খবরা খবর

বায়ুদূষণ এবং একটি মৃত্যু 

বায়ুদূষণ এবং একটি মৃত্যু

মানুষের মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ আপনারা শুনে থাকবেন। হার্টের রোগ হতে পারে মানুষের মৃত্যুর কারন; কিডনির রোগ, অ্যাক্সিডেন্ট, সুইসাইড, ম্যালেরিয়া, ক্যান্সার এগুলো সব একেকটা মৃত্যুর কারণ। কিন্তু কখনো শুনেছেন কি যে বায়ুদূষণকে সরকারি ভাবে মানুষের মৃত্যুর কারণ বলা হচ্ছে?  খাতায়-কলমে বায়ুদূষণ মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখার উদাহরণ এর আগে ছিল না। এমনটাই ঘটেছে লন্ডনে এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন সম্ভবত ইউরোপে হয়ত পৃথিবীতেও প্রথম বায়ুদূষণকে কোন মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে দর্শানো হল।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, লন্ডনের একটি ব্যস্ততম রাস্তার পাসের বাড়ির বাসিন্দা ইলা ডেবরা বলে একটি নয় বছরের বালিকা মারা যায়। তার প্রায় সাত বছর বাদে, দুই হাজার কুড়ি সালের ডিসেম্বর মাসে লন্ডনের কোর্ট রায় দিয়েছে যে ইলার মৃত্যুর কারণ বায়ুদূষণ। ছোটবেলা থেকেই ইলা শ্বাসকষ্টে ভুগত এবং তার মায়ের কথা অনুযায়ী ছোটবেলা থেকে তাকে প্রায় ৩০ বার এই কারনে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছে। ইলার মা আরও বলেন, তারা যদি একবারও জানতেন এই শ্বাসকষ্ট আসলে হচ্ছে গাড়ির ধোঁয়া থেকে বেরোনো নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নামক একটি ক্ষতিকারক গ্যাস থেকে তাহলে তারা সেই অঞ্চল থেকে অন্য কোথাও বাড়ি পাল্টে চলে যেতেন। বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার স্টিফেন হলগেট এই মামলার অন্যতম প্রধান সাক্ষী ছিলেন। তিনিই বিশেষজ্ঞ হিসেবে বায়ুদূষণই যে ইলার মৃত্যুর কারন তা প্রমান করেন।

কেন এই রায়কে ঐতিহাসিক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা? প্রথমত, এই রায়ের ফলে শ্বাসকষ্টে ভোগা কোন মানুষের আশেপাশে বায়ু দূষণের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, সেক্ষেত্রে সে সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করতে পারবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল; দ্বিতীয়ত, সারাবিশ্বে বায়ুদূষণ এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে প্রায় ৪২ লাখ মানুষ প্রতিবছর বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়। এই রায় একটা অফিশিয়াল রেকর্ড হিসেবে রয়ে গেল যা বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা অগনিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে খানিকটা অক্সিজেনের মত। এই রায়কে সামনে রেখে হয়তো ভারতবর্ষ বা বাংলাদেশের মতো সাংঘাতিক দূষিত কোন দেশে বায়ুদূষণ থেকে জনস্বাস্থ্য কে বাঁচাবার জন্য কোন একদিন গণআন্দোলন শুরু হবে।

ছবিঃ www.mirror.co.uk    www.sustainabilityoutlook.in

 

Leave a Comment