আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকানু হল প্লাস্টিক পলিউশনের নতুন বিপদ। মোটামুটি ধরা হয় ০.১ মাইক্রোমিটার (১ মাইক্রোমিটার মানে ১ মিটার এর এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ) থেকে ৫ মিলিমিটার সাইজের প্লাস্টিকের ছোট ছোট টুকরো যা মূলত জামা কাপড় বোতল ব্যাগ এবং অন্যান্য প্লাস্টিকের সামগ্রী থেকে ক্ষয় হয়ে পরিবেশে জমা হয়। মানুষের শরীর থেকে এভারেস্টের চূড়া সব জায়গাতেই প্লাস্টিকানুর উপস্থিতি বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন। এতদিন অব্দি ভাবা হতো যে প্লাস্টিক পলিউশন বা প্লাস্টিকানুর সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর সরাসরি কোন প্রভাব নেই কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছে প্লাস্টিকানু জলবায়ু পরিবর্তনের হারকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
সম্প্রতি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একদল বৈজ্ঞানিক এর নেতৃত্বে গাঙ্গেয় অববাহিকার বিভিন্ন জায়গায় জল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্লাস্টিকানুর উপস্থিতি মাপা হয়েছে। ভারতবর্ষের ঋষিকেশ, পাটনা, বারানসি এবং বাংলাদেশের ভোলা, চাঁদপুর, রাজবাড়ী সহ মোট দশটি জায়গা থেকে বৈজ্ঞানিকরা গঙ্গার জল সংগ্রহ করে মাইক্রোপ্লাস্টিক মাপেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রতিদিন ৯,০০০,০০০,০০০ সংখ্যক প্লাস্টিকানু গঙ্গার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। চোখ কচলে আরেকবার সংখ্যাটার দিকে লক্ষ্য করুন। লেখাতে কোন ভুল হয়নি। এই প্লাস্টিকানুর বেশিরভাগ অংশই রেয়ন এবং অ্যাক্রিলিক ফাইবার যা মূলত জামা কাপড় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কাপড় কাচার ফলে এই প্লাস্টিকানুগুলি কাপড় থেকে জলে চলে আসে এবং তা শহরের ড্রেন দিয়ে নদীতে পড়ে। দেখা গেছে যে গঙ্গার পাশে গড়ে ওঠা বড় বড় শহর গুলি এই প্লাস্টিকানুর অন্যতম বড় উৎস। বঙ্গোপসাগরে গঙ্গা মেশার ঠিক আগে বাংলাদেশের ভোলাতে প্লাস্টিকানুর সংখ্যা সবথেকে বেশি পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি বৈজ্ঞানিকরা দেখিয়েছেন সমুদ্রে প্লাস্টিকের ক্ষয়ের ফলে গ্রীন হাউজ গ্যাস তৈরি হয় যা পরোক্ষে জলবায়ু পরিবর্তনের হারকে দ্রুত করে। চীনের একদল বৈজ্ঞানিকের সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রকাশ করেছেন যে প্লাস্টিকানু সমুদ্রের আণুবীক্ষণিক শৈবালের সালোকসংশ্লেষ করার প্রক্রিয়া কে বাধা দেয়। এই প্রসঙ্গে বলা ভালো, সমুদ্রের এই আণুবীক্ষণিক শৈবাল গুলি কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে সবথেকে বেশি মাত্রায় শোষণ করে। কাজেই এদের সালোকসংশ্লেষ করার ক্ষমতা কমে গেলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কিন্তু বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন নদীগুলি থেকে প্রায় ৬০ বিলিয়ন প্লাস্টিকের টুকরো সমুদ্রে এসে পড়ে। তারমধ্যে গঙ্গার অবদান ১ থেকে ৩ বিলিয়ন। কাজেই পরের সিনথেটিকের জামাটা কেনার আগে একটু ভেবে দেখবেন।