সাক্ষাৎকার

ভারত ও বাংলাদেশে রিনিউবেল এনার্জির ভবিষ্যৎ কি? সাক্ষাৎকারে ডাঃ গণ চৌধুরী

ভারত ও বাংলাদেশে রিনিউবেল এনার্জির ভবিষ্যৎ কি? সাক্ষাৎকারে ডাঃ গণ চৌধুরী

ডক্টর গণচৌধুরী বিগত 35 বছর ধরে রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টরে গবেষণা করে চলেছেন। ভারতবর্ষের প্রথম দুটি মেগাওয়াট সোলার প্লান্ট ডক্টর গণচৌধুরীর নেতৃত্বে হয়েছিল। সোলার লাইট এবং সোলার পিভি এর মাধ্যমে সুন্দরবন অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের ঘরে তিনি আলো পৌঁছে দেওয়ার পথ প্রদর্শক।

সবুজ পৃথিবী: পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান যদি দেখা যায় সে ক্ষেত্রে এটা কি ঠিক নিরক্ষীয় অঞ্চল পুরোপুরি বলা চলে না। এই ভৌগোলিক অবস্থান কি পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে সৌর শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে একটা বাধা সৃষ্টি করছে?

ডাঃ গণ চৌধুরী: খানিকটা তো বটেই। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ সূর্যের রোদ সরাসরি ভাবে কম পড়ে এবং তেরচাভাবে বেশি পরে। কাজেই সরাসরি সূর্যের রশ্মি ব্যবহার করা হয় যে যন্ত্রগুলিকে, সেই যন্ত্রগুলি পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ একেবারেই চলেনি এবং ভবিষ্যতেও চলবে না। অন্যদিকে অল্প মেঘলা হলেও চলে এরকম টেম্পারেচার সোলার ডিভাইস যেগুলি, সেইগুলি কিন্তু আবার পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশ জনপ্রিয়। একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবে, যেমন ধরো সোলার কুকার আর সোলার হিটার। সোলার কুকারে রান্নার জন্য যে পরিমাণ সরাসরি সূর্যালোক বা তাপমাত্রা দরকার হয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ বছরে হাতে গোনা দিনে তা পাওয়া যায়। আবার সোলার হিটারে কিন্তু সরাসরি সূর্যের আলো অত বেশি পরিমাণ তাপমাত্রা দরকার হয় না কাজেই সোলার হিটার কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ বেশ ভালোই চলছে।

সবুজ পৃথিবী: একজন সাধারণ মানুষ যদি সোলার বা উইন্ড এই ধরনের রিনিউবেল এনার্জি বাড়ির জন্যে নিতে চায় সেক্ষেত্রে তাকে মোটামুটি কত টাকা ইনভেস্ট করতে হবে?

ডাঃ গণ চৌধুরী: দেখো উইন্ডের পোটেনশিয়াল খুবই কম এদিকে। একটা মধ্যবিত্ত বাঙালি যার বাড়িতে স্ট্যান্ডার্ড লোড আছে, সেরকম বাড়িতে ৮০-৯০ হাজার টাকা মতো সৌরশক্তিতে খরচা করলে, ৫০ শতাংশ বিদ্যুতের খরচা কমে যাবে। এবং যেভাবে সৌর বিদ্যুতের উপকরণের দাম কমছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে আরো দাম কমবে।

সবুজ পৃথিবী: কৃষিক্ষেত্রে ডিজেল জেনারেটর একটা কৃষকের কাছে অত্যন্ত বড় খরচের কারণ। এই সেক্টরে সোলার এর ভবিষ্যৎ কেমন? কোন সরকারি সাবসিডি কি আছে এখানে?

ডাঃ গণ চৌধুরী: কৃষিক্ষেত্রে জল সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষত মাইক্রো ইরিগেশনে সৌরবিদ্যুৎ কিন্তু আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হচ্ছে। এখনো অব্দি যা দাম তাতে হয়তো একজন কৃষকের পক্ষে ক্যাপিটাল কস্ট অর্থাৎ প্রাথমিক খরচাটা দেওয়া মুশকিল, কিন্তু এটা যদি একটা দলবদ্ধভাবে কৃষকরা করতে পারেন তাহলে কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে চাষের খরচ বেশ অনেকটা কমে যাবে। এখানে কিন্তু সরকারি সাবসিডি আছে। চাষীদের বলবো নিকটবর্তী ব্যাংকের সাথে বা কৃষি দপ্তরে যোগাযোগ করতে।

সবুজ পৃথিবী: দার্জিলিং এর মত জায়গা যেখানে মেঘ সাংঘাতিকভাবে বেশি এই ধরনের জায়গাতে কি ওয়াটার টারবাইন কে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করা যেতে পারে?

ডাঃ গণ চৌধুরী: এই চেষ্টা আগে আমরা করেছি। ছোট ঝর্ণা গুলিকে কাজে লাগিয়ে। কিন্তু প্রথমত, ছোট জলবিদ্যুৎ তৈরি করতে গেলে খরচা পৌঁছানো একটু মুশকিল। দ্বিতীয়তঃ এই ধরনের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র জন্য কিন্তু একটা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের লোক বা অপারেটর দরকার। কাজেই কমিউনিটি যদি নিজে থেকে এগিয়ে আসে তাহলে এই ধরনের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কিন্তু জনপ্রিয় হতে পারে।

সবুজ পৃথিবী: জঞ্জাল থেকে শক্তি বা ওয়েস্ট টু এনার্জি নিয়ে বর্তমানে বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু জায়গায় ওয়েস্ট টু এনার্জি প্লান্ট মিউনিসিপ্যালিটি গুলো করছে। এই ব্যাপারটা কতটা সম্ভব বলে আপনার মনে হয়?

ডাঃ গণ চৌধুরী: এটার উপরে আমরা বেশ কিছুদিন যাবৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি এবং পশ্চিমবঙ্গের জঞ্জালের যে কম্পোজিশন বা প্রকৃতি তাতে সেই জঞ্জাল থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে গ্রীডে ফেলে গোটা প্রক্রিয়াটা ভায়াবেল না। তার থেকে সরাসরি ম্যানিওর তৈরি করে বিক্রি করা বরং সহজ এবং এটাকে সাসটেইনেবল করা সম্ভব। তবে যদি কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির মত বড় মিউনিসিপালিটি ঠিক করে যে বিশাল একটা ওয়েস্ট টু এনার্জি প্লান্ট করবে তাহলে ঠিক আছে, কিন্তু ছোট ছোট মিউনিসিপালিটি গুলোর ক্ষেত্রে ম্যানিয়র তৈরি করাই ভালো। জঞ্জাল থেকে শক্তি তৈরি করার প্রক্রিয়া ভারতবর্ষে বহুদিন থেকে বহু জায়গায় বহু রকম ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যাকে আমরা টেকনিক্যাল ভাষায় বলি স্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ যাকে মাথায় রেখে পরবর্তী কালে আরো আরো মানুষ করবে, সেই রকম স্ট্যান্ডার্ড কিন্তু এখনো গড়ে ওঠেনি। এই জায়গায় কিন্তু এখনও ও যথেষ্ট রিসার্চের দরকার আছে।

সবুজ পৃথিবী: ২০২১ সালের শুরুতে দাঁড়িয়ে, সোলার প্যানেল, মাইক্রো টারবাইন বা ব্যাটারি এর দাম যেভাবে হুহু করে দাম কমছে। এই জিনিসটাকে মাথায় রেখে, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে পরবর্তী ১০/২০ বছরে অল্টারনেটিভ এনার্জীর ভবিষ্যত কেমন হতে পারে বলে আপনার মনে হয়?

ডাঃ গণ চৌধুরী: আমার ধারণা পরবর্তী দশ কুড়ি বছরের মধ্যে এই দুটো জায়গায় সৌরশক্তি মুখ্য শক্তি হয়ে যাবে। খাবার জল এবং চাষের জমির জল এই দুটো সেক্টর, পরবর্তী দুই দশকের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে সৌরশক্তিনির্ভর হয়ে উঠবে। সেটা কার্বন এমিশন বেশ কমিয়ে দেবে। পার্সোনাল রুফটপ সোলার পানেল, মানে প্রত্যেকবারই নিজস্ব সোলার প্যানেল পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের ছাদ ছেয়ে ফেলবে।

পরবর্তী ১০/২০ বছরে বায়ো এনার্জির ওপর (চাষের জমির ওয়েস্ট, খাবারের ওয়েস্ট, মিউনিসিপ্যাল ওয়েস্ট, বায়ো ইথানল) প্রচুর রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্ট হবে। পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু বায়ো ওয়েস্টের পোটেনশিয়াল সাংঘাতিক। কিছু কাজ শুরু হয়েছে কিন্তু পপুলার হতে আর একদুই দশক অপেক্ষা করতে হবে।

 

আরো পড়ুন

পরিবেশ সংক্রান্ত সাংবাদিকতার হাল হকিকত : সাক্ষাৎকারে জয়ন্ত বাসু 

সাক্ষাৎকারে কোলকাতার বাইসাইকেল মেয়র শতঞ্জীব গুপ্ত

Leave a Comment