২০১১ সালে, ১৬ বছরের বয়ান স্লাট সমুদ্রে নেমে বুঝলেন প্লাস্টিকের দূষণ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। সে দিঘা বা পুরী গিয়ে আমরাও যে বুঝিনা তা নয়। কিন্তু স্লাট তার একবছরের মধ্যে একটা পৃথিবী বিখ্যাত টেড টক দেন, এবং তার পর ২০১৩ সালে সমুদ্র পরিস্কার করার জন্যে ওসেন ক্লিন আপ বলে একটি সংস্থা খোলেন। বয়ানের আবেদনে সাড়া দিয়ে সারা পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ওঠে সমুদ্র পরিস্কার করার লক্ষ্যে। ধন্য ধন্য পড়ে যায় গোটা পৃথিবী জুড়ে, সবাই আসায় বুক বাধেন যে এই বার তাহলে হয় তো প্লাস্টিকের সমস্যার সমাধান হবে।
এই প্রসঙ্গে ছোট্ট করে বলে রাখা, ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল অব্দি প্লাস্টিকের প্রডাকসান দ্বিগুণ হয়ে যায়, এবং বিজ্ঞানীরা বলছেন যে ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রে মাছের থেকে প্লাস্টিক বেশি থাকবে। এতে দুটি জাহাজে নেট লাগানো। জাহাজ দুটি যাবে এবং এই নেটের মধ্যে প্লাস্টিক আটকে যাবে। সেই প্লাস্টিক জাহাজে তোলা হবে এবং নিয়ে আসা হবে বন্দরে। ওসেন ক্লিন আপের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তারা বার বার গ্রেট প্যাসিফিক গারবেজ প্যাচে তারা এই কাজ শুরু করছে এবং যেহেতু এই প্যাচ গুলিতে সমুদ্র স্রোতের কারণে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্লাস্টিক এসে জড় হয়, ফলে সহজেই জাহাজ দিয়ে আর জ্বাল দিয়ে প্লাস্টিকের একটা গতি করে ফেলা সম্ভব!
১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে প্রথম বোঝা যায় যে প্যাসিফিক ওসেন বা প্রশান্ত মহাসাগরের একটি অংশে জল অপেক্ষাকৃত শান্ত এবং সেখানে বিভিন্ন প্লাস্টিক ও বর্জ্য পদার্থ জড় হচ্ছে। পরে আস্তে আস্তে বোঝা যায়, সব সমুদ্রেই এরকম অপেক্ষাকৃত শান্ত অঞ্চলে জড় হচ্ছে বর্জ্য পদার্থ। ওসেন ক্লিন আপ ভেবেছিল, এরকম প্লাস্টিকের দ্বীপ গুলিকে ধরতে পারলেই কেল্লা ফতে, প্রকৃতি তো ময়লা জড় করে ভ্যাট বানিয়েই ফেলেছে, আমরা গিয়ে মাছ ধরার মত করে তুলে নিয়ে চলে আসব।
এই বার সোজা চলে যাবো ২০২২ সালে, ইতি মধ্যে ওসেন ক্লিন আপ, মানুষের থেকে চেয়ে চিন্তে এবং বিভিন্ন সংস্থা থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। মানে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকা। তারা টুইটারে একটি ভিডিও পোস্ট করে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে প্রায় কয়েক হাজার কেজি প্লাস্টিক জালে ধরা পড়ে তাদের সেই জাহাজের ডেকে পড়ে আছে। এই অব্দি ঠিক ছিল, কিন্তু অনেকদিন দেখার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সমুদ্র বিজ্ঞানীরা আর নিতে পারলেন না। তারা পরিস্কার বললেন এটা সাজানো ভিডিও, এতো দিন প্লাস্টিক যদি ভেসে থাকে তার গায়ে যেরকম দাগ বা নোংরা থাকার কথা সেটা তো নেই ই – উপরন্তু বড় চকচকে এই প্লাস্টিক। উত্তরে ওসেন ক্লিন আপের লোক জন মিন মিন করে কিছু একটা বললেন বটে, কিন্তু অভিজ্ঞ সমুদ্র বিজ্ঞানীদের যুক্তিতে সেটাও ভেঙ্গে গেলো।
এই বার বিজ্ঞানীরা যুক্তি দিতে শুরু করলেন কেন সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণ এই ভাবে কমানো সম্ভব না। প্রথমত, সেই গ্রেট গারবেজ প্যাচ, যে টা আসলে একটা দ্বীপ ভাবা হয়েছিল সেটা আসলে মাছের ঝোলে কালোজিরার মত। প্যাচ বললেই আমাদের মাথায় আসলে সমুদ্রে বসানো ধাপার মাঠের কথা মনে আসে, আসলে কিন্তু সেরকম মোটেও থাকে না। সমুদ্রে থাকা প্লাস্টিকের মাত্র ১ শতাংশ এই প্যাচ গুলিতে থাকে, সেটাও এতো বিশাল এলাকা জুড়ে যে এই ভাবে মাছ ধরার মত জ্বাল দিয়ে ধরা মুস্কিল। তার ওপর আবার এই ভাবে জাল দিয়ে প্লাস্টিক ধরলে সামুদ্রিক জীবের ক্ষতি হবে সাংঘাতিক। এই সব যুক্তির ফাঁদে পড়ে বয়ান স্লাতের সংস্থা চাপে। বিজ্ঞানীরা বলছেন আগে নদী থেকে প্লাস্টিক আসা বন্ধ করো, সমুদ্র তটে প্লাস্টিকের সমুদ্রে মেশা থামাও বা সমগ্র ভাবে প্লাস্টিক নির্ভরতা কমাও, এই গুলি অনেক বেশি কার্যকর এবং কম খরচে অনেক বেশি ফল দেবে।
তাহলে যেটা বক্তব্য, সেটা হল, আমরা প্লাস্টিক ব্যবহার করে ভাববো যে একটা মেশিন দিয়ে সব তুলে ফেলে পাপ মুক্ত হব, সেটি হওয়ার নয়। প্রকৃতির যে ক্ষতি মানুষ করেছে সেটা দুম করে টেকনলজি দিয়ে সমাধান করা সম্ভব না। সে বাতাস থেকে বায়ু দূষক শুষে নেওয়াই হোক বা সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক।