প্রতিবেদন

মনোজ দাজুর গল্প ১ : কোভিড লকডাউনে কতটা থমকাল জলবায়ু পরিবর্তনের গতি?

“সাত শতাংশ! এক নয় দুই নয় একেবারে সাত শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস কমেছে লকডাউনের ফলে, বুঝলে মনোজ!”। মনোজ দাজু মাথা চুলকে দেবকুমার বাবুকে বলল “তাহলে, এভাবেই চলুক না, অসুবিধা কি? এই রেটে চললে পাঁচ সাত বছরে আবার দার্জিলিঙে বরফ পড়বে”। কথা হচ্ছিল যুক্ত সংঘের নতুন রিপোর্ট নিয়ে। শীতের সকালে ধোঁয়া ওঠা চা আর মনোজের মত মনযোগী শ্রোতা। আর কি চাই দেবকুমার বাবুর।

মনোজের কথা শুনেই খেঁকিয়ে উঠলেন দেবকুমার বাবু “ইল্লি আর কি? লোকে খাবে না, কাজ করবে না শুধু দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে!”। মনোজ দাজু খুব বেশি কথা বলে না, এবার বলল “সাত শতাংশ গ্রিন হাউস কমেছে স্যার, এর মধ্যে বেশিরভাগই অবশ্য গাড়ি বন্ধ হওয়ার জন্যে। খানিকটা কলকারখানা বন্ধের কারনে”। দেবকুমার বাবু এই সুযোগে কথা শোনাতে ছাড়লেন না, “কমেছে তো কি? ২০২০ কিন্তু এখনও অব্দি অন্যতম উষ্ণ বছর। সাইক্লোন, বন্যা খরা লেগেই আছে। তাছাড়া লকডাউনের ফলে যে ক্ষতি হল, এরপর সবাই দ্বিগুণ উৎপাদন বাড়িয়ে সেই ক্ষতি উসুলের চেষ্টা করবে।” চা শেষ মনোজ দাজু উঠে দাঁড়াল। বলল “তা ঠিকই বলেছেন স্যার, পৃথিবীর ওপর যা অত্যাচার হয়েছে! সবুজ ঘরের গ্যাস বের করে, গ্যাস বের করে এত জমেছে যে এই এক আধ বছরে তার কিছু হওয়ার না, কিন্তু এই প্রথম বহুদিন বাদ আবার গরমকালে নীল আকাশ দেখলাম, প্রানভরে নিঃশ্বাস নিলাম। অন্যবারে ওই গাড়ির ধোঁয়ায় কিছু করার জো থাকে নাকি!”। দেবকুমার বাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন “বুঝলে মনোজ, এই এক বছর কিছু না চললে কিচ্ছু হবে না, বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে দেখেছেন, ২০১৯ এর কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছান শুধু সময়ের অপেক্ষা। আসলে লকডাউন করে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমানোর চিন্তা আবাস্তব। মানুষ তো বাঁচার জন্যে কাজ করবেই। তার থেকে একটু সোলার প্লান্ট, একটু কম ধোঁয়ার গাড়ি, একটু প্রাকৃতিক গ্যাসে রান্না, এসব লাগবে বুঝলে! নইলে শেষের সেদিন ঘনিয়ে আসছে!” বিকেলের আলো আঁধারে কত যুগ পর প্রান ভরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে মনোজ দাজু সোনাদার দিকে হাঁটা লাগালো। মনোজও জানে জলবায়ু পরিবর্তন যদি বন্যা হয় তাহলে এই সাত শতাংশ হল খড়কুটো। আজ কমেছে সাত, কাল হয়ত চোদ্দ বাড়বে। কিন্তু ওই আশায় মরে চাষা! যদিও মনোজ চাষা নয়, তাও।

Leave a Comment