সাক্ষাৎকার

আলাপচারিতায় আপনজন যৌথ সমবায়

আলাপচারিতায় আপনজন যৌথ সমবায়

সবুজ পৃথিবী: আপনজন কি ভাবে শুরু হল? কত দিন হল শুরু হল?

আপনজন: আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে কিছু মানুষের মনে সাধ জেগেছিল “আপন হতে বাহির হয়ে” বুকের মাঝে বিশ্বলোকের সাড়া পাবার। এই উদ্যোগকে সুন্দর রূপ দেবার জন্য গঠিত হয়েছিল একটি সংগঠন যার নাম সাড়া -‘আপন হতে বাহির হয়ে’। একের সাথে অপরের জোট তৈরি ও পারস্পরিক সহায়তা নিয়ে একসাথে চলবার সেই সুত্রপাত । সংগঠনের স্রষ্টারা অনুভব করেছিলেন; একা কোনো বৃহত্তর স্বার্থ সফল করবার কাজে নামলে প্রকৃত ফল পেতে সময় লেগে যাবে অনেক অনেক দিন। তাই তাঁরা শুরু করেছিলেন এক অনন্য চর্চা যার নাম যৌথতা। পরস্পর বেঁধে বেঁধে পথ চলার সেই ধারাবাহিক চর্চা চলছে আজও। আর এই ধারাবাহিক চর্চার ফলশ্রুতি হল এক বৃহত্তর সামাজিক পরিবার বা যৌথমঞ্চ যার পোশাকি নাম হল আপনজন সমন্বয়

২০১৫ সালের ৬ ডিসেম্বর কলকাতার অবনীন্দ্র সভাগৃহে সাড়া র ডাকে প্রায় পনেরটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে পরস্পরের সাথে মিলে-মিশে; একে অপরের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এক সুন্দর সমাজ গঠনের প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলেন সেদিন। তারপর; এই পারস্পরিক কাজকর্মের তথ্য বিনিময়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনজন সমন্বয় গ্রুপের সৃষ্টি হল ২৪/২/২০১৬ তে।

শুরুর দিকে শিক্ষাসংক্রান্ত কাজের মধ্য দিয়ে সাড়া দেয়া শুরু হলেও ক্রম উপলব্ধ হয়; সমাজের ডাকে প্রকৃতই সাড়া দিতে গেলে শিক্ষা ছাড়া আর যে দুইটি বিষয়ের ওপর সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার তা হল স্বাস্থ্য আর জীবনশৈলী। কিন্তু একটি সংগঠনের পক্ষে প্রতিটা বিষয় নিয়ে নিয়মিতভাবে কাজ করা তো সম্ভব নয়৷ তাই তাঁরা ডাক দেন শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতি; জৌগ্রাম সোপান; প্রত্যুষ; প্রিজম; বর্ণালী; DRCSC; স্বপ্নসন্ধান; F.I.A.M; রহড়া আন্তরিক; চেষ্টা; কসবা হিলিং লাইফ সহ আরো কিছু সংগঠন ও অসংখ্য ব্যক্তি উদ্যোগকে এবং খুব সহজেই সাড়া ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিকে দিকে।

এই মুহুর্তে হোয়াটসঅ্যাপে আপনজন সমন্বয় ছাড়াও আরো ১২ টি গ্রুপ রয়েছে আপনজন কথাটি যুক্ত করে; যেখানে বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিতে আগ্রহী মানুষজন সংযুক্ত রয়েছেন। সব মিলিয়ে সেখানে সংযুক্ত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক আপনজন। তাই আমরা বলতে পারি আমরা আমাদের লক্ষ্যে অবিচল। আমরা নিয়মিতভাবে যৌথতার চর্চায় সফল। আপনজন এর সমস্ত উদ্যোগের মধ্যে একটা অংশ হল যৌথসমবায়।

আপনজন আর যৌথতা শব্দদুটির গুরুত্বের কথা শেষে এবার সমবায়ের কথা বলব গোড়া থেকে।

অনেক কম বয়সেই পড়েছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত প্রবন্ধ সমবায়নীতি। নানা সময়ে আপনজনদের সাথেও আলোচনা হয়েছে সেই নীতিকে বই এর পাতায় বন্দী করে না রেখে কাজে করে দেখানো গেলে কেমন হয়!!!

ভাবনার ধারাবাহিকতা চলতে চলতে ২০১৮ সালের গোড়ায় এসে সেই ভাবনাকে কর্মে রূপ দেবার এক সুবর্ণ সুযোগ এসে যায়। আপনজন মহলে যুক্ত হল বায়োডাইভার্স নামে একটি সংগঠন যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের জৈব উৎপাদন আর জৈব খাদ্য সংগ্রহের ১৯ বছরের অভিজ্ঞতা আপনজনের লোকবল আর যৌথতার চর্চার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আপনজন যৌথ সমবায় উদ্যোগের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়।

বায়োডাইভার্স -এর অভিজ্ঞতা আর আপনজনের মানবশৃঙখল এই দুইয়ে মিলে নতুন ইতিহাস লেখার কাজটিই আপনজন যৌথসমবায় নামে এগিয়ে চলেছে ২ অক্টোবর ২০১৮ থেকে। আশা করি এই কাজের আদর্শ আগামীতে ছড়িয়ে পড়বে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। কৃষি আমাদের ভিত্তি এই শব্দ কয়টির যথাযথ মূল্যায়ন আমরা নিশ্চয়ই করতে পারব আমাদের কাজের মাধ্যমে।

আপনজন যৌথ সমবায়ের প্রতিদিনের কাজকর্মকে সুচারু ভাবে চালিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বিভিন্ন পেশার মানুষজন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবার আদর্শে আজ সংযুক্ত। এই পরিবারে আজ ২৫ জন সদস্য যাঁরা নিজেদের অর্থ ও শ্রমের মাধ্যমে সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অংশের বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনকারীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে সেই উৎপাদন সরাসরি উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।

২র অক্টোবর ২০১৮ থেকে এক নতুন যাত্রা পথের সূচনা হয়েছিল মন্দিরতলায় আপনজন দের সাথে নিয়ে । পরবর্তী সময়ে আমরা পৌঁছতে পেরেছি বারাসাত; ঠাকুরপুকুর; বরানগর; বেহালা; গড়িয়া আর কসবা অঞ্চলের আপনজনদের কাছে। আগামীদিনে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের একসাথে। সমবায়ের প্রধানতম লক্ষ্য হল শিক্ষা-নীতি, স্বাস্থ্য-নীতি আর্থিক- নীতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে এক সুস্থ সবল সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

আপনজন যৌথ সমবায়2

সবুজ পৃথিবী : কলকাতার বুকে তিন বছর ধরে জৈব খাবারের দুটি বিপননী রমরমিয়ে চলছে। আপনাদের মূল ক্রেতা কারা?

আপনজন : প্রথমেই বলি; আপনজন সমন্বয় যৌথমঞ্চের মধ্যে আরো অনেক স্বাধীন সংগঠনের মধ্যে অন্যতম হল যৌথসমবায়; সরকারীভাবে নিবন্ধীকরন সম্পন্ন হবার পর যার নাম হয় আপনজন যৌথসমবায় ফাউন্ডেশন। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর মন্দিরতলায় এই সংগঠনের যাত্রা শুরু উদয়ভানু রায় এর সহযোগিতায় । আগের প্রতিবেদনে জানিয়েছি উদয়দা এবং তাঁর বায়োডাইভার্স ফার্ম দীর্ঘ ১৯ বছর জৈবকৃষির প্রসারে কাজ করে চলেছে। আজও তাঁদের সেই চলা জারি রয়েছে। ২০১৮ তে সমবায়ের পথচলা শুরু হলেও আরো বেশ কিছু বছর আগে থেকেই নিরাপদ খাদ্য ভাবনা নিয়ে চর্চা-আলোচনা চলছিল আপনজন মহলে। ফলে শুরুর দিন থেকেই ক্রেতা বা উপভোক্তা নিয়ে মাথা ঘামাবার কোনো প্রয়োজনই হয়নি আমাদের। শুধু প্রয়োজন ছিল পরিকল্পিতভাবে উৎপাদক আর উপভোক্তাদের মধ্যে একটি সমন্বয় গড়ে তোলার মতো উদ্যোগ নেয়া। সমবায় সেই উদ্যোগটিরই একটি সঙ্ঘবদ্ধ রূপ বলা যায়। সেই সাথে বলা যায়; আমাদের উপভোক্তা আমরাই। সরাসরি উৎপাদকদের থেকে নিরাপদ খাদ্য সংগ্রহ করে এবং উৎপাদকদের পরিচয় সামনে রেখে সব আপনজন মিলে নিরাপদ খাদ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেব; এই ছিল মূল উদ্দেশ্য। গত প্রায় তিন বছরের ধারাবাহিক পথচলায় আমরা অল্প অল্প করে প্রতিদিনই এগিয়ে চলেছি আমাদের সেই উদ্দেশ্যকে সার্থক ও সুন্দর রূপ দেবার জন্য।

সমস্ত আপনজনই জানেন যে হাওড়ার মন্দিরতলা আর দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুরে দুটো বিপনী ছাড়াও বারাসাতের কলোনীর মোড়ে আমাদের আপনজন পার্থ প্রতিম করের উদ্যোগে একটি বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছে । এছাড়াও অনেক বন্ধু সংগঠন কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপদ খাদ্য পরিবেশনে নিজ নিজ উদ্যোগ নিয়ে চলেছেন। এই প্রতিটি উদ্যোগের সাথেই কিন্তু পারস্পরিক যোগাযোগ রয়েছে। সমমানসিক ব্যক্তি ও সংগঠনের মধ্যে যোগাযোগ আর পারস্পরিকতার মাধ্যমেই সমবায় আন্দোলন ক্রমে দৃঢ়তা পাবে। হাতে হাত ধরে তৈরি করতে হবে এক অন্তহীম মানবশৃঙখল। আমরা বিশ্বাস করি সমস্ত সুন্দর উদ্যোগের বিকেন্দ্রীকরণ হওয়া দরকার আর সেই সাথে বিকেন্দ্রিত উদ্যোগ গুলির মধ্যে চাই সমন্বয়। তবেই তো সেই উদ্যোগ গুলির অন্তর্গত নীতি আদর্শ ও উদ্দেশ্য পরিব্যাপ্ত হবে দিকে দিকে!

সবুজ পৃথিবী : চাষী এবং ক্রেতাকে সরাসরি এক মাধ্যমে আনেন আপনারা। চাষীর ফসলের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং কেন জরুরি?

আপনজন :‘ব্র‍্যান্ডিং’ জরুরি কিনা তার থেকেও জরুরি একটি বিষয় আছে আমাদের কাছে। আমরা চেষ্টা করি প্রতিজন উৎপাদকের পরিচয় সমস্ত আপনজনদের সামনে প্রকাশ করতে। কি খাচ্ছি; কেন খাচ্ছি আর যা খাচ্ছি সেটা কোথা থেকে আসছে এই তিনটি বিষয়কে প্রতিজন উপভোক্তার জানা উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি। এতে করে উৎপাদক আর উপভোক্তার মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়; পারস্পরিক বিশ্বাস দৃঢ়তা পায়; সহযোগিতা আর সহমর্মিতার পথ প্রশস্ত হয়। মনে রাখতে হবে আপনজন যৌথসমবায় পরিবেশক হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করছে। তাই সমস্ত উৎপাদক বা উপভোক্তা যাতে এই মঞ্চকে নিজের মঞ্চ হিসেবে ভাবতে পারেন এবং উৎপাদক ও বিশেষজ্ঞ আপনজনরা উপভোক্তা আপনজনদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়ে নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সচেতনতার প্রসার ঘটাতে পারেন ঠিক সেই কারনেই এই সমন্বয়ের কাজটি জরুরী বলে মনে করি আমরা। আমরা নিয়মিত দলবেঁধে বিভিন্ন উৎপাদকের উৎপাদন স্থলে যাই; তাদের সাথে যোগাযোগ রাখি; কারো কোনো সমস্যা থাকলে সকলে মিলে যাতে তা সমাধান করা যায় সেই ভাবনা চালিয়ে যাই নিয়মিত। নিয়মিত উৎপাদক-উপভোক্তা মুখোমুখি বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করি। সমবায়ের পরিচালকদের কাছে সব থেকে জরুরি হল উৎপাদক যাতে সঠিক সময়ে তাঁর উৎপাদনের সঠিক মূল্য পান সেই বিষয়টাকে নিশ্চিত করবার চেষ্টা করা। আমরা আজ অবদি আমাদের লক্ষ্যে অবিচল।

সবুজ পৃথিবী : জৈব এবং বিষ মুক্ত ফসল এখনো পশ্চিমবঙ্গে সর্বস্তরের মানুষের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয় নয়। ক্রেতাদের মধ্যে জৈব এবং বিষমুক্ত জিনিস জনপ্রিয় করবার জন্য আপনারা কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

আপনজন : নিরাপদ খাদ্যকে ‘জনপ্রিয়’ করবার কোনো দায় আমাদের নেই। আপনজনরা ভালোই বোঝেন নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা। আর আমাদের যেহেতু ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক স্বার্থ নেই; তাই আমরা কখনোই কর্পোরেট স্টাইলে বিজ্ঞাপনের বুলি আউড়ে নিরাপদ খাদ্যকে জনপ্রিয় করতে যাব না। বরং আমরা চাইব যে সমস্ত মানুষজন নিরাপদ খাদ্যের উৎপাদনের সাথে যুক্ত তাদের কাছ থেকে আমরা যারা উপভোক্তা তারা যেন সচেতনতার পাঠ নিতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি কৃষি ও উৎপাদনের সাথে যুক্ত মানুষজন এই বিষয়ে আমাদের থেকে অনেক বেশি ভালো বোঝেন। তাই আমরা চেষ্টা করি আলোচনাসভার মাধ্যমে বা উৎপাদনস্থল পরিদর্শন ও উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করে স্বশিক্ষিত হয়ে উঠতে। বিজ্ঞাপনের চাকচিক্যের অন্তরালে প্রকৃত নিরাপদ উৎপাদন যাতে চোখ এড়িয়ে না যায় সেজন্যই প্রতিজন উপভোক্তাকে স্বশিক্ষিত হয়ে উঠতেই হবে।

প্রচার প্রসার সম্পর্কে একটা সুন্দর উদাহরণ মনে আসে। ফুল ফুটলে তার সুবাস বাতাসে ভেসে আসে আপনিই; অলি বারবার ফিরে ফিরে আসে। আবার আবর্জনা স্তুপের পুতিগন্ধ হাজার চেষ্টা করলেও চেপে রাখা যায় না; মাছি ভন ভন করে সারাদিন; ছড়ায় রোগ জীবানু। ঠিক সেভাবেই ভাবনার সুবাস বা পুতিগন্ধ ছড়াবেই; আপনজনদের নিজের বোধ আর চেতনার মধ্য দিয়ে শনাক্ত করতে হবে তাকে। তারপর তো নিজ নিজ দায়িত্বে নিজ নিজ পছন্দের ভাবনার শরীক হতে হবে।

আপনজন যৌথ সমবায় সেই ভাবনার পুষ্পবিতান রচনা করে চলবে ধারাবাহিকভাবে।

আপনজন যৌথ সমবায়1

সবুজ পৃথিবী : এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে জৈব এবং বিষমুক্ত ফসলের এবং দ্রব্যের চাহিদা কি যোগানের থেকে বেশি?

আপনজন : আবার বলছি ‘চাহিদা’ কে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া চলবে না। মানুষের চাহিদার শেষ আছে নাকি? চাহিদার মধ্য দিয়েই আসে ‘উন্নয়ন’ এর জোয়ার আর তিলে তিলে ধ্বংস হয় প্রকৃতি। আজ এই মুহুর্ত থেকে যদি আমরা আমাদের চাহিদায় নিয়ন্ত্রণ না আনতে পারি; অদূর ভবিষ্যতে আমাদের অস্তিত্বের সংকট অনিবার্য। ‘যোগান’ এর প্রসঙ্গে বলি; মজুতদারিতে আমরা বিশ্বাস করিনা; যখন যেমন পাওয়া যাবে তখন তেমনটাতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। এই প্রসঙ্গে আমাদের আপনজন অংশুমান দাসের বেশ কিছু নিবন্ধ আছে। প্রয়োজনে সেইগুলো পড়ে দেখার অনুরোধ থাকবে সমস্ত আপনজনদের কাছে।

এই প্রসঙ্গে একটা সুন্দর উদাহরণ দেয়া যায়। কিউবাতে জৈবকৃষির প্রসারে সব থেকে বড় ভূমিকা নিয়েছিল ছাদকৃষি বা Kitchen garden এর ব্যাপক প্রসার। আপনজন মহলেও এই চর্চা প্রবলভাবে জারি। আমরা যদি অনুধাবন করতে পারি যে সব মরশুমে সব সবজী পাওয়া সম্ভব না; কিম্বা পৃথিবীর নানা প্রান্তে একইধরনের ফসল ফলানো সম্ভব নয় তাহলে হয়ত আমাদের চাহিদাকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। আমরা ছাদকৃষির চর্চার মাধ্যমে যদি প্রত্যেকেই এক একজন ছোট ছোট আকারে উৎপাদন শুরু করতে পারি তাহলেও তো নিজ নিজ চাহিদার অনেকটাই পূরণ হয় তাই না?

‘যোগান’ প্রসঙ্গে বলি; আমাদের অনেক বেশি চাহিদাকে হাতিয়ার করেই তো বিগত কয়েক দশকে রাসায়নিক সার; কীটনাশক; হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল বীজের আমদানি হয়েছে; প্রকৃতির ওপর চলেছে ভয়ঙ্কর অত্যাচার। আমরা তাই সচেতনতার সাথে চাহিদা আর যোগানের মধ্যেকার এই সম্পর্কগুলিকে নিয়ে চর্চা না করতে পারলে চলবে না।

সবুজ পৃথিবী : যদি আমরা ক্রেতার তরফ থেকে ভাবি, সে ক্ষেত্রে একজন ক্রেতা কিভাবে জানবেন যে ফসলটি বিষমুক্ত? এই জায়গায় আরেকটি প্রশ্ন হল, নতুন নতুন জৈব চাষির খবর কি করে পান আপনারা?

আপনজন : এককথায় এর উত্তর হল; সচেতনতা থেকে। একটু আগে স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠার কথা বলেছি; বলেছি বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত মজবুত করবার কথা। হাতে হাত রেখে বেঁধে বেঁধে চলবার কথা ভবিষ্যতদ্রষ্টা কবিরা কি এমনি এমনি বলে গিয়েছেন নাকি? না; চোখ বুঝে কিছু বিশ্বাস করার কোনো প্রয়োজন নেই। পথকে চিনে নিতে হয় পথে নেমে; পথ চলতে চলতে। পথের বাঁকেই অভিজ্ঞতার ঝুলি হাতে অপেক্ষা করে ‘সময়’। কেউ যদি ভাবে এঁদো কুয়োর মধ্যে বসে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মাপ নেবে তাহলে তো আর কিছু বলবার থাকেনা! আমরা যেদিন জৈব ফসল; বিষমুক্ত ফসল; নিরাপদ খাদ্য; প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত ফসল সম্পর্কে বুঝতে শিখব সেইদিন আমরা নিজেরাই বুঝে নিতে পারব এসব কথা। আর আপনজন মহল এই দীর্ঘ পথচলায় যথেষ্ট বিস্তার লাভ করেছে। বিভিন্ন পেশা; নেশা আর বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষিত বিশ্বাসযোগ্য মানুষের অভাব অন্তত এই মুহুর্তে নেই আপনজন মহলে। আর এই পরিবারটিতে খোলামেলা বাতাবরণ (open endedness) থাকবার কারনে প্রতিদিন আরো নতুন নতুন মানুষ এই পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।

আপনজন পরিবারের অভিভাবক হিসেবে মানস দেব; কৃশানু মিত্র; দেবাশিস রায়; অর্ধেন্দু শেখর চট্টোপাধ্যায়; শান্তনু(টনি) মিত্র; ড: অনুপম পাল; স্বর্ণেন্দু সরকার; কুনাল কুশারী; চিন্ময় দাস; অংশুমান দাস; শৈলেন চন্ডী ; ড: অনিরুদ্ধ দে; পথিক বসু; অরুন কুমার সেন সহ আরো আরো অনেকের নাম করা যায় এক নিশ্বাস। যে পরিবারের সাথে এইধরনের মানুষজন যুক্ত রয়েছেন এবং যেখানে অংশগ্রহন আর ধারাবাহিক চর্চা চলতেই থাকে; সেখানে এইগুলি খুব একটা সমস্যা হয়না; হবার কথাও নয়। ‘খবর পাওয়া’ র প্রসঙ্গেও এই একই কথা বলব।

সবুজ পৃথিবী : আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি জেলাতে কেউ আপন জনের মত এরকম একটি যৌথ সমবায় গঠন করতে চান, তাহলে কি কি জিনিস থাকে মাথায় রাখতে হবে?

আপনজন : চর্চা; নিরন্তর চর্চা আর অংশগ্রহন। রবীন্দ্রনাথের সমবায়নীতি সব আপনজনদের পড়তে হবে। আমরা মনে করি সমবায়ই এক এবং একমাত্র পথ। আসল হল চিন্তাভাবনা চর্চার সমবায় আর মানবসম্পদ সমবায়। এই দুটি জিনিস গড়ে তুলতে পারলে সর্বত্রই এইধরনের সংগঠন গড়ে উঠতে পারে। ‘ইগো’ আর ‘আমিত্ব’ এই দুটো জিনিসকে সম্পূর্ণত বর্জন করা দরকার। দুই পা হেঁটে আমরা যদি মনে করি অনেক পথ হেঁটে ফেলেছি; ব্যাস; আমাদের পথচলায় সেখানেই ইতি। আর একটা জিনিস হল শ্রদ্ধা। বয়স বা শিক্ষাগতযোগ্যতা যাই হোক না কেন; একসাথে কাজ করতে গেলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বিশ্বাস আর সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন।

আমরা মনে করি প্রতিটি অঞ্চলেই এইধরনের সমবায় গড়ে ওঠা জরুরি যাতে আপনজনদের নিরাপদ খাদ্যের খোঁজে দূরবর্তী জায়গায় যেতে না হয় বা অনেকদূর থেকে অনেক জ্বালানী ব্যবহার করে নিরাপদখাদ্যকে হেঁশেল অবদি নিয়ে আসতে না হয়। আঞ্চলিক স্তরে উপভোক্তা ও উৎপাদক সমবায় গড়ে উঠুক; অংশগ্রহনের মাধ্যমে গড়ে উঠুক মানবসম্পদ সমবায়; গড়ে উঠুক প্রতিটি মানুষের সুন্দর ভাবনার সমবায়। তারপর সেই সমবায়গুলির পরিচালকরা জোর দিন পারস্পরিক আদানপ্রদান ও সমন্বয় রক্ষায়। তাহলেই হবে

এই সমস্ত উদ্যোগের পিছনে অর্থনৈতিক দায়ও থাকবে যথেষ্ট। সেই দায়িত্বগুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়া দরকার। আপনজন যৌথ সমবায়ের পরিচালনায় যেমন আছেন দশ জন মানুষ যাঁদের মধ্যে রয়েছে পেশাগতভাবে ভিন্নতা ও ব্যস্ততা। সে সমস্তকে বজায় রেখেও স্বেচ্ছায় তাঁরা সমবায়ের উৎকর্ষ সাধনে ভাবছেন; সময় দিচ্ছেন প্রতিদিন। বিনিয়োগ এসেছে সমবায়ের সাথে যুক্ত ২৫ জন সদস্যের নিজস্ব অর্থ থেকে। আজ অবদি আমাদের কোনো কর্পোরেট বা কোনো সরকারী সংগঠনের কাছে অর্থের জন্য আবেদন জানাতে হয়নি। তাহলে দেখা গেল পথ চলতে চলতে আমরা বিনিয়োগের সমবায় ও চালু করে দিতে পেরেছি।

আপনজনের কৃষি সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক উৎপাদকদের উৎসাহ দেবারও চেষ্টা করা হয়। যাতে তাঁরা প্রথমে নিজের পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বৃহত্তর পরিবারের আপনজনদের কাছে পৌঁছতে পারেন।

আপনজন যৌথসমবায়ের মাধ্যমে ৮ জন মানুষের সামান্য হলেও কিছু রোজগারের ব্যবস্থা করা গিয়েছে। দিকে দিকে যত এইধরনের উদ্যোগ গড়ে উঠবে কর্মসংস্থানের একটা সম্ভাবনাও যে বাড়বে সে বিষয়ে আজ আমরা নিঃসন্দেহ।

মোদ্দা কথা হল স্লোগান উঠুক “আমাদের সমবায় আমরাই গড়ব” তারপর হাতে হাত ধরব; তৈরি করব এক বিরাট মানববন্ধন। এই একমাত্র উপায় অসাধু কর্পোরেটের অসাধু চক্রান্তকে ঠেকিয়ে দেবার। বিকেন্দ্রীকরণ হোক এই উদ্যোগের রাজ্যে রাজ্যে; জেলায় জেলায়; গ্রামে গ্রামে; পাড়ায় পাড়ায়।

সবুজ পৃথিবী : আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? কলকাতায় বা জেলায় কি আরও বিপনী খোলার পরিকল্পনা আছে? অনলাইন মার্কেটিং কতটা জৈব জিনিসের বিপণনে সাহায্য করছে বলে আপনাদের ধারণা?

আপনজন : ‘মার্কেট’; ‘বাজার’; ‘প্রচার’ ‘বিপনন’ এই শব্দগুলোকে খুব ছোট বলে মনে হয়। খুব যেন ক্ষুদ্র স্বার্থসর্বস্ব লাগে। নিরাপদ খাদ্য ভাবনা এক থেকে অন্যে ছড়িয়ে পড়ুক; ধীরে কিন্তু নিশ্চিত গতিতে।

এখানে প্রশ্ন হতে পারে; যদি একের ভাবনা অপরে জানতেই না পারে তাহলে ভাবনার প্রসার কিভাবে ঘটবে? এই প্রসঙ্গে আর একটি উদাহরণ মনে আসে। ধরা যাক; তাপের সুপরিবাহী কোনো পদার্থ তাপের উৎসের সংস্পর্শে রাখা আছে। এবার সেই পদার্থের সাথে সংস্পর্শ থাকা বা কাছাকাছি থাকা অন্য সুপরিবাহী পদার্থের মধ্যে তাপ ছড়িয়ে পড়বে প্রাকৃতিক নিয়মেই। হ্যাঁ পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব যত বাড়বে; তাপ পরিচলনে তত বেশি সময় লাগবে। তাই আমরা চাই ধারাবাহিক চর্চার মধ্য দিয়ে সমমনস্ক আপনজন পরস্পরকে ছুঁয়ে থাকুন; একে অপরকে বোঝার চেষ্টা করুন; পরস্পরের খামতিগুলো পূরণ করবার চেষ্টা করুন। এইভাবেই ক্রমে এক বিরাট মানবশৃঙখল গঠিত হোক। অতি দ্রুততায় নাইবা হল। আমরা দেখেছি; খুব দ্রুত কিছু গড়ে তুলতে চাইলে তা আবার খুব দ্রুত বিনাশের দিকে এগিয়ে যায়। তাই ধীরে কিন্তু নিশ্চিত গতিতে; নীরবে কিন্তু সুন্দর ছন্দে এই অনন্য আন্দোলনের ধারা ছড়িয়ে পড়ুক। আপনজন মহল বিস্তৃত হোক সারা ভারতবর্ষ জুড়ে; ছড়িয়ে পড়ুক সাড়া বিশ্বে।

আপনজন যৌথ সমবায়ের মূল লক্ষ্য হল বিষমুক্ত খাদ্য, ঋণমুক্ত কৃষক, ও দূষণমুক্ত পরিবেশ এই ত্রিমুখী ভাবনাকে নিয়ে এগিয়ে চলাই লক্ষ্য।

আমাদের আদর্শে যৌথ সমবায় এর পাঁচটি অংশ হল;

১. উৎপাদক সমবায়
২. উপভোক্তা সমবায়
৩. মানবসম্পদ সমবায়
৪. উন্নততর ভাবনা-চর্চা সমবায়
৫. বিনিয়োগ সমবায়

সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের আপনজনরা যদি নিজেদের মধ্যে জোট তৈরি করতে পারেন; সমবায় ভাবনার এই পাঁচটি খন্ডের ভিতর সমন্বয়সাধন সম্পূর্ণ করতে পারেন তাহলে যেকোনো জায়গাতে যেকোনো পরিবেশ- পরিস্থিতিতে সার্থক হয়ে উঠতে আপনজন যৌথসমবায়ের এই ভাবনা।

আপনজন যৌথ সমবায় ফাউন্ডেশান : ঠিকানা : ৯৩; কালিপুর এক্সটেনশন; কে. কে. রোড; কলকাতা: ৭০০০৮২.
কথা: ৮৭৭৭৭০২৩৩৯ /৮৯০২৬৬৭৬৪১/ ৮৯০২১৯৯১৩৬

মন্দিরতলা বিপনীর ঠিকানা : ২/১; দাশরথি দে লেন; হাওড়া মন্দিরতলা ব্রীজের নিচে; শিবপুর; হাওড়া- ৭১১১০২.
কথা: ৮৭৭৭৭০২৩৩৯ /৮৯০২৬৬৭৬৪১

দক্ষিণ কলকাতা বিপনীর ঠিকানা : প্রান্তিকাপন শপিং কম্পলেক্স; মহত্মা গান্ধী রোড; প্রান্তিক; কবরডাঙা রোড; কলকাতা: ৭০০১০৪
কথা: ৮৯২৬৬৭৬৪১/ ৭৬০০০৩৩২০৪

বারাসাত বিক্রয়কেন্দ্র ঠিকানা : লক্ষ্মীনারায়ণ কলোনী; নবপল্লী বারাসাত; সুভাষ ক্লাবের কাছে
কথা : ৯৮৩৬৫২৮১৩১

 

আপনজন যৌথ সমবায়ের সাথে সংযুক্ত উৎপাদকরা

সমবায়ের এই বিরাট পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের মধ্যে আছেন ;

১. বায়োডাইভার্স ফার্ম- টোনা ভিলেজ; রাজারহাট

২. ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ কমিউনিকেশান এন্ড সার্ভিস সেন্টার (DRCSC)

৩. ফোরেজ ইনিশিয়েটিভ- র’ সিল্ড মধু ও মধুজাত বিভিন্ন সামগ্রী

৪. শ্রমজীবী পরিবার –

শ্রমজীবী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোওপারেটিভ; শ্রীরামপুর

সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল ও সরবেড়িয়া কৃষিচক্র

৫. প্রিজম; গোবরডাঙা

৬. বর্ণালী – স্বনির্ভর উদ্যোগ; আলিপুরদুয়ার

৭. আমন- মহিলা কৃষক উদ্যোগ; ঝাড়গ্রাম

৮. ফিয়াম – চাষীঘর; রায়গঞ্জ

৯. শান্তিপুর ফার্মার্স ক্লাব

১০. মালদা প্রডিউসারস গ্রুপ

১১. লায়েকবাঁধ কৃষক সংগঠন; বাঁকুড়া

১২. গাঁওতা খামার; বাঁকুড়া

১৩. ভূমিকা ও বসুন্ধরা

১৪. সুতারগাছি হোম মেড- স্বনির্ভর উদ্যোগ

১৫. অনুভব হোম মেড- স্বনির্ভর উদ্যোগ

১৬. বি জি এন্টারপ্রাইজ- পরিবেশবান্ধব থালা বাটি

১৭. ভালোপাহাড় পুরুলিয়া

১৮. সিঙ্গি শান্তিনিকেতন পরিবার; বর্ধমান

১৯. মুর্শিদাবাদ মহিলা উদ্যোগ

২০. বানী ন্যাচারালস; উত্তরপ্রদেশ

২১. হাটপাড়া বিবেক সেবানিকেতন

২২. বিন্দুর পাঠশালা; ঝাড়গ্রাম

২৩. ডেবরা কৃষক উদ্যোগ; পশ্চিম মেদিনীপুর

২৪. বেড়সা বিড়হর মহিলা সমিতি; বলরামপুর; পুরুলিয়া

২৫. ইন্দ্রানী ডেয়ারি ফার্ম

২৬. Leafy Green

২৭. হার্বাল চয়েস

২৮. সুচেতা শিল্প উদ্যোগ

২৯. জে . সি. এগ্রো প্রোডাক্টস

৩০. সয়েল গ্রীন

৩১. ফায়দা – উত্তর প্রদেশ

৩২. তপন মাহাতো; পুরুলিয়া

৩৩. গ্রাস হ্যামলেট

৩৪. স্মেল অব আর্থ

৩৫. শস্য সুফলা

৩৬. প্রকৃতি বিলাস

৩৭. চিরমিত্র অর্গানিক ফার্ম মধ্যপ্রদেশ

৩৮. এলকাইল

৩৯. পরমানন্দ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি

৪০. সবুজ বাহিনী ঝড়খালি

৪১. Plastotech Trading

৪২. Floresta Primitiva

৪৩. আর. কে. জি. ট্রাস্ট

৪৪. অনন্ত বাউড়ি; বাঁকুড়া

৪৫. পূর্ণচন্দ্র কিস্কু; পুরুলিয়া

৪৬.পিওর ফার্ম

৪৭. তরুনা জৈন

৪৮. বেঙ্গলস মেকার্স

৪৯. অভিজিৎ পাল- হালিশহর

৫০. প্রবেশ শী

৫১. মিহির মন্ডল- বারুইপুর

৫২. কৃষকদল; রসিকনগর-মেদিনীপুর

৫৩. ঘোষ ডেয়ারী- টাকী

৫৪. আরিফ ইসলাম- মৌপালক

৫৫. এস. বি অরগানিকস

৫৬. অম্বরীশ সরকার; কন্ধমল- উড়িষ্যা

৫৭. সাধন গুহঠাকুরতা- কলকাতা

৫৮. পঙ্কজ চক্রবর্তী- হাওড়া

৫৯. শিবকালী এগ্রো প্রোডাক্টস

Leave a Comment