সাক্ষাৎকার

কৃষির জন্যে ক্লিনিক: আলাপচারিতায় মো. মমিন সরকার

কৃষির জন্যে ক্লিনিক আলাপচারিতায় মহম্মদ মোমিন সরকার

সবুজ পৃথিবী : ক্লিনিক তো সাধারণত মানুষের বা পশু পাখির হয়, কৃষির জন্যে ক্লিনিকের চিন্তা কি ভাবে এলো?

মো. মমিন সরকার : মানুষের যেমন জীবন আছে, গাছেরও জীবন আছে। মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক থাকলেও গাছের জন্য নেই। যার ফলে গাছের রোগ হলে অনুমান নির্ভর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক সময় ভুল ব্যবস্থার কারণে ফসল নষ্ট হয়। হাড় ভাঙা খাটুনির পরও ভেস্তে যায় কৃষকের দুচোখ ভরা স্বপ্ন। তাই ই-কৃষি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু, যেখানে সঠিক পরামর্শ পাবে, সঠিকভাবে গাছের সমস্যা নির্ণয় করা হবে। প্রয়োজনে পরীক্ষা করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হবে।

কৃষির জন্যে ক্লিনিক

সবুজ পৃথিবী : ঠিক কিভাবে আপনারা কাজ করেন, ক্লিনিকের ডাক্তার কারা?

মো. মমিন সরকার : ডিজিটাল বাংলাদেশে কৃষিতেও প্রযুক্তি যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ আমাদের সাথে ডিজিটাল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ভিডিও কলে কিংবা অডিও কলে সেবা নিচ্ছে। প্রয়োজনে ফসলের ছবি পাঠানোরও সুযোগ রয়েছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কেউ আমাদের সেবা নিতে পারবে। ইতোমধ্যে আমেরিকা, ভারত, ফিলিপাইন থেকেও অনেকে নিয়মিত সেবা নিয়ে থাকে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৫ টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক তরুণদের নিয়ে ই-কৃষি ক্লিনিক মো. মমিন টিম । এছাড়া দক্ষ কৃষক, কৃষি কর্মকর্তা, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও আমাদের সাথে যুক্ত আছেন। আমরা সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ( ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু) সেবা দিচ্ছি। শীঘ্রই ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ নির্ভর আমাদের সেবা চালু হবে।

সবুজ পৃথিবী : এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে আপনারা কাজ করছেন?

মো. মোমিন সরকার : ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ঠিক করোনাকালীন সময়ে নতুন কিছু করার ভাবনা থেকেই আমাদের ডিজিটাল কৃষি সেবা প্রদানের উদ্যোগ শুরু হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ৫৪ টি জেলার ১১৯ টি উপজেলা থেকে ১ হাজারের বেশি কৃষক ডিজিটাল কৃষি সেবা নিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে আমরা ১৩ টি উপজেলায় ৬০ জন নারীকে নিয়ে ৪ মাস ব্যাপী ‘কৃষাণী’ প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছি। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও ছাদ বাগানীদের জন্য শুরু হয়েছে আমাদের স্পেশাল সার্ভিস ‘ই-ফার্মিং প্রজেক্ট’।

কৃষির জন্যে ক্লিনিক

সবুজ পৃথিবী : জলবায়ু পরিবর্তনে মুহূর্তে কৃষির উপরে এবং বিশেষত খাদ্য সুরক্ষার উপর একটা সাংঘাতিক প্রভাব ফেলছে এবং ফেলতে চলেছে। কৃষি ক্লিনিকের এই ব্যাপারে অভিজ্ঞতা কি?

মো. মমিন সরকার : জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে কৃষি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অসময়ে বৃষ্টি, বন্যা আর অতিরিক্ত শীত এবং গরমের কারণে কৃষকরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আবহাওয়ার সাথে গাছের বৃদ্ধি, ফলন জড়িত। এছাড়া পোকামাকড়, রোগবালাই গভীরভাবে জড়িত। যার ফলে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, বিভিন্ন রোগ দমন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও সরকারি উদ্যোগগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এছাড়া প্রযুক্তি নির্ভর নতুন কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

সবুজ পৃথিবী : ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি আপনাদের?

মো. মমিন সরকার : আমরা স্বপ্ন দেখি কৃষিতে এক নতুন বিপ্লব হবে, যেখানে কৃষি হবে প্রযুক্তি নির্ভর, উৎপাদন হবে নিরাপদ ফসল, কৃষি হবে আধুনিক। দেশের ৬৪ টি জেলায় আমাদের কৃষি ক্লিনিক থাকবে। ফসল উৎপাদনের আগে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে যাতে কাজ শুরু করতে পারে এমন কনসালটেন্সি ফার্ম হবে ই-কৃষি ক্লিনিক। কৃষক, কৃষি উদ্যোক্তা ও ছাদ বাগানীরা ঘরে বসে ফসলের চিকিৎসা সেবা পাবে। আমাদের অনলাইন শপে নিরাপদ ফসল ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ থাকবে । ফলে কৃষক ফসল বিক্রি নিয়ে চিন্তামুক্ত থাকবে এবং ভোক্তা পাবে নিরাপদ খাদ্য।

কৃষির জন্যে ক্লিনিক

সবুজ পৃথিবী : যদি পশ্চিমবঙ্গে একই রকমের কোন একটা ক্লিনিক খোলার চেষ্টা করা হয় সে ক্ষেত্রে কি কি করতে হবে?

মো. মমিন সরকার : এজন্য প্রযুক্তি ও কৃষিতে দক্ষ টিম গঠন করতে হবে যারা রোগ নির্ণয়সহ মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হবে। কৃষিবিদ এবং গবেষকদের সমন্বয় থাকতে হবে। যাতে নতুন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবিলা করতে পারে। তাৎক্ষণিক সঠিক সেবা প্রদান বড় চ্যালেঞ্জ, এজন্য দক্ষতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment