চাষবাস

শূন্য টাকায় চাষবাস: পর্ব ১: জৈব সার এবং বীজ শোধক বানানোর পদ্ধতি

শূন্য টাকায় চাষবাস: পর্ব ১: জৈব সার এবং বীজ শোধক বানানোর পদ্ধতি

শূন্য টাকায় চাষবাস বা জিরো বাজেট ফার্মিং একটা এমন জলবায়ু প্রতিরোধী চাষবাসের ব্যবস্থা যা সম্পূর্ণভাবে জৈব এবং অত্যন্ত কম খরচে একজন চাষী করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য রাসায়নিক সার কীটনাশক এবং বীজ এর খরচ শূন্য বলে ধরা হয়। এই চাষের পদ্ধতি অনুযায়ী যদি মাটির উর্বরতা সঠিকভাবে বজায় করা যায় তাহলে বাইরে থেকে অন্য কোন কিছু দেওয়ার দরকার হয় না। আমরা প্রথম পর্বে জেনে নেব এই চাষের পদ্ধতিতে ব্যবহার করা জৈব সার এবং কীটনাশক এর ফর্মুলা।

সার জীবামৃত:

শূন্য টাকায় চাষের পদ্ধতিতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ স্যার হলো জীবামৃত। এই সারটি তৈরীর জন্য ২০০ লিটার জলে দুই কেজি গুড় এবং দুই কেজি ডালের বেসন গুলে নিয়ে তাতে ১০ কেজি গরুর গোবর এবং ১০ লিটার গরুর মূত্র মিশিয়ে দিতে হবে। এরপরে আপনার বাগান থেকে উর্বর এবং কেমিক্যাল ছাড়া দু মুঠো মাটি এই দ্রবণটি সাথে যোগ করুন। একটি লাঠি দিয়ে মিশ্রণটিকে খুব ভালো করে মেশান এবং একটি বড় পাত্রে চটের ব্যাগ বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে পাত্রের মুখ ঢেকে ছায়াযুক্ত অঞ্চলে রেখে দিন (সরাসরি রোদে রাখবেন না)। দিনে তিনবার এই পাত্রের ঢাকনা খুলে লাঠি দিয়ে ভালো করে নাড়ুন এবং ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এটি গেঁজে যাবে। তখন আপনি বুঝবেন আপনার সার প্রস্তুত। ২০০ লিটারের জিবামৃত দ্রবণ এক একর জমির জন্য যথেষ্ট। মাসে দুবার সেচ দেওয়ার সময় এই জীবামৃত ব্যবহার করুন।

জীবামৃতের বানানোর পদ্ধতি সামান্য হেরফের করে একে শুকনো সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটির জন্য ১০০ কেজি গোবর এর সাথে দু কেজি গুড়, ২ কেজি বেসন এবং দুমুঠো মাটির সাথে সাথে খুব অল্প পরিমাণে গোমূত্র মিশিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে গুড়ো হিসেবে জমিতে দেওয়া যেতে পারে।

বীজামৃত:

বীজামৃত হল বীজ শোধনের জন্য এবং চারাগাছ শোধনের জন্য ব্যবহৃত তরল। অনেক সময়ই বীজে বিভিন্ন ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়া জাতীয় অণুজীব থাকার কারণে পরবর্তীকালে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে এবং গাছ দুর্বল ও রোগগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। সেটি থেকে গাছ কে বাঁচাবার জন্য প্রথমেই বীজ শোধন করা অত্যন্ত জরুরি। বীজামৃত বানানোর জন্য ৫ কেজি ঘুঁটে, ৫ লিটার গোমূত্র, কুড়ি লিটার জল এবং ৫০ গ্রাম চুন লাগবে। প্রথমে ঘুঁটে একটি কাপড়ে বেঁধে নিয়ে এক বেলার জন্য জলে ভিজিয়ে রাখুন। এবার এই জলে গোমূত্র এবং চুন মিশিয়ে ভালো করে নেড়ে নিন। ব্যাস বীজামৃত তৈরি। আপনার ব্রীজের উপরে এই দ্রবণটি অল্প অল্প করে ছিটিয়ে দিন এবং ভাল করে বীজের সাথে মিশিয়ে দিন বা বীজগুলি একটি কাপড়ের মধ্যে রেখে বীজামৃতের বালতিতে চুবিয়ে তুলে নিতে পারেন।। এবারে ছায়াযুক্ত অঞ্চলে বৃষ্টিকে একঘন্টা রেখে তারপরে বীজ মাটিতে পুঁতে দিতে পারেন।
২০লিটারের এই মিশ্রণে ১০০ কেজি অব্দি বীজ শোধন করা যাবে। এই পদ্ধতিদুটির ভিডিও দেখার জন্য এই লিংক গুলিতে ক্লিক করুন।

 

এর পরের পর্বে আমরা শিখব কিভাবে জৈব কীটনাশক আমরা বানাতে পারি।

 

প্রচ্ছদের ছবিঃ apzbnf.in

 

Leave a Comment