প্রতিবেদন

ভারতীয় জলবায়ু পরিরবর্তন সংক্রান্ত রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসার

ভারতীয় জলবায়ু পরিরবর্তন রিপোর্ট সংক্ষিপ্তসার

২০১৫ সালে হওয়া প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ২১০০ সালের মধ্যে শিল্পবিপ্লবের আগের তাপমাত্রার তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা ২° সেলসিয়াসের বেশি যাতে না বাড়ে সেই প্রচেষ্টায় সামিল হয়েছে। যদিও বর্তমান গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন যদি একই রকম ভাবে চলতে থাকে সেক্ষেত্রে এই শতকের শেষের দিকে তাপমাত্রা ৩° থেকে ৫° সেলসিয়াস বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং তা যদি হয় সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে নিশ্চিত ভাবেই নানান দুর্যোগ নেমে আসবে যা মানব সভ্যতাকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দেবে। এরকম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় ভারতবর্ষ ২০২০ সালে তার প্রথম সম্মিলিত জলবায়ু রিপোর্ট পেশ করে। এই রিপোর্টের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হল।

কৃষি থেকে জীবজগৎ, খাদ্য থেকে পানীয় জল, স্বাস্থ্য থেকে বিদ্যুৎ সমস্ত ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পরবর্তী বছরগুলিতে বৃষ্টিপাতের চরিত্র সাঙ্ঘাতিক ভাবে পরিবর্তিত হতে চলেছে। খরার প্রকোপ বাড়বে বলে বিজ্ঞানিদের ধারনা যা মাটির তলায় থাকা জলভাণ্ডারকে নিঃশেষিত করে দেবে। একই ভাবে বাড়তে থাকা তাপমাত্রা, দীর্ঘমেয়াদি গরমকাল, বন্যা, ঝড়, খরা এবং বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনা ভারতবর্ষের বর্ষা-নির্ভর কৃষিকে ধাক্কা দেবে যা ভবিষ্যতের খাদ্য উৎপাদনকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। তাপপ্রবাহ সাথে আদ্রতা বৃদ্ধি মানুষের বিশেষ করে বাচ্ছা এবং বয়স্কদের স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। বাড়বে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মত রোগের প্রকোপ। পুষ্টিকর খাবারের অভাব বৃদ্ধির স্বাভাবিক মাত্রা কমিয়ে দেবে এবং সাথে সাথে মানুষের ইমিউনিটি হ্রাস পাবে।

বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারনে এসির ব্যাবহারও বেড়ে যাবে এবং সাথে সাথে তাপবিদ্যুতের চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমানও বাড়তে থাকবে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলি ঠাণ্ডা রাখার বিপুল পরিমান অতিরিক্ত জলের জোগানের দিতে দিতে কমে যাবে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমান। উপকূলবর্তি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি সমুদ্রতলের উচ্চতাবৃদ্ধি, বাড়তে থাকা সাইক্লোন ইত্যাদির কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। অর্থাৎ সম্মিলিত ভাবে বলা যায় যে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকাঠামো ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।

অদুর ভবিষ্যতে উপকূলবর্তী শহর এবং জনপদগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বিপদ অনেকটাই বেড়ে যাবে। কৃষিক্ষেত্র এবং মিষ্টি জলের পুকুরে সমুদ্রের নোনা জলের প্রবেশ, ঝড়ের কারনে ঘর বাড়ি, রাস্তা ঘাট এবং কল-কারখানার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার প্রভুত সম্ভাবনা আছে। ভারতবর্ষ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জৈব বৈচিত্র্যর ভাণ্ডার। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে অসংখ্য প্রাণী এবং উদ্ভিদের প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি একে ওপরের সাথে মিশে গিয়ে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। যেমন দীর্ঘস্থায়ী  গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহের পরই আস্তে পারে প্রবল অতিবৃষ্টি। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি থাকা সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সমুদ্রতলের বৃদ্ধির সাথে সাথে ঝড়ের প্রাবল্য, বজ্রপাত এবং জলের মিষ্টতা কমে যাওয়ার মত ঘটনাবলী একসাথে জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।

যেহেতু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম তাই সামগ্রিক দেশের পরিকল্পনার সাথে সাথে শহর এবং গ্রাম কেন্দ্রিক পরিকল্পনার প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে যুঝতে ঘরে ঘরে প্রাকৃতিক উপায়ে বাড়ির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন (যেমন ছাদ-বাগান), বৃষ্টির জল সঞ্চয়, সৌরশক্তির ব্যাবহার, বর্জ্যপদার্থের পুনরব্যাবহার করার অভ্যাস গড়ে তোলার দরকার রয়েছে। আঞ্চলিক ভাবে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রল, জঙ্গল রক্ষা, শহরে সবুজ ক্ষেত্র বৃদ্ধি, কৃষিক্ষেত্রে সেচের বহুল ব্যাবহার, কয়লা এবং খনিজ তেলের ব্যাবহার নিয়ন্ত্রন, সাইকেল এবং গনপরিবহন ঢেলে সাজানো, শহুরে চাষ ইত্যাদির জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন একটি সাংঘাতিক জটিল প্রক্রিয়া যা বহুদিন আগেই মানুষের কর্মকাণ্ডের কারনে শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সুদূরপ্রসারী ফলাফলের বিরুদ্ধে লড়ার জন্যে চলুন এখন থেকেই প্রতিরোধের ডাক দি আমরা। সবার আগে প্রস্তুত করি নিজেকে, তারপর নিজের অঞ্চলকে এবং পরিশেষে নিজের দেশ এবং গোটা বিশ্বকে।

ছবিঃ business-standard.com

Leave a Comment