চাষবাস

কুয়াশা হতে পারে চাষের জলের উৎস

কুয়াশা হতে পারে চাষের জলের উৎস

লাতিন আমেরিকার পেরুর লিমা অঞ্চলের বাইরের এক ছোট্ট গ্রাম। খরা এখানকার নিত্যসঙ্গী। জলের অভাবে চাষবাস প্রায় হয় না বললেই চলে। খাবার জলের অভাব ও সাংঘাতিক। এই পরিস্থিতিতে একদিন কিছু কৃষক লক্ষ্য করলেন ওক জাতীয় গাছের তলার মাটি ভোর বেলায় ভিজে যাচ্ছে। তারা বুঝলেন শীতের রাত্রিবেলায় কুয়াশা গাছের পাতায় জমে টপটপ করে জল হিসেবে ঝরে পড়ছে।

শীতকালে মোটামুটি মাস তিনেকের একটা সময় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সন্ধ্যা বেলা থেকেই কুয়াশা দেখা যায়। ভোর বেলায় বিভিন্ন বস্তুর গায়ে এই কুয়াশা জমে যায় কিন্তু সূর্য ওঠার সাথে সাথে সূর্যের তাপে এই জমা কুয়াশা বাষ্পে পরিণত হয়। কুয়াশা মানেই বিপুল পরিমাণে জলের উৎস এবং এই জলকে যদি আমরা ধরতে পারি তাহলেই তো কেল্লাফতে। আপনি যদি অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অঞ্চলের চাষী হন, হঠাৎ যদি চাষের জন্য আপনাকে বৃষ্টির জলের উপরেই নির্ভর করতে হয় সে ক্ষেত্রে কুয়াশা-সেচ আপনার প্রভূত উন্নতি করতে পারে।

তৈরি করার ঝঞ্জাট নেই বিশেষ হাতের কাছে জিনিসপত্র থাকতে পারলে আপনি একাই এক বেলার মধ্যে অনায়াসে একটা থেকে দুটো মাঝারি মাপের কুয়াশা ধরার জিনিস বানিয়ে ফেলতে পারবেন। আপনার লাগবে কিছু বাঁশ অথবা পিভিসি পাইপ, পেরেক বা কানেক্টর, দড়ি, জল জমানোর ড্রাম আর সাথে গ্যালভানাইসড স্টিলের শিট বা মশারী বা নাইলনের জ্বাল বা শেড নেট।

প্রথমে বাঁশ বা পিভিসি দিয়ে একটি ফ্রেম মত তৈরী করুন। জিনিসটা অনেকটা হবে ভলিবলের বা ব্যাডমিন্টন এর নেটের মত অর্থাৎ দুপাশ থেকে দুটো বাঁশ পোঁতা এবং তার মধ্যে কুয়াশা ধরার নেট। তবে উপরে এবং নিচে আরো দুটো বাঁশ দিয়ে প্রেম মত তৈরী করে নিলে জিনিসটা অনেক বেশী মজবুত হবে। তারমধ্যে স্টিল শিট বা নাইলনের জ্বাল বা শেড নেট ঢুকিয়ে ভালো ভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিন। এবার যেখানে জ্বাল শেষ হচ্ছে তার ঠিক নিচেই একটি বাসকে আড়াআড়িভাবে চিরে অথবা একটি পিভিসি পাইপকে লম্বালম্বি অর্ধেক করে কেটে এমনভাবে রেখে দিন যাতে জ্বাল এ জল জমে গরিয়ে এই পিভিসি পাইপ বা বাঁশের এর উপরে পড়ে। পিভিসি পাইপ বা বাঁশটিকে একটা দিক একটু ঢালু করে রেখে দিন যাতে জল গড়িয়ে এক দিকে পড়ে এবং সেখানে একটি বড় পাত্র রেখে দিন যাতে জল জমা হবে।

দেখা গেছে, একটি এক মিটার স্কোয়ার নেটে ৫-২০ লিটার অব্দি একদিনে জল জমতে পারে। মোটামুটি ৪০ মিটার স্কোয়ার নেট থেকে আপনি যথেষ্ট পরিমান জল পেতে পারেন যা দিয়ে বিন্দু সেচ পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারেন। এখানে দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হবে এই পদ্ধতিতে জমা জল ফিল্টার না করে খাবেন না এবং এটি এরকম জায়গায় লাগান যেখানে বায়ু চলাচল মোটামুটি আছে। বায়ু শীৎকারের ভোরবেলা মোটামুটি যেদিক থেকে যেদিকে যায় সেই মুখ অনুযায়ী এই জিনিসটিকে লাগান যাতে এটি বেশি বেশি করে জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে আসতে পারে। বাতাসের অভিমুখ বোঝার জন্য শীতকালে ভোরবেলায় মাঠে গিয়ে অল্প ধুলো হাত থেকে ফেলে দেখুন কোনদিকে বাতাস যাচ্ছে এবং সেই অভিমুখে আপনারা এটি লাগিয়ে দিন।

শুধুমাত্র পেরু নয় সাউথ আফ্রিকা ইয়েমেন এমনকি নেপালেও চাষিরা একত্রিত হয়ে কুয়াশা থেকে জল বের করে চাষের কাজে এবং হাঁস মুরগি প্রতিপালন এর কাজে ব্যবহার করছেন। পার্বত্য বাংলাদেশ, দার্জিলিং জেলা, সুন্দরবন এবং সমুদ্রের কাছাকাছির অঞ্চলগুলি এবং পুরুলিয়া বাঁকুড়া মেদিনীপুর এর মত শুষ্ক অঞ্চলে সেখানে জলের অভাবে চাষবাস, মুরগি পালন রীতিমত ব্যাহত হয়, সেখানে শীতকালে কিন্তু আপনারা এই পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন।

ভাল করে বোঝার জন্য আপনারা এই লিঙ্কে ক্লিক করে ভিডিও টি দেখতে পারেন।

Leave a Comment