খবরা খবর

সুন্দরবনের বাঘেরা কি হেরে যাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কাছে?

সুন্দরবনের বাঘেরা কি হেরে যাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কাছে_

কথায় আছে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, কিন্তু সেই বাঘ আজ বিপদে! তাও অন্য কোথাকার বাঘ হলে এক কথা ছিল। আমি বলছি সুন্দরবনের সুন্দরীদের কথা। এই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। এমনিতেই সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা নদি-নালায় পরিপূর্ণ, বাকি ৭০ ভাগ অংশের বেশিরভাগের উচ্ছতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক মিটারেরও কম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে সুন্দরবনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার এবং ২০৭০ সালে ৬০-৮০ সেন্টিমিটার মত বেড়ে যাবে এমনটাই আসঙ্খা বিজ্ঞানীদের।

বাঘের আস্তানা গুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে, তার সাথে সমুদ্রতল বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা যোগ করে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে ২০৭০ সাল নাগাদ সুন্দরবনের এরকম কোন জায়গা থাকবে না যা বাঘের বসতির জন্যে আদর্শ। ২০৫০ সালের মধ্যে বাঘের হ্যাবিট্যাট কমে যাবে প্রায় ৯৬ শতাংশ। এই গবেষণা এপার বাংলা এবং ওপার বাংলা দুই বাংলার ক্ষেত্রেই সত্যি। শুধুমাত্র সমুদ্রের জল বেড়ে যাওয়াই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যে মিষ্টি জলের পুকুরে নোনা জল ঢুকে যাওয়া, শিকারের অভাব এবং নানাবিধ সাইক্লোনের সংখ্যা যেভাবে গত কয়েক বছরে বেড়ে যাচ্ছে তাতে সুন্দরবনের বাঘ তথা যে কোন পশুপাখির বাসস্থানই সাংঘাতিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। সাথে যোগ হয়েছে, বাঘের খাবার অর্থাৎ হরিণ, শুয়োর, বাঁদর, মাছ এবং কাঁকড়ার বেআইনি শিকার এবংম্যানগ্রোভ অরণ্যের বিনাশ। বিজ্ঞানিরা বলছেন শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র বাঘকে কেন্দ্র করে জল-জঙ্গলকে বাঁচাবার প্রয়াস করতে হবে সরকারকে।

সুন্দরবনের বাঘকে এক ঝলক দেখার জন্য লাখ লাখ পর্যটক প্রতি বছর সুন্দরবনে আসেন। বাঘ যদি না থাকে, পর্যটন সাংঘাতিক ভাবে ধাক্কা খাবে সুন্দরবনে। সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পর্যটনের সাথে জড়িয়ে থাকা হোটেল ও লঞ্চের স্রমিকেরা, গাইড হিসেবে কাজ কোরা সাধারন মানুষ আরও অনেকে। তবে হ্যাঁ, বিজ্ঞানীদের মতে যে কোন প্রাণীরই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করে তার সহনশীলতার ওপর। নোনা জল, প্রবল বৃষ্টি, বাড়তে থাকা উষ্ণতা ইত্যাদির সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে পারার ক্ষমতা সব প্রাণীর না। সুন্দরবনের বাঘ পৃথিবীর একমাত্র বাঘের প্রজাতি যারা ম্যানগ্রোভের মত কঠিন জমিতে মাটি কামড়ে পড়ে আছে। কাজেই সুন্দরবনের বাঘ যে এত সহজে হাল ছেড়ে দেবে তা কিন্তু নয়।

 

ছবিঃ উইকিপেডিয়া থেকে সংগৃহীত

Leave a Comment