পশ্চিমবঙ্গের বায়ুদূষণে এই রাজ্যের প্রতিবেশী রাজ্যগুলির অবদান কম নয়! উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, এবং হরিয়ানার অবদান অনস্বীকার্য। ব্যাপারটা বুঝতে হলে আমাদের খানিকটা বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে হবে। বায়ুদূষণকারী ধূলিকণা এবং বিভিন্ন গ্যাস মোটামুটিভাবে ৭ থেকে ১০ দিন বাতাসে ভেসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। অর্থাৎ আজকে আপনার প্রশ্বাসের সাথে যে ধূলিকণা আপনার ফুসফুসে ঢুকছে তার একটা অংশ আসলে ৭ থেকে ১০ দিন আগেই অন্য কোন একটা জায়গায় তৈরি হয়েছে এবং সেই ধূলিকণা বাতাসের সাহায্যে ভেসে এসে আপনার শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
উত্তর দিক থেকে আগত বাতাস এর নাম আমরা সবাই শুনেছি মোটামুটি। পুজোর পর থেকেই একটা ঠাণ্ডা বাতাসের প্রবাহ উত্তর ভারত থেকে পশ্চিমবঙ্গের দিকে বইতে থাকে। আপনি যদি ভারতের ম্যাপটা একটু কল্পনা করতে পারে তাহলে দেখবেন গাঙ্গেয় অববাহিকায় পৃথিবীর অন্যতম দূষিত শহর গুলি অবস্থিত এবং এই অববাহিকার সর্বশেষ শহরটি হল কলকাতা। উত্তর ভারত থেকে আগত এই বাতাস গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত অঞ্চলে উত্তর ভারতের বায়ুদূষণকারী ধূলিকণা এবং গ্যাসকে নিয়ে আসে। খানিকটা বলা যায় যে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হল গঙ্গার পার্শ্ববর্তী সমস্ত শহরগুলির বায়ু দূষণকারী পদার্থের ডাস্টবিন!
শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গও নয় বাতাসের সাহায্যে ভেসে আসা এই বায়ুদূষণকারী পদার্থ বাংলাদেশেও বায়ুদূষণ ঘটায়। সম্প্রতি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে বায়ুদূষণের জন্যে সরাসরি পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার ফসলের জমিতে আগুন লাগানোকে দোষারোপ করেছেন। একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ সমগ্র উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির দূষণকে আত্তীকরণ করছে। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা গাঙ্গেটিক আউটফ্লো নাম দিয়েছেন। বর্ষাকালের শেষ থেকে মোটামুটি গ্রীষ্মকাল অব্দি উত্তর ভারতের রাজ্যগুলির দুষিত বায়ু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাকে দুষিত করছে। কাজেই আমাদের মনে রাখতে হবে, যে বায়ুদূষণ কোন রাজ্য বা দেশের গণ্ডী মানে না, এক জায়গার নিঃসৃত ধোঁয়া বহুদূরের এক জায়গায় দূষণের কারন হতে পারে।