কলমেঃ সায়ন্তন ঘোষ
লেখক পরিচিতিঃ
সায়ন্তন ঘোষকে শুধুমাত্র পক্ষী বিশারদ বললে ভুল বলা হবে, তিনি পতঙ্গবিদ ও বটে। সায়ন্তন বাবুর গবেষণার বিষয়বস্তু ফসল এবং পতঙ্গের সম্পর্ক। বর্তমানে তিনি ব্রেনওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।
—————————————————————————————————————–
সারা পৃথিবী যখন করোনার ভয়ে থরহরি হয়ে ঘর বন্দি, সেই সময়ে প্রাণী জগতে, বিশেষ করে পাখিদের ভিতর একটা অদ্ভুত ধরণের সাড়া পড়ে গেছে। আর যার ফলেই হয়তো নানান জায়গায় কিছু অদ্ভুত ধরণের পাখি দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ সময়ে দেখা যায় না। আমাদের পশ্চিমবঙ্গ এই ঘটনার এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিগত সাত-আট মাস ধরে।
সবার আগে বলি কিছু টার্নের কথা, যারা গত মে মাসের উমফুনের পরপরই ঢুকে পড়েছিল হাওড়া-র বালিতে। তারপর কিছুদিন ধরেই একটি ক্যারোলিনা উড ডাক এসেছিলো ওই বালি-র-ই একটু পুকুরে। তারপর একটি কোম্ব ডাক বা নাকটা, সে তো এখনো রয়েছে বারুইপুর এর একটা জলা জায়গাতে।
তবে এই ঘটনা কিন্তু স্বাভাবিক নয়। যেটা স্বাভাবিক, সেটা হলো পাখির পরিযান, যা বছরের পর বছর ধরে একটা নির্দিষ্ট ছন্দে হয়ে আসছে। তার পেছনে রয়েছে একটি পাখির প্রজনন বা খাদ্যগত কারণ। পরিযান একটি সাধারণ জৈবিক ক্রিয়া, যার প্রভাবে প্রত্যেক বছর, কোটি-কোটি পাখি, পতঙ্গ বা মাছ এবং অন্যান্য প্রাণীরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গমন করে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই পরিযান হয় খাদ্য বা প্রজননের উদ্দেশ্যে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ও দেখা গেছে, সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণের জন্যও পরিযান ঘটেছে। প্রথম ব্যাপারটি খুব সাধারণ ঘটনা। যে সব প্রাণীদের ভেতর পরিযান দেখা যায়, তাদের প্রায় নিরানব্বই দশমিক নয় নয় শতাংশ ক্ষেত্রে এই ধরণের পরিযান হয়। অন্যদিকে, দ্বিতীয়টি খুবই অল্প ক্ষেত্রে, এবং বিশেষত একটি সমগ্র প্রজাতির কয়েকটি মাত্র সদস্যের মধ্যে হয়ে থাকে। এর আসল কারণ আজও অজানা, যদিও এর পেছনে পাখির জিনগত কার্যকেই প্রধানত দায়ী করা যেতে পারে।
পক্ষিবিজ্ঞানী বাজজি-র মতে, পাখিদের প্রত্যেকের শরীরে থাকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিন যার পোশাকি নাম হলো Clock জিন। এই জিনের অভিব্যক্তিগত তারতম্যের জন্য, কোনো পাখি পরিযান করে, আবার কেউ করে না। আবার যারা পরিযান করে, তাদের মধ্যেও এই জিনের অভিব্যক্তিগত পার্থক্য দেখা যায়, যার ফলে, হয়তো কোনো পাখি দলছুট হয়ে সম্পূর্নই ভিন্ন রাস্তায় চলে যায়। আর এর ফলেই এই দ্বিতীয় ধরণের পরিযান সম্ভব হতে পারে। যদিও এই বিষয়ে আরো গবেষণার দরকার রয়েছে। কিন্তু এই হঠাৎ দেখতে পাওয়া পাখিগুলোর এখানে আসার কারণ কি? এরা তো সেই অর্থে পরিযায়ী পাখিও না। তবে? টার্ন দেখা যায় সমুদ্রের ধরে, অর্থাৎ উপকূল অঞ্চলে। তা সে নয় ঝড়ের দাপটে উপকূল ছেড়ে যদি পথে ভেতর দিকে ঢুকে পড়লো, কিন্তু এই যে ক্যারোলিনা উড ডাক, এ এলো কোথেকে? এর তো স্বাভাবিক পরিযান পথ এটা নয়। এরম আরো অনেক উদাহরণ আছে। একটি উদাহরণ দিয়ে বলি, প্রতি বছর সাইবেরিয়া থেকে হিমালয় পার হয়ে লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী পাখি ভারতে আসে শীত কালে, এটা তোমরা সকলেই জানো। আবার এরকমও হয়, যে ভারত থেকে কিছু পাখি হিমালয় পেরিয়ে আরো উত্তরে যায়। কিন্তু এই ঘটনা ঘটে খুবই কম। আসলে ভারতের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির হওয়ার জন্যই এখন থেকে পাখিদের পরিযান প্রায় ঘটে না বললেই চলে। যে সব পাখি মাঝে মাঝে ভারত ছেড়ে হিমালয়ের উত্তরে চলে যায়, তাদের মধ্যে একটি হলো Desert Wheatear এই পাখিটি ভারতের যে একমাত্র মরুভুমি অঞ্চল, থর, তার আশেপাশে দেখা যায়। আমি নিজে এই পাখিটিকে দেখেছিলাম, কেদারনাথ sanctuary -র তুঙ্গনাথ মন্দিরের রাস্তায়, যেটা আদ্যন্ত ভাবেই হিমালয়ে অবস্থিত। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যে, একটা মরুভুমি অঞ্চলের পাখি কি কারণে, ওই অত উঁচু হিমালয়ের পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে? তাও আবার অত ঠান্ডার ভেতর?
তোমরা যদি ভারতের আশপাশের ম্যাপ টা ভালো করে দেখো, তাহলে দেখতে পাবে, ভারতের উত্তর দিকে আরেকটি মরুভুমি আছে, যার নাম গোবি। আর এই মরুভুমিটিকে আমাদের দেশের থর মরুভূমির সাথে এক সরলরেখায় যোগ করলে, তার মাঝের একটি জায়গা হয় এই কেদারনাথ sanctuary
তাহলে ব্যাপার কি দাঁড়ালো? Desert Wheatear কি এই দুই মরুভূমির মধ্যে পরিযান করে? তোমরা কি বল?
খুব ভালো লাগল। চালিয়ে যা ভাই। 😇