বন্ধুদের লেখা

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব ২

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 7

কলমেঃ মোস্তফা কামাল পলাশ

লেখক পরিচিতিঃ

মোস্তফা কামাল পলাশমোস্তফা কামাল পলাশ বর্তমানে কানাডার University of Saskatchewan এ গবেষণারত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ওপর আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দিয়ে আসছেন। তার লেখা বাংলা ভাষায় আবহবিদ্যার ওপর এই সিরিজটি একসাথে সবুজ পৃথিবীতে প্রকাশিত হবে। আজ প্রথম পর্ব।

 —————————————————————————————————————

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব ৫

(সাহিত্যিক সমরেষ মজুমদারের উত্তরাধিকার > কালবেলা > কালপুরুষ উপন্যাসের আলোকে কালবৈশাখী ঝড়ের জীবনচক্র ব্যাখ্যা )

অনেকে প্রশ্ন করে থাকে আমি কিভাবে রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্র দেখে কালবৈশাখী ঝড় সম্বন্ধে পূর্বাভাষ করি? আজকের লেখাটা মূলত তাদের লক্ষ করেই লেখা।

নিচের ছবিটি লক্ষ করুন। এই ছবিতে ৩ টি চিত্র রয়েছে।

আপনি যদি সাহিত্য প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা হয়ে থাকেন তবে মনে করতে পারেন এই ৩ টি ছবি হলও সাহিত্যিক সমরেষ মজুমদারের উত্তরাধিকার (শুরু মেঘটি) > কালবেলা (মধ্যের মেঘটি) > কালপুরুষ (ডান দিকের মেঘটি)। উত্তরাধিকার উপন্যাসটিতে সমরেশ মজুমদার যেমন করে তার সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্র অনিমেষের বাল্যকাল থেকে কৈশোর হয়ে তারুণ্যে পা দেওয়ার সম্পূর্ণ সময়কে তুলে ধরেছে অত্যন্ত নিপুণভাবে এই একি ভাবে কালবৈশাখী ঝড়ের শৈশ, কৈশোরের নিরীহ, গোবেচারা অবস্থা দেখা যায় মেঘের আই অবস্থায়। কৈশোরের নিরীহ অনিমেষ যে যৌবন বয়সে পদার্পণ করে বিদ্রোহী হয়ে উঠবে তা যেমন অনেক পাঠকই বুঝতে পারে না; ঠিক তেমনি ভাবে মেঘের প্রাথমিক অবস্থা দেখে কেউ বুঝতে পারে না এই মাঘটি তীব্র বজ্রপাতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এর ঝলকানি ও কানা ফাটা আওয়াজ এর মাধ্যমে নিজের বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। “কালবেলা” মানে অশুভ সময. “কালবেলা” আসলেই একটি অশুভ সময়ের চিত্র উপস্থাপন করেছে উপন্যাসটিতে ঠিক তেমনি মধ্যের মেঘটি মানুষের জন্য অশুভ ও প্রাণঘাতী। এই মেঘ থেকেই প্রায় ৮৫% বজ্রপাত সৃষ্টি হয় ও মানুষ মারা যায়। উত্তরাধিকার উপন্যাসটি পড়ার পুরোটা সময় পাঠক উৎকণ্ঠায় থাকত যে পরের পেজে কি আছে? পরের পেজটা না পড়লে জরুরি প্রয়োজনে ও বই ছেড়ে উঠা যাবে না। কালবেলা উপন্যাসটা পড়ার সময় যুদ্ধাবস্থা চালু থাকে। কালপুরুষ উপন্যাস পড়তে এসে পাঠকের ঐ পরিমাণ আগ্রহ অবশিষ্ট থাকে না যেমনটি ছিলও প্রথম দুইটি উপন্যাস পড়ার সময়। তৃতীয় মেঘের ক্ষেত্রেও ঠিক একই অবস্থা হয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে তখন আর কালবৈশাখী ঝড়ের শুরু কিংবা মধ্যবর্তী অবস্থার উৎকণ্ঠা আর অবশিষ্ট থাকে না।

প্রথম ছবি (বাম দিক থেকে): কালবৈশাখী ঝড় এর কিশোর/কিশোরী অবস্থা

বাম দিক থেকে প্রথম চিত্রটি হলও কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থা বা কালবৈশাখী ঝড় এর কিশোর/কিশোরী অবস্থা। সবেমাত্র মেঘের সৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়া শুরু হয় না কিন্তু মেঘের মধ্যে যে বৃষ্টিকনা সৃষ্টি হয় তা রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্রে ধরা পরে। রাডারে সবেমাত্র কিছুটা সবুজ আভা দেখা যায়। যে আভা আশ-পাশের সবুজ অংশ থেকে ভিন্ন। এই ধরনের সবুজ আভা কোন স্থানে কাল বৈশাখী ঝড় পুরোপুরি সৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হওয়ার ২ থাকে ৬ ঘণ্টা পূর্বে শুরু হয়। সাধারণত প্রতিদিন সকালে বাংলাদেশের কোন জেলার আকাশে এই অবস্থা দেখে আমি প্রাথমিক অনুমান করি যে এই জেলা বা উপজেলায় আজ দিনের কোন এক সময় কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। ছোট বেলায় অনেক কিশোর/কিশোরী অনেক শান্ত সুবোধ থাকলেও বড় হয়ে কেউ কেউ দেশের শীর্ষ সন্তাসী হয়ে যায়। যাদের অনেকের সন্তাস নিজ জেলা থেকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক একই ভাবে কোন কোন কালবৈশাখী ঝড় প্রচণ্ড ভয়ংকর রূপ ধারণ করে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ধ্বংস চালিয়ে যায়।

মধ্যের ছবি: শিল্পী মমতাজের যৌবন আমার লাল টমেটো গানের কথায় বলতে হয় কালবৈশাখী ঝড়ের যৌবন অবস্থা:

এর পর মধ্যের ছবিটি লক্ষ করুন: প্রথম ছবির মেঘটির উচ্চটা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে ও এক সময় সেই মাঘের উচ্চতা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। এই প্রকারের মেঘ থেকে শিলাবৃষ্টি সৃষ্টি হয়। থেকে  মেঘের এই পর্যায়েই বজ্রপাতের শুরু হয় প্রায় ৮০% বজ্রপাতই মেঘের এই অবস্থায় সৃষ্টি হয়। কোন কোন বজ্রপাত মেঘের গোঁড়া বা নিচের অংশ থেকে ভূমিতে নেমে আসে (মেঘ থেকে ভূমিতে); কিংবা ভূমি থেকে বজ্রপাত মেঘের গোঁড়ায় প্রবাহিত হতে পারে (ভূমি থেকে মেঘে); কোন কোন বজ্রপাত মেঘের মধ্যেই নিচ থেকে উপরে কিংবা উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় (মেঘের মধ্যস্থ বজ্রপাত); কোন কোন বজ্রপাত এক মেঘ থেকে পাশের মেঘে (মেঘ থেকে মেঘে) কোন কোন বজ্রপাত মেঘের শীর্ষ থেকে সরাসরি মাটিতে নেমে আসে (এই বজ্রপাতটা হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর ও সবচেয়ে শক্তিশালী; এই বজ্রপাত যখন হয় তখনই সবচেয়ে বেশি শব্দ শুনা যায়, এই ধরনের বজ্রপাতের শক্তি ২ থেকে ৪ লক্ষ ভোল্ট  পর্যন্ত হতে পারে)। এই ধরনের বজ্রপাত মেঘ যে স্থানে আছে সেই স্থান থেকে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত আঘাত হানতে পারে। সোজায় কথায়, মেঘটি ঢাকায় অবস্থান করলেও এই মেঘ থেকে সৃষ্ট বজ্রপাত কুমিল্লায় গিয়ে পড়তে পারে।

তৃতীয় ছবি: মুম্বাই কিংবা ঢাকাই ছবি একালের প্রবল প্রতাপশালী নায়ক বৃদ্ধ বয়সে নায়কের বাবার ভূমিকায় অভিনয় করে।

এই মেঘটি হলও কালবৈশাখী ঝড় এর ক্ষয়ে যাওয়া অবস্থা। মেঘের এই অবস্থায় গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে অনেকক্ষণ ধরে। আব হাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের বৃষ্টিপাতকে বলা হয় Stratiform Precipitation। এই ধরনের বৃষ্টিপাতের সময় রাডার থেকে প্রাপ্ত চিত্রে সাধারণ সবুজ ও হলুদ রঙ এর আধিক্য দেখা যায়। লাল রং এর পরিমাণ খুবই সামান্য থাকলেও থাকতে পারে। মেঘের এই অবস্থায় মাত্র ১০ থেকে ১৫ % বজ্রপাত হয়। মেঘে মধ্যবর্তী অংশটা যখন গাড় লাল থাকে তখন মেঘ থেকে ভারি বৃষ্টি পাত হয়। মেঘের গাড় লাল অংশের মধ্যে যখন কিছু অংশ পিংক কিংবা ভায়োলেট রং এর থাকে তখন সেই স্থান থেকে শিলাবৃষ্টি পড়ে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: সাহিত্য প্রেমিক ভাই, বোন ও বন্ধুরা যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন কালবৈশাখি ঝড়ের ৩ টি অবস্হা ব্যাখ্যা করতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেষ মজুমদারের কালজয়ী উপন্যাস ত্রয়ী উত্তরাধিকার, কালবেলা ও কালপুরুষের উদাহারণ টানায় তবে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 1

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব ৬ (আবহাওয়া পূর্বাভাষ ও গবেষণার সাথে সম্পর্কিত যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিত হওয়া: যন্ত্রের নাম আরগো ফ্লোট (Argo floats))

৮ ই জুন বিশ্ব সমুদ্র দিবস তাই “মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা” সিরিজের আজকের পর্বে সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণায় ও সমুদ্রের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের অন্যতম প্রধান একটি যন্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই সবাইকে।

সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক, ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলো পরিমাপ করা হয় আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে। আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্রটা কাজ করে কিছুটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী নীল তিমি এর মতো। নীল তিমি যেমন বেশিভাগ সময় সমুদ্রের পানির নিচে অবস্থান করে ও নির্দিষ্ট সময় পর পর সমুদ্র পৃষ্ঠে উঠে নিঃশ্বাস ছাড়ে যে সময় তিমি মাছের শরীরের উপরিভাগে অবস্থিত  নাখ দিয়ে পানি উপরের দিকে নির্গত হয় ঠিক তেমনি করে আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি বেশিভাগ সময় পানির নিচে অবস্থান করে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে বিভিন্ন গভীরতায় পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করে ও ক্ষেত্র ভেদে ১ থেকে ১০ দিন পর-পর পানির উপরে ভেসে উঠে সংগৃহীত তথ্য বিভিন্ন কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের কাছে পাঠিয়ে দেয়।

অবস্থিত তথ্য সংগ্রহ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়। প্রত্যেকটি আরগো ফ্লোট (Argo floats) এ একটি করে জিপিএস থাকে যার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায় আরগো ফ্লোট (Argo floats) টি কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে ও সমুদ্রের কোন স্থানের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করতেছে। আমরা মোবাইল দিয়ে দূরবর্তী কাউকে ফোন দিলে প্রথমে সিগনালটি আমাদের নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারে যায়। এর পরে আমাদের নকটবর্তী টাওয়ার থেকে যে ব্যক্তিকে ফোন করছি তার স্থানের মোবাইল টাওয়ারে যায় ও সর্বশেষে ঐ টাওয়ার থেকে সিগনালটো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে যায়। উপরে বর্ণিত আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্রটিও প্রায় একই ভাবে সিগনাল আদান-প্রদান করে। তবে মোবাইলের সাথে একটি পার্থক্য আছে। মোবাইল দিয়ে তথ্য পাঠানো ও গ্রহণ করা যায়; পক্ষান্তরে আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি শুধুমাত্র তথ্য প্রেরণ করতে পারে (তথ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না)।

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রে প্রায় ৪ হাজার আরগো ফ্লোট (Argo floats) সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা, লবণের ঘনত্ব, সমুদ্র স্রোতের দিক পরিমাপ করতেছে। এই ৪০০০ আরগো ফ্লোট (Argo floats) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমুদ্রে ছেড়েছে। আমাদের পাশের দেশ ভারত ১২৪ টি আরগো ফ্লোট (Argo floats) ছেড়েছে সমুদ্রে। অবাক হই নাই যে আমাদের বাংলাদেশের নিজের এত বড় সমুদ্র এলাকা থাকার পরেও ১ টিও আরগো ফ্লোট (Argo floats) যন্ত্র ছাড়ে নাই সমুদ্রে। নিচে  সংযুক্ত চিত্রে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের কোন সমুদ্র এলাকায় কি পরিমাণ আরগো ফ্লোট (Argo floats) বিচরণ করে তথ্য আহরণ করছে। নিচে সংযুক্ত চিত্রে বিস্তারিত ভাবে দেখানো হয়েছে আরগো ফ্লোট (Argo floats)  নামক যন্ত্রটি কিভাবে কাজ করে। একই সাথে নিম্নোক্ত ওয়েবসাইট থেকে দেখা যাবে বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন আরগো ফ্লোট (Argo floats) এর নিয়ার রিয়েল টাইম অবস্থান।

https://incois.gov.in/portal/OON.jsp

আরগো ফ্লোট (Argo floats) নামক যন্ত্রটি দ্বারা সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা, ও পূর্বাভাষে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সামুদ্রিক জাহাজ চলাচলেও এই তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই ভাবে এই তথ্য বিশ্লেষণ করে সমুদ্রের বিভিন্ন স্থানে মৎস্য সম্পদের জন্য অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেষ সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়।

ছবি কৃতজ্ঞতা: NOAA Office of Oceanic and Atmospheric Research

বিশেষ দ্রষ্টব্য: আবহাওয়া পূর্বাভাষ ও গবেষণার সাথে সাধারণ মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ও “আবহাওয়া পূর্বাভাষ নিজেরা করি” উদ্যোগ (Making Bangladeshi people weather smart) সিরিজ এর এটি ষষ্ঠ পর্ব। পূর্বের পূর্বগুলো আমার ফেসবুক টাইমলাইনে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ হয়েছে।  ইতালির The Abdus Salam ICTP: International Centre for Theoretical Physics থেকে Earth System Physics বিষয়ে ১ বছর মেয়াদী যে Post Graduate Diploma (মাস্টার্সের সমমান) করেছি সেখানে Physical Oceanography ও Oceanographic Modelling নামক দুইটি কোর্স পড়তে হয়েছিল। বায়ুমণ্ডলের আবহাওয়া বিশেষ করে বাংলাদেশের আবহাওয়া নির্ভর করে বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উপরে যেমন সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, লবনাক্ততা, বায়ুপ্রবাহের দিক ইত্যাদি। তাই আগামী দিনগুলোতে সমুদ্র বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হবে আমার চলমান এই সিরিজে। আশা করছি আবহাওয়া ও জলবায়ু সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী সবাই সাথে থাকবেন ও এই সিরিজটি নিয়মিত অনুসরণ করবেন। আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বানানোর কাজ শেষ হলে সকল লেখা সে ওয়েবসাইটে যোগ করে দেওয়া হবে।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 8

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 2

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: (পর্ব ৭: বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ভয়ংকর রকম ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ২০০০ সালের পর থেকে)

নিচে সংযুক্ত চিত্রটি নির্দেশ করতেছে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির চিত্র ১৯০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এই চিত্রটি নির্দেশ করতেছে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ১৯০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১৯৭১-২০০০ এর গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা কি পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে (লাল রং) কিংবা কমে গেছে (নীল রং)। এই চিত্রটিকে বলা যায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা কমার বিচ্যুতির চিত্র। এই চিত্রে ১৯৭১-২০০০ এর গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা  প্লাস/মাইনাস ২ দশমিক ৬ স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন (+/- 2.6 standard deviation) তাপমাত্রার বিচ্যুতির মান দেখানো হয়েছে। এই চিত্র স্পষ্ট নির্দেশ করতেছে যে ১৯২১ সালে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা অনেক কম ছিলও ১৯৭১-২০০০ এর গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা। পক্ষান্তরে ২০২১ সালের তাপমাত্রা গড় তাপমাত্রা অনেক কম ছিলও ১৯৭১-২০০০ এর গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা অনেক বেশি। এই চিত্রের ডান ডিকের বছরগুলোতে বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে বছরগুলোতে (২০০০ সালের পর থেকে) বাংলাদেশের তাপমাত্রা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থ সামাজিক অবস্থার উপরে; মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপরে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত রোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে; মানুষে শরীর খুব দ্রুত পানিশূন্য হয়ে পড়বে যার কারণে অল্প সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়বে; দিনের বড় একটা সময় বাহিরে কাজ করে যেমন রিকশাওয়ালা, কৃষক, ট্রাফিক পুলিশ ইত্যাদি পেশার মানুষের কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে। সবচেয়ে বড় হুমকি হবে হিট-স্ট্রোক জনিত কারনে মানুষের মৃত্যুর হার বেড়ে যাবে।

ছবি কৃতজ্ঞতা: বিশ্বের বিভিন্ন স্হানের বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার বোঝাতে এই ছবিটি আবিষ্কার করেছেন বিশ্বের শীর্ষস্হানীয় জলবায়ু পরিবর্তন গবেষক ও যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এড হকিংস।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 3

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব (মেডেন-জুলিয়ান স্পন্দন বা সংক্ষেপে এমজেও চক্র এর মাধ্যমে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির চক্র ব্যাখ্যা)

বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বেশ কিছুদিন দেশব্যাপী নিয়মিত বৃষ্টির পরে এক থেকে তিন সপ্তাহ প্রায় বৃষ্টিহীন থাকে। এ অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির চক্রটা আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন এমজেও নামে একপ্রকার আবহাওয়া চক্রের মাধ্যমে (MJO is an eastward moving disturbance of clouds, rainfall, winds, and pressure that traverses the planet in the tropics and returns to its initial starting point in 30 to 60 days, on average.)। আবহাওয়া চক্রটি আবিষ্কার করেন রোনাল্ড মেডেন ও পাউল জুলিয়ান নামে দুজন বিজ্ঞানী, ১৯৭০ সালে। আবহাওয়া চক্রটি বিষুবীয় অঞ্চলের সমুদ্র ও তত্সংলগ্ন আকাশের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়া।

এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে প্রথমত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়: সক্রিয় বাষ্পীভবন দশা ও নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবন দশা। শীতকালে সকালবেলা পুকুরের পানির তাপমাত্রা পুকুরের পানির উপরের বাতাসের তাপমাত্রা থেকে বেশি থাকার কারণে পুকুরের পানি থেকে ধোঁয়া (বাষ্প) উঠতে দেখা যায়। ঠিক একই কারণে শীতকালে নিঃশ্বাস ছাড়লে মুখ থেকে বের হওয়া আর্দ্র গরম বাতাস ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলে ধোঁয়ার কুণ্ডলির রূপ নেয়। এ  ধোঁয়াকে আমরা মানুষসৃষ্ট মেঘও বলতে পারি। ঠিক একই প্রক্রিয়ার সমুদ্রপৃষ্ঠের গরম পানি বাষ্পায়িত হয়ে আকাশে উড়ে যায়। পদার্থবিজ্ঞান বা ভূগোল বিষয়ে পড়েছি, বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকলে বায়ুর চাপ কমতে থাকার কারণে বাতাসের তাপমাত্রাও কমতে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বাষ্পায়িত হয়ে আকাশে উড়ে যাওয়া জলীয়বাষ্পের তাপমাত্রাও কমতে থাকে এবং একসময় ওই জলীয়বাষ্পের কণাগুলো ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি হয়। এমজেও আবহাওয়া চক্রটির দশা দুটিকে যথাক্রমে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি বলা হয়। কারণ সক্রিয় বাষ্পীভবন দশা যখন সমুদ্রের কোনো স্থানে অবস্থান করে তখন ওই স্থানের সমুদ্রের পানি বেশি পরিমাণে বাষ্পায়িত হতে থাকে। ফলে বেশি মেঘের সৃষ্টি হয় এবং বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবন দশায় বিপরীত ঘটনা ঘটে।

এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবনের ওপর ভিত্তি করে আটটি দশায় ভাগ করা হয়। এমজেও যখন ২ ও ৩ নম্বর দশায় (ফেস) থাকে, তখন উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারত মহাসাগরের পানিতে প্রচণ্ড সক্রিয় বাষ্পীভবন হয়ে থাকে। ফলে আকাশ ভর্তি থাকে মেঘে। গ্রীষ্মকালে এমজেওর অবস্থান কিছুটা উত্তর দিকে সরে যায়। ফলে এমজেও যখন ২ ও ৩ নম্বর দশায় (ফেস) থাকে, তখন বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। মে মাসের ১৭ তারিখের পর থেকে এমজেও ২ নম্বর দশায় ছিল এবং ২৮ তারিখ থেকে ৩ নম্বর দশায় প্রবেশ করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এমজেও ৪ নম্বর দশায় প্রবেশ করবে। আগামী এক সপ্তাহ পরে যখন এমজেও ৫ নম্বর দশায় প্রবেশ করবে তখন বাংলাদেশের ওপর চলমান বৃষ্টিপাতে সাময়িক বিরতি দেখা যায়। দেশব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাত অবস্থা বিরাজ করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এমজেও আবহাওয়া চক্রটি আবারো ২ ও ৩ নম্বর দশায় ফিরে আসে। দ্বিতীয় চিত্রে দেখা যাচ্ছে এমজেও আবহাওয়া চক্রটির কোন ফেজে অবস্থান করার সময় বাংলাদেশ ও ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে কমা বা বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তার সাথে এমজেও আবহাওয়া চক্রটির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এমজেও আবহাওয়া চক্রটি কোন দশায় অবস্থান করছে তার উপর নির্ভর  করে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পূর্ব উপকূলে নাকি, বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলে নাকি মায়ানমার উপকূলে আঘাত হানবে তা সম্বন্ধে পূর্বাভাষ জানা যায়।

প্রথম চিত্রে লাল ও নীল লাইনটি কালো বৃত্তের পরিধির ভিতেরে অবস্থান করলে এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে গণ্য করা হয়। পক্ষান্তরে লাল ও নীল লাইনটি কালো বৃত্তের পরিধির বাহিরে যত দূরে অবস্থান করবে এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে তত শক্তিশালী বলে গণ্য করা হয়। বর্ষা মৌসুমে লাল ও নীল লাইনটি যখন বৃত্তের পরিধির বাহিরে ১, ২ ও ৪ নম্বর দশায় (ফেজ) অবস্থান করে তখন বাংলাদেশ ও ভারতে ভারি বৃষ্টিপাত হয় ১ থেকে ২ সপ্তাহ ধরে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এমজেও আবহাওয়া চক্রটির অবস্থান দেখে কোনো স্থানের দৈনন্দিন ও সাপ্তাহিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস করে থাকেন। পক্ষান্তরে এল-নিনো ও লা-নিনার অবস্থা দেখে কোনো স্থানের মাসিক বা মৌসুমি আবহাওয়ার পূর্বাভাস করেন। ভারত মহাসাগরের ওপর এমজেও আবহাওয়া চক্রটির সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় অবস্থান দেখে বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস করা সম্ভব পাঁচ-সাতদিন আগে। একইভাবে এল-নিনো ও লা-নিনার অবস্থা দেখে মৌসুমি বা উপমৌসুমি আবহাওয়ার পূর্বাভাস করা সম্ভব। পরবর্তী পর্বে এল-নিনো ও লা-নিনা চক্র সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করবো।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 4

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 5

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব  

ঢাকা কিংবা বড়-বড় শহরগুলোতে অল্প কিছুক্ষন বৃষ্টি হওয়ার পরে মানুষ ভ্যাপসা গরম অনুভব করে কেন? কিংবা শরীরের অশস্তি ভাব যায় না কেন?

উপরোক্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যাটি নিম্নরূপ: প্রথমত, জ্বলিয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের কণা সৃষ্টির সময় একপ্রকার তাপ ত্যাগ করে বায়ুমণ্ডলে যাকে পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় বলে বাষ্পীভবনের সুপ্ত তাপ বা Latent Heat of Vaporization of Water। ফলে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পূর্বে কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের বাতাসের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়।

দ্বিতীয়ত, ঢাকা শহর কিংবা বড়-বড় শহরের বহু-পৃষ্ঠ বা মাটি প্রায় পুরোটাই কংক্রিট (দালান-কোঠা) ও পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে ঢাকা। এই কংক্রিটের তাপ ধারণ ক্ষমতা খুবই বেশি সাধারণ মাটি অপেক্ষা। ফলে দিনের বেলা সূর্যের আলো থেকে আগত তাপের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ শোষণ করে প্রচণ্ড গরম থাকে। ১ বা ২ ঘণ্টার বৃষ্টি হওয়ার পরে বহু-পৃষ্ঠে পতিত বৃষ্টির একটা উল্লেখযোগ্য অংশ বহু-পৃষ্ঠের উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে বায়ুর আর্দ্রতা (জলীয়বাষ্পের পরিমাণ) বাড়িয়ে দেয়। সোজা ভাষায় ব্যাখ্যা করি। ডিম মা পরোটার বাজার জন্য ভেজা তাওয়া বা ফ্রাই-প্যান চুলার উপর দিয়ে চুলা চালু করলে কি হয়? পানি দ্রুত উড়ে যায় তাওয়া কিংবা ফ্রাই-প্যান গরম হওয়ার সাথে-সাথে। কিংবা গরম তেলের উপর কিছু পানি পড়লে ছ্যৎ করে সেই পানি দ্রুত উড়ে যায়। ঢাকা শহরের রাস্তা কিংবা বিল্ডিং এর ছাদকে আপনি তুলনা করতে পারেন ঐ ফ্রাই-প্যানের সাথে।

বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা যত কম থাকে মানুষের শরীর থেকে ঘাম তত দ্রুত শুকিয়ে যায়। যেহেতু ১ বা ২ ঘণ্টার বৃষ্টি হওয়ার পরে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যায় তাই আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত ঘাম খুব দ্রুত শুকায় না। সোজা ভাষায় ব্যাখ্যা করি। মনে করেন স্কুল কিংবা কলেজ থেকে ফেরার পরে আপনার প্রচণ্ড খুধা লেগেছে। কিন্তু বসায় আসার পরে দেখলেন যে আপনার মা খাসির রেজালা রানা করতেছে যা শেষ হতে আরও ১ ঘণ্টা লাগবে। আপনি আপাত খুধা নিবারণ করার জন্য খাঁটি সরিষার তেল ও পেয়াজ কুচি দিয়ে কিছু মুড়ি মেখে খয়ে ফেলেন। ১ ঘণ্টা পরে আপনার মায়ের রান্না শেষ হওয়ার পরে যদি ভাত খেতে বসেন তবে কি একই দ্রুততায় ভাত খাবেন যেমন দ্রুততায় ভাত খেতেন স্কুল থেকে আসার পরেই যদি খাসির রেজালা রান্না করা থাকত? বৃষ্টি হওয়ার পরে মানুষের শরীর থেকে ঘাম শুকানোর হার ঠিক তেমনি করে কেম যায় যেমন করে মুড়ি খাবার পরে আপনার রুচি কমে যায় ভাত খাওয়ার।

অল্প কিছুক্ষন বৃষ্টি হওয়ার পরে ঢাকা কিংবা বড়-বড় জেলা শহরগুলোর বাতাসের রুচিও কমে যায় মানুষের শরীর থেকে ঘাম শুকানোর (তুলনা করা যেতে পারে বাতাসের খাদ্য হলও জ্বলিয় বাষ্প) বৃষ্টির পরে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ার কারণে। যেহেূ শরীর থেকে ঘাম শুকায় কম বৃষ্টি হওয়ার পরে, তাই ঢাকা কিংবা বড় জেলা শহরগুলোর মানুষরা ভ্যাপসা গরম অনুভব করে।

মে-জুন মাসের রংপুর বিভাগে তাপমাত্রা চট্টগ্রাম বিভাগের তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি থাকার পরেও চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ অপেক্ষা অপেক্ষাকৃত বেশি কমফোর্ট অনুভব করে। মূল কারণ হলও রংপুর বিভাগে বাতাসে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে ফলে সেখানে মানুষের শরীর হতে দ্রুত ঘাম শুকিয়ে যায় চট্টগ্রাম বিভাগ অপেক্ষা।

আশাকরি বিষয়টা ব্যাখ্যা করতে পেরেছি।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব  ১০

রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে কয়েকদিন ধরে কেন বৃষ্টি হচ্ছে ও কখনও এই বৃষ্টি থামবে?

পরিচিত এক ব্যক্তি ফেসবুকে  ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়েছে “আমাদের ময়মনসিংহ, হালুয়াঘাট এ ২ দিন /২ রাত দরে টানা বৃষ্টি হয়তাছে”। আমি তাকে উত্তর দিলাম যে “এই বৃষ্টি আগামী ২ সপ্তাহ চালু থাকবে’………….

১৩ ঘণ্টা পূর্বে দেওয়া বৃষ্টিপাত পূর্বাভাষে যে যে জেলাগুলোতে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলাম তার প্রত্যেকটি জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ও এখনও ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের প্রায় সকল জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কেন এই বৃষ্টি হচ্ছে ও কখনও এই বৃষ্টি থামবে?

কেন এই বৃষ্টি হচ্ছে তা পূর্বেই ব্যাখ্যা করেছি। মেডেন-জুলিয়ান স্পন্দন বা সংক্ষেপে এমজেও নামক একটি চক্র এর কারণে। বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচণ্ড শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এই বায়ু এর উল্লেখযোগ্য অংশ চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাক্ষমনবাড়িয়া, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ময়মনসিংহ জেলার উপর দিয়ে সরাসরি আঘাত করছে মেঘালয় পর্বতে। এই মৌসুমি বায়ু জ্বলিয় বাষ্প দিয়ে পূর্ণ যা মেঘালয় পর্বতের ঢাল বেয়ে আকাশে উঠে প্রতিনিয়ত মেঘের সৃষ্টি করছে ও সেই মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগের উপরে।

একই সাথে আরব সগর থেকে জ্বলিয়বাষ্পযুক্ত মৌসুমি বায়ু ভারতের গুজরাট রাজ্যের উপর দিয়ে প্রবেশ করে > পাঞ্জাব > দিল্লী >  উত্তর প্রদেশ > বিহার > পশ্চিমবঙ্গ  হয়ে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করতেছে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা এই মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আসা মৌসুমি বায়ুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর উপরে। বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষের ফলে ঐ সকল জেলায় মেঘের সৃষ্টি হচ্ছে ও সেই সকল জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে।

এই বৃষ্টি কখন বন্ধ হবে?

অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে চলমান এই বৃষ্টি আপাত বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকবে জুলাই মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। তবে জুলাই মাসের ১০ তারিখের পরে মৌসুমি বায়ু দুর্বল হতে থাকবে। ফলে বৃষ্টিপাত কমতে থাকবে।

=====================================

1) লাল তীর চিহ্ন বঙ্গপোসগর থেকে আগত জ্বলিয়বাষ্পযুক্ত মৌসুমি বায়ুর পথ নির্দেশ করতেছে।

2) কাল তীর চিহ্ন আরব সগর থেকে জ্বলিয়বাষ্পযুক্ত মৌসুমি বায়ুর পথ নির্দেশ করতেছে।

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 7

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা 7

আরো পড়ুন

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা – পর্ব – ১

 

 

 

1 Comment

Leave a Comment