কিছুদিন আগে ২৩৯ জন বিজ্ঞানীদের একটি দল ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা WHO কে একটি খোলা চিঠি দিয়ে জানায় যে কোভিডের ভাইরাসের বায়ু ঘটিত সংক্রমনের আশঙ্কার কথা। তারপর থেকে অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে এবং তা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ভারতবর্ষ এবং জাপানের ১১ জন বৈজ্ঞানিকের একটি দল এই সমস্ত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলির সম্মিলিত সারাংশ প্রকাশ করেছেন। সবুজ পৃথিবী সম্প্রতি কথা বলেছে সেই দলের প্রধান ডক্টর কিরপা রামের সঙ্গে, যিনি বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির একজন বৈজ্ঞানিক।
সবুজ পৃথিবী: বায়ু দূষণ এবং করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ে বেশকিছু ভালো প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনার কি মতামত?
কিরপা রাম: সত্যি কথা বলতে এই ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। কিছু বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান অনুযায়ী এদের মধ্যে সম্পর্ক আছে, আবার কিছু অনুযায়ী এদের মধ্যে কোন সম্পর্কই নেই। কাজেই এই মুহূর্তে বলা খুব শক্ত।
সবুজ পৃথিবী: আপেক্ষিক আদ্রতা এবং তাপমাত্রা বাইরে বেশি থাকলে ইনফেকশন কমে যায়, এটা কি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে বলা যায়?
কিরপা রাম: আবার বলছি যে আমাদের কাছে এই সম্পর্কিত পরিষ্কার কোন ডাটা নেই। বেশকিছু তথ্যানুযায়ী বেশি আদ্রতা এবং তাপমাত্রাতে ঘরের বাইরের পরিবেশে ইনফেকশনের হার কম, আবার এর উল্টো বক্তব্য আমরা বেশকিছু অনুসন্ধানে দেখেছি। কাজেই খুব পরিষ্কার করে এখন অব্দি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
সবুজ পৃথিবী: লকডাউন শেষ হওয়ার পরে মানুষ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাচ্ছে, কাজের জন্য বাইরে বেরোনো শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একজন বায়ুমণ্ডল বিশারদ হিসেবে আপনার সাজেশন কি?
কিরপা রাম: যেহেতু বাইরে বেরোনো এখন শুরু হয়ে গেছে কাজেই আমি বলব যে মানুষকে শুধুমাত্র যে মাস্ক পড়তেই হবে তা নয়, সঠিকভাবে মাস্ক পড়াটা দরকার এবং বাসে ট্রামে যাতায়াত করার সময় কোন ভাবে যাতে মাস্ক না খোলা হয় সেটাও দেখা দরকার। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, সম্ভব হলে ফির জায়গায় না যাওয়া এবং হাত মেলানো কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখাই ভালো। সিঁড়ির রেলিং, হাতল, বোতাম ইত্যাদিতে হাত না দেওয়ার চেষ্টা করুন।
সবুজ পৃথিবী: বিশ্বজুড়ে কোভিডের এই আক্রমণ বিভিন্ন বিষয়ের বৈজ্ঞানিকদের একসাথে আনতে সাহায্য করেছে। এই ব্যাপারে আপনার কি বক্তব্য?
কিরপা রাম: কোভিডের ফলে ইন্টার ডিসিপ্লিনারি স্টাডির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞ, ফিজিসিস্ট, কেমিস্ট, ম্যাথমেটিশিয়ান, কম্পিউটার মডেলিং বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের বৈজ্ঞানিকরা একসাথে কাজ করার আরো বেশি প্রয়োজনীয়তা আছে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় এই বৈজ্ঞানিকদের দল শুধুমাত্র যে ভাইরাসটিকে চিহ্নিতকরণ করবে তাই নয় অফুরন্ত পরিবেশে এই ভাইরাসের পরিণতি কী হচ্ছে সেই নিয়েও গবেষণা শুরু করবে যাতে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকানো যায়।
সবুজ পৃথিবী: আপনাদের সম্প্রতিক প্রবন্ধ অনুযায়ী বাতাসে বেশি পরিমাণ অক্সিডাইজিং এজেন্ট থাকলে কোভিডের আক্রমণ কমে যায়, এর মানে কি দূষিত বাতাস তাড়াতাড়ি এই ভাইরাস কে মারতে পারে পরিষ্কার বাতাসের থেকে?
কিরপা রাম: এক কথায় বলতে গেলে হ্যাঁ, কিন্তু দূষিত বাতাসের অনেক সাইড ইফেক্ট আছে, এটি মানুষের শরীরকে সরাসরি অসুস্থ করে দিতে পারে। কাজেই আমি বলব প্রাকৃতিক অক্সিডেশন এবং বায়ু চলাচল, এই দুটি এই ভাইরাসের বাতাসে ছড়িয়ে পড়াকে আটকাতে পারে। এর মধ্যে আমাদের হাতে যেহেতু ভেন্টিলেশনই আছে কাজেই আমি অনুরোধ করব সকলকে যে বায়ু চলাচল ভালো হচ্ছে এরকম জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।
সবুজ পৃথিবী: বর্তমানে বিভিন্ন রোগের ছড়িয়ে পড়া এবং আক্রমণের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত আছে এমনটাই বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক মনে করছেন, কোভিডের ক্ষেত্রেও কি একই ব্যাপার বলে আপনার মনে হয়?
কিরপা রাম: হতে পারে কিন্তু বৈজ্ঞানিক হিসেবে আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছি না যতক্ষণ না আমার কাছে এই সংক্রান্ত পরিষ্কার কোন পর্যবেক্ষণ আসছে। আর সত্যি কথা বলতে কি বর্তমানে সমস্ত বাজে জিনিস এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তন কে দোষ দেওয়া আমাদের একটা স্বভাব হয়ে গেছে।