Uncategorized

Module 1

মানুষ: জলবায়ু পরিবর্তনে অসাম্যতা কেন বাড়বে?

আমরা এই অধ্যয়ে দেখব, জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে মানুষের উপর অর্থাৎ আমাদের জল,খাদ্য ও স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করবে? কারা এর ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

অত্যাধিক জল বা পর্যাপ্ত জল না থাকা:

আমাদের রক্তে,কোষে, এবং শরীরের প্রায় 70%ই হলো জল! তবুও 2.2বিলিয়ন এরও বেশি মানুষ আজ চরম জল সংকটের সম্মুখীন! পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না থাকায় গত 20 বছরে বন্যা ভীষন ভাবে মানুষ কে প্রভাবিত করেছে। বন্যার ফলে গত 20 বছরে প্রচুর ঘর বাড়ির ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে, প্রচুর মানুষ মারা গেছে। ভূমিতে প্রচন্ড ধস নেমেছে।এছাড়াও বন্যার এই নোংরা জল থেকে প্রচুর রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। খুব বেশি বা খুব কম জল থাকা একটা ভীষণ বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।কারণ জলবায়ু পরিবর্তন খুব শুষ্ জায়গা গুলোকে শুষ্ক এবং খুব ভেজা জায়গা গুলিকে ভেজা করে তোলে।

বন্যা পানীয় জল সরবরাহ পয়েন্ট এবং তার সাথে নিকাশী ট্যাংক, পাইপ কে ধ্বংস করতে পারে।বন্যার ফলে জল দূষণ হয়।ফলে চরম জলসংকট দেখা দেয়। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এই সমস্যা গুলোকে আরো ভয়াবহ করে তোলে। জলবায়ু পরিবর্তন বন্যার সাথে খরার জন্যও একটা বিরাট বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে!যেসব অঞ্চল গুলো সাধারণত শুষ্ক নয় সেইসব অঞ্চল গুলোতেও খরার প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। জলের এই চরম সংকট বিপদের মুখে ফেলবে কৃষক দেরও। জল ছাড়া ফসল তৈরি হবে না! খরা ও তাপপ্রবাহ গত কয়েক দশক ধরে শস্যের ফসলের গড় 9-10 %হ্রাস করেছে।

অদূর ভবিষ্যতে কি আর পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার থাকবে?

জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্ব জুড়ে ফসলের বৃদ্ধির উপর বিভিন্ন প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় জলবায়ু এবং সেখানে উৎপাদিত ফসলের ধরনগুলির উপর ভিত্তি করে। ইউরোপে সাতটি প্রধান ফসল 2050 সালের মধ্যে গড়ে 8%বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গম এবং চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এটা শুধু ইউরোপের জন্য। নিচের মানচিত্র দেখলে বোঝা যাবে কিভাবে 2080 সালের মধ্যে ফসলের ফলন পরিবর্তিত হবে।

যে দেশ গুলি ইতিমধ্যেই উচ্চ তাপমাত্রায় ক্ষুধায় ভুগছে তারাই সবচেয়ে বেশি খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হতে চলেছে। এগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের আরো একটি অসাম্যতা এবং অনুপযুক্ত প্রভাব।যদি আমরা জলবায়ু পরিবর্তন না আটকাতে পারি তবে 2050সালের মধ্যে আরো লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভয়াবহ খাদ্য সংকটের সম্মুখীন হবে! চাল,গম, ভুট্টা, সয়াবিন প্রভৃতির অভাব দেখা দেবে।

পোকামাকড় এবং বিভিন্ন রোগ সমস্যা:

বিভিন্ন পোকামাকড় বর্তমানে চাল, গম সয়াবিনের 20% ধ্বংস করে।জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে এর প্রভাব আরো বাড়বে। কারণ মরু অঞ্চলেই বেশি পোকামাকড় সৃষ্টি হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়েছে পারে তাড়াতাড়ি। অবশ্য ইউরোপের মত শীতল দেশেও কতিপয় ফসল হ্রাস পাবে। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন বিভিন্ন খাদ্যের গুণমান হ্রাস করবে এবং ফসলের দাম বাড়াবে।

আমাদের স্বাস্থ্য কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

হ্যাঁ। তাপপ্রবাহ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক সমস্যার সৃষ্টি করবে।অনুমান করা হচ্ছে, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ এর 2030 সাল থেকে 2050 সালের মধ্যে প্রতিবছর 38,000 অতিরিক্ত মৃত্যু হবে।অর্থাৎ মৃত্যুহার বা mortality বাড়বে। হিটওয়েভের সময় আশেপাশের অঞ্চলের তুলনায় শহর গুলি বেশি উত্তপ্ত হবে। কারন অন্ধকার পৃষ্ঠ গুলি বেশি তাপ শোষণ করে।

বিশ্বের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ 2050 সালের মধ্যে শহরে বাস করবে। ফলে তাদের তাপপ্রবাহ এর সম্মুখীন হতে হবে। পান করার জন্য পরিস্কার জলের বদলে জলশূন্যতাও মানুষ পেতে পারে। যাতে মাথা ব্যাথা ,মাথা ঘোরা, শরীরে ক্লান্তি এবং শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। অপরিস্কার জল পান করার ফলে ডায়ারিয়ার মত রোগের প্রভাব বৃদ্ধি হয়। যার ফলে বিশ্ব ব্যাপী সমস্ত মৃত্যুর 4% এর জন্য সংঘটিত হয়।

কিছু পোকামাকড় উষ্ণ বেশি রোগ ছড়ায় এবং বেশি দিন বাঁচে। উদাহরন স্বরুপ,ম্যালেরিয়া একটা মশার দ্বারা বাহিত রোগ যা প্রতি বছর 400,000 এর ও বেশি মৃত্যু ঘটায়। বর্তমানে বেশি সংক্রমণ হয় আফ্রিকার উপসাহারায়।মশা উষ্ণ এবং আর্দ্র বেঁচে থাকতে পারে বেশি দিন । তাই তাপপ্রবাহ বাড়ার সাথে সাথে তারা নতুন নতুন বাসস্থান তৈরি করে।

এছাড়াও বিভিন্ন পোকামাকড় এর সাথে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াও উষ্ণ পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে বেশি দিন যার ফলে ব্যাকটেরিয়া ঘটিত বিভিন্ন রোগের প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। প্রকৃত পক্ষে, তাপমাত্রা DNA বিনিময় করার ক্ষমতা কেউ প্রভাবিত করে এর মধ্যে রয়েছে এমন DNA যা এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করতে সক্ষম।আরো এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ফলে অনেক সংক্রমণ চিকিৎসা অসম্ভব হয়ে উঠবে। এর একটা বড় বিষয় যা আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্য কে প্রভাবিত করবে তা হল বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণ এর ফলে হাঁপানি,নিশ্বাস,প্রশ্বাস এর সমস্যা, ফুসফুসে ক্যানসার, স্ট্রোক, এবং হৃদ রোগ বাড়িয়ে তুলবে। এটাও প্রমাণিত যে ,বায়ুদূষণ বায়ুবাহিত ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ কে আরো খারাপ পর্যায়ে নিয়ে যাবে। মানুষের উপর বৈশ্বিক উষ্ণতার বৃদ্ধি, বায়ুদূষণ কেও প্রভাবিত করবে। যার ফলে দাবানল, এবং গ্রাউন্ড লেভেলে গ্যাসের ঘনত্বের পরিবর্তন ঘটবে। যদি এটা বন্ধ না করা যায় তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর 1000-4300 আরও বেশি মৃত্যু ঘটবে এর প্রভাবে।

অবিচার:

তোমরা হয়ত লক্ষ্য করেছ যে ,জলবায়ু পরিবর্তন কিছু মানুষ ও কিছু স্থানকে অন্যদের চেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে চলেছে। আমরা ইতিমধ্যেই একটা অসম বিশ্বে বাস করছি। আর জলবায়ু পরিবর্তন এই অসমতা কে আরো বাড়িয়ে তোলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এখানে দেখা যাচ্ছে, যে সব দেশ সব চেয়ে কম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন করে, তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া এই সব অঞ্চল গুলো রক্ষায় খুব কম সংস্থাই সাহায্য করবে। জরুরী পদক্ষেপ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব 2030 সালের মধ্যে 100 কোটি মানুষ কে দারিদ্রতার দিকে ঠেলে দেবে। উন্নয়নশীল দেশ গুলিতে ইতিমধ্যেই এর প্রভাবে 99% মৃত্যু ঘটেছে যার মধ্যে শিশু প্রায় 80%।

এটা অনুমান করা যায় যে 2050 সালের মধ্যে পৃথিবীতে প্রতি 45 জনের মধ্যে 2 জনকে জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রভাবে ঘর -বাড়ি ছাড়তে হবে! খরা, বন্যার প্রভাব থেকে বাঁচতে মানুষ চলে যাবে তাদের ঘর বাড়ি ছেড়ে, দেশ ছেড়ে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ইতিমধ্যেই মানুষকে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করেছে। আর যদি তাপমাত্রা 3 ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তাহলে মিয়ামিও, সাংহাই এর মত উপকূলীয় শহর গুলি জলের তলায় চলে যেতে পারে। এই সমস্ত পরিণতি বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং দেশের মধ্যে সংঘাতএর কারণ হতে পারে।দারিদ্রতা , সম্পদের অভাব , অভিবাসন সবই মানুষে মানুষে লড়াই বা দ্বন্দ সৃষ্টি করবে।

উপসংহার:

জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জীবনযাত্রা কে প্রভাবিত করবে।মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে একদিন । চরম আবহাওয়া বিপর্যয় থেকে আমাদের খুব শীঘ্রই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

টেস্ট দেবার জন্য এখানে ক্লিক করুন

Leave a Comment