছ গুলি নিন এবং তাড়াতাড়ি গর্তের মধ্যে পুঁতে দিন। চারা লাগানোর পর গর্তটি হাফ ফুট মত মাটি দিয়ে ভরাট করে দিন এবং বাকি এক ফুট মত অংশ ফাঁকাই থাকবে। এবার এক লিটার জল নিয়ে গর্তে ঢেলে দিন।
এই পদ্ধতিতে আগাছা পরিষ্কার অতীব গুরুত্বপূর্ণ, কাজেই সময় করে নিয়মিত জমির আগাছা সাফ করতে থাকবেন।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

শুষ্ক অঞ্চলে মাটিতে জলের পরিমাণ কমে যাওয়ার দুটি প্রধান কারণ আছে। একটি হলো আগাছা যা মাটির থেকে জল শোষণ করে গাছের কাছে প্রয়োজনীয় জল পৌঁছাতে বাধা দেয়। এই কারণে মাস তিনেক অন্তর আগাছা নির্মূল করা জরুরি। দ্বিতীয়টি হল ক্যাপিলারি বা কৈশিক বল। মাটির মধ্যে থাকা অসংখ্য শুরু শুরু চ্যানেল বা ফাঁকফোকর এর মাধ্যমে মাটিতে থাকা জল উপরের দিকে উঠতে শুরু করে এবং সূর্যের প্রখর তাপে তা বাষ্পীভূত হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে বর্ষার সময় দুবার জমিতে যে গভীর ভাবে লাঙ্গল প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে তার ফলে জমির মধ্যকার ক্যাপিলারি গুলি গুলি বন্ধ হয়ে যায় এবং যার ফলে জল মাটির উপরের দিকে উঠতে পারে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো সময়। এই পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হল বর্ষাকালের পরে। শীতকাল যখনই আসতে শুরু করে তখন গাছের মূল ওপরের ঠান্ডা এড়াবার জন্য মাটির আরো গভীরে প্রবেশ করে। ফলে গরমকালে যখন জল কষ্ট শুরু হয়, তখন গাছের মূল মাটির এতটাই গভীরে প্রবেশ করে যায় যে সেখান থেকে তারা নিজে থেকে জল আরোহণ করতে পারে।

সুন্দরাম ভার্মা

সুন্দরাম ভার্মা

সুন্দরাম ভার্মা এই পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রায় ৫০ হাজার গাছ রাজস্থানের শুষ্ক অঞ্চলে লাগিয়েছেন এবং এই গাছগুলির বেঁচে থাকার হার প্রায় ১০০% এই পদ্ধতিতে ইউক্যালিপটাসের মত অত্যধিক জল লাগে যে সমস্ত গাছের, সেই রকম গাছ ও বড় হয়েছে। কাজেই এ কোন ধরনের ফল গাছের বাগান করার আগে এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে ফল ভালো পাওয়া যাবে বলেই কৃষিবিদদের ধারণা। বহু এনজিও এবং অন্যান্য সংস্থা প্রায়শই নানান গাছ বিভিন্ন জায়গায় লাগিয়ে থাকেন। তারাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে গাছের বেঁচে থাকার হার অনেক বেশি হবে।

 

ওনার সাক্ষাৎকার দেখার জন্য ক্লিক করুন

Leave a Comment