খবরা খবর

জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুন্দরবন

জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুন্দরবন

আনন্দবাজারে কল্যান রুদ্র বাবুর একটি লেখা প্রকাশিত হল, যার বিষয়বস্তু জলবায়ু পরিবর্তন এবং সুন্দরবন। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভালো কল্যান বাবু, বৈজ্ঞানিক হিসেবে এখন প্রতি বছর নিত্য নতুন কাজ করে আসছেন এবং নদী, জল এবং সুন্দরবন নিয়ে তার মত বিশেষজ্ঞ নেই বললেই চলে।

জলবায়ু পরিবর্তনে সমুদ্রের জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে একথা আমরা মোটামুটি জানি, সাথে সাথে কল্যান বাবুর লেখায় উঠে এসেছে এক নতুন বিপদ, সমুদ্র যেমন এগোচ্ছে তেমনি উপকূলের মাটি বসে যাচ্ছে। এই দুইয়ের দাপটে সুন্দরবনের বিপদ নিয়ে দারুন আলোচনা করেছেন তিনি। সাথে সাথে দেখিয়েছেন সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া ঝড়ের দাপট কি ভাবে ক্ষয় ক্ষতি করেছে।

এর পরে উনি একের পর এক বোমা ফাটিয়েছেন – “এত বিধিনিষেধ ও সতর্কতার পরেও সুন্দরবনের কোর এলাকা থেকে গত দুই দশকে ১১০ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল লুপ্ত হয়েছে”

“গত কয়েক দশকে মাটি, ইট, সিমেন্ট ও জাল দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে সুন্দরবনে ভূমিক্ষয় রোধ করার চেষ্টা হয়েছে; কিন্তু সেই চেষ্টা সর্বত্র সফল হয়নি।”

“কিন্তু এই কাজে যে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা রাজ্যের পক্ষে জোগান দেওয়া কঠিন। মতান্তরে বাঁধের সামনে ও পিছনে ম্যানগ্রোভের প্রাচীর নির্মাণ করলে হয়তো ভূমিক্ষয় কিছুটা হ্রাস পাবে। কিন্তু এখন লাগানো গাছ বেড়ে উঠতে প্রায় এক দশক লাগবে। সেই সময় পর্যন্ত প্রচলিত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাহায্যেই নদী ও উপকূলীয় বাঁধ রক্ষা করতে হবে।”

“উল্লেখ্য, বাদাবন সামুদ্রিক ঝড়ের আঘাত থেকে দ্বীপভূমিকে রক্ষা করে এমন প্রচলিত ধারনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে জঙ্গলে ঢাকা দ্বীপভূমিগুলি ৮০ বর্গ কিলোমিটার ছোট হয়েছে; তুলনায় বসতি দ্বীপগুলি থেকে ক্ষয়ে গিয়েছে ৪৯ বর্গকিলোমিটার।”

যাদবপুর ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর সুগত হাজরা এবং গ্রুপের করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে সুন্দরবনে প্রতি বছর ১.৩৮ শতাংশ হারে জঙ্গল মুছে যাচ্ছে শেষ কুড়ি বছরে। সেই একই কাজে সুগত বাবু কিন্তু পরিস্কার দেখিয়েছেন যে শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তন নয়, সুন্দরবনের স্বাস্থ্যের সাম্প্রতিক অবনমনের পেছনে অন্যতম দায়ী হল ফারাক্কার বাঁধ যা সুন্দরবনকে স্বাদু জল এবং পলি থেকে বঞ্চিত করছে। এর ফলে বাড়ছে ভুমিক্ষয় এবং লবনাক্ততা।

সমুদ্রতলের ক্রমশ উঠে আশা বা ভূমির নেমে যাওয়ার বা সাইক্লোনের আছড়ে পড়া – এই তিন পরিবর্তনে যেটা হচ্ছে সেটা হল নোনা জলে পুকুর, জমি এবং ভৌম জলস্তরে ঢুকে যাওয়া। নোনা জল জমিতে একবার ঢুকলে চাষ ভালো হয় না বেশ কয়েক বছর। পুকুরে মাছ তো মরেই সাথে জল নোনতা থেকে যায় বহুদিন। সাইক্লোন ফোরকাস্ট জীবন বাঁচালেও জীবিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

 

প্রচ্ছদের ছবি : National Geography

Leave a Comment