ব্রম্মপুত্রের বন্যায় উত্তরপূর্ব ভারতের আসাম সহ বিভিন্ন রাজ্য এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মানুষ তথা পশুপাখির প্রাণহানি এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ফসল চাষের জমি নষ্ট হয়। উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে সেই বন্যার সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে তথ্য থাকলেও তার আগের এই বন্যার প্রাবল্য নিয়ে কোন তথ্য নেই। কেন দরকার এই তথ্যের? ভবিষ্যতের জলবায়ু কেমন হবে তার ধারনা বিজ্ঞানীরা পান জলবায়ু পূর্বাভাষ মডেল গুলি থেকে। এই মডেলগুলির কার্যকারিতা কতটা ভালো তা জানা যায় অতীতের জলবায়ুকে এই মডেলগুলি কতটা সঠিক ভাবে মেলাতে পারছে তা থেকে। টুকিটাকিতে এনিয়ে বিস্তারিত লেখা আছে। মোদ্দা কথা হল, আগে অঙ্ক কষে অতীতের জলবায়ু গণনা করা হয়, তারপর তা অতীতের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যের সাথে মেলানো হয়। যদি ঠিকঠাক মেলে, তাহলে ধরা হয় যে, ভবিষ্যতের জলবায়ুর সঠিক ভাবে পূর্বাভাষ করা যাবে। কাজেই ব্রম্মপুত্র অববাহিকাতে ভবিষ্যতে বন্যার প্রকোপ বাড়বে কমবে কিনা তার সঠিক পূর্বাভাষের জন্যে আমাদের সেখানকার অতীতের বন্যা সম্পর্কিত তথ্য আবশ্যিক।
এই তথ্য দিয়েছে তিব্বত, ভূটান এবং মায়ানমার অঞ্চলের বৃদ্ধ গাছেরা। তাও এক আধ বছরের না, ১৩০৯ থেকে ২০০৪ অব্দি প্রায় ৬৯৫ বছরের তথ্য দিয়েছে এই গাছগুলি। ট্রি রিং অর্থাৎ গাছের কাণ্ডের প্রস্থচ্ছেদ করলে যে গোলগোল অংশ চোখে পড়ে সেই রিং গুলি বন্যার সময় অতিরিক্ত চওড়া হয়ে যায় আবার খরার সময় একেবারে পাতলা হয়ে যায়। প্রতিবছর গাছে নতুন একটি রিং যোগ হয়। গাছের কাণ্ডের খুব সুক্ষ অংশ নিয়ে প্রস্থচ্ছেদ করে অনুবিক্ষন যন্ত্রের নিচে ফেলে বিজ্ঞানীরা শুনিয়েছেন এক গুরুতর বিপদের কথা। এই অঞ্চলে ভবিষ্যতে বন্যার প্রকোপের পরিমান জলবায়ু মডেলগুলি যা অনুমান করেছিল তার থেকেও ২৪-৩৭ শতাংশ অব্দি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অতীতের তথ্য কম থাকায় পূর্বে মডেলগুলির অনুমানক্ষমতাও সীমিত ছিল, কিন্তু এখন নতুন করে ৬৯৪ বছরের তথ্য সামনে আসায়, ভবিষ্যতের গুরুতর বিপদ যে আরও প্রবল হবে তারই কথা বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন। ১৯৯৭ এর ব্রম্মপুত্রের বন্যায় বাংলাদেশের ৭০ ভাগ অংশ ডুবে গেছিল, সেই ঘটনা যে আবারও ঘটতে পারে তার পূর্বাভাষে সাহায্য করল বুড়ো গাছেরা।
লিংক – www.nature.com