টুকিটাকি

স্মোগ টাওয়ার দিয়ে কেন বায়ু দূষণ কমানো যাবে না

দিল্লি পলিউসানে বহু বছর ধরে ক পেয়ে আসছে। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৯ সালে বলেন দিল্লি চীনের মত নিজের স্মোগ টাওয়ার বানিয়ে দূষণ কমাবার চেষ্টা করুক। অবশ্য এর অনেক আগেই কমনওয়েলথ গেমের সময় দিল্লিতে স্মগ টাওয়ার বসানো হয়েছিল। প্রায় ৩৬ কোটি টাকা খরচ করে ইউনিভার্সিটি অফ মিনাসোটার পেটেন্টেড ডিসাইনের স্মগ টাওয়ার বসানো হয় দিল্লিতে, যে প্রোজেক্ট বম্বে আইআইটি সুপারভাইস করেছিল এবং টাটা বানিয়েছিল।

যাই হোক, একটা স্মগ টাওয়ার কাজ করে খুব সহজ ভাবে, বাইরের বাতাস পাম্প করে একাধিক ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে সেই বাতাস পাঠিয়ে বায়ু দূষক কণা এবং গ্যাসকে টাওয়ারের ভেতরে রেখে দেয়। অর্থাৎ বলা যেতে পারে একটি বড় সড় ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মত কাজ করে এই টাওয়ার। এছাড়া কিছু কিছু টাওয়ারের ভেতরে জল স্প্রে করে ভাসমান ধূলিকণা এবং গ্যাসকে ট্র্যাপ করা হয়।

এই টাওয়ার গুলি কি দিল্লির বায়ু দূষণ কমাতে সক্ষম। এক কথায় উত্তর হল না। কেন সেটা এবার দেখে নেওয়া যাক।

একটা ঘর কল্পনা করুন, ধরে নিন ১০ ফুট দৈর্ঘ্য, ১০ ফুট প্রস্থ এবং ১০ ফুট উচ্চতা। এবার আরেকটা ঘর ভাবুন যার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ১০ ফুট কিন্তু উচ্চতা ২ ফুট। এবার দুটো ঘরেই আপনি একটা করে ধুপকাঠি জ্বাললেন। ধোঁয়া হবে। কিন্তু ২ ফুট উচ্চতার যে ঘর তাতে ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি হবে, আপনি বেশি ধোঁয়া দেখতে পাবেন। সূর্যের তাপে মাটি গরম হয়ে বাতাসকে ওপরে তুলে দেয় এবং তার সাথে বায়ু দূষক পদার্থ গুলিকেও ওপরের দিকে তুলে দেয়। গরম কালে তাপ বেশি তাই বায়ু দূষক পদার্থ গুলি বেশি ওপরে ওঠে এবং শীত কালে কম ওপরে ওঠে। শীত এবং গ্রীষ্ম হল, ওই ২ ফুট এবং ১০ ফুটের ঘর। ধুপ আপনি দুই ঘরেই এক জ্বালিয়েছেন কিন্তু ঘরের উচ্চতার জন্যে ছোট ঘর বেশি দুষিত হবে। অর্থাৎ এমিসান এক থাকলেও শীত কালে বেশি বায়ু দূষণ হয় গ্রীষ্মের থেকে। এর সাথে আরও দুটো জিনিষ যোগ করুন, এক হল শীত কালে হাওয়া কম, ফলে দুষিত কণা এবং গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে পারে না, এবং দুই শীত কালে অতিরিক্ত দূষণ যোগ হয়, যেমন পাঞ্জাব হরিয়ানা জুড়ে নাড়া পোড়ান, এবং দিল্লির ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে আগুন জ্বালানো। ফলে শীত কাল হল, ২ ফুটের ঘরে ২ টো ধুপ কাঠি জ্বালানো এবং গ্রীষ্ম কাল হল ১০ ফুটের ঘরে একটা ধুপ কাঠি জ্বালানো। ফলে শীত কালে দূষণ কমানোর জন্যে আপনাকে ধুপ কাঠির সংখ্যা কমাতে হবে। আপনি বাতাস টেনে কিছু করতে পারবেন না।একটি টাওয়ার গোটা শহরের হাওয়ার খুব কম অংশ টানতে সক্ষম, কত কম – দেখা গেছে ৬৪০০ বর্গ কিলোমিটারের একটা শহরের মাত্র ০.০০০০৭২% বাতাস সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতার একটি স্মগ টাওয়ার প্রতি ঘণ্টায় টানতে পারে। সেন্টার ফর এনারজি, এনভারন্মেন্ট অ্যান্ড ওয়াটারের একটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, সেই হিসেবে দিল্লির জন্যে ২৫ লাখ স্মগ টাওয়ার লাগবে। যার খরচ মোটামুটি ভারতীয় টাকায় ১৭০০ বিলিয়ন এবং যা দিল্লির বাজেটের থেকে প্রায় ২.৫ গুন বেশি। সেন্টার ফর এনারজি এর বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞদের মতে দিল্লির টাওয়ারটি মোটামুটি ৫০ মিটার এলাকা পরিস্কার রাখতে পারে, তার বেশি নয়।

চীনের টাওয়ার বসানোর সময় যতটা ঢাক ঢোল পেটানো হয়েছিল, যতদিন গেছে বৈজ্ঞানিকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন কবে পলিউসান কমার তথ্য আসবে যা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমান করবে যে এই টাওয়ার কাজ করে। কিন্তু সে দুর অস্থ, এখনও অব্দি এমন কোন রিপোর্ট আসেনি (খবরের কাগজের রিপোর্ট নয়) যা প্রমান করছে দিল্লির মত অতি দূষণ মাত্রিক স্থানে এই টাওয়ার কাজ করবে।

তাহলে সরকার কেন স্মগ টাওয়ারের পেছনে কোটি কোটি টাকা খরচা করছে। সোজা হিসেব, স্মগ টাওয়ার বেশ একটা বড়সড় জিনিষ, চোখে দেখা যায়, ফলে মানুষ ভাবে যে সরকার চেষ্টা করছে দূষণ কমানোর। দুই, এতে দূষণকারী সংস্থাদের বলতে হচ্ছে না যে তোমরা দূষণ কমাও, এবং গাড়ির সংখ্যা কমাবার মত বিতর্ক মুলক সিদ্ধান্ত ও নিতে হচ্ছে না। সোজা কথা কঠিন সিদ্ধান্ত না নিয়ে সহজে লোকের চোখে ধুলো দেওয়া।

Leave a Comment