খবরা খবর

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় থেকে করোনা সবই কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব?

উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় থেকে করোনা সবই কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব?

যখন প্রবন্ধের শুরুতে একটা প্রশ্ন করে ফেলেছি সবার আগে উত্তরটা দিয়ে দেওয়া ভালো। প্রথমটা অবশ্যই হ্যাঁ, আর দ্বিতীয় টা নিয়ে খানিকটা দ্বিধা আছে, কিন্তু হ্যাঁ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রথমেই শুরু করি কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৭ ই ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডে সাংঘাতিক বন্যা হলো। যদিও এখনও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান সম্পুর্ণ হয়নি, তাও এই বিপর্যয়ের লক্ষণ দেখে এটাই মনে করা হচ্ছে যে নদীর অনেক উপরে একটি গ্লেসিয়াল লেক বা হিমাবাহ লেক ভেঙ্গে গিয়ে ঋষি গঙ্গাতে এই ভয়ঙ্কর বন্যা সৃষ্টি করেছে। হিমবাহ বৈজ্ঞানিকদের অনুমান নন্দাদেবী বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ এর মধ্যে একটি জলাশয় ভেঙে পড়ে। উত্তরাখণ্ডে এই বছর জানুয়ারি মাসে গত ছয় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। অর্থাৎ এত গরম জানুয়ারি আগে উত্তরাখন্ডবাসি দেখেননি। এই অত্যাধিক গরম এর ফলস্বরূপ গ্লেসিয়ার থেকে জল গলে চুইয়ে চুইয়ে লেকে পড়েছে এবং তারপরেই লেক ভেঙে এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বৈজ্ঞানিক প্রদীপ শ্রীবাস্তব এর মতে এই অঞ্চলে অন্ততপক্ষে পঁচিশটি গ্লেসিয়ার বা হিমাবাহ রয়েছে যার যেকোনো একটি থেকে এই বিপদ সৃষ্টি হয়েছে। সচরাচর এই অঞ্চলে বরফে ধস নামার ঘটনা মার্চ-এপ্রিল মাসে দেখা যায়। বৈজ্ঞানিকদের অনুমান জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা বেশি হওয়ার দরুন এই ঘটনায় আগে ঘটে গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে ভালো বলে রাখা ভালো যে এই বছরই জানুয়ারি মাসে তুষার বিহীন মাউন্ট এভারেস্ট দেখা গিয়েছে। পর্বত বা নদীকে বেঁধে উন্নয়নের এই প্রক্রিয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের মত দৈত্যের কাছে একটা পিঁপড়ে মাত্র। কাজেই এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আরো ঘটবে এবং এর প্রকোপ আরো বেশি করে মানুষের পড়বে বলেই বৈজ্ঞানিকদের ধারণা।

গতকালই প্রকাশিত হওয়া একটি নতুন বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে দক্ষিণ চায়না অঞ্চলে অতীতের তুলনায় বর্তমানে প্রায় ৪০ প্রজাতির বাদুড় বাসা বাধতে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই অঞ্চল গুলিকে বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টেছে, তাপমাত্রা বেড়েছে এবং মেঘ কমেছে যা অতীতের তুলনায় এই অঞ্চলে নতুন ধরনের গাছপালাকে বৃদ্ধির সুযোগ দিয়েছে। এই নতুন ধরনের গাছপালা গুলি বাদুড়ের স্বাভাবিক বাসা হওয়ায়, আরো বেশি বেশি করে বাদুড় এই অঞ্চলে আসছে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে মানুষকে প্রভাবিত করছে তা আমরা এই দুটো আপাত বিচ্ছিন্ন ঘটনাতে পরিষ্কার বুঝতে পারছি।

 

প্রচ্ছদের ছবিঃ www.skymetweather.com

Leave a Comment