খবরা খবর

জানেন কি পৃথিবীর কত ভাগ বাস্তুতন্ত্র এখনো এখনও আগের মত আছে? আর কারা তাকে রক্ষা করছে?

জানেন কি পৃথিবীর কত ভাগ বাস্তুতন্ত্র এখনো এখনও আগের মত আছে আর কারা তাকে রক্ষা করছে

মাত্র তিন শতাংশ, হ্যাঁ উত্তরটা আগেই দিয়ে লেখাটা শুরু করা ভালো। মাত্র তিন শতাংশ পৃথিবীর স্থলভাগ এখনো আগের মত আছে, প্রাণী এবং উদ্ভিদের সুস্থ স্বাভাবিক বাসস্থান বজায় রাখার মত। কারা এই তিন শতাংশ অক্ষত পরিবেশকে রক্ষা করছে? রক্ষা করছে আদিবাসীরা, হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন, “অশিক্ষিত”, “পিছিয়ে পড়া”, “শিকারী” আদিবাসীরা।
ইউরোপ আমেরিকা কেনিয়া মেক্সিকোর মত দশটিরও বেশি দেশের বৈজ্ঞানিকরা একসাথে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সেখানে তারা এই দাবি করেছেন। সারা বিশ্বজুড়ে টুকরো টুকরো কিছু অংশে এখন অব্দি মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকৃতি এবং প্রকৃতিতে বসবাসকারী বিভিন্ন জীবের ওপর প্রভাব পড়েনি। অ্যামাজন এবং কঙ্গোর জঙ্গল, সাইবেরিয়া এবং কানাডার কিছু কিছু জঙ্গল এবং সাহারা মরুভূমি হল সেই সমস্ত অঞ্চল এর উদাহরণ যেখানে এখন অব্দি মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকৃতির ধ্বংসলীলা শুরু হয়নি। এই অঞ্চল গুলি মিলিয়ে মাত্র ৩ শতাংশ অঞ্চল বাকি যা এখনো আগের মতই আছে।

কোন বাস্তুতন্ত্র বা পরিবেশে মানুষের প্রকোপ পড়েছে কিনা তা বোঝার উপায় হিসেবে পূর্ববর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা আলোর দূষণ বা রাস্তাঘাটের উপস্থিতি ইত্যাদিকে প্রামাণ্য হিসেবে ধরতেন। এইভাবে ধরলে দেখা যায় যে মোটামুটি কুড়ি থেকে চল্লিশ শতাংশ পৃথিবীর ভূভাগ এখনো মানুষের হাত থেকে নিস্তার পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি করা গবেষণাতে বৈজ্ঞানিকরা বিভিন্ন বাস্তু তন্ত্রের পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় বর্তমানে কতটা জীবের বাসস্থান অক্ষুন্ন আছে এবং কতগুলি জীব বিলুপ্ত হয়েছে সেই তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সেইখানে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ৩ শতাংশ জায়গা ১৫০০ সালের তুলনায় অক্ষত আছে এবং তাকে অক্ষুন্ন রেখেছে আদিবাসীরা। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, আমাদের পৃথিবীতে অতীতে বিভিন্ন কারণে (যেমন উল্কাপাত বা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত) জীবের গণবিলুপ্তিকরণ ঘটেছে। অর্থাৎ সারা পৃথিবী জুড়ে একেক সময় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি সমস্ত জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পৃথিবীতে আবার নতুন করে জীব সৃষ্টি হয়েছে এবং পৃথিবীকে পূর্ণ করেছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী ইতিপূর্বে পাঁচবার এরকম প্রাণী এবং উদ্ভিদ এর গণবিলুপ্তি বা মাস এক্সটিংশন ঘটেছে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য ছয় নম্বর গণবিলুপ্তিকরণ বর্তমানে চলছে। এবং যে হারে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জীব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সেই হার আগের পাঁচটি গণবিলুপ্তিকরনের হারের তুলনায় অনেকটাই বেশি।

এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা অক্ষত বাসস্থানের সন্ধান করেছেন যেখানে তারা দেখেছেন যে বাইরে থেকে মানুষের দ্বারা আগত কোন জীব সেখানে স্থানীয় প্রজাতির সাধারণ সংখ্যা এবং বাসস্থানকে কতটা প্রভাবিত করছে। শুধুমাত্র বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীই নয়, তাদের এই অনুসন্ধান মাছ, গাছ, পাখি এমনকি পতঙ্গ শ্রেণীর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবকেও ধরে করা হয়েছে।

এই লেখা টি লেখার সময় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের আদিবাসীরা সেন্দরাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক চলছে। বিতর্ক খুব বেশি নেই, ইন্ডিজেনাস নলেজ বা আদিবাসী লব্ধ জ্ঞানের আদান প্রদান এবং অনুসন্ধানকে তুলনা করা হচ্ছে প্রজাতি বিলুপ্ত করণ শিকারের সাথে। দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে এরাই প্রাণী ধ্বংসের মূল কারণ। গোটা পৃথিবী জুড়ে ডেটা নিয়ে পৃথিবীর অন্যতম সেরা জার্নালে প্রকাশিত হওয়ায় এই বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ কিন্তু অন্য কথা বলছে। কাজেই, আমাদের ভাবাটা খুব জরুরী, এবং ভাবাটা যেন ফেসবুকের ছবি দেখে না হয়।

Leave a Comment