বন্ধুদের লেখা

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা – পর্ব – ১

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা - পর্ব - ১

 

কলমেঃ মোস্তফা কামাল পলাশ

লেখক পরিচিতিঃ

মোস্তফা কামাল পলাশমোস্তফা কামাল পলাশ বর্তমানে কানাডার University of Saskatchewan এ গবেষণারত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ওপর আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দিয়ে আসছেন। তার লেখা বাংলা ভাষায় আবহবিদ্যার ওপর এই সিরিজটি একসাথে সবুজ পৃথিবীতে প্রকাশিত হবে। আজ প্রথম পর্ব।

 —————————————————————————————————————

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা: পর্ব ১ (আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল কি ও তা কিভাবে কাজ করে?)  

প্রতিদিন আবহাওয়া পূর্বাভাষ দিচ্ছি আবহাওয়া পূর্বাভাষের গাণিতিক কম্পিউটার মডেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে যে কারণে সবসময় সঠিক পূর্বাভাষ দিতে পারে না। একই মডেল আমেরিকা কিংবা কানাডায় যত নির্ভুল ভাবে আবহাওয়া পূর্বাভাষ দিতে পারে সেই পরিমাণ সঠিক ভাবে আবহাওয়া পূর্বাভাষ দিতে পারে না বাংলাদেশের উপরে। তাহলে কি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলও ধনি ও গরিব দেশের পার্থক্য বুঝে ভিন্ন-ভিন্ন রকম আবহাওয়া পূর্বাভাষ দেয়? কি কি সীমাবদ্ধতার কারণে আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল বাংলাদেশের উপর সঠিক পূর্বাভাষ দিতে পারে না? ভবিষ্যতে কিভাবে বাংলাদেশের উপর আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলের পূর্বাভাষ সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনা যাবে?

আমি চেষ্টা করবো উপরোক্ত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে পর্যায়ক্রমে। চলুন আজকে জেনে নেই আবহাওয়া পূর্বাভাষের মডেলগুলোকে কেন গাণিতিক কম্পিউটার মডেল বলা হয়? সেই মডেলে পদার্থ বিজ্ঞানের কোন কোন সূত্র ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ করা হয়?

পৃথিবীর প্রত্যেকটি আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলে বিজ্ঞানের ৭ টি সূত্র আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায় পদার্থ বিজ্ঞানের ৭ টি সূত্র ব্যবহার করা হয়। আশার কথা হলও আমরা প্রায় সকলেই সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে বিজ্ঞানের এই ৭ টি সূত্র সম্বন্ধে পড়ে এসেছি। এই ৭ টি সূত্রের ১ টি বাদ দিলে দৈনন্দিন আবহাওয়ার প্রকৃত অবস্থা পূর্বাভাষ করা যাবে না। এই সূত্র ৭ টি নিম্নরূপ:

১) ভরের নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র (পদার্থকে সৃষ্টি করা যায় না বা ধ্বংসও করা যায় না, তাকে এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় রূপান্তর করা যায় মাত্র)

২) শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র (শক্তি অবিনশ্বর, শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না | এক রূপ থেকে শক্তিকে কেবলমাত্র অন্য রূপে রূপান্তরিত করা যায়)

৩) ভরবেগের নিত্যতা সূত্র বা নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র (কোনো বস্তুর ভরবেগ পরিবর্তনের হার, এর উপর প্রযুক্ত কার্যকর বলের সমানুপাতিক)। এই সূত্রটি ৩ টি দিকের জন্য ব্যবহার করা হয় (পূর্ব-পশ্চিম দিকের জন্য একটি, উত্তর-দক্ষিণ দিকের জন্য ১টি ও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকের জন্য ১ টি, বিজ্ঞানের ভাষায় X, Y, ও Z অক্ষের প্রতিটির জন্য একটি)

৪) আদর্শ গ্যাসের সূত্র (যে সমস্ত গ্যাস বয়েলের সূত্র, চার্লসের সূত্র ও অ্যাভোগাড্রোর সূত্র মেনে চলে তাদের আদর্শ গ্যাস বলে।)

৫) পানির নিত্যতা সূত্র (তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে পানি কঠিন, তরল, ও বায়বীয় অবস্থায় থাকতে পারে। এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয় মাত্র সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না)

উপরোক্ত ৭ টি সূত্রের প্রত্যেকটির জন্য একটি করে গাণিতিক সমীকরণ রয়েছে। এই সূত্রগুলো ব্যবহার করে কোন স্থানের বায়ুমণ্ডলের অবস্থা যেমন বায়ুর তাপমাত্রা কেমন, বায়ুতে জ্বলিয় বাষ্প কি পরিমাণে রয়েছে, বৃষ্টি হব কি না, ইত্যাদি সম্বন্ধে জানা যায়। এই সূত্রগুলো যুগপৎ ভাবে একটি অন্যটির উপর নির্ভরশীল ও অনেক ক্ষেত্রে দ্বিঘাত ও ত্রিঘাত সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা হয় ফলে মানুষের পক্ষে এই সীকরগুলো কেয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সমাধান করা সম্ভব হয় না। ফলে এই সমীকরণ গুলো সমাধান করা হয়ে থাকে কম্পিউটার ব্যবহার করে। খুব দ্রুত সমাধান করার জন্য তাই ব্যবহার করা হয় সুপারকম্পিউটার। যেহেতু গাণিতিক সমীকরণ ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ করা হয় তাই এই মডেলগুলোকে বলা হয়ে থাকে Numerical Weather Prediction Model বা সংক্ষেপে NWP Model।

বিশ্বের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সবচেয়ে সঠিক ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দিতে পারে এমন একটি মডেল হলও আমেরিকার Weather Research and Forecast Model বা সংক্ষেপে WRF Model। আমি WRF Model ব্যবহার করেই বর্তমানে আমার পিএইচডি গবেষণার সকল কাজ করি ও পূর্বে মাস্টার্স থিসিস এর সকল কাজ করেছি।

আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল কি ও তা কিভাবে কাজ করে

————————————————————————————————————

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা: পর্ব ২ (একজন আবহাওয়া গবেষক ও সাংবাদিকের মধ্যে তরমুজ ও কালবৈশাখী ঝড় কথোপকথন)

দেশে এখন কেজি দরে তরমুজ বিক্রি আলোচনার শীর্ষে তাই উদাহরণ হিসাবে তরমুজ ব্যবহার করে এক সাংবাদিক ছোটভাইকে আজ মঙ্গলবার দেশ-ব্যাপী ব্যাপক কালবৈশাকি ঝড় এর সম্ভাবনার কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়া আমি তো মাননীয় স্পীকার হয়ে গেলাম।

গতকাল তাকে বাংলাদেশের আকাশে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার মানচিত্র দিয়ে বলেছি যে মঙ্গলবার সারা দেশের বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকবে এই মৌসুমে সর্বোচ্চ। প্রায় সারা দেশে ৭০ থেকে ৯০ %। সে আজ আমাকে বলে “হিউমিডিটির ম্যাপ টা আমি বুঝঝতেছি না ভাই”

আমি তাকে বলি আপেক্ষিক আর্দ্রতা বুঝা খুবই সোজা। দেশে এখন তরমুজ আলোচনার শীর্ষে তাই তরমুজ দিয়েই উদাহরণ দেই। মনে করো তুমি একটা তরমুজ কিনতে চাও যে তরমুজের দাম ১০০ টাকা প্রতিটি। যদিও শুনিতেছি দেশে নাকি তরমুজ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমি তাকে বলি ধরো তুমি যদি পকেটে ৫০ টাকা নিয়া বাজারে যাও তবে কি সেই তরমুজ কিনতে পারবা? সে বলে

“না ভাই। তা তো পারবো না।”

আমি তাকে বলি তোমার পকেটে যদি ১০০ টাকা থাকে তবে তোমাকে কোন চিন্তাই করতে হবে না ঐ তরমুজ কিনতে। বাজারে গিয়ে তরমুজ কিনে বাসায় ফিরতে পারবা, কাজ শেষ। পকেটে ৮০-৯০ টাকা থাকলেও হয়ত পরিচিত দোকানদার হলে আজকে তরমুজটা তোমার কাছে বিক্রি করতে পারে যদি না তার কেনা দাম ৮০ টাকার বেশি হয়ে থাকে। পকেটে যদি  ৮০-৯০ টাকা থাকে ও তরমুজের দাম ১০০ টাকা হয় তখন দোকানদারের সাথে দামা-দামি করতে হয়। বৃষ্টির ব্যাপারটাও ঠিক একই রকম। যখন বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০% থাকে তখন বৃষ্টি পড়তে থাকে আকাশ হতে কিন্ত বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৮০-৯০% হলে প্রকৃতিকেও কিছুটা দামা-দামি করতে হয় প্রকৃতির নিয়মে সেই ক্ষেত্রে বৃষ্টি হওয়ার চান্স মোটামুটি নিশ্চিত। ৫০-৬০ টাকা পকেটে নিয়া বাজারে গিয়ে তরমুজ কিনতে না পেরে আপনি যেমন মেজাজ খারাপ করে তরমুজ বিক্রেতাকে ঝাড়ি মেরে প্রস্থান করেন ঠিক একই ভাবে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা যখন ৬০% এর নিচে থাকে তখন কালবৈশাখী ঝড় প্রকৃতির সাথে অনেক দামা-দামি করে মুষলধারে বৃষ্টি ঝরাতে না পেরে বেশিভাগ ক্ষেত্রে ধূলি উড়িয়ে আপনার এলাকা থেকে প্রস্থান করে। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন গত কয়েক দিন থেকে দেশের অনেক জেলা-উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় হলেও কেন পর্যপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় নি।

“মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষা: পর্ব ২” লেখাটি শেষ করি সাংবাদিক সেই ছোট ভাই এর উত্তর দিয়ে।

আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম “ধরো তুমি যদি পকেটে ৫০ টাকা নিয়া বাজারে যাও তবে কি সেই তরমুজ কিনতে পারবা?” সে উত্তর দিয়েছে “৫০ টাকায় তো হয়তো কোনরকমে দেড় কেজি বা আরও কম পরিমাপের তরমুজ দেবে।”

সাংবাদিক সেই ছোট ভাই এর উত্তর শুনে আমি তো মাননীয় স্পীকার হয়ে গেছি…

একজন আবহাওয়া গবেষক ও সাংবাদিকের মধ্যে তরমুজ ও কালবৈশাখী ঝড় কথোপকথন

————————————————————————————————————

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা (পর্ব ৩: কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির প্রধান উপকরণ গুলো কি কি? )

চলুন জেনে নেই কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির প্রধান উপকরণ গুলো কি কি?

আগামীকাল থেকে আবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হবে ও এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখ থেকে দেশব্যাপী শক্তি  কালবৈশাখী ঝড় শুরু হবে। মে মাসের ১ ও ২ তারিখে প্রায় সারা দেশে কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেল গুলো।  ১ সপ্তাহ পূর্বেই আবহাওয়া পূর্বাভাষ মডেলগুলো কেমন করে বলতে পড়তেছে কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টি হবে তার কিছু ব্যাখ্যা দিচ্ছি নিচে:

কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির জন্য প্রধানত ৩ টি উপাদান দরকার।

১)  ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা অত্যধিক বেশি থাকা যার কারণে ভূ-পৃষ্টের উপরের বায়ু গরম হয়ে বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় ও কোন স্থানের বায়ু হালকা হয়ে পরে ও  যথেষ্ট অস্থিতিশীল হয়ে আকাশে উঠে গিয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন যে গতকাল যশোর জেলায় প্রায় ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল যা নাকি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আজকেও দেশেই অনেক স্থানে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠবে বলে মনে করি। এই রেকর্ড ব্রে-কিং তাপমাত্রার কারণে ঐ সকল স্থানের বায়ুর ঘনত্ব কমে গিয়ে আকাশে উঠে যাচ্ছে ও ঐ স্থানের বায়ুর স্থান দখল করতে বঙ্গোপসাগর থেকে জ্বলিয় বাস্পযুক্ত বায়ু বাংলাদেশে ও ভারতে পশ্চিম বঙ্গের স্থল ভাগে প্রবেশ করা শুরু করেছে। শক্তিশালী  কালবৈশাখী ঝড়ের মাধ্যমে ঐ সকল স্থানের বাতাস ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর থেকে জ্বলিয় বাস্পযুক্ত বায়ু বাংলাদেশে ও ভারতে পশ্চিম বঙ্গের স্থল ভাগে প্রবেশ অব্যাহত থাকবে।

২) বায়ুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বলিয় বাষ্পের উপস্থিতি থাকা। মার্চ ও এপ্রিল মাসের শুরুর দিকের কালবৈশাখী ঝড়গুলো হতে খুব বেশ বৃষ্টিপাত হয় না ধূলি ঝড় ছাড়া। কারণ এই সময় বায়ুতে জ্বলিয় বাষ্পের উপস্থিতি থাকে খুবই কম। ফলে  কালবৈশাখী ঝড়গুলো হতে যে সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি হয় তা মাটিতে পরার পূর্বেই বাষ্পায়িত হয়ে যায় আকাশে থাকা অবস্থাতেই। গত ১ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে কালবৈশাখী ঝড়গুলো হয়েছে সেই কারণে মাটিতে কিছু পরিমাণ আর্দ্রতা রয়ে গেছে। মাটির এই আর্দ্রতা বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে জ্বলিয় বাষ্প আকারে উড়ে গিয়ে যে মেঘ সৃষ্টি করবে সেই মেঘে বৃষ্টির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকবে মার্চ ও এপ্রিল মাসের শুরুর দিকের কালবৈশাখী ঝড়গুলো অপেক্ষা। যার কারণে এই সপ্তাহের  কালবৈশাখী ঝড়গুলো থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টিপাত হবে।

৩) প্রাকৃতিক বা যান্ত্রিক বল যা ভূ-পৃষ্ঠ থাকে ঠেলা দিয়ে জ্বলিয় বাষ্পকে আকাশের অনেক উপরে নিয়ে গিয়ে মেঘের সৃষ্টি করবে। যেমন বঙ্গোপসাগর থেকে জ্বলিয় বাষ্প বাংলাদেশের স্থল ভাগে প্রবেশ করে তা ভারতে মেঘালয়ের পর্বতমালায় আঘাত করে মেঘের সৃষ্টি করে যে মেঘ থেকে সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে বৃষ্টিপাত হয়। দুটি ট্রেন যখন মুখোমুখি সংঘর্ষ করে তখন অপেক্ষাকৃত হালকা ইঞ্জিনটি ভারি ইঞ্জিনের উপরে উঠে যায় যেমন করে ঠিক তেমনি করে গরম, আর্দ্র (অপেক্ষাকৃত হালকা) বাতাস অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ও শুষ্ক (অপেক্ষাকৃত ভারি) বাতসের মুখোমুখি সংঘর্ষের সময় গরম বাতাস ঠাণ্ডা বাতাসের উপরে উঠে গিয়ে মেঘের সৃষ্টি করে যে মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। কিংবা উচ্চ আকাশে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে খুবই শক্তিশালী বায়ু প্রবাহিত হওয়া। ৩ নম্বর কারণটি অন্য একদিন আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো।

কোন কালবৈশাখী ঝড় দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার জন্য চতুর্থ আর একটি প্রভাবক দরকার তা হলও ভূ-পৃষ্ঠ হতে উপরে উঠার সাথে-সাথে বায়ুপ্রবাহের দিক ও মানের পরিবর্তন হওয়া। অর্থাৎ, ভূ-পৃষ্ঠে বায়ু যদি দক্ষিণ দিক থেকে উত্তর দিকে দিকে প্রবাহিত হয়ে তবে ভু-পৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার উঁচুতে বায়ু প্রবাহিত হবে পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে। বিভিন্ন উচ্চতায় বায়ুর প্রবাহের দিকের ভিন্নতার জন্য মেঘের মধ্যে ঘূর্ণন সৃষ্টি হয় ও কালবৈশাখী ঝড় দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই ঘূর্ণনের পরিমাণ খুবই বেশি হলে টর্নেডো সৃষ্টি হয়। অন্য সময় আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো এই বিষয়টি।

এই মুহূর্তে জেনে রাখুন যে আগামীকাল থেকে রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অনেক জেলায় উপরোক্ত ৪ টি উপপাদনের ২ থেকে ৩ টি উপস্থিতি দেখা যাবে ও ২৯ তারিখ থেকে ৪ টি উপাদানের উপস্থিতি দেখা যাবে প্রায় সারা দেশে। মে মাসের ১ তারিখ থেকে উপরোক্ত ৪ টি উপাদানের উপস্থিতি সারা দেশ ব্যাপী ব্যাপক পরিমাণে দেখা যাবে। যে কারণে মে মাসের ১ ও ২ তারিখে পুরো দেশ ব্যাপী শক্তিশালী কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্র সহ শিলাবৃষ্টি দেখা যাবে। চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষরা ঐ ২ দিন বৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার কোন কারণ দেখছি না।

কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা 2

কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা 1

কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা 3

কালবৈশাখী ঝড় সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা 4

————————————————————————————————————

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা (পর্ব ৪: ঘূর্ণিঝড় শিক্ষা)

দেখুনতো পার্থক্যটি ধরতে পারেন কি না? দুইটি ছবিই ঘূর্ণিঝড় এর। একটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত করা ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও অন্যটি নিউজিল্যান্ডের পূব-উপকূলে প্রায় একই সময়ে সৃষ্ট অন্য একটি  ঘূর্ণিঝড়।

উত্তর:

পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় তার নিজ অক্ষের সপক্ষে একবার ঘুরে। পৃথিবীর সপক্ষে যখন কোন বস্তু নিজেও চলমান থাকে তখন সেই বস্তুর উপর কোরিওলিস বল নামক একপ্রকার আপাত বল কাজ করে। এই বলের কারণে উত্তর গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য বায়ু ঘড়ির কাটার বিপরতীদ দিকে ঘরে ও দক্ষিণ গোলার্ধে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য বায়ু ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরে।

ঘূর্ণিঝড় 1

ঘূর্ণিঝড় ২

প্রচ্ছদের ছবি : দেবাশিষ সরকার

 

 

Leave a Comment