টুকিটাকি

পুরুষ শাসিত বিজ্ঞান জগতে জলবায়ু পরিবর্তনের খনা রবে নিরবে।

পুরুষ শাসিত বিজ্ঞান জগতে জলবায়ু পরিবর্তনের খনা রবে নিরবে।

খনার বচন বা নষ্ট্রাডামসের ভবিষ্যৎ বাণী আমরা সবাই জানি। তারা বহু যুগ আগে থেকেই নাকি বর্তমান পৃথিবী সম্পর্কে বিভিন্ন ভবিষ্যৎ বাণী শুনিয়েছেন। সেই ভবিষ্যৎ বাণীর কতটা সত্যি কতটা নয়, তা বিতর্কের বিষয়। কিন্তু বিজ্ঞানে, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞানে একজনের ভবিষ্যৎ বাণী অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। বিজ্ঞানী ইউনিস নিউটন ফুট (১৮১৯ – ১৮৮৮) ছিলেন একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক, আবিষ্কারক এবং সমাজ সংস্কারক। ১৮৫৬ সালে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ সাইন্স কনফারেন্সে তিনি সর্বসমক্ষে সূর্যালোকের প্রভাবে বিভিন্ন গ্যাসের তাপমাত্রা যে বিভিন্ন রকম ভাবে বাড়তে পারে তা নিয়ে তার মৌলিক গবেষণা প্রকাশ করেন।

ফুট খুবই সামান্য উপকরণ নিয়ে অনেকগুলি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তিনি কাঁচের সিলিন্ডারে থার্মোমিটার রেখে তাতে কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন এবং সাধারন বায়ু ভোরে সিলিন্ডার গুলিকে সূর্যালোকের সামনে রেখে তার মধ্যে কার তাপমাত্রার পরিবর্তন লক্ষ্য করতেন। ফুট দেখেছিলেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ভর্তি সিলিন্ডারটি সূর্যালোকের সামনে রাখার ফলে তা সাধারণ বায়ুর অথবা হাইড্রোজেন অপেক্ষা অনেকটাই বেশি উষ্ণ হয়ে ওঠে। তিনি তার এই পর্যবেক্ষণের পরে নোট হিসেবে লিখে রাখেন, “যদি কোনভাবে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বর্তমানের তুলনায় বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে”।

যদিও আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অফ সাইন্স এর মিটিং এ বিজ্ঞানী ফুটের এই কাজটি জনসমক্ষে পড়েন প্রফেসর জন হেনরি যিনি স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের বিশ্ব বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ছিলেন এবং এই এই কাজটি পড়ার সময় প্রফেসর হেনরি জোর গলায় বলেন বিজ্ঞান কোন দেশের গণ্ডি মানে না কোন লিঙ্গের ব্যবধান মানে না।

তৎকালীন পুরুষশাসিত বৈজ্ঞানিক সমাজে বৈজ্ঞানিক ফুটের কাজটি ঠিক পাত্তা পায়নি। তারও তিন বছর পরে বিজ্ঞানী জন টেন্ডিল একই ধরনের কাজ অনেকটাই আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রমাণ করে দেখান। কিন্তু তার লেখা গবেষণাপত্রে কোথাও বৈজ্ঞানিক ফুটের নাম উল্লিখিত হয়নি।

১৮৮৯ সালের আগে আমেরিকায় ফিজিক্সের গবেষণাপত্র প্রকাশের রেকর্ড মহিলাদের মধ্যে একমাত্র ইউনিস ফুটেরই ছিল। 2010 সালে একজন রিটায়ার্ড জিওলজিস্ট রয় সরেনসন পুরনো জার্নাল ঘাটতে গিয়ে বৈজ্ঞানিক ফুটের কাজ নতুন করে আবিষ্কার করেন। তার পরের বছরই তিনি সমগ্র বিশ্বের কাছে বৈজ্ঞানিক ফুটের কাজটি জনসমক্ষে আনেন এবং তিনি বলেন যে এই কাজটি শুধুমাত্র যুগান্তকারী ছিল তাই নয়, সময়ের অনেক আগেই বৈজ্ঞানিক ফুট বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো বিশালাকার একটি ঘটনার কারণ সম্পর্কে আমাদের আভাস দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয় বৈজ্ঞানিক ফুট জীবদ্দশায় তার এই আবিষ্কারের কদর দেখে যেতে পারেননি। বৈজ্ঞানিকের কোন ফটোগ্রাফ ও আমাদের কাছে নেই। কিন্তু 2018 সালে তাঁর জীবন নিয়ে একটি ছোট্ট তথ্যচিত্র বেরোয় যেখানে বর্তমান জলবায়ু বিজ্ঞানীরা তাঁর অবদান এক বাক্যে স্বীকার করেন।

Leave a Comment